কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শনিবার, ৬ জানুয়ারী, ২০১৮

অলোকপর্ণা


ধারাবাহিক উপন্যাস






তাহার নামটি


(পনেরো)       

ভোরের দিকে জোর হিসি পেয়ে রাজীবের ঘুম ভেঙে গেল। বাথরুমে যেতে গিয়ে পায়ে মশারি জড়িয়ে একাকার। যখন প্রায় পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা, রাজীব  বাথরুমের সামনে এসে দেখল দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। অথচ মা ঘরে বিছানায় ঘুমোচ্ছে।- তবে কি চোর?! এদিকে হিসি হয়ে যাবে চোর ধরতে গেলে। বাথরুমের দরজায় কড়া নজর রেখে রাজীব ছাদে এসে দাঁড়াল। ভোরের আলো ফোটেনি তখনো। বাথরুমের দরজায় চোখ রেখেই ক্যালেন্ডুলার টবে ঢেলে দিতে লাগল হিসি। আর তখনই ফ্ল্যাশ টানার আওয়াজে দরজা খোলার আওয়াজ শুনতে পেল সে। তাড়াতাড়ি হিসি সেরে ওঠার আগেই বাথরুম থেকে বেরিয়ে এল রঞ্জনা। দ্রুত নিজেকে ঢাকতে রঞ্জনার দিকে পিছন ফিরে টবের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকল রাজীব। হিসি শেষ করে পিছন ফিরতেই দেখে রঞ্জনা আর নেই। সারা বাড়ি খুঁজে দেখল, রঞ্জনা কোথাও নেই। তবে কি সে ভুল দেখেছে? বাথরুমে ঢুকেই বেরিয়ে এল রাজীব, “কী গন্ধ!”- ভুল সে দেখেনি... তাহলে রঞ্জনা গেল কোথায়? বাকী রাত তার ঘুম হলো না।  

‘কাঁচপোকা’-র অফিসে বসে আছেন অনীতা। অরীন রায় তাঁর দিকে তাকিয়ে উল্টো দিকের চেয়ারে বসা।
অনীতা বলেন, “কি বুঝলে? চলবে?”
“অন্যরকম, ফাল্গুন সংখ্যাটা প্রেসে চলে গেছে, খোঁজ নিয়ে দেখছি রাখা যায় কি না”, সাদা একটা কাগজ ভাজ করে টেবিলের একটা ফাইলে ভরে রাখতে রাখতে অরীন বললেন, “মেয়েটি কে? কী নামে ছাপব?”
“ঋতমের বন্ধু, রঞ্জনা”
“বন্ধু?”
“হ্যাঁ, বন্ধুই”, পাশ থেকে একটা পত্রিকা তুলে নিয়ে ওলটাতে লাগলেন অনীতা।
“ঋতম কেমন আছে?”
“ভালোই। তুমি?”
“একটা সময় পর আমাদের থাকা গুলো আর ভালো খারাপের পর্যায়ে পড়ে না, আমরা থেকে যাই খালি”
অনীতা অল্প হাসলেন।
“হাসছো যে?”
“একটা সময় পর, একেকটা সম্পর্কের ফাঁক ফোঁকরগুলো অর্থহীন এরকম হাসি দিয়ে ভরিয়ে দেওয়া যায়, তাই দিচ্ছি”
“আমার কি ক্ষমা চাওয়া প্রয়োজন আনীতা?”
“তুমি কবি অরীন। ক্ষমা চাইলেও কি অপরাধবোধ থেকে কোনো দিন থেকে মুক্ত হতে পারবে?”
অরীন রায় কিছু বলেন না।
“তাহলে শুধু শুধু নিজেকে নীচে নামিও না, অন্তত ঋতম তোমায় যে আসনে বসিয়েছে, তার চেয়ে নীচে নামালে তোমায় মানাবে না, আমারও কষ্ট হবে। আমি আসি আজকে”

দরজা অবধি অনীতাকে এগিয়ে দেন অরীন, “আই অ্যাম সরি অনীতা”, তার গলা অস্পষ্ট শোনায়।
পায়ে চটি গলাতে গলাতে মাথা না তুলেই অনীতা বলেন, “ভালো থেকো।”

অনিলবাবুর পড়ানোর ফাঁকে বারবার চোখাচোখি হলেও অঞ্জন গরিমাকে ইশারা করে উঠতে পারল না। পড়া শেষ হওয়ার পর সাইকেল নিয়ে অনেকটা দৌড়ে গিয়ে গরিমাকে ধরে ফেলল সে।
“ওই... কথা ছিল তোর সাথে”, অঞ্জনের কথা শুনে গরিমা ঘুরে দাঁড়ায়।
“কী ব্যাপারে?”
“আমি তোকে বলেছিলাম না একজনের কথা”
“তো?”
“কাউকে বলবি না তো?”
“না, কী হয়েছে?”
“সে আমাদের বাড়ির স্টোর রুমে লুকিয়ে আছে কাল রাত থেকে”
গরিমা একবার অঞ্জনের মাথা থেকে পা অবধি দেখে, “তা আমি কি করবো”
“মানে বলছিলাম, এটা কি আমি ঠিক করছি, মানে ওর বাড়ির লোকজন অনেক খুঁজছে ওকে, কিন্তু ও কাউকে বলতে বারণ করেছে”
“তো আমায় বলছিস কেন?”
“তোকে বলা যায়”
“আচ্ছা? আমায় বলা যায়, আমার সাথে শোয়াও যায়! মানে আমার সাথে যা খুশি তাই করা যায়, তাই না?!”
অঞ্জন ভয়ে ভয়ে চারদিকে তাকিয়ে বলে, “তুই চিৎকার করছিস কেন? আমি কী  করলাম!”
“কি করবি, কিচ্ছু না, তুই ইউস করেছিস আমায়, শুয়েছিস আমার সাথে”
“কিন্তু আমি তো তোকে...”
“ভালোবাসিস না, জানি। আমি জানি। কিন্তু আর কেউ জানে না। তাই না?”
অঞ্জনের গলা শুকিয়ে আসে, “মানে, কী বলতে চাইছিস?”
“কাল সকাল এগারোটায় যদি তুই আমার বাড়ি না আসিস সবাইকে জানিয়ে দেবো তুই আমার সাথে কী করেছিস”, বাস স্টপে বাস এসে দাঁড়াতে গরিমা উঠে যায়।

দুপুর থেকে পিমকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কাবেরীর মন ভার। রাজীব বাড়ির আনাচে কানাচে মায় স্টোর রুমও বাদ দেয়নি, পিম নেই কোথাও। সিঁড়ি ঘর থেকে সুনীল মজুমদারকে বলতে শোনা গেল, “যা, সব বিদায় হ বাড়ি তেকে, গেলে বাঁচি আমি, শুয়োরের বাচ্ছা সব! আমি যাবো, কালই পুলিশে যাবো, হারামজাদাগুলোর ঘেঁটিটা ধরে বের করে এনেই ছাড়বো” নিজের চেম্বারে ঢুকে গেলেন সুনীল। রাজীব এসে বসল কাবেরীর পাশে, “মা,”
“বল”
“এবার কী হবে মা!”
“চিন্তা করিস না টিক ফিরে আসবে”
“যদি না আসে,”
“আসবেই”
“মা, যদি বাবার মতো...”
“চুপ, একদম চুপ”
রাজীব চমকে কাবেরীর দিকে তাকায়। বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারে না, তার চোখ ভরে আসে জলে। কাবেরী ছেলের মাথায় হাত রাখেন।
“মা, বাবা কেন চলে গেল ওরকম”
“জানি না টোটো, আমায় বলে তো যাননি, নিজের যা মনে হয়েচে তাই করেচেন”
“দিদি কেন চলে গেল? পিম?”
“ওরা কোত্তাও যায়নি, টিক আসবে, তুই কাঁদিস না বোকার মতো, অঞ্জনকে কিন্তু  বলে দেবো যে তুই পিমের জন্য কাঁদচিলি”
রাজীব চোখের জল মোছে।
“দাঁড়া আমি সন্দ্যেটা দিয়ে আসি”, কাবেরী উঠে ধূপ হাতে ছাদে যান, এক কোণায় রাখা তুলসী গাছটার সামনে দাঁড়িয়ে চোখ বুজেই খুলে ফেলেন,- অঞ্জনদের ছাদে সাদা সাদা মতো কি ঘুরচে ওটা, পিম নাকি?!- “টোটো! ও টোটো, শিগগিরি আয়!”


পিমকে এইছাদ থেকে ওই ছাদে রাজীবের হাতে পাচার করে দিয়ে অঞ্জন আলতো করে স্টোর রুমের দরজা খুলে ঢোকে। দেখে মোমবাতির আলোয় বসে রঞ্জনা কিছু লিখছে একটা ডায়েরিতে।
“তুমি পিমকে নিয়ে এসেছিলে আমাদের ছাদে?”
“হ্যাঁ”
“তুমি তোমাদের বাড়ি গিয়েছিলে?”
“হ্যাঁ, ছাদের পাঁচিল টপকে”
“কেউ যদি দেখে ফেলত, আমার কী হতো!”
“তা আমি এইখানে বসে হাগবো, মুতবো না কি! আমি কাল রাতে পায়খানা করতে আর আজকে দুপুরে স্নান করতে বাড়ি গিয়েছিলাম, তখনই পিমকে দেখে ইচ্ছে হলো নিয়ে আসি, তাই নিয়ে এসেছিলাম, কী করবি তুই?”
“আমি কী করব, কেউ দেখে ফেললে ভাবতো আমি সব জেনে শুনেও কাউকে কিছু জানাইনি”
“ভাবলে ভাবতো, কী যায় আসে”
অঞ্জন কিছুক্ষণ রঞ্জনার দিকে তাকিয়ে থাকল।
বিরক্ত হয়ে রঞ্জনা বলে, “কী দেখছিস?”
“ঋতম কে?”
“যেই হোক, তোর কী?” রঞ্জনা একটু অবাক হয়।
“আমার অনেক কিছু, সাব্বিরই বা কে?”
“তোর তাতে কী বে বোকাচোদা!” রঞ্জনা এগিয়ে আসে অঞ্জনের খুব কাছে।




অঞ্জনের গরম নিঃশ্বাস রঞ্জনার মুখে এসে পড়ছে। মোমের আলোয় যে ঘামের  ফোঁটাগুলো চকচক করছিল তার নাকে, তাতে নিঃশ্বাসের হাওয়া লেগে আরাম লাগে  রঞ্জনার। সে অঞ্জনের ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে।
নরম থেকে নরমতর, এর চেয়ে সহজ সরল যেন কিছু হয় না! এত পরিচিত, এত  শান্ত! অঞ্জন চেষ্টা করেও চোখ মেলে ধরতে পারে না। একসময় রঞ্জনা তাকে দূরে সরিয়ে দেয়।

এক হাতে ঠোঁট মুছে রঞ্জনা বলে, “উঁহু, তুই সাব্বির নোস।”  


(ক্রমশ) 

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন