স্মৃতি,
ইতিহাস,
সাহিত্য,
(ভনসালি-র) সিনেমা
ও পদ্মিনী নিয়ে টুকরো কথা
নবীনচন্দ্র সেন ধাক্কা খেলেন আর কারুর থেকে নয়, স্বয়ং বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কাছ থেকে। তাঁর বিখ্যাত
কাব্য রৈবতক (১৮৮৭), কুরুক্ষেত্র
(১৮৯৩),
প্রভাস (১৮৯৬) সম্পর্কে বঙ্কিম বললেন তিনি নাকি কৃষ্ণের
মুখে উনিশ শতকের আধুনিক বাঙালির কথা বসিয়েছেন।১ পশ্চাৎদৃষ্টি থেকে নবীনচন্দ্রের
অভিমানকে দোষ দিতে পারিনা। বঙ্কিমচন্দ্র নিজেও তো রাজসিংহ উপন্যাসে একই কাণ্ড ঘটিয়েছেন।
একটা ঐতিহাসিক সেলাই বা gerrymandering-এর মাধ্যমে রাজসিংহকে ঊনবিংশ শতাব্দীর
মার্জিত,
সংস্কৃতিবান আধুনিক বাঙালি করে তুলেছেন, যার সঙ্গে ওই সময়ের বাঙালি বাবু অনায়াসে ‘রিলেট’ করতে পারে।
সুদীপ্ত কবিরাজ দেখিয়েছেন এটা তাঁর বঙ্কিমচন্দ্র বিষয়ক বিখ্যাত বইতেই। একা
নবীনচন্দ্রকে দোষ দিলে চলে? এটা, মানে এই ঐতিহাসিক সেলাই
বা gerrymandering, তো আসলে সেই
সময়ের বাঙালির অভ্যেস, নিজেকে
ঐতিহাসিকায়িত করতে। তার রবীন্দ্রনাথ-কথিত ‘ইতিহাসবুভুক্ষা’ আর সেই
ইতিহাসে নিজেকে গৌরবান্বিত হতে দেখার ইচ্ছা প্রত্নতাত্ত্বিক-ইতিহাসবিদ রাখালদাস
বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছে ময়ুখ, ধর্মপাল, পাষাণের কথা। খ্যাতনামা
সিভিলিয়ান ইতিহাসবিদ রমেশচন্দ্র দত্তকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছে রাজপুত জীবন সন্ধ্যা, আর মারাঠা জীবন প্রভাত। তার সবগুলোই রবীন্দ্রনাথের ‘আরো সত্য’-র, বা ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের স্বপ্নলব্ধ ভারতবর্ষের ইতিহাস-এর
লক্ষণাক্রান্ত।২ বাঙালি এই ঐতিহাসিক সেলাই বা gerrymandering পরেও আর একটু সমর্থনীয় ভাবে করেছে। সুদীপ্ত কবিরাজই তাঁর
আরেকটি বইতে দেখিয়েছেন কীভাবে বাঙালি মিথিলার বিদ্যাপতিকে আর ওড়িশার জয়দেবকে নিজের অতীতের অঙ্গ করে নিয়েছে। এতে আর্নেস্ট
গেলনারের মতো জাতীয়তাবাদতাত্ত্বিকরা যতই ছলচাতুরি বা ‘invention’
দেখতে চান, ৩ ছলের কিছু
তেমন নেই। কারণ যে প্রক্রিয়ায় তা হয়েছে সেটা এই সংস্কৃতিগুলির গঠনের জেনেটিক
প্রক্রিয়ার অংশ, আর যে সময়ে তা হয়েছে তখন
আধুনিক অর্থে বাংলাদেশও ছিল না আর বাংলার বা মিথিলার বা ওড়িশার ভাষার ভাষাগত
আইডেনটিটি-ও ততটা গড়ে ওঠেনি।৪ নিজের জাতিগঠনের উপাদান হিসেবে এই ঐতিহাসিক সেলাই বা
রিপুকর্মে বাঙালির আগ্রহ ও উৎসাহ, যার নিদর্শন
আমরা দেখি বঙ্কিম থেকে রমেশচন্দ্রের লেখায়, তাতে রাজপুতানার স্থান ছিল খুব
উঁচুতে। রাজসিংহ উপন্যাসের এক পরবর্তী সংস্করণে বঙ্কিম বলেছিলেন ‘বাঙ্গালীর ইতিহাস চাই। নহিলে বাঙ্গালী মানুষ হইবে না’। এখানে
বাঙ্গালী-র অর্থ ভারতীয়, আর বাঙ্গালীর
অর্থ ভারতবর্ষ। সেই মানুষ হওয়ার অর্থ নিজের একান্ত রাজনৈতিক লোকসমাজ হিসেবে গড়ে
ওঠার ক্ষমতা। তার দায়িত্ব প্রাদেশিক
বাঙালি নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে তার নিজের
আর ভারতবর্ষের ইতিহাস ‘তৈরি’ করতে রাজপুতানার মধ্যে তার উপাদান খুঁজেছিল। রঙ্গলাল
বন্দ্যোপাধ্যায়ের (১৮৫৮) থেকেই তার শুরু। পদ্মিনী উপাখ্যান-এর থেকে রঙ্গলালের
কবিতা ‘স্বাধীনতা-হীনতায়’ (‘স্বাধীনতা-হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে,/কে বাঁচিতে চায়?/ দাসত্ব শৃঙ্খল
বল কে পরিবে পায় হে,/কে পরিবে
পায়।।)’
বিশাল অভিঘাত সৃষ্টি করেছিল সন্দেহ নেই। কতকটা তাঁর দেখানো
পথেই জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর (সরোজিনী বা চিতোর আক্রমণ নাটক, ১৮৭৫), রমেশচন্দ্র
দত্ত (রাজপুত জীবন সন্ধ্যা, ১৮৭৮), দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (মেবার পতন, ১৯০৮), অবনীন্দ্রনাথ
ঠাকুর (রাজকাহিনী, প্রথম খণ্ড
১৯১৯ আর দ্বিতীয় খণ্ড ১৯৩১), আর স্বয়ং
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিভিন্ন কবিতায়, গানে চিতোরের মধ্যযুগীয় রাণাদের শিভালরি আর বীরত্ব নিয়ে লেখা শুরু করলেন।
জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের সরোজিনী বা চিতোর আক্রমণ নাটক, ১৮৭৫-তেই রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন তাঁর গান, ‘জ্বল্ জ্বল্ চিতা, দ্বিগুণ দ্বিগুণ—/ পরান সঁপিবে
বিধবা বালা।’
ঐতিহাসিক সুমিত সরকার দেখিয়েছেন যে সেই সময়ে মেবার তার
সামন্ততান্ত্রিক অবক্ষয়ের চূড়ান্ত অবস্থায় ছিল। আর অদ্ভুত সমাপতন। ১৯০৫ থেকে
মেবারের রাণাদের হীন, দাসোচিত
ব্রিটিশ আনুগত্য আর স্থূলতম সামন্ততান্ত্রিক শোষণ তখন মেবারের বিভিন্ন জায়গায় কৃষক
বিদ্রোহের জন্ম দিয়েছে যা চলেছে ১৯২০ পর্যন্ত, আর উত্তর পশ্চিম বিহারের চম্পারণ আর গুজরাটের খেদা-য়
গান্ধীবাদী জাতীয়বাদের অন্ততঃ পরোক্ষ উৎস হিসেবে কাজ করেছে।৫ তাতেও অবিশ্যি
উচ্চশিক্ষিত বাঙালিদের পদ্মাবতীকে ঘিরে স্বদেশভাবনা থমকায়নি। বাঙ্গালীর ইতিহাসের
জন্য প্রতীকের দরকার ছিল। রবীন্দ্রনাথের গানটি এরকম ছিল—
জ্বল্ জ্বল্
চিতা,
দ্বিগুণ দ্বিগুণ—
পরান সঁপিবে বিধবা বালা।
জ্বলুক জ্বলুক চিতার আগুন,
জুড়াবে এখনি প্রাণের জ্বালা।।
শোন্ রে যবন, শোন্ রে তোরা,
যে জ্বালা হৃদয়ে জ্বালালি সবে
সাক্ষী র’লেন দেবতা তার—
এর প্রতিফল ভুগিতে হবে।।
দেখ্ রে জগৎ, মেলিয়ে নয়ন,
দেখ্ রে চন্দ্রমা, দেখ্ রে গগন,
স্বর্গ হতে সব দেখো দেবগণ—
জ্বলদ্-অক্ষরে রাখো গো লিখে।
স্পর্ধিত যবন, তোরাও দেখ্ রে,
সতীত্ব-রতন করিতে রক্ষণ
রাজপুত-সতী আজিকে কেমন
সঁপিছে পরান অনলশিখে।।
কিশোর রবি যখন জ্যোতিদাদার নাটকে গানটি বসাচ্ছেন তখন তাঁর
বয়স চোদ্দ। স্পষ্টই মুসলিম শাসকদের হাতে মর্যাদাহানির আশঙ্কায় রাজপুত রমণীর ‘জহর-ব্রত’ বা অগ্নিতে
আত্মসমর্পণের আর্কেটাইপ তখন তৈরি হয়ে গেছে। তার সামগ্রিক সম্ভার থেকেই ধার নিচ্ছেন
রবীন্দ্রনাথ। আর এর যোগানদারদের মধ্যে রেভারেণ্ড জেমস টড-এর ভূমিকা বা কৃতিত্ব
অস্বীকার করা যাবে না। ১৮২৯ থেকে ১৮৩২-এর মধ্যে বইটির দুটি খণ্ডই বেরিয়ে গেছে। এমনকি
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের মেবার পতন-ও সরাসরি পদ্মিনী আখ্যান নিয়ে নয়। সেখানে ট্রাজিক
নায়ক রাণা প্রতাপসিংহ। বাংলা সাহিত্যে টডের বয়ানে পদ্মিনী আখ্যানের প্রথম পরিবেশক
রঙ্গলাল বসুর উত্তরসুরী জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, আর তাঁর বিখ্যাত কনিষ্ঠ ভ্রাতা, আর খুড়তুতো ভাইপো। খেয়াল রাখতে হবে যে রঙ্গলালের ওই বিখ্যাত কবিতায় কিন্তু
মেবার রানীদের জহর-ব্রত প্রধান বিষয় নয়। সেখানে রাজপুত সেনারা একযোগে দেশের
স্বাধীনতা রক্ষার জন্য প্রাণদান নিশ্চিত এমন যুদ্ধের শপথ নিচ্ছেন।
অতএব রণভূমে চল ত্বরা যাই হে,
চল ত্বরা যাই।
দেশহিতে মরে যেই, তুল্য তার নাই
হে,
তুল্য তার
নাই।।
রেভারেণ্ড টডের বিখ্যাত বই দ্য অ্যানাল্স অ্যাণ্ড
অ্যাণ্টিকুইটিজ অভ রাজস্থান কিন্তু প্রামাণ্য ইতিহাস বই নয়। টড-তাত্ত্বিকদের
অধিকাংশই এ বিষয়ে একমত। এমনকি টড নিজেও সে দাবি করেন না। কিন্তু তাও টডের বই
রাজস্থান ও বাংলাকে দুভাবে প্রভাবিত করলো। রাজস্থানে মালিক মুহাম্মেদ জায়সী নামে
কবীরের দ্বারা প্রভাবিত চিস্তি বর্গের এক সুফি সন্ত পদ্মাবতী ও রতনসেনকে নিয়ে ১৫৪০ সালে পদ্মাবত কাব্য নামে
অবধী ভাষায় যে প্রেমকাহিনী লিখলেন তা
রাজস্থানের চারণ, ভাট ইত্যাদির মুখে মুখে স্থানীয় ও সাময়িক প্রয়োজনে পাল্টাতে
পাল্টাতে পাল্টাতে যে চেহারা নিল তাকে টড আবার পাল্টে দিলেন বিভিন্ন উৎস থেকে। সেই
বদলানো কাহিনী বাংলাতে এসে জাতীয়তাবাদের প্রতীক যুগিয়ে দিল। বাংলায় পদ্মাবতীর
কাহিনী কিন্তু টডের মধ্যস্থতার আগে এসেছে।
সৈয়দ আলাওল নামে এক সপ্তদশ শতাব্দীর মুসলিম কবি প্রথম এই পদ্মাবত আর
চারণ, ভাট ইত্যাদির বয়ান থেকে
নিষ্কাশিত পদ্মাবতীর কাহিনী বাংলায় আনেন পদ্মাবতী নামে ১৬৪৮ খ্রিষ্টাব্দে।৬ আর তার
কাহিনীর মিল জায়সীর পদ্মাবতী-র সঙ্গে। এই গল্পের পরবর্তী রাজস্থানী, টডীয় বা বাঙালি ভোলবদলের সঙ্গে নয়।
কী ছিল জায়সী বা আলাওলের আদি গল্পে? অবধী উপভাষায়, সাঙ্গীতিক পদ্যে জায়সী সেই পুরনো গল্পই বলেছেন— অপরূপা, ‘নবীনা’ রাজকন্যার জন্য বীর রাজপুত্রের ‘যাবই আমি যাবই, বাণিজ্যেতে’ ধরনের অভিযান। চিতোরের
রাণা রতনসেন নিজের নতুন পাওয়া শুকপাখি
হীরামনের কাছে সিংহলরাজ গন্ধর্বসেনের কন্যা পদ্মাবতীর অলোকসামান্য রূপের কথা শুনে
স্বদেশ ছেড়ে সাত সমুদ্দুর পেরিয়ে, অনেক
বাধাবিঘ্ন এড়িয়ে পদ্মাবতী-কে দেশে নিয়ে আসেন, আর তাঁকে বিয়ে করেন। কিন্তু অসদাচরণের জন্য চিতোরের রাজসভা থেকে বহিষ্কৃত এক
ব্রাহ্মণ পণ্ডিত প্রতিশোধের মানসে দিল্লী গিয়ে আলাউদ্দিন খলজীর কাছে পদ্মাবতীর
রূপের কথা পৌঁছে দেন। শুনে আলাউদ্দিন সসৈন্যে চিতোর আক্রমণ করে’ তার দখল নেন। কিন্তু গিয়ে শোনেন এক প্রতিযোগী রাজপুতের
সঙ্গে দ্বন্দ্বযুদ্ধে রতনসেন এমনিতেই মারা গেছেন, আর পদ্মাবতী সহমরণে স্বামীর চিতায় প্রাণত্যাগ করেছেন। সাধারণ অব্দের একেবারে
প্রথম থেকেই সুন্দরীর সন্ধানে বীর নায়কের বিপদসঙ্কুল পথে অভিযানের রমন্যাস ভারতীয় রূপকথা বা লোককথার এক
পরিচিত প্রসঙ্গ। রূপকথা নামটাই এর থেকে এসেছে কিনা কে জানে! ফলে খ্রিস্টীয় দ্বিতীয়
শতাব্দী থেকেই হিন্দু, বৌদ্ধ এবং জৈন
ঐতিহ্য জুড়ে পদ্মাবতী নামের এক পরম রূপবতীর কাহিনী চালু ছিল। তার উপজীব্য ছিল
উচ্চকোটির মানুষের প্রেম। চতুর্দশ থেকে সপ্তদশ শতাব্দী অবধি এই প্রেমকাহিনীর যে
সুফি বয়ানগুলি চালু হয় জায়সীর পদ্মাবত তাদের প্রথম। খলজীর উল্লেখ তাতে ঐতিহাসিক
মুহূর্ত এবং নির্দিষ্টতা জুগিয়েছিল। আলাওলের গল্পও কিছু স্থানীয় অনুষঙ্গ ও ব্যত্যয়
ছাড়া জায়সীর গল্পকেই অনুসরণ করেছে।৭
এখানে কয়েকটা প্রশ্ন উঠতেই পারে। দৌলত কাজী, সৈয়দ মুরতজা এবং বহরাম খানের সঙ্গে সৈয়দ আলাওল আদি মুঘল যুগের বাংলার চার বিখ্যাত
কবির,
মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের প্রধান ভিত্তিখনকদের একজন।
যেকালে বাঙালি কবি আলাওল পদ্মাবতীর গল্প লিখছেন জায়সীর অনুসরণে, সেকালে
শিক্ষিত বাঙালিদের হঠাৎ টডে পেলো কেন? কেনই বা এই ইতিহাসবুভুক্ষু উচ্চশিক্ষিত বাঙালিদের কারো মাথায় এলো না যে রূপসী
রাজকন্যার সন্ধানী রাজপুত্রের গল্পের ‘ট্রোপ’-এর যে সুফি মরমিয়া অভিযোজন
জায়সী আগে করলেন, আর ষোড়শ থেকে
বিংশ শতকের মধ্যে যার প্রায় ডজন খানেক ফার্সি এবং উর্দু ভাষ্যান্তর হলো তাদের
সঙ্গে ষোড়শ থেকে বিংশ শতকের মধ্যে রাজপুত রাজ্যগুলোতে রাজপুত রাজন্যবর্গের
দাক্ষিণ্যে লেখা পদ্মাবতীর গল্পের আরো বেশি ইতিহাসত্বকামী বেশ কিছু পুনঃকথনের মিল
এত কম?
জায়সীর দ্বারা অনুপ্রেরিত ফার্সি এবং উর্দু বয়ানগুলিতে
যেখানে প্রেমনিবেদন আর প্রণয়গাথাই প্রাণ, সেখানে ১৫৮৯-থেকে শুরু হওয়া রাজস্থানী বয়ানগুলিতে কেন সুলতান আলাউদ্দিন খলজির
লোভ ও লালসার বিরুদ্ধে রাজপুত বীরদের প্রতিরোধ, মর্যাদা ও পদ্মিনী সহ রাজপুত নারীদের পরানপণ আত্মমর্যাদার উপরেই বেশি জোর? কেনই বা তাঁদের মনে হলো না যে আলাউদ্দিন খলজির চিতোর বিজয়ের
ব্যাপারে যে ক’টা বৃত্তান্ত চতুর্দশ শতাব্দীতে বেরিয়েছিল, যাদের মধ্যে আমির খুসরো-র খাজায়েন উল ফুতু-ই সবচেয়ে বিখ্যাত, তাদের কোনোটাতেই পদ্মিনীর উল্লেখমাত্র নেই! অথচ ষোড়শ থেকে
বিংশ শতকের মধ্যে পদ্মাবতী কাহিনীর বিভিন্ন বয়ান ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ও
ভাষায় লেখা শুরু হয়ে গেলো, বিভিন্ন লোকসমাজের নিজেদের প্রয়োজন, আশা ও আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে তাল রেখে। মনে রাখতে হবে জায়সীর
কাব্যও এসেছে খলজির মৃত্যুর দুশো বছর পরে। প্রথম
রাজস্থানী বয়ানটিও ১৫৮৯-এর। এটা হতে পারে না যে কোথাও খলজির চিতোর বিজয়ের
ক্রনিক্লগুলির সঙ্গে পরে এই রানীর জহরব্রতের প্রসঙ্গ তাপ্পি মারা হয়ে গেল, জাতীয়তাবাদের প্রয়োজনে ও প্রণোদনায়?
এমন ছেঁড়া কানির তাপ্পি বা সেলাই যে জাতীয়তাবাদের ক্ষেত্রে
প্রায়শঃই হয়েছে তার কথা বলেছেন জাতীয়তাবাদের এক শ্রেষ্ঠ আধুনিক তাত্ত্বিক আর্নেস্ট
গেলনার। তাঁর থেকে পাই এই কঠোর চেতাওনি বা সতর্কবাণী, ‘the
cultural shred and patches used by nationalism are often arbitrary historical inventions.
Any old shred and patch would have served equally well. But in no way does it
follow that the principle of nationalism itself, as opposed to the avatars it
happens to pick up for its incarnations, is itself in the least contingent and
accidental’।৮ এই
তাপ্পির প্রাসঙ্গিকতা এখানেই আসে যে পদ্মাবতীর প্রতি রতনসেনের একনিষ্ঠ প্রেমের যে
ভাব এর মধ্যে পরিস্ফুট সেটা মিথ্যে। রাজপুত রাজন্যবর্গের বহুবিবাহ ও নারীদের
সম্পর্কে অবজ্ঞার যে সাক্ষ্য আছে তার সঙ্গেও এই একনিষ্ঠ একগামিতা ও প্রেমের গপ্পো
মেলে না। জায়সীর পদ্মাবত-এও এর উল্লেখ মজার। পদ্মাবতী্র সঙ্গে বিবাহের পর রতনসেন
তাঁর আগের রানী নাগমতীর সঙ্গে পুরনো সম্পর্কে আবার পুনঃপ্রবেশ করলে নাগমতী ও
পদ্মাবতীর মধ্যে সম্মুখ কলহ, এমনকি
ঘুষোঘুষি শুরু হলে রতনসেনকে হস্তক্ষেপ করতে হয় এবং তাঁদের মনে করিয়ে দিতে হয় যে
তাঁরা তাঁর মানে স্বামী রতন সেনের প্রতি সেবার কর্তব্যে পরস্পরের সঙ্গে আবদ্ধ ও একত্রিত।৯
আমাদের দেশের বাইরে জাতীয়তাবাদের এই তাপ্পির, ছলের উদাহরণ প্রচুর। তবে তাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে
ভারতীয় রাজনীতিবিদদের সঙ্গে ওই সব দেশের রাজনীতিবিদদের মনোভঙ্গি সব সময়ে মেলে না।
১৮১৭ সালে মধ্যযুগীয় বোহেমীয় ইতিহাসের খ্যাত্নামা পণ্ডিত ভাক্লাভ হ্যাঙ্কা (Vaclav
Hanka) দুই গুচ্ছ প্রাচীন পাণ্ডুলিপি
উপস্থাপিত করেছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ায়, যাতে নাকি ত্রয়োদশ শতাব্দীতে, এমনকি নবম
শতাব্দীতে চেক সমাজের প্রথাপ্রচল, গতিপ্রকৃতি, আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ছিল। এই পাণ্ডুলিপিগুলি চেক
জাতীয়তাবাদী ভাবনার উন্মেষে প্রভূত সহায়তা করেছিল। কিন্তু আধুনিক চেকোস্লোভাকিয়া-র
রূপকার আর তার ১৯১৮ সালে তার প্রথম রাষ্ট্রপতি টমাস গ্যারিগ ম্যাসারিক তাঁর
সহগবেষকদের সাহায্যে ওই টেক্স্টগুলির মধ্যেকার কালানৌচিত্ব দোষগুলির ভিত্তিতে
প্রমাণ করেছিলেন যে পাণ্ডুলিপিগুলি জাল। সেই সময়কার চেক জাতীয়তাবাদীরা এর জন্য
ম্যাসারিককে জার্মান চর বলেছিল। বলা হয়েছিল তিনি নৃকুলগতভাবে চেক না হওয়ায় চেক আত্মার আবেদন বোঝেন না। আর
তাঁর চেক জাতীয় জীবন থেকে সরে যাওয়া উচিত। এই পাণ্ডুলিপিগুলিকে জাল বলার মানে যাঁরা এদের ভিত্তিতে চেক জাতীয় আত্মপরিচয় গড়ে
তুলেছেন তাঁদের নির্বোধ ও জোচ্চোর বলা।
ম্যাসারিক কিন্তু বলেছিলেন যে পাণ্ডুলিপিগুলি জাল হলে তা
সর্বসমক্ষে স্বীকার করা উচিত। কারণ কোনো নেশন মিথলজি বা পুরাতত্ত্বর চেয়ে দৃঢ়তর
ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত। আমরা
মিথ্যা নির্মাণের সঙ্গে আপোষ করলে আমাদের নিজেদের ইতিহাস গড়তে পারবো না।
জাতীয়তাবাদের ভিত্তি হোক সত্য।১০
আমরা এর থেকে পদ্মাবতী প্রসঙ্গে ভারতীয় রাজনীতি বা রাজনীতিবিদদের
দ্বিধা বা অদ্বিধা সম্পর্কে কিছু বলতে চাইছি না। শুধু একটা কথা। ব্যক্তিগত বা
সমষ্টিগত স্মৃতির সঙ্গে দৃষ্টবাদী তথা পজিটিভিস্টিক, বৈজ্ঞানিক ইতিহাসের সম্পর্ক মসৃণ নয় জানি। Paul Ricoeur দেখিয়েছেন কীভাবে ইতিহাসে স্মৃতির অপব্যবহার হয় বিভিন্ন ভাবে— কৃত্রিম স্মৃতির ক্ষেত্রে স্মরণ করার (remembering) চাইতেও মুখস্থ করার (memorization) মাধ্যমে; স্বাভাবিক স্মৃতির
ক্ষেত্রে আটকানো স্মৃতি (blocked memory),
বাঁকিয়ে চুরিয়ে বদলে দেওয়া
স্মৃতি (manipulated
memory), অথবা অপব্যব্যহারাত্মক ভাবে
নিয়ন্ত্রিত স্মৃতির (abusively controlled memory) মাধ্যমে। আর সেটা করা যায় বিকারতত্ত্বীয়-নিরাময়িক (pathological-therapeutic),
ব্যবহারিক (practical), অথবা নৈতিক-রাজনৈতিক (ethico-political) স্তরে। আবার অন্তর্দর্শী ঐতিহাসিক জ্ঞানের মতে স্মৃতি যেসব গোষ্ঠীকে বেঁধে
রাখে তাদের মধ্যে থেকেই উদ্গীরিত হলেও, স্মৃতিও বানানো অথবা ভেবেচিন্তে সঞ্চারিত বা প্রেরিত হতে পারে, অথবা যে লোকসমাজের মধ্যে তার উদ্ভব হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে আর
প্রাসঙ্গিক না হলে আর উচ্চারিত না হতে পারে।১১
তবু দৃষ্টবাদী-বৈজ্ঞানিক ইতিহাসকেই আশ্রয় করার সময় একটা কথা
স্মরণে রাখতে হবে। এই ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগত স্মৃতিকেই অনেকে সামষ্টিক আত্মপরিচয়
গড়ার জন্যে বহু বচ্ছর ধরে ব্যবহার করেছেন। আমার মনে আছে কৈশোরে যখন ‘ইচ্ছা সম্যক ভ্রমণগমনে,/ কিন্তু পাথেয় নাস্তি’ (শরদিন্দু, ব্যোমকেশের কোনো এক রহস্যকাহিনী তে আছে) অবস্থায়
সুবোধচন্দ্র চক্রবর্তীর রম্যাণি বীক্ষ্য-র খন্ডগুলি গোগ্রাসে গিলতাম, তখন সম্ভবতঃ রাজস্থান পর্বে পড়েছিলাম এই রাজস্থানী কহাবত: ‘গঢ় হ্যায় তো চিত্তৌঢ়,/ অউর সব গঢ়ৈয়াঁ।/ রানী হ্যায় তো পদ্মাবতী্,/ অউর সব গধৈয়াঁ।/ ঝর্ণা ঝরে, গৌমুখ পড়ে,/ নরভেনাথ কি থোড়।/ লাখযুগ তপস্যা করে,/ তব পাও গঢ় চিত্তৌঢ়’ (স্মৃতি থেকে, প্রমাদ হবে না
বোধ হয়)। বহুদিন ধরে রাজস্থানের ভিতরে ও বাইরে বহু মানুষের, বিশেষতঃ হিন্দুর এটাই স্মৃতি ও মনোভাব রানী পদ্মাবতী বিষয়ে।
আর তাঁরা অনেকেই এই ধারণা পোষণ করেছেন সঙ্ঘ পরিবারের বাইরে।
খুব সম্ভবতঃ পদ্মাবতী এক মিথ। কিন্তু লিখিত ইতিহাসকে পেরিয়ে
কোনো লোকসমাজের সামষ্টিক ইতিহাসে মিথের জায়গা তো থাকেই! বঙ্কিমচন্দ্র কৃষ্ণচরিত্র
বইতে উদ্ধৃত করেছিলেন এই শ্লোকটি—
‘ধর্ম্মার্থকামমোক্ষাণামুপদেশসমন্বিতম্।
পূর্ব্ববৃত্তকথাযুক্তমিতিহাসং প্রচক্ষতে।।’
বঙ্কিম আরো বলছেন, ‘সকল জাতির মধ্যে, প্রাচীন
ইতিহাসে এইরূপ ঐতিহাসিকে ও অনৈতিহাসিকে, সত্যে ও মিথ্যায় মিশিয়া গিয়াছে। (বঙ্কিম রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড: সমগ্র সাহিত্য, কলিকাতা: সাহিত্য সংসদ, ১৯৫৪/২০০৪), পৃঃ ৩৫৬-৫৭)। স্পষ্টতঃই বঙ্কিম মিথিক, অ-যুক্তিনিষ্ঠ উপাদানসমূহ থেকে এক দেশীয় ইতিহাসসৃষ্টির কথা
বলেছেন,
যার প্রাথমিক কাজ সুদীপ্ত কবিরাজের মতে, ‘to
instruct, not inform’; কারণ ‘societies
can give coherence to themselves through
stories they tell about themselves, because people can gradually become what
they believe they are’।১২
এই কারণে পদ্মাবতী মিথ কিনা এই প্রশ্ন কিছুটা অবান্তর। তাঁর
গল্প ঔপনিবেশিক আমল থেকে বিভিন্ন অঞ্চলের ভারতীয় নিজেদের বলেছে, কিছুটা নুনচিনিঝাল মিশিয়ে, নিজেদের মর্যাদাবোধের প্রতীক হিসেবে। আসলে স্মৃতির সম্বন্ধে ঐতিহাসিক আর
মনোবিকলনবাদী অনুধাবন পদ্ধতির মৌলিক পার্থক্য আছে। ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি রীতিবদ্ধ, সম্মত ইতিহাস আর লৌকিক এবং প্রাতিজনিক স্মৃতির মধ্যে যে
প্রেষ বা বিততি আছে তার উপর জোর দেয়। কিন্তু মনোবৈকলনিক দৃষ্টিভঙ্গি (psychic
temporality) কোনো রৈখিক সাময়িকতাকে (linear temporality) প্রাধান্য দেয় না। তার বদলে আনে ‘পরত্ব’ বা afterwardness-এর ধারণা। পরত্ব আবার উল্লেখিত করে বিলম্বিত সংস্কারের একটি
প্রক্রিয়াকে (‘a process of deferred revision’)। Radstone-এর মতে
স্মৃতির শব্দালঙ্কারগুলির বিশ্লেষণ যেটা প্রকাশিত করে তা অতীতের সত্য নয়, পরবর্তী প্রয়োজন সমূহের দ্বারা তাড়িত বিশেষ বিশেষ সংস্কার
বা বদল (the
analysis of memory’s tropes can reveal not the truth of the past, but a
particular revision prompted by later events’।১৩ ইতিহাসের তরফে লোকায়ত
স্মৃতির ব্যবহার আর ফ্রয়েডের স্মৃতির ধারণার মধ্যে আরেকটি পার্থক্য হলো আমাদের
অভিজ্ঞতাকে চেহারা দেওয়ার ও বদলে দেওয়ার কাজে উৎপত্তি, আকাঙ্ক্ষা, যৌন প্রভেদ
ইত্যাকার প্রাথমিক ফ্যান্টাসিগুলির (primary fantasies) সেই ভূমিকা, যার ফলে স্মৃতিকে আর সোজাসুজি ঐতিহাসিক ঘনাসমূহের উপরে খাপে খাপে বসিয়ে দেওয়া
যায় না।
ফলে স্মৃতি অনেক ইতিহাসাতিরিক্ত প্রয়োজনের সন্তুষ্টি যোগাতে
পারে। পদ্মাবতীর নির্মাণ হয়তো সেই কারণেই হয়েছিল বেশ কয়েক শতাব্দী ধরে। কিন্তু প্রশ্ন
হলো কোন প্রয়োজনসমূহ। সেটা কিছুতেই কয়েকটি দল বা গোষ্ঠীর তরফে নির্বাচনী উদ্দেশ্যে
বা তাকে পেরিয়ে একটি বহিষ্কারক ও সংকীর্ণ লোকসমাজের উপরে দাঁড়ানো স্বদেশভাবনা নয়।
এই প্রসঙ্গেই মনে পড়ে Lonsdale-এর করা
নীতিমানভিত্তিক নৃকৌলিকতা এবং রাজনৈতিক উপজাতীয়তাবাদের বিখ্যাত পার্থক্য।১৪ বেশ
কয়েক শতক ধ’রে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে
পদ্মাবতীর যে নির্মাণ হয়েছে তা যদি নৈতিক নৃকৌলিকতার কারণে হয় তবে তাকে নির্বাচনী
কারণে ব্যবহার করা সঙ্ঘের তরফে উপজাতীয়তাবাদের রাজনৈতিক উপজাতীয়তাবাদ ছাড়া আর কিছু
নয়।
তবে মহাজ্ঞানী ভনসালী পদ্মাবতীকে নিয়ে যে সিনেমা করেছেন
তাকে নিয়ে এই ব্যাপারে কোনো বাক্যব্যয় না
করাই ভালো। এই ভদ্রলোক যিনি দেবদাসের মতো গল্পকে অননুদ্ধারণীয়ভাবে বিকৃত করেছেন, গলিয়োঁ কী রামলীলা-র মতো উৎকট ছবি বানিয়েছেন, তিনি পদ্মাবতীর গপ্পো নিয়ে যা করবেন, তাতে স্পেক্ট্যাকুলার সেট থাকবে, স্টেপ্ট্যাকুলার ডান্স থাকবে আর কিছু কী থাকবে তা ভগবান বা
আল্লা জানেন! তাঁর ছবির মুক্তি আটকালে সেটা কেবল মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ব্যত্যয়ের ছোট্ট ব্যাপার ছাড়া আর
কিবা হবে! কত ভালো, মোটামুটি, বাজে ছবি আটকেছে!
গ্রন্থসূত্র
১। নবীনচন্দ্র সেন, আমার জীবন, চতুর্থ খণ্ড, সঃ শান্তিকুমার দাশগুপ্ত এবং হরিবন্ধু মুখটি, নবীনচন্দ্র রচনাবলী (কলকাতা দত্তচৌধুরী আণ্ড সন্স, ১৯৭৫), পৃঃ ৫৮-৬২।
২। Sudipta Kaviraj, The Unhappy Consciousness:
Bankimchandra Chattopadhyay and the Formation of Nationalist Discourse in India
(Delhi: Oxford University Press, 1998), pp. 106-115.
৩। Eric J. Hobsbawm and Terence Ranger (eds.), The
Invention of Tradition (Cambridge, UK: Cambridge University Press, 1983), pp.1-2, cited in
Anthony D. Smith, Nationalism and Modernism, pp.117-18; এবং Ernest
Gellner, “What Is a Nation? The Course of Nationalism Did Not Run Smooth,” in
Gellner, Nations and Nationalism (Oxford; Basil Blackwell, 1988), pp.53-62—
especially p.57.
৪। Sudipta Kaviraj, The Imaginary Institution of
India: Politics and Ideas (New York: Columbia University Press, 2010) p. 141.
৫। Sumit Sarkar, Modern India: 1855-1947 (New York: Palgrave Macmillan, 1983/1989), pp. 155-56.
৬। বরূণ চক্রবর্তী, টডের রাজস্থান ও বাংলা সাহিত্য, (কলকাতা পুস্তক বিপণি, ১৩৮৮/ ১৯৮১)।
৭। Ramya Sreenivasan, The Many Lives of a Rajput
Queen: Heroic Pasts in India. c.1500-1900 (Seattle:
University of Washington Press, 2007),
especially pp. 1-5.
৮। Gellner, Nations and Nationalism, p. 56.
৯। Sreenivasan, The Many Lives, p. 55.
১০। Péter Dávidházi, ‘To Authenticate a
Manuscript: The Case of the Toldy and Hanka, Hermeneutically Reconsidered’, in
János M. Bak, Patrick J. Geary, and Gábor
Klaniczay, eds., Manufacturing a Past for the Present: Forgery and Authenticity
in Medievalist Texts and Objects in Nineteenth Century Europe (Leiden, The
Netherlands: Brill, 2015), pp. 31-55.
১১। Paul Ricoeur, Memory, History Forgetting
(Chicago, London: University of Chicago Press, 2004), pp. 56-92.
১২। Kaviraj, Unhappy Consciousness, p. 144.
১৩। S. Radstone, Memory and Methodology (New York
and Oxford: Berg, 2000), p. 86.
১৪। John Lonsdale, ‘Moral ethnicity and Political
Tribalism’, in Preban Kaarsholm and Jan Hultin (eds.), Inventions and
Boundaries: Historical and Anthropological Approaches to the Study of Ethnicity
and Nationalism (Roskilde, Denmark: Roskilde University, 1994), pp. 136-139.
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন