তৃষ্ণার ক্যালরি
বিতৃষ্ণার টক্সিনস – ১৬
জানালাম
তো শীত শেষের বিপন্ন কথকতা, সর্ষে হলুদ প্রত্যাশার হামাগুড়ি,
একটার পর একটা খেত আলপথ অতিক্রমণ, কাঁকর
কুড়ানীর গল্পও তো বললাম, বাবার লেখা ‘কংকর কা জুস’, এই সব অদ্ভুতুড়ে হারিয়ে যাওয়া কথা শুরু হল অথচ আপনি না বলেই আচমকা চলে গেলেন, দরজা এবং বাজুবন্ধ খোলাই থাকলো। আপনি বিপন্নতার কারণ জানতে চাইলেন না শুধু
সম্পন্নটুকু স্পর্শ করে গেলেন কীভাবে, এসব কথা ভাবলে
ভার্চুয়াল দূর, না ভাবলে দেহের কাছে বৃন্ত নাভি সব ঘন সন্নিবদ্ধ।
প্রশ্রয়ে
জারিত ছিলেন কি না জানা হয় নি, জানা হয়নি চোখ বন্ধকরে ভরসা
করার মতো জাঙিয়া আর আয়নার বিজ্ঞাপন, রসাতল ও রসায়ন। আশ্রয়ের
নিভৃতির ভিতর একটা পেয়ারাগন্ধ সবুজাভ আলো পাচ্ছিলাম... অনির্বচনীয় শব্দটা তখন
অ্যাপ্লাই করার কথা মনেই আসে নি। এখন আসছে। অঘ্রাণের ঘ্রাণ থেকে ধানের দুধ নিপল গড়িয়ে মাঠ ভিজে যাবার পর শূন্যপথ যতদূর
আলোকবর্ষী, ততটাই দূরে এখন আপনি। আমার অক্ষম হাতরানোর ভিতরে
বিপন্নতা চঞ্চল হয়ে প্রোটনকণাদের ছুটিয়ে বেড়ালেও কোনো দ্বিতীয় নিউক্লিয়াস আসে না,
এভাবেই মৃতকোশে আছি অনেকদিন।দ্বিতীয় নির্মাণের আশায়। আর্টারি
স্রিংকেজ কলমের ভিতর ক্লটেড কালি ফাটিয়ে দিচ্ছে অনন্ত, বিশ্বনিন্দুক
না-মাজা দাঁত খিঁচিয়ে বদনাম দিচ্ছে, আপনাকে বিশ্লেষণ করতে
গেলে আমার পাইন ফেটে যাবে, অথচ আমি মলাট থেকে মলাট পড়ে পড়ে
দেখেছি আপনি কত সহজ, যে সহজতা ছুঁয়ে পৌঁছনো যায় সহজিয়ায়। বিশ্লেষণের চেয়ে
ছোঁয়াছুঁয়ি অনেক বেশি জীবনিক।
তৃষ্ণার ক্যালরি
বিতৃষ্ণার টক্সিনস – ১৭
আপনি যাকে ভাষিত ও ভূষিত করছেন শাস্ত্রনামে আমি তাকে
বলছি গর্ভপাত, ব্যাহত সৃজন। মায়ের থেকে বেরিয়ে আবার মায়ের গর্ভে
তলিয়ে যাবার যে সার্কুলেশন আপনি বোঝাতে চাইতেন সে সব ভাবালুতা তখন বুঝিনি, এখন নির্মাণ থেকে মুক্তি নিচ্ছেন আমার মা, চলে
যাচ্ছেন চিহ্ন ছেড়ে, অদিতি এখন উন্মুক্ত ঊর্ধ্বগত যোনি,
দ্বিতীয় নির্মাণের দিকে অদিতি যে দূরস্মৃতি মেলে দিচ্ছেন, ডাক্তারবাবুরা চোরাগলির ভেন্টলেশনে রেখে ইমাজিনেশনকে স্মৃতিভ্রংশ আখ্যা
দিয়ে ইন্টারভেনাস মেডিসিন চার্জ করছেন, নারকোটিক দিচ্ছেন,
অথচ তাঁরা শীর্ণ আঙুলগুলোকে একটু নিজের মতো করে নিজের ঠোঁটের আঁচিল
ছুঁয়ে বাঁচাতে পারছেন না, আমাকেও বাঁচাতে দিচ্ছেন না। হাতে
তুলে খেতে পারছে না এতো তীব্র কষ্ট। আমাকেও খাওয়াতে দিচ্ছে না, অথচ আপনি তো জানেন মা আর অন্ন কতটা পরিপূরক! ক্ষিদে পেলে মায়ের কাছেই
বারবার ফিরে আসা! আপনাকে এই মুহূর্তে আমার খুব দরকার ছিল। অদিতির নির্মোহ দৃষ্টিপথ
ফ্যালফেলিয়ে থাকে শূন্যে, বারান্দার দাপুটে রোদ্দুরে যেতে
গিয়ে হোঁচট খেয়ে ভাবি রোদ্দুরটুকু ছাড়া তো আর কোনো ক্ষিদে তৃষ্ণা নেই মায়ের,
এটুকুও দিতে পারছি না আমি অযোগ্য সন্তান। এই হাইপার ক্রাইসিসের
মধ্যেই মদিরায়নে ঝিমিয়ে পড়ার আগে শেষ গ্লাসে বাকিটুকু তন্দুরি ছিঁড়ে ছিঁড়ে ডুবিয়ে
দিচ্ছি। আর খাবো না। খাবোই না আর। পৌষপার্বণ, ভালোবাসার
রান্নাঘর কাঁদতেই থাকবে কিছু গেঁয়ো বাংলা পদের জন্য।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন