কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ, ২০১৭

ব্রততী সান্যাল

অপ্রাপ্তি

অভ্যস্ত আমি মাপিনি গতানুগতিকতার আঙ্গিক,
নিরন্তর চলেছি কেবল স্রোতের বিন্যাস ছুঁয়ে
অমার্জিত চিন্তনের খাদ এড়িয়ে

প্রথাগত তানের সীমান্ত ভাঙা হয় নি আজও,
স্পর্শ করা হয় নি অবান্তর ঘূর্ণিঝড়ের বৃষ্টিধারা
হয়ে ওঠা হয়নি দিশাহীন নৌকার পাল

অপ্রকাশিত রাগিণী কক্ষবন্দী হয়ে আছে থমকে দাঁড়িয়ে আবির-রঙা বসন্ত,
স্বীকৃতির চিরাচরিত সেই কাঁটাতার ঘেঁষে

পরিকল্পিত ছন্দে যাপিত হয় গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত
সমাজের চোরাটানে অবুঝ পায়ে হেঁটে যাই,
বিচক্ষণতার কেন্দ্রস্থলে দিয়েছি দৃশ্যহীনতার প্রলেপ

অঘোষিত নিয়মের চৌকাঠ ডিঙিয়ে,
স্যাঁতস্যাঁতে ক্লান্তির ভবিতব্য এড়িয়ে
এক মুঠো ব্যতিক্রমী আশ্বাস খুঁজে চলি অথবা খুঁজে চলার অভিনয় করি,
বর্জনীয় ধ্যানধারণা সযত্নে আগলে


এপিটাফ

তোর নিঃশ্বাসের উষ্ণতা ছুঁয়ে ভিক্টোরিয়ার নুড়িপথে
বিকেল গোলাপি হয়েছে ক্রমশ,
খেয়ালী সেই ঠোঁটের সংজ্ঞা মেপে
কত অপ্রকাশিত অভিমান প্রগাঢ়তা ভুলে
স্রোতের উপান্তে হারিয়ে গেছে

প্রিন্সেপ ঘাট শুনেছে অঘোষিত বহু প্রতিশ্রুতি
সুদূরে ভেসে গেছে পালতোলা নৌকা
যাবতীয় স্তব্ধতাকে সযত্নে খানখান করে,
ভালবাসি তোকে পাগলি!” ঘাটবাঁকে হিল্লোল তুলেছিল কি?

নিস্তব্ধ দুপুর ব্যস্ততার বিরতিপর্বে
স্মৃতিকল্প এঁকেছিল সেদিন কলেজস্ট্রিট মোড়ে,
কফি হাউসের নিঃশ্বাস জুড়েছেড়ে যাবি না তো?” প্রতিধ্বনি শুনেছিলি?
সাঁঝতারার কক্ষপথ বেয়ে নেমে আসা
সন্ধ্যের মায়াজাল মনে রেখেছে নন্দন?

তিলোত্তমার যানজট ছাড়িয়ে
এগরোলের গন্ধটা বেশ পাই আজকাল,
ধুলোমাখা হাওয়ার গন্ধও দিব্যি ভেসে আসে
শুধু তোর গন্ধটাই হারিয়ে গেছে

হলুদ শাড়িটা রাখা থাকে আলমারিতে, তবে
মনখারাপের কমলা স্তর যেন লেগে আছে
কেমিস্ট্রি বইয়ের ফাঁকে শুষ্ক গোলাপ
প্রাক্তন মানেটা বেশ বোঝে আজকাল,

ভিড়ঘেঁষা মেট্রো স্টেশনে যদি
চোখাচোখি হয় কোনো অবসন্ন গোধূলিলগ্নে,
নীল পাঞ্জাবিটা পরিস এখনো?”,
বিষাদ ভেঙে করেই ফেলবো প্রশ্নটা সেদিনবেহায়া বলবি না তো?


ক্যানভাস

স্মৃতির শহর জুড়ে বন্যা হয় রোজ,
রাত্রিকালীন মুহূর্ত ছুঁয়ে উজান স্রোত ঘেঁষে বাসা বাঁধে ঘুম

চেনা কিছু মুখ পড়ন্ত বিকেলের অগোচরে খেলা করে,
জানালার গরাদে মেশে গোধূলির ওম বারান্দা বেয়ে নামে শৈশব-দর্পণ
উঠোনে ছায়া ফেলে অতীত-বুনোট,

সেই আমগাছ আজ স্বর্গযাত্রী বোধহয়,
কংক্রিট দেওয়াল ভেঙে জন্ম নেয় দূষিত শ্বাস
দীঘির অতলে মাছগুলি রঙ হারায় ধূসর রঙ আঁকড়ে বাঁচে আজকাল

জলরঙা সন্ধ্যার আঙিনায় ক্লান্তি ভুলে দাঁড়াই,
সাঁঝতারার বুকে এঁকে দিই আগামী সুন্দরের আশ্বাস

যান্ত্রিক দৃশ্যকল্পের ধোঁয়া ঢেকে দেয় স্বপ্ন পরিসর,
হাল ছাড়ি নি তবু
কল্পনার দূরবীনে গড়ে ওঠে মাঠ, বৃক্ষ আরও যা কিছু শ্যামল

অবচেতনার হাত ধরে ডুবে যাই আমি ব্যক্তিগত বিষাদ ভুলে,
পা ফেলি সব-পেয়েছির দেশে
ধুলো সেখানে প্রজাপতি হয়ে উড়ে যায়,

রক্তস্রোত ঝরনা হয়ে ফুল ফোটায় প্রতিদিন

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন