পিতৃত্ব
স্যাভলনের উগ্র গন্ধে স্নান মেখে উঠে আসা লাল গামছা
পরিহিত ইস্পাত কঠিন এক পুরষ...
জন্মাবধি দেখা প্রথম শিল্পী বা অহংকারী ঈশ্বর ও
বলা যায় তাকে...
পঞ্চাশ বা ষাট বছরের ধুঁকতে থাকা
বৃদ্ধ হার্টের সার্জারি করলে অনায়াসে
স্নেহরঙা আঁচল উড়তে দেখা যায়।
হাঁটতে হাঁটতে পড়ে যাওয়া ছেলেটির আঘাতে
যার ফুঁ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
স্লাইড সিঁড়িতে পা দেওয়ার ভয়ে সিঁটিয়ে যাওয়া ছোট্ট
মেয়েটিকে যে তার কঠোর আঙুল বাড়িয়ে দেয় নির্দ্বিধায়...
অফিসের মোটা মোটা ফাইল, কম্পিউটার,
মানিব্যাগে আদ্যোপান্ত নিজেকে গুছিয়ে,
ছেঁড়া পাঞ্জাবীর পকেটে জাহাজ সমান সংসার ভরে রাখে।
ধোঁয়া ওঠা ভাতের থালায় কোঁচকানো দুটো হাত তরকারি
মাখতে মাখতে ডাল, তেল নুনের ফর্দ কষে ফেলে
অপ্রাপ্তির খেরোখাতায়।
কখনও উদাসীন জেদী রাস্তা
আবার কখনও বটবৃক্ষ, চিরে
ফেললে মাঝ বরাবর তুলতুলে এক
ভীতু মন বহু বহু হোঁচট আগলে রেখেছে নিভৃতে।
বিদায় বেলার মহড়া দিতে দিতে
নিকোটিন পোড়া ঠোঁটের কপাটে যার, বরফ রঙের আশীর্বাদ বাণী ঝুলতে দেখেছি।
শেষবার আদরের ঘ্রাণ পেয়েছি
দাউদাউ করে জ্বলে ওঠা অশ্রুগন্ধী
আগুন বাড়িতে পোড়া মাংসের ভেতর,
ফুলো ফুলো পাজামার নীচে সরু সরু
দুটো ঠ্যাঙ প্রথমে আলো হয়ে তারপর
পাখি হয়ে আকাশ ছুঁয়ে ফেলছে,
আমি ছুট্টে গিয়ে তার পায়ের আঙুলে
অদৃশ্য সুতো বেঁধে এসেছি।
আলুথালু বেশে ঘরে ফিরে দেখি
মানুষটা দুটো চোখ রেখে গেছে,
জানালার
শার্সিতে কিছু শুভ্র মেঘ এসে বসে প্রতি রাতে ,
আর দূরে কোথাও বাবার নাম্বার সেভ করা মোবাইলের তার
বেয়ে মুঠো মুঠো খই ঝরে পড়ে...
নামহীন একটি লেখা
জীবন
এক ধূসর ডাকপিয়নের নাম,আমরা তো স্রেফ
হরাইজন্টাল লাইনের এপার ওপার শুয়ে থাকা রঙ বেরঙের খাম...
প্রেম
বুকের খাঁজে স্টেথোস্কোপ ধরলে ঘুঙুরের শব্দ শোনা যায়, যৌন আকর্ষণ বাড়ায় কেবলই...
বিশ্বাস
সবুজ রঙের আলো, নিভে গেলে
গাছেরা পূর্ণচ্ছেদের মতো দাঁড়িয়ে থাকে, পথের ধারে লুটোয়
ক্লোরোফিল...
প্রশান্তি
উলঙ্গ হাড়, পাঁজরের গায়ে লেপটে থাকা
ত্বকের মতো মায়ের উষ্ণ আঁচল...
স্মৃতি
স্নেহের ক্যাকটাসে ঝুলে থাকা তিলং রাগ, নিয়ম করে বাজে সন্ধ্যাবেলা...
অপেক্ষা
প্রিয় ডাকবাক্স থেকে শিকড়ের বালি ঝেড়ে উড়ে যাওয়া এক ঝাঁক
শিকারী পায়রা...
শোক
মেয়েলী হাতে কুচোনো টাটকা পেঁয়াজের রস, কিছুদিন পর গন্ধের তেজ মিলিয়ে যায় ধীরে ধীরে...
মৃত্যু
নিমের ডালে জড়ানো শর্তহীন অ্যালজোলামের বড়ি, পিছুটান হীন ঘুম ডেকে নিয়ে আসে...
সামুদ্রিক চিল অপেক্ষা করে নো ম্যান্স ল্যান্ড উপভোগ করবে
বলে।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন