কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ৬ জানুয়ারী, ২০১৮

অপরাহ্ণ সুসমিতো


সংসার কোম্পানি ( প্রাইভেট ) লিমিটেড


গভীর রাতে বাড়ি ফিরে ও বলল, করব!

বুঝতে পারছিলাম তাই ঘুমের ভাণ করে মটকা মেরে পড়েছিলাম। পাশ ফিরে শুয়ে বললাম, মাসিক চলছে। আসলে চলছে না। মিথ্যা বলেছি। মানুষের মন দেখা যায়  না বলে অজস্র মিথ্যা সত্য বলে চালিয়ে দেওয়া যায়।

সে আমার স্বামী। মাসের কোন তারিখগুলোতে আমার রক্ত বেরোয়, সে জানে না। অনেক কিছু এ জীবনে না জানাই থাকে। আগ্রহ হয় না আর যেমন তার সাথে সম্পর্কটা আছে চলছে থাকে, থাকার হুকুম আছে কাগজে, তাই মন তো কোনো কাগজে দস্তখত করেনি! শরীরও!

সাথে বাস করলেই সহবাস হয় না সে আবার কী জিনিষ! দুপা ছড়িয়ে শুয়ে থাকা  তার শরীর জাগলে, তারপর একসময় স্খলন সোজা কথায় মাল ফেলা চুম্বনে ঠোঁট সরিয়ে নেওয়া, শরীরে স্পর্শ করলে বিরক্তি

আমি জানি সে অন্য কোনো নারীকে চিন্তা করে আমার কাছে আসে, তাকে পায় না বলেই শুনেছি সে পাড়ায় যায় কোনো এক বিধবাও তাকে সুখ দেয় কোনো কিশোরী তার স্বপ্নে আসে আসুক আমার কিছু বিকার হয় না আজ রাতে সে বাথরুমে গিয়ে স্ব-মৈথুন করবেতার পকেট গরম হয়ে আছে ভাপ লাগে


এই লোকটাকে বিয়ে করেছিলাম পরিবারের অমতে, পালিয়ে গিয়ে খুব ছোট্ট  একটা সুন্দর সংসার আমাদের প্রথম প্রথম পাগলের মতো মিলন দিন নেই রাত নেই, সকাল সন্ধ্যা নেই গায়ে হাত দিলেই হতো।

কয়েক বছর কাটে সময় গড়িয়ে যায় মার্বেলের মতোন পরিবার মেনে নেয় দুজনেরই শাশুড়ি নাতি নাতনীর মুখ দেখতে চায় আমরা দুজন রিকশায় চড়ে ফুরফুরে মনে হাওয়ার মিঠাই খাই সিনেমা হলে ঢুকি ওর সিনেমা দেখার বাতিক আমার অতোটা না তবুও দেখি ওর সব কিছুই আমার ভালো লাগে আমাদের কোনো সন্তান হয় না ডাক্তার বলে দিয়েছেন, হবে না

রাত বাড়তে থাকে ক্রমশ: প্যাঁচার মতো শব্দ করে বাড়তে থাকে আমাদের দূরত্বও মাঝখানের কোলবালিশের মতো অদৃশ্য একটা দেওয়াল, নীরবতা আর নিস্পৃহতার গাঁথুনি দিয়ে, উঠে যায় কর্মব্যস্ত দিন শেষে আমরা দুজন আলাদা আলাদা বাসায় ফিরি কখনো হয়তো সে ফেরে অনেক রাতে সপ্তাহান্তে ছুটি অনেক রাতে একা গা ছমছম করে কোনো কারণ নেই তবুও ভয় লাগে কথা  বলার কেউ নেই ফোন করি, কখন ফিরবে?

সে হয়তো তাসের আড্ডায় বন্ধুদের সাথে মদ টদ খায় হয়তো শুধু বলে, দেরি হবে তুমি ঘুমাও আমার কমবয়সী শরীর তখনো জাগে হঠাৎ হঠাৎ ফোন করি, এসো! অপর প্রান্তে খিলখিল হাসির শব্দ শুনতে পাই

আমার মন মরে যায় এক লহমায় সমস্ত পৃথিবীর কালো বেড়ালের থাবা দিয়ে নিকষ অন্ধকার ঝপ করে নামিয়ে আনে আমি দেখি পত্রিকার পাতায় ধর্ষণের খবরগুলো ও খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ে চোখ চকচক করে ওঠে জিব দিয়ে ঠোঁট চাটে জিপারের ওপর হাত বুলোয় এক সময়কার ভালোবাসার মানুষের এ  বিকৃতি, ভীষণ আহত করে ভেতরটা শাওয়ার করে বেরিয়ে আলগোছে চুল ঝেড়ে বারান্দার দড়িতে টাওয়েল ঝুলিয়ে দিই আমার জীবনটাও একটা সূক্ষ্ণ বন্ধনের দড়িতে ঝুলতে থাকে

আমাদের কোনো ঝগড়া হয় না, মনোমালিন্য হয় না প্রতিক্রিয়াহীন বিক্রিয়াহীন লবণহীন নিরামিষের মতো গেলা শুধু আগে সামাজিকতা রক্ষা করতে বিভিন্ন বাসায় দাওয়াতে বা অনুষ্ঠানে যেতাম আমরা আটপৌরে মানুষজনদের একটিই প্রশ্ন, বাচ্চা হয় না ক্যান? কার সমস্যা? এসব শুনতে শুনতে কমিয়ে দিয়েছি যাওয়া

একটা বাগান করেছি ছোট্ট, বারান্দায় ফুল লতাদের নিয়ে অবসর কাটে কিচিরমিচির দুটো চড়ুই বাসা বেঁধেছে কার্নিশে। তাদের ঠোঁটে ঠোঁটে ভালোবাসা, ঠোঁটে করে খড় এনে নীড় বোনে। আমার মন ভালো থাকে। ফুলেদের সাথে, পাখিদের সাথে। এক সকালে চ্যাঁ চ্যাঁ করতে থাকে চড়ুইছানা। কী যে আনন্দ হয়! ওকে সেই আগের মতো উজ্জ্বল হয়ে ডাকি, এদিকে এসো দেখে যাওওও... ও এসে চুপ করে দেখে। ওর বুকের কোথাও কী মোচড় দেয়!

সেদিন রাতে আমার শরীরে ও প্রবেশ করে অনেকদিন পর। আমরা আবার ভালোবাসি। কোথাও একটা আস্ত ব্রণ দূরত্বের। ঠিক স্বাভাবিকতা নেই। যা আছে তা অভ্যাস। শরীরটাকে চর্চার মাঝে রাখতে হয়।

কাল রাতে ও বাড়ি ফেরেনি। কাকভোরে ফোনের শব্দে ঘুম ভাঙ্গে। পুলিশের, থানা থেকে। আপনাকে একটু আসতে হবে ম্যাডাম! কাল রাতে আখের রস বিক্রি করত  যে মেয়েটি রাস্তার মোড়ে বাবার সাথে, ওকে ধর্ষণের পর মেরে ফেলা হয়েছে

তাকিয়ে দেখি কার্নিশ থেকে চড়ুই ছানাটি ডানা মেলে উড়তে শিখেছে। 


1 কমেন্টস্: