কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

আসমা অধরা

ঘুম ও বিবিধ দুঃস্বপ্নেরা


ঘুম এলেই উড়তে থাকা বিবিধ প্রজাপতিদের রঙ বিলীন হতে থাকে, ফিকে হয় তার ডানায় মাখা স্বর্ণচ্ছটা; বধির পৃথিবীর কানে যেমন শঙ্খনিনাদ যেমন তার অস্তিত্বের পীড়নে ভোগে। অথচ জারু যেন এক নীল মলাটের ভেতর বন্ধ শুভ্র চিঠির খাম!

ঘুম ভেঙে গেলেই পুড়ে যেতে থাকে ঘাসফুল ও পদধ্বনি। আলোর গায়ে চেপে স্থানুর মতো স্থির হয়ে যায় এ শহর, অ্যবস্ট্রাক্ট পেন্টিং হেঁটে হেঁটে চলে যাওয়া এক নিরিবিলি সাঁকোর ধারে, যার গায়ে এক সুতীব্র সাইনবোর্ড ‘ইহাকে ঝাঁকাইবেন না’সাথে সাথে হাতের তালুতে কেমন নিশপিশ উঠে যায়...

ভাবতে বসলেই স্মৃতি ব্ল্যাংক, স্টাবর্ণ আচরণে মত্ত হয়। আরো জোর খাটালে জ্বলে ওঠে নিয়ন সাইন, অদ্যাবধি সব ভুলই তো ছিল! ভুলকে রিপিট করা ভালো নয়, কাজেই স্মৃতির ঘর ফাঁকা, মনে রাখার মতো উল্লেখযোগ্য কিচ্ছু নেই, কেবল ছেলেবেলা থেকে এযাবতকালের প্রতিটি ভোরে কিছু শিশিরের ঋণ আর বাজতে থাকা  নূপুরের নিক্কণ ছাড়া।

পথগুলোতে খোদাই করা ভাস্কর্যের মতো ছড়ানো থাকে অচল মুদ্রারা, তারাই হাত বাড়িয়ে ডাকে আয় আয়এর তাৎপর্য খুব সহজ, অচল না হলে তো আর পথে ছড়ানো থাকতো না, সচলেরা তো সব সেইফটি লকারে আবদ্ধ ওই যে এক্সপায়ার নোটিশের মতোন ডেটের আগে স্টক ক্লিয়ারেন্স, বাই ওয়ান গেট মোর ফ্রী এণ্ড নট রিফাণ্ড অর এক্সচেইঞ্জেবল। সচলায়তনের কোথায় কেটে ছিঁড়ে গেলে স্টেট ব্যাংকের মুখেও তেল চুয়োনো হাসি সেঁটে থাকার রেকর্ড বর্তমান।

ঘুম আসলেই দ্য গ্রেট বিট্রেয়াল তন্মধ্য যাপন সাদাকালো আর সেখান থেকে বের হলে হলেই সব এলোমেলো। উড়ুক্কু সাপের মতোন কপালের মধ্যখানে ঠুকে যাবে কেবল, মুক্তি নেই। আহা কাস্তে! কেন দিনদিন ধারালো ও চকচকে হয়ে ওঠো? এদেশে তো মরচে পড়াতে বারণ নেই, যেমন দিনকেদিন মানবীয় মনগুলো সব জং ধরে যাচ্ছে, হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে পৈশাচিক আনন্দেরা। মুছে যাচ্ছে পৌরাণিক জীবনের ছায়া, শহরে ঘুমের কালে ছেয়ে যায় রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ার।

অলক দ্রাবিড়

দ্রাবিড়ের দেশ থেকে এসেছ কি অলক, ঘষা কাচের ভেতর সমুদ্রসম দৃষ্টি নিয়ে!  কালো ফ্রেমে আটকে থাকা বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখো কালো-নীল ডুমো মাছির দল সারবেঁধে এইপাড়ে খুঁড়তে আসে নতুন বৃক্ষচর ইন্দ্রিয়পথে বীজ ছড়িয়ে বিষাক্ত করে দেয় অণু পরমাণু

খুলি খুঁড়ে, মন ফুঁড়ে
খুঁড়ছে তো খুঁড়ছেই

অজানা শহরের অস্পষ্ট এক গ্যাসস্টেশনের পাশেই মাইলস্টোনে খোদাই করা ভাস্কর্যের মতন দায়হীন বয়োবৃদ্ধ হয়ে যাবার সময় এখন তুমি অলক ঝটকায় সরিয়ে নাও কপালে লেপ্টে থাকা ঝাকড়া চুলের গুচ্ছ আর এই বেলায় বিচ্ছিন্ন দূরত্ব ভেঙ্গে ভেঙ্গে ত্রিভুজ সমান্তরাল হয়ে যায়

তন্দ্রার ঘোর চলে আসে জীর্ণ শরীরে, দেখি এক পুঁথির অসংখ্য পৃষ্ঠাব্যাপী লিখে রাখা নাম, দুলে দুলে সুর করে পড়ে যায় সফেদ আলখাল্লা খামচে ধরা হাতে চেপে বসে আঙুল, ফ্যাকাশে থেকে সাদা হয় গিঁট

জানো অলক, তোমার বাড়ি পাহারা দেয় বেলেমাছের দল; নিশানা ভুল না হলেও  তাদের গা থেকে বেরোয় না এক ফোঁটাও রক্ত অথচ ৩২ নম্বর দেরাজে সাঁটা লেবেল বলে ওখানে ছাপা এই বয়বৃদ্ধের নাম

বাঁশী বাজাতাম যদি, নির্বাচিত যন্ত্রণাদের গায়ে বিরতিহীন লেবেল এঁটে দিতাম ভাড়া করা ঘাসফড়িঙের দলে কেটে যাওয়া শরীরে সেলাই হতো কাঠঠোকরার ঠোঁটে তাই সমস্ত কিছুই লিখে রাখি শোধের হস্তাক্ষরে, পুরনো রাফখাতায়

পড়ে নিও কখনো খুঁজে পেলে, এক এক বিন্দু ও বিসর্গের কল্পকথন



0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন