কবিতা এখন
একটি
কবিতার জন্য রোদেলা সকাল আসে
ওরাও
আসে দল বেঁধে আমার খোলা জানালায়
ওদের
নতুন সুরে কবিতাও পাখনা মেলে আসে
নতুন
কবিতা পাখির মতন ডানা ঝাপটায়
আমি
চাই শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে ভাবের সুতোয়
কবিতাকে
গেঁথে নিতে অনুপম রূপে ভাব বিলাসে।
তবু
কিছু কথা কিছু ব্যথা আগুনের মত থেকে যায়
ধিকিধিকি
জ্বলে আর কবিতাও আগুন ছড়াতে চায়।
জানালায়
পাখিরা যে গান গায় তা কান্নার লহর ছড়ায়,
পৃথিবীর
নানা ঘাটে নানা বাটে নিরুদ্ধ ক্রন্দন ঢেউ তোলে,
সভ্যতার
পরিহাস বড় নির্মম, মানুষের লাশ রচে হিংস্র ইতিহাস!
এ
কেমন প্রতিশোধ নিরপরাধকে নির্বিকার নিধন?
শিশুদের
লাশ খোলা আকাশের নিচে সারি সারি শুয়ে,
আমাদের
বলে যেন পৃথিবী এমন নির্মম আর কঠোর?
কবিতা
তখন ফুঁসে ওঠে আক্রোশে আগুনের মত ওঠে জ্বলে।
নির্বিচার
এই হত্যালীলা বুকের গভীরে এক মহারোল তোলে।
মানুষ
এখন গভীর সংকটে তাই কবিতা বিষাদে কথা কয়,
স্বদেশ
বিদেশ সবদেশ অন্ধকারে সঠিক পথের সন্ধানে,
বুঝি
এক মহা প্রলয় ভয়ঙ্কর রূপে আসছে
ধ্বংস
হবে মানুষ মানবিক সভ্যতা চুরমার হয়ে যাবে।
প্রলয়ের
পরে আসবে নতুন এক আলোময় দিন
উজ্জ্বল
মানুষের প্রদীপ্ত মিছিল পেয়ে যাবে প্রশান্ত তীর!
আর
কবিতা তখন বিজয়ী মানবের লিখবে বন্দনা গীতি।
মসলিন জামদানি
শেওলা
সবুজ মসলিন জামদানি দোলে
তরতর
দোলে অন্তরীক্ষে
গায়ে
তার সোনালি জরির চিকন কল্কে কাজ
একজন
নারী বিষাদ সাগরে ডুব দিয়ে
বাড়িঘর
ভিটে খামার সব ফেলে রেখে
চোখের
অনন্ত জল মুছে
ঢাকা
থেকে সদ্য আনা
বহুকালের
স্বপ্ন মাখানো শাড়িটা
পাকা
গম রঙা দেহে জড়িয়েছিলো
স্বামীর
ধমকে খুলে ফেলে
বঙ্গলক্ষ্মী
মিলের লাল পেঁড়ে তাঁতের শাড়িটা
সোনার
অঙ্গে জড়িয়ে দেশ বসত ছেড়েছিল
এরপর
সারাক্ষণ সারাকাল দোলে
শুধু
দোল খায় মসলিন জামদানি
আকাশে
দোলে অন্তরে দোলে সবুজে দোলে
বিচ্ছেদ
বেদনায় দোলে নিরন্তর
জীবনে
দোলে মরণের ওপারেও দোলে
আজ
সেই নারী নেই হারিয়ে গেছে
শাড়িটিও
তার জগৎ ছেড়ে আমার মনে দুলছে
আমার
মা হারালেও হারায় না সে শাড়ি
সে
শাড়ির উত্তরাধিকার এখন আমার জানি
এখন
দোলে তা ময়নামতির হাটে হাট পেরিয়ে
মাঠ
পেরিয়ে আমার মনের চাতাল পেরিয়ে দোলে
দিন
গিয়ে রাত গিয়ে নতুন হাওয়ায় দুলছিল
শাড়ির
কথা মনে নেই কোথাও গেলো জানিনা
কাল
সকালে হঠাৎ দেখি কাঁটাতারে ঝুলছিলো
যাপন
অদ্ভুত
এক আঁধার ঘনিয়েছে
তবু
পথ চলতে হয় চলতে হবে
এ পথে অনেক হেঁটেছি সেই কবে থেকে
হিসেব করিনি কোনও কালে কোনদিন
অন্তরীক্ষে
অবস্থিত সপ্তর্ষিমণ্ডল
নির্বাক
বিস্ময়ে দেখে চেয়ে সবকিছু
পথের দু'পাশে শুয়ে সারি সারি
মৃতদের দেহ
একদিন এরা সব বড়ই জানাশোনা ছিলো
ওরা
আজ চোখ বুজে ঘুমিয়ে পড়েছে
বোধের
কার্ণিশে ওদের জমাট রক্তস্রোত
এইসব চেনামানুষ একদিন নিশ্চিতই
ভালোবাসা ক্রোধ কাম দ্রোহ আক্রোশে
আমার
পৃথিবী গড়ে কোলাহলে মত্ত হয়ে ছিলো
আজ
ওরা নীরব চোখের অন্তরালে কোন গভীরে
আমি শুধু পথ চলি স্মৃতির পৃথিবী নিয়ে
একান্তে
নবাগত যারা অচেনা লাগে অন্য পৃথিবীর যেন
এরই
মাঝে নদী চলে কুলকুল সমুদ্রে ওঠে ঢেউ
আক্রোশে
পর্বত অটল হয়ে আকাশে মাথা তোলে
চলে যাওয়াদের হারিয়ে নতুনেরে সাথে নিয়ে
পর্যায়ক্রমিক অদ্ভুত এক জীবন যাপন সারাকাল
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন