কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ৬ জানুয়ারী, ২০১৮

শ্রাবণী মিত্র


অপেক্ষার কোনও পিছুটান নেই তাই না ভাস্ক  
                                                     
ভাতের থালায় নেমে আসা হলদে বিকেল বিষাদগ্রস্ত স্মৃতি বয়ে আনে। বৈধব্যের চিহ্ন বহনকারী শ্বেতরঙা দরজার গোবরাটে পান চিবোতে চিবোতে কেউ কষাটে লাল থুতু ফেলে যায়, জানালা বন্ধ বহুদিন। পালতোলা নৌকার মতো ফুলে ওঠা দোলনচাঁপার স্তন থেকে হৈমন্তী রোদ ঝরে পড়ে অসময়ে। বাতিল হয়ে যাওয়া প্রতিটা ট্রেন বিচ্ছেদের শীতকাল নিয়ে ফেরে। কোথাও কোনও ছোট্ট কুয়োর জলে আহত চাঁদ শুয়ে থাকে চুপচাপ।

আসলে পাখির ডানা ছিঁড়ে গেলে তারাও এক একটা নিঃসঙ্গ শবের বাড়ি। গলে যাওয়া মোমের অভিমান থাকতে নেই। আইরিশ ব্ল্যু রঙের ঘোড়া মাড়িয়ে গেছে হরমোনাল ক্যামেরায় ক্যাপচারড স্থিরছবির দেহ। কুঁড়ি আসার মরশুমে বেলগাছের পাতা কেউ কুচি কুচি করে কেটে ফেলেছে।

ধানের গোলা থেকে উড়ে গেছে মত্ত যৌবন। আফটার শাওয়ার আমিও চিরন্তন অভ্যাসের বশে ভেজা শাড়ি খুলে ফেলি, ব্লাউজ খুলি, যত্ন করে আলতা ধুয়েনি, মাছের ঝোল খাই না বহুকাল। হলুদ নাকছাবির গা বরফকুচির মতোই শীতল। পাউডার কৌটোর ভেতর বিষাদের ঘন স্তর, স্নেহের ইঁদুর কুরে কুরে খায় ডায়রির সবকটা পাতা, ওর বুকে এখন ন্যাপথালিনের গন্ধ ভীষণ।

গ্লানি, আর্তনাদ, আক্ষেপ বাকি নেই কিছু আর। সবুজ রঙ নিজেকে প্রত্যয়ী করে তোলার ধারণা মাত্র, কোনও ক্লোরোফিল অবশিষ্ট নেই বুকের খাঁজে। দুধের বাটিতে অজান্তেই চিনির বদলে মিশিয়ে ফেলি নুন, খোয়াইয়ের বুকে ভাসিয়ে দিই জন্মদাগ।  

মানুষ পাথর ছুঁয়ে ঈশ্বর দর্শন করে, ঐশ্বরিক ঘ্রাণ মৃত্যুকে অনুপ্রাণিত করে। তুমি বলতে মৃত্যুকে ভালোবাসার মতো কৌমার্য শিল্প আর কিছু নেই পৃথিবীতে। মৃত্যুর সাধনায় নির্লিপ্ত হওয়ার আগে একবার ফিরতে চাই প্রস্তরজন্মের কাছে ফেলে আসা আমাদের স্নেহের বসন্তে।

ট্রাম, রাস্তা, শহর, ধুলো, বাস, ট্যাক্সি পেরিয়ে ফিরে যাই চলো রেখে আসা প্রিয় কমলা রঙের নদীর কাছে। মনের উঠোনে মাদুর পেতে কমলালেবুর গন্ধ খুঁজি। আপেলের চোখ থেকে আলতো করে মুছে নিই কিছু না পাওয়ার কাঁচা শোক। মরচে ধরা চুমুর ক্ষতে নরম আঙুলের ছোঁয়ায় বোরোলীন লাগাই সযত্নে। আমি আসলে আমার অন্তরবর্তী শূণ্যতায় তোমায় পেয়েছি, অপেক্ষার কোনও পিছুটান নেই তাই না ভাস্কর!

মোহ

কিছু হলদে আলো হাঁটতে হাঁটতে মাঝেমধ্যেই উৎসব হয়ে যায় বিসর্জন নিশ্চিত জেনেও...

আঘাত

ঘরময় বিসূচিকা ঘ্রাণ...
বিছানা জুড়ে সাঁতরানো নির্ঘুম রাত...
যোনি ছুঁয়ে যায় হাতের কুঠার...
নোনা বালিশের তলায় রাখা গোধূলির কাব্য, প্রথম পাতায় লেখা...
“গোলাপের ক্ষত সেরে যায়, তুমি বরং আমায় কাঁটায় বিঁধে রেখো”  

কর্তব্য

গায়ে পাঁচফোড়নের গন্ধ মেখে সময় অসময়ে মেয়েটি বিধুর জলে ফুটতে থাকে কচি চা পাতার মতো...

দায়িত্ব

যে মেয়েটি স্নান ভুলে গেছে বহুকাল আগে, সে তার চুলে গোটা সংসার বেঁধে ফেলেছে...

প্রতিদান

নালিশের আখরে লেগে থাকা ‘তুমি’ নামের ধুলো বিকেলের ডাকে চিঠি হয়ে ফিরে  আসে...

প্রতিশোধ

নির্ভার হাওয়ায় যে ছেলেটির ঠোঁট কেঁপে উঠতো, সে তার বুকের পাঁজরে নুনের সাগর লুকিয়েছে...

সমর্পণ

ভোরের সাজিতে লাল টকটকে ফুল হয়ে নির্বাচিত ঈশ্বরের পায়ে সেজে ওঠে মেয়েটি প্রতিদিন, প্রতিরাত...

বিসর্জন

যে মেয়েটি ভেজা শাড়ির গায়ে মাছধরার ছবি আঁকতো,
হাতের মুঠো খুলে সে আজ ঝাঁকে ঝাঁকে ব্রাহ্মণী হাঁস উড়িয়েছে...

যে ছেলেটি নদী কিনতে গিয়ে সমুদ্র খরচ করতো সে আজ মূকাভিনয়ের আদলে নগ্ন বাউল সেজেছে...

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন