কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৬

মৌসুমী মন্ডল

মানুষ হতে চাই

একদিন চলে যাব
শ্যাম্পেন রঙ অরণ্য ছেড়ে।
ওগো অসেচনক সবুজ পাতার শিশুগাছ,
অর্জুনের শাখা প্রশাখা
একদিন চলে যাবই।
অচেনা রাতবাহী ট্রেনের শ্বেতপদ্ম সুবাসিত কামরায় শুয়ে শুয়ে শালবনের বাতাসী রাস্তা ধরে চলে যাব
উরসে লেবু পাতার সৌরভ নিয়ে
প্রিয়তমের স্পর্শ স্বেদ মুছতে মুছতে নিশিকাঞ্চনের ডাকে অবাধে চলে যাব পৃথিবীর শেষতম জংশনে
চিতাকুণ্ডে শুয়ে শেষবারের মতো
কুয়াশায় ধুয়ে নেব আমার স্থির
হয়ে যাওয়া চোখের স্বপ্ন মূর্ছনাগুলোকে।
দেখতে চাই সোনার ভোরে
আবার সস্নেহে জেগে উঠেছে
পাখিদের সংসার।
গাছের কুমারী শরীরে ফুটে আছে গন্ধ হারানো রাতের দোলনচাঁপা।  
জুঁই ফুলের মতো সবার ঘরে শ্বেতপাত্র উপচে পড়ছে ঈদের সেমাই।
সূর্যাস্তের মতো ডুবে যাক সব সন্ত্রাস
সব দুঃখ দুপুর।
হৃদপিণ্ড ছিন্ন করা সব ভালোবাসার
সোহাগী রৌদ্র ভ্রমর সাজানো থাকবে
আমার শবদেহে।
আর কিছু চাই না।
শুধু হাজার বছর পরেও জন্মান্তরে
সমুদ্রকে বলতে চাই সরলরেখায় চলো।
পরজন্মে যেন মানুষের ছদ্মবেশে
আর না আসি পৃথিবীতে।


ফাগুনের মা

এক রংমশাল অশান্ত বসন্ত রাতে জন্ম দিয়েছিলে আমাকে
তুমি মা
পরিত্যক্ত এই বাড়ির আঙিনায়ও এক নীরব পলাশ একরাশ রঙ নিয়ে মেলে ধরেছে তার উদোম শরীর নভোমণ্ডলের কাছে
তোমার অনভ্যস্ত প্রজননে কাঁপছিল তোমার হিমোগ্লোবিনহীন ফ্যাকাশে ঠোঁট
জঙ্গলে প্রান্তরে জ্বলছে
হলুদ বসন্ত
আঁতুড়ঘরের বাইরে চলছে চলছেই শ্লোগান
হোক কলরব
বিপন্ন সমাজের বসন্ত জাল চেপে ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কন্ঠ অমোঘ দুঃখ ঢুকে পড়ছে জীর্ণ অট্টালিকার ফাটলে ফাটলে অশ্বত্থের শেকড়ের মতো
একই শয্যায় ছটফট করি মাগো
তুমি আর আমি
নাড়ি ছেঁড়ার ক্ষণে দেখি দাউদাউ আগুনে জ্বলন্ত নাভিমূলে পুড়ছে সভ্যতা,
পুড়ছে কোরান, রামায়ণ, মহাভারত, পুড়ছে বাইবেল
পুড়ছে ছাত্রসমাজ
জীবনের ছক টুকরো হয়ে ঝরে পড়ছে বিচ্ছিন্ন আমের মুকুলে
তোমায় নিষ্ঠুর মনে হয়
আমার অশ্রুত কথা কি
শুনতে পাও মা?
কেন দিলে জন্ম
এই যুদ্ধক্ষেত্রে আমাকে
এর চেয়ে তোমার গর্ভে চোখ না ফোটা কুঁড়ি হয়ে থাকতাম
প্রতি বসন্তের দিনে!



0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন