কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ৬ জানুয়ারী, ২০১৮

<<<< সম্পাদকীয় >>>>


কালিমাটি অনলাইন / ৫২  

সদ্য প্রয়াত কবি বিকাশকুমার সরকারের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ পরিচয়ের কোনো  সুযোগ অতীতে হয়নি। আর তাঁর অকাল প্রয়াণের দরুণ ভবিষ্যতেও সেই সম্ভাবনা থাকল  না। তবে তিনি আমার বন্ধু ছিলেন, কেননা তিনি কবিতা লিখতেন। দুঃখের কথা, তিনি একটি স্বরচিত কবিতা পাঠের আসরে যখন অন্যান্য আরও কয়েকজন কবির সঙ্গে মঞ্চে বসেছিলেন তাঁর নিজের কবিতা পাঠের জন্য আমন্ত্রণের অপেক্ষায়, ঠিক তখনই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁরই সঙ্গে মঞ্চে আসীন এক কবিবন্ধু শান্ত্বনু সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে মঞ্চের বাইরে নিয়ে আসেন এবং শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় অবিলম্বে অনতিদূরের একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু তাঁর এই আন্তরিক তৎপরতা সত্ত্বেও বিকাশকুমার সরকারকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।  

বিকাশকুমার সরকারের প্রয়াণসংবাদ যথাসময়ে কবিতা পাঠের আসরে পৌঁছেছিল  কিনা, সেদিন যাঁরা সেই আসরে উপস্থিত ছিলেন, তাঁরাই সঠিক বলতে পারবেন। কিন্তু বিকাশ যে গুরুতর অসুস্থ হয়ে মঞ্চ থেকে বিদায় নিয়েছিলেন, সে সম্পর্কে উপস্থিত সবাই অবগত ছিলেন। না, সেদিন বিকাশ তাঁর কবিতা সর্বসমক্ষে পাঠ করতে পারেন নি। কবি শান্ত্বনুও কবিতা পাঠ করতে পারেন নি। কিন্তু উপস্থিত অন্যান্য সব কবিরাই নিজেদের কবিতা পাঠ করেছিলেন। কেননা বিকাশ ও শান্ত্বনু কবিতা পাঠের মঞ্চ থেকে নেমে যাবার পরও কবিতা পাঠের আসরে কোনো বিরতি ঘোষণা হয়নি এবং উপস্থিত কবিরা তাঁদের কবিতা পাঠে নিমগ্ন ছিলেন।


কবিতা পাঠের আসরের এই দুঃখজনক ঘটনাটির পাশাপাশি, সেদিন সেই আসরে  উপস্থিত কবি ও কবিতার শ্রোতাদের এবং একইসঙ্গে আসরের কর্মকর্তাদের আচার ও আচরণ সম্পর্কে ফেসবুকে অনেক আলোচনা-সমালোচনা ইতিমধ্যেই হয়েছে। নিন্দা-মন্দও করা হয়েছে। একটু আগেই যে কবি সশরীরে কবিতা পাঠের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন, সামান্য কিছু পরেই তাঁর প্রয়াণসংবাদ এসে পৌঁছনো সত্ত্বেও কবিতাপাঠ কেন স্থগিত করা হলো না, কেন সদ্য প্রয়াত কবিকে দেখতে হাসপাতালে যাবার কেউ কোনো প্রয়োজন বোধ করলেন না, এটা ভাবলে সত্যিই  আশ্চর্য হতে হয়! এটা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত লজ্জাজনক অমানবিক ব্যাপার। এবং এজন্য যে তাঁরা নিতান্ত নিন্দনীয়, তাতেও কোনো সংশয় নেই।  

কিন্তু এরপর এই ঘটনাটির প্রাসঙ্গিকতায় আরও কিছু অন্য প্রসঙ্গের কথা এসেই যায়। ফেসবুকে দেখলাম, কেউ কেউ সেদিনের উপস্থিত কবিদের নির্লিপ্ত আচরণের সমালোচনা করে লিখেছেন, কবিতা পাঠের জন্য কবিদের এত হ্যাংলামি কেন? কবিতা পাঠ করে কি তাঁরা কবি রূপে প্রতিষ্ঠালাভ করেন? বাংলা সাহিত্যের এক বিশিষ্ট কবি মন্তব্য করেছেন যে, কোনো কবিতা পাঠের আসরে যখন কোনো সুপ্রতিষ্ঠিত কবি বা কথা সাহিত্যিক আসেন, তখন তাঁরা তাঁদের আসা ও ব্যস্ত সময় ব্যয় করার জন্য অর্থসম্মান নিয়ে থাকেন। অথচ অন্যান্য সাধারণ কবিরা নিজ ব্যয়ে ছুটতে ছুটতে আসেন, যদিও এভাবে আসার জন্য কবি রূপে তাঁরা কখনই প্রতিষ্ঠা লাভ করেন না। অর্থাৎ এটা নিতান্তই একটা হ্যাংলামির ব্যাপার। না, এটা তেমন অযৌক্তিক কথা নয়, কবিতা সভায় শুধু কবিতা পড়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করা সত্যিই যায় না। বস্তুত পক্ষে, বাংলা কবিতা নিয়ে দীর্ঘদিন যে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে, যেভাবে প্রায় প্রতিদিন কবিতার বাঁকবদল হয়ে চলেছে, সেইসব কবিতা কবির মুখে একবার শুনে তা অনুধাবন করা আদৌ সম্ভব নয়, এবং সে চেষ্টাও কেউ করেন না। অর্থাৎ কবিতা শুধু পড়াই হয়, শোনা হয় না। বোঝা ও রসগ্রহণ করা তো অনেক দূরের কথা। কিন্তু তাসত্ত্বেও বলতে হয়, যেখানে সুপ্রতিষ্ঠিত কবি সাহিত্যিকরা অর্থলাভের জন্য কবিতা বা সাহিত্যসভায় যোগদান করেন, তার বিপ্রতীপে কিন্তু অসংখ্য পরিচিত-অপরিচিত, সামান্য প্রতিষ্ঠিত-অপ্রতিষ্ঠিত, দক্ষ-শিক্ষানবিস কবিরা  নিজের পকেটের অর্থ খরচ করে দূর দূরান্ত থাকে অনেক কষ্ট সহ্য করে ছুটে ছুটে আসেন শুধুমাত্র কবিতা ও কথাসাহিত্যকে ভালোবেসে। এই ভালোবাসাকে কখনই অস্বীকার করা যায় না। হ্যাংলামির অপবাদ দিয়ে তাঁদের উপেক্ষা করাও ঠিক নয়।  তবে আমি মনে করি, সেদিন বিকাশের অপ্রত্যাশিত মৃত্যুসংবাদ শোনার পর কবিতা পাঠের আসরের সঙ্গে সঙ্গে সমাপ্তি ঘোষণা করা উচিৎ ছিল এবং উপস্থিত কবিদের বিকাশের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জানিয়ে কবিতাপাঠে বিরত থাকা উচিৎ ছিল। আর  সেদিন কবিবন্ধু শান্ত্বনু ছাড়াও আরও দু’ তিনজন কবি হাসপাতালে গেছিলেন, কিন্তু  সেই সংখ্যাটা যদি আরও বেশি হতো, তাহলে তা শোভন হতো।

একবিংশ শতাব্দী সতেরো বছর পূর্ণ করে আঠারোয় পা রাখল। অর্থাৎ বলা যেতে পারে, একবিংশ শতাব্দী এতদিনে সাবালক হলো। কিন্তু খুব দুঃখ লাগে, যখন দেখি আমাদের মধ্যে অনেকেরই যথেষ্ঠ বয়স হওয়া সত্ত্বেও অনেক ব্যাপারেই এখনও সাবালক হয়ে উঠতে পারিনি। বিকাশের অভাবিত মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে তা আবার প্রত্যক্ষ করে লজ্জিত হলাম।

নতুন বছরের শুভেচ্ছা শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন জানাই সবাইকে।

আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা :
kajalsen1952@gmail.com / kalimationline100@gmail.com 

দূরভাষ যোগাযোগ :           
08789040217 / 09835544675
                                                        
অথবা সরাসরি ডাকযোগে যোগাযোগ :
Kajal Sen, Flat 301, Phase 2, Parvati Condominium, 50 Pramathanagar Main Road, Pramathanagar, Jamshedpur 831002, Jharkhand, India




0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন