কেয়া খয়ের
গল্প এত শুনেছি কিন্তু কেউ আমায়
পুরো গল্পটা এখনো কেন বলেনি, যেখানে ঘটনাটা একেবারে চিরকালীন স্তব্ধতার মধ্যে গিয়ে
থামবে, কখনও কোনো সূত্র ছাড়া থাকবে না তার অন্তিমে, যার নাম বাঁক বদল বা মোড়। একটাই মাত্র গল্প যেটা প্রথমে ডানে, পরে বাঁ দিকে,
কখনো হাজার পাঁচেক ফিট ওপর থেকে সজোরে নিচে ঝাঁপিয়ে তারপর একরোখা বয়ে যাবে টানা এবং স্বয়ং সম্পূর্ণ। নাহ্! পুরো গল্প আজ অবদি কোথাও শুনতে পাইনি।
(প্রথম গল্প)
প্রথম তরাইনের যুদ্ধ সংঘটিত হয়
এগারোশো একানব্বইয়ে, পৃথ্বিরাজ চৌহান এবং মহম্মদ ঘোরী... অ্যাই লাস্ট বেঞ্চ! ওখানে
কথা হচ্ছে কেন? মন দিয়ে শোনো!
স্যর এই চ্যাপ্টার থেকে ক’টা কোশ্চেন আসবে?
সাজেশন দেব পরে, এখন ইতিহাসের গল্পটা শুনে নাও...
স্যর গত বছর ঘোরীর ভারত আক্রমণ থেকে দুটো কোশ্চেন এসেছিল...
হুম্! ব্যাটেল অফ তরাইনকে বাদ
দিয়ে টেস্টের কোশ্চেন হয় না।... তো যা
বলছিলাম কাহিনীটা আগে ভালো করে শুনে নাও তোমরা, প্রথম
তরাইনের যুদ্ধ সংঘটিত হয়...
ঢং ঢং...
ওক্কে স্টুডেন্স্! ক্লাশে
নেক্সট দিনে এটা আবার বলা হবে।
...এখানে ক্লাশ শব্দটা ব্যবহার
করতে একটু অনিশ্চয়তা হলো। স্বয়ং সম্পূর্ণ গল্পটাকে, সে যে গল্পই হোক, একটা মাত্র ক্লাশে
বলে শেষ করা যায় কি? বোঝানো যায় কি? কিংবা এই শব্দটা দিয়ে একটা কলকে ফুলের ফুটে
ওঠা বা ভুট্টা বীজের অঙ্কুরোদ্গম পুরোপুরি বর্ণনা করা যায় কি? যায় না। একটি নির্দিষ্ট ক্লাশ বা সময়ের ব্যবধানে বীজের ১ এম্ব্রায়ো
বা ভ্রূণ ২ খাদ্য সংবাহিকা কলা এবং ৩ বীজের বহিঃ আবরণ, এই তিন অংশ থেকে কীভাবে একটি মহীরূহ নীল আকাশের দিকে মার্চ পাস্ট করতে করতে
উঠে যায়, নিচে পৃথিবীর মাটিতে পা রেখে বলা খুব মুশকিল! কোন সময়ে গাছটি ঠিক কতখানে
ডালপালা মেলবে তার সঠিক রসায়নের গল্প কতখানি অসম্পূর্ণ এবং সবশেষে গিয়ে একটি নিটোল
যুক্তির কাছে দাঁড়ানো, অসম্ভব অসম্ভব!
(দ্বিতীয় গল্প)
মেয়ে
দেখবার সময় আম্মা ক্লাশ ফাইবে পড়ত। সেটা তখন ১৯৪২ সাল। ক্লাশের দিদিমণি ছাত্রীদের ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের গল্প
শোনাচ্ছিলেন। চাকরকে ইস্কুলে পাঠিয়ে সেই আধখানা গল্প থেকে তড়িৎগতিতে কনেকে বাড়িতে ডেকে আনা হলো। ওদিকে বৈঠকখানায় পাত্র পাত্রের বাবা কাকা
জ্যাঠা ইত্যাদি চার ব্যক্তিকে জলযোগে ব্যস্ত রাখা হয়েছে। ইস্কুলের শাড়ি ছাড়িয়ে মেয়ে দেখিয়ে শুভ বিবাহের দিন ধার্য করে একটা এমন
গল্পের মধ্যে আম্মাকে যাঃ বলে ঠেলে দেওয়া হলো, তার অসম্পূর্ণতা এখনও এই আমার মধ্যে, দু’ হাজার সতেরোয়। এখন যেন প্রত্যেক স্পর্শে বদলে যায়
স্বরবর্ণ। এও মনে হয়, কী দরকার ছিল এতগুলো আলফাবেটের? যে কোনো একটাতেই
যখন কাজ চলে যায় সবার!
অখন্ড
এক অসম্পূর্ণতার কোটরে দিবারাত্র বসবাস। অন্নময় কোষ থেকে প্রাণময় কোষে উঠতে
চূড়ান্ত হিমশিম। এবং অবধারিত সেই অসম্পূর্ণ গল্পেই হাঁ করে দাঁড়িয়ে
বিরক্তিকর অপেক্ষা।
(তৃতীয় গল্প)
মেসেঞ্জারে এসো প্লীজ!
না, ঘুম পাচ্ছে।
উফ্! শুধু ঘুম আর ঘুম।
ক’টা বাজে জানো?
য’টাই বাজুক! এসো প্লীজ, না হলে
দুমাদুম্ পিঠে...
আমার পিঠ সস্তা দেখলে?
উম্! সস্তা তো তোমার ওপরের
ঠোঁট। চুমুগুলো সব ধুলোর মতো জমছে!
জ্বালালে! আমার মেসেঞ্জার ভালো
কাজ করছে না। কী বলবে এখানেই বলো।
বলছি পরশুর মিটিংটা হচ্ছে না।
ক্যানসেল...
তুমি আর এর থেকে বেশি কী বলবে?
বলছি বলছি। জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড
সী!
হুম্! জানি এবার কী বলবে। কিন্তু আমি তো তোমার ওপর ডিপেন্ড করি না...
জানি... আমার পক্ষে এটা খুবই
দুঃখের কথা।
দুঃখ পাওয়ায় তুমি তো একজন
বিশেষজ্ঞ!
(চতুর্থ গল্প)
শেষ দুপুর। পাতা ঝরে পড়ছে। দূরে সরে গেছে পৃথিবীর আর সব ব্যস্ততা। দেবদারুর ছায়ায়
কয়েকটি শ্রমিক বসে টিফিন ক্যারিয়ার খুলে দুপুরের খাবার খেয়ে নিচ্ছে। শুকনো রুটি কিছু সবজি সঙ্গে কাঁচা
পেঁয়াজ। পাশে তেলচিটে গামছা, মুখ মুছবে।
চারিদিকে নতুন গ্লোব। অসম্পূর্ণতাকে ভীষণ কাছের মনে হয়।
চারটে গল্পই পড়ে ফেললুম । দ্বিতীয় গল্পটায় দশে দশ দিলুম ।
উত্তরমুছুনজীবনের অসম্পূর্ণতা ধরা পড়েছে
উত্তরমুছুন