কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ, ২০১৭

অপরাহ্ণ সুসমিতো

মুচি ও বয়াতী


হামেদ খাঁ’র হাটে সে আসে বুধবার বুধবারে হাট বসে সে হাটের এক কোণায় সন্ধ্যা নামলে হ্যাজাক জ্বালিয়ে পুঁথি পড়ে লোকজন জড়ো হয় একটা টুলের মতো আছে, কখনো টুলের উপরে দাঁড়িয়ে, কখনো বসে তার পাঠ শুরু

সে কান্নার অভিনয় করে পড়ে, কখনো হাসায় কখনো বা আকারে ইঙ্গিতে আদি রসাত্মক গল্পের সূচনা করে। লোকজন হাঁ করে গিলে নেয়সে জানে মানুষের আবেগ কোথায় নড়েচড়ে দোল খায়লোকজন সামনে রাখা টিনের হাড়িতে পয়সা ছুঁড়ে মারে। পাঠের সময়ে সে শব্দে পুলক বোধ করে, তার পাঠ গতি পায়উৎসাহ বেড়ে যায় গলার আওয়াজে আরো সুর ভর করে যেন আসমান থেকে

আ আ আয় সোনার অঙ্গে জরিনা সুন্দরী ফিরে ফিরে চায় প্রেমের আগুনে তার সোনার যৌবন নিশিতে লুটায়

পুঁথি থামিয়ে সে জরিনা সুন্দরীর যৌবন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বর্ণনা করতে শুরু করে। লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকেআবার হুঁশিয়ারী ডাক দেয়;

: ভাইজানেরা পকেট ও লুঙ্গি সাবধান

বলে বাম হাতের বুড়ো আঙ্গুল আর তর্জনী দিয়ে বৃত্ত তৈরি করে অশ্লীল একটা ভঙ্গি করেলোকজনের চোখ চকচক করে হ্যাজাকের আলোতে

একটু দূরে শিরিষ গাছের নিচে হরেন্দ্র মুচি বাক্স খুলে সেই বিকেল থেকে লোকজনের পুরনো জুতা স্যান্ডেল সেলাই করে, জোড়া লাগায় আঠা দিয়েকোনো কোনো সৌখিন লোকের জুতা পালিশ করে

হাট ভাঙ্গার আগেই লোকটার পুঁথি পাঠ শেষ হয়সে মালপত্র গুছিয়ে হরেন্দ্রের কাছে গিয়ে বসেদুইজন চায়ের দোকান থেকে মালাই চায়ের অর্ডার করে। অনেকদিনের পুরনো বন্ধুতা। আলাপ জমে কত কিছু নিয়ে

: আমজাদ ভাই আছ কেমন?
: এই ভগবানের কেরপায় আছি, তুমি?
: আল্লার ফজলে আছি

ঠিক এভাবে ওদের আলাপআমজাদ বয়াতী ভগবানের নাম আর হরেন্দ্র আল্লাহর নামে কথা শুরু করে

মালাই চায়ে চুমুক দিয়ে আচমকা আজ আমজাদ বয়াতী হরেন্দ্রর কাছে মুখ নামিয়ে ফিসফিস করে বলে;

: দাদা অনেক দিন থেইকা একটা কথা ভাবতে আছি : কি কথা কও : সাহস দিলে কমু।  : আরে আমারে ডরাও? মন খুইলা কও তো বয়াতী: তোমার পোলার লগে আমার মাইয়ার বিয়া দিতে চাই

হরেন্দ্র পালিশ করা হঠাৎ থামিয়ে দিল কুপির আলোতে তার মুখটা চকচক করে উঠলো দেখলে মনে হবে যে এত খুশির সংবাদ সে তার জীবনে শোনেনি

হামেদ খাঁর হাটে লোকজনের হুল্লোড় কমে আসেকাছের বটগাছে আস্তে আস্তে বাদুর ঝুলে ঝুলে জমতে শুরু করেকুপির আলোতে এরা দুজন কী সুখেই না শব্দ করে চায়ের কাপে চুমুক দেয়একসময় আমজাদ বলে;

: ম্যালা রাইত হইলো, বেয়াই বাড়ি যাও। : আইচ্ছাবেয়াই তুমিও যাও, সাবধানে ... 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন