তুষার মেখেছিল বুকে যে ঘাসফুল
প্রতিটি পায়ের ছাপ জলতরঙ্গের ধ্বনিতে বেজে চলেছে। পুরনো
বালিয়াড়ি সরে গেছে বহুদূর নীলিমায় সাগরের বুকের খুব কাছে। ঢেকে দিয়ে গেছে শহরের হৃদয় কোনো এক
অচেনা শুভ্রর প্রহসনে। ঝর্ণার মিহিদানা থেকে ভেসে আসে সঙ্গীতের অপূর্ব কোনো সুর। কী সেই সুর যাতে বিলীন হয় আত্মার শূন্যতা! উজি নদীর পাড় ধরে হেঁটে যায় আমার সন্ন্যাসী
মন। নদীর বয়ে যাওয়া কলকল ধ্বনি বুকের ভেতর এক গম্ভীর অতৃপ্তি এনে দেয়। বরফের উপর জ্যোৎস্নার নৈসর্গিক
আঁচল, আঁচড় কেটে যায় হৃদয়ের খাঁজে। আকুল করা পাহাড়ি বাতাস নিস্তেজ করে দেয় শ্বাস,
অবিরাম ঝিঁঝিঁপোকা অনুরণন তোলে। পাতার শিরায় শিরায় বৃষ্টির ছবি এঁকে দেয়। পুরনো স্মৃতি অন্ধকারে ছাইয়ের মতো কেবলই পাপড়ি মেলে।
অঙ্কুর এসেছিল যেসব কলিতে তন্ময় হয়ে সূর্য ডুবে যায় তাদেরই কোলে। পাতাঝরা দুপুর
পিছনে পড়ে থাকে একা কোনো বিষাদের অবসরে। তবু চলার তৃষ্ণা কি জলের স্পর্শে জুড়ায়?
গ্রীষ্মের তাপদাহে হয়তো সে কিছুটা ঝিমোয়, কিছুটা কান্নার দোলায় দোলে নিজের মতো করে। পিছন ফিরে দেখে তুষারে ঢেকে গেছে আবারও ম্যাপল
পাতার মুকুট, থরে থরে সেজেছিল যারা রক্তিম প্রজাপতির ডানায়। এদিকে গমরঙা
কচিপাতাদের ফোঁটার সময় এলো বলে! তাদের চোখেও বিস্ময়ে খেলা করে উজ্জ্বল তারাভরা
রাতের স্বপ্ন, ম্যাগপাই পাখির সুরেলা ঝঙ্কার। রূপালি জলের স্থির প্রসন্ন ফেনা ডাকে হাতছানি
দিয়ে সাগরের চোখের ভেতর। মেঘেদের ডানায় ভর করে উড়ে যায় যেসব বিষণ্ণ
ফানুস, তারাও কেমন যেন মিটিমিটি করে তাকায়। অরণ্যের
কাছে যতবার একটু ওম চেয়েছি, ভাসিয়ে দিয়েছে মহুয়ার ঝর্ণায়, রোমে রোমে
ছড়িয়েছে মেঘের দ্যুতি শস্যের মোহনায়। সবুজ ঘাসের মাঠে ঝরা পাতাদের সাথে ঘুমচোখে ফুটে
আছে কয়েকটি নাম না জানা ফুল। তুষার বুকে নিয়ে ভোরের আলোয় মিটিমিটি করে
তাকাচ্ছে কিছু ঘাসফুল। কত পাখি উড়ে গেছে অন্ধকারের বুকে গোপন কুঠুরির খোঁজে! কত ভোর, কত নদী, কত সূর্যাস্ত দেখেছে এ পোড়া
চোখ! দেখেছে চোখের আড়ালেই কত জমে আছে অন্ধকার! এই
যে অবারিত সবুজ মাঠের স্বপ্ন, দিগন্ত জোড়া নীল আকাশ, এখানেও কি আগুনের জন্য কেউ
শুকনো পাতা জমা করে রাখে? শূন্য মাঠের কোণেও কি পড়ে থাকে কারো ব্যথাতুর করোটি?
তাহলে কেন শুধু আমিই থমকে থাকি অনন্ত অপেক্ষার শেষ দৃশ্যপটে, ক্রমশ দদ্ধ হই শিকড়ের
শেকলে আটকে থেকে বসুন্ধরার মানস সরোবরে!
চমৎকার লেখা। খুব ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুনঅনেক ধন্যবাদ নাজনিন আপা।
মুছুন