অর্কিড
ফুল ফুটেছিল ফুল ঝরেছিল
মাটিতে তার
শিকড় ছিল না,
জোনাই জ্বলেছিল জোনাই নিভেছিল
আকাশে তার
স্থিতি ছিল না,
উড়োমেঘ টাপুর টুপুর বৃষ্টি ঝরালো
ঝুরোবালির আলগা
আঙুল
তাকে ধরে
রাখেনি;
তোমার আমার দেখা হয়েছিল -
জলে, জঙ্গলে, যাযাবরী জীবনে
সে
এক দুর্লভ সুষমা,
আর আজ সবই নিরঞ্জন!
সংলাপ
তোমাকে জানি
তুমি ভালো আছ,
যাও, আসো,
চটজলদি
এড়িয়ে যাও
ঝামেলাগুলো।
তোমার সব কিছুই যথাযথ,
নিঃসংশয়
-
ঠিক যেমনটা হওয়ার কথা।
তোমাকে চিনি
দেখা হয়
কথা হয়
-
দিনের পরে দিন গড়িয়ে যেতে থাকে
মসৃণ।
অথচ আমার ইচ্ছে করে
হলদে
বালিতে পা ডুবিয়ে
সমুদ্রের নীল জলে
লোনা
ঢেউয়ের
ওঠাপড়া দেখি;
ইচ্ছে করে
সবুজ
ঘাসের বুকে মুখ গুঁজে
খুব
কিছুটা কেঁদে নিই।
তুমি
কি জানো
কালো মাটি ভিজে গেলে
ভালোবাসার
সাধ জাগে!
শিরশিরে অন্ধ হাওয়া
কাকে
যেন খোঁজে,
গাঢ়নীল রাতের আকাশে
অজস্র নক্ষত্রে বাজে অশ্রুত ওংকার
-
তরঙ্গ থেকে তরঙ্গে সংকেত যায়
ব্রহ্মাণ্ডের
এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে;
দেখি না,
শুনি না,
তবু নাড়িতে লাগে টান -
আমার বেপথু নিঃশ্বাস
একটু
একটু করে গড়ে তুলতে থাকে
তোমার
অবয়ব,
সমব্যথী তারার আলো
লোনা জল হয়ে
চুঁইয়ে নামে বুকের গভীরে!
বাতাসে মুচকুন্দের গন্ধ -
অথচ যখন
কৃষ্ণপক্ষের রাত গাঢ় হয়,
এক অশ্বত্থামা
নিঃসাড়ে এসে দাঁড়ায়
পিপুল গাছের নিচে;
আর তার উলূকবৃত্তিতে
নিহত হতে থাকে
আমার ব্যাপ্ত ভূবন।
এখন
তোমার মুখোমুখি আমি,
ঝকঝকে দিনের আলোয়
আমার দু’চোখে অন্ধকার -
দুই ঠোঁটে লোনা স্বাদ,
সমুদ্রের স্বাদ!
তোমার ঠোঁটের কোণে
জয়ের গর্ব,
শরীর জুড়ে আত্মবিশ্বাস -
তীব্র, তীক্ষ্ম, সূর্যের আলোয়
স্পষ্ট তোমার চিবুকের ঔদ্ধত্য।
আমার গ্রীবায়
লেগে থাকে হলুদ বালি,
সাদা ফেনা,
নক্ষত্রচূর্ণ -
তুমি দেখতে পাও না।
আমার এলোচুলে
নির্জন নীল গন্ধ -
তুমি বুঝতে পারো না।
বুকের থেকে উথলে ওঠা বোবা ঢেউ,
লোনা
জল,
আটকে
থাকে কণ্ঠনালিতে -
তুমি শুনতে পাও না।
তুমি হাসো,
অসীম স্পর্ধায়
ইকেবানার মতো
সুচারু -
বাড়িয়ে দাও মিথ্যার স্তবক।
সেই বিবর্ণ,
বহু ব্যবহৃত
কাগজের পাপড়িগুলোর দিকে তাকিয়ে
আমি লুকিয়ে রাখি চোখের জল,
নিরালা
রাতের ঘাসজমিতে
রেখে
আসি পদ্মমণি;
জ্বলন্ত রোদের ছটায় অহংকারী প্রগল্ভতায়
হসিত অধরে
আমি মদিরেক্ষণা হই।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন