জননী জন্ম ভূমিশ্চ...
নিজের ছায়াকে তুমি ভুলে গেছ। এই তো সেদিন তোমার বুকের
নরম ছোঁয়া আমাকে পথ চলতে শিখিয়েছিল। সামনে পিছনে ভয়ঙ্কর মুখোশ
রঙা শ্বাপদ কীভাবে গিলে খায় জীবন,শুনিয়েছ-
তোমার পিছনে ছিল গৃহস্থালীর অন্তহীন কর্মমিছিল, তবুও তুমি আমার ব্যক্তিত্ব
ঝকঝকে করে তুলেছ। একতাল কালো মাটি দিয়ে গড়েছ
আমায় তোমার নিষ্ঠা, বল্গাহীন আবেগে। নীতিবোধ জাগিয়েছিলে যখন
আমি সদ্য কিশোরী। আমি পড়েছি, তুমি হাত ধরে
উঠিয়েছো আমায়। তোমার এলোমেলো রুক্ষচুল উড়েছে, অথচ আমায় পরিপাটি করে সাজিয়েছ তুমি। আমার বুকে ভরে দিয়েছ
কৃষ্ণচূড়ার স্পর্ধা।
তারপর একদিন, কিংবদন্তীর নৌকোয় চাপিয়ে
অচেনা মাঝির হাতে সঁপে দিলে। সেই থেকে একা চলেছি। উত্তপ্ত দিনে ফুটিফাটা মাঠ
পেরিয়েছি, ভরা বর্ষায় বুজিয়েছি
খানাখন্দ। কপট হাওয়ার গন্ধে মিশিয়ে
দিয়েছি স্বপ্নের রেণু। রক্তচন্দনের আলপনা বুকে
এঁকে ছুটে যেতে চেয়েছি তোমার ছায়ায়। তুমি সরে সরে গেছ। তোমার হাতে নতুন বাঁশী, বাজিয়েছ। আমার কাছে তার সুর পাঠাওনি।
নীল শূন্যতায় আমার গাছ শীর্ণ হতে হতে ছায়া সরিয়ে নিয়েছে। বল্লমের
মতো তীব্র গতিতে নেমে এসেছে রোদ্দুর, পুড়িয়েছে, তুমি দেখতে চাওনি। নিত্য ভেঙেছি পাথর-মাটি, ফুসফুসে ভরেছি বিষ। আমার সেই নিমগ্ন বেদনায়
তোমার আকুলতা আর প্রলেপ লাগায় নি কেন বলতে পারো?
অবশেষে, তোমার কৃষ্ণচূড়া হয়ে
জঞ্জাল ভরা দিন আবর্জনার স্তূপে ফেলে স্ফটিক হলাম। উজ্জ্বল, স্থির। অন্যের নয় আমারই জীবন, বিসারিত করতে চাইলাম আকাশে
আকাশে। তুমি মুখ ঘুরিয়ে নিলে। ওদিকে তখন তোমার
দোদুল্যমান মাঝি বিস্ফোরণের হাওয়া থেকে আগুনের পালক তুলে আমায় ছুঁয়ে দিল।
জ্বলন্ত অঙ্গার থেকে কাঠকয়লার রূপান্তর এত সহজ আগে জানি নি!
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন