কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শনিবার, ৬ জানুয়ারী, ২০১৮

দেবযানী বসু


খটকা


ঠিক হলো একটা টাটা সুমো ভাড়ায় যাবে

মোনালিসার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সব সময়ই সাংগঠনিক, দীপ্র চাহনি, বেশ গম্ভীর পঁয়তাল্লিশ বছরের সে এত ভোরে যে প্লাজো টপে সেজে সাঁইত্রিশ তলা থেকে নেমে এলো, তার পিছনে ছিল মাত্র ত্রিশ মিনিটের প্রস্তুতি রবীন্দ্রসঙ্গীত গান করে বলে  আবহমান কালের তাঁতের শাড়ি পড়তে হবে, তার কোনো মানে নেই এই  ফাংশানটা হয়ে গেলেই ইপ্সিত সেই হীরের কানের দুলটা সে কিনে ফেলবে পোশাক পরিচ্ছদ নিয়ে কিছুটা পাগলামি আছে, ওটাও একেবারে ফ্যাশনিস্তা ধরনের  করে তুলবে শহুরে ক্যানভাসে মোনালিসা খোলে বেশি আর ওর হাবি রেডিও টিভি আর্টিস্ট গায়িকার কাজের ভলিয়ুম বুঝে রাতকে দিন করে দেয়

গাড়িতে ওর সঙ্গে যাবে বেহালা বাঁশিবাদক তবলচি অনুষ্ঠানের আয়োজকরা দেবেন ওরা যখন নামল দেখল ড্রাইভার পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে প্রায় ছয় ফুট লম্বা বিস্কুট রং শার্ট পরেছে সামনে ফিরতেই মোনালিসার ভ্রূ কুঁচকে গেল সৈকত দত্ত না? বলতে গিয়েও নামটা গিলে নিল মোনালিসা তার আভিজাত্যের সঙ্গে মানানসই নয় গুছিয়ে নিয়ে যাত্রা শুরু হলো মোনালিসা আয়না  দিয়ে ড্রাইভারকে সারাক্ষণ দেখতে লাগল দাড়িগোঁফের জঙ্গল মুখটা অনিকেত নাম ফোন নং সব নিল নামটা মিলে গেল মোনালিসা টুং করে বাজল ভিতরে তোর তো ব্যাংকে চাকরি করার কথা পি. . পরীক্ষাগুলোয় বসছিলি তার কী হলো! বাবা মা কেমন আছেন? গত পঁচিশ বছরে তোর... তোর... তোর...

কিংবা মোনালিসা এতই পাল্টে গেছে যে সৈকত তাকে চিনতে পারছে না? ভিতরে অনেক প্রশ্ন ক্রমাগত ধাক্কা দিচ্ছে আয়নাতে সৈকত যাতে তাকে দেখতে পায় সেভাবে মোনালিসা বসে আছে আয়নায় উদাসীন চোখ রাখছে সৈকত

বীরেন স্যারের ক্লাসের কথা ভাবো ব্যারাককপুর সেই গঙ্গার ধার স্টেশন রাস্তায়    অজস্র ফুল ফোটানো সেই গুলঞ্চ গাছটা একদল গানপাগল টিন এজার মোনালিসাদের মাথার চুল পর্যন্ত মিউজিক্যাল হয়ে যেত একেক দিন ক্লাসে শুধুই  স্যার মোনালিসা আর সৈকত টানা দেড়ঘণ্টা সঙ্গীত রেওয়াজ করেছে ওদের দ্বৈত  কণ্ঠে গান একেবারে মিক্সড এন্ড ম্যাচড হয়ে যেত অভিভূত হয়ে স্যার বলতেন,   এবার টিভি প্রোগ্রামে প্রাধান্য পাবে এই দ্বৈত কন্ঠের সঙ্গীত পরিবেশনা সৈকতের মাসতুতো বোন ছিল ওর প্রেমিকা জোর গলায় ডার্লিং বলে পেশ করত ওর কাজিনকে এমন কি মোনালিসাও মনিদীপাকে একটা গিফট দিয়েছিল সৈকতের একটা প্রিয় খেলা ছিল গুলঞ্চ ফুল কুড়িয়ে মোনালিসার চুলের রাবার ব্যান্ডে আটকে  দেওয়া বন্ধুরাও এগুলো কৌতুক হিসেবে নিয়েছে ওরা হারিয়ে গেল একসময় মোনালিসারা ব্যারাকপুর ছেড়ে বালিগঞ্জে চলে গেল

অথচ সেই সৈকত কত পাল্টে গেছে! একেবারে অতীত ভোলা মোনালিসার কন্ঠস্বরটুকুও মনে নেই?

গাড়ি মাঝরাস্তায় থামল দুর্গাপুর হাইওয়েতে আড়মোড়া ভাঙতে ধাবায় গিয়ে বসল সবাই সৈকতকে ডেকে নিল অনিকেত মোনালিসা হঠাৎ জিজ্ঞাসা করল : আপনি ব্যারাকপুরে থাকেন না?  
: না তো! আমি খিদিরপুরে থাকি
: আমাকে চিনতে পারছেন না? আমি মোনালিসা
: আপনাকে? না, না ম্যাডাম!
: মনিদীপা... বীরেন স্যারের ক্লাস...
অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল সৈকত
: আপনি অন্য কারো সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেছেন ম্যাডাই! চা নিয়ে লোকটা উঠে গেল বেঞ্চ ছেড়ে


অনিকেত হাঁ করে রইল মোনালিসা গম্ভীর মুখে চায়ের কাপের উপর ঝুঁকে পড়ল সৈকত যদিওবা হয়, কিন্তু লোকটার পিছনমাথায় টাক দাঁতে ছোপ কিন্তু ভয়েসটা  তো একই! নাম মিলে গেলেই কি মানুষ মিলে যায়? তাহলে সৈকতকে সে ভুলে  গেছে? আর চোখ দুটো? লম্বত্ব? সৈকতই বা অস্বীকার করছে কেন? সত্যিই কি  লোকটা সৈকত হয়েও সৈকত নয়? খুব অস্বস্তি বিরক্তিতে মোনালিসার চা ফা সব এমন কী সকালটাও তেতো হয়ে গেল

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন