কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৬

কাজী জহিরুল ইসলাম

অন্ধকার-২

পিতা, আপনি বলেছিলেন,
অন্ধকার হওয়ার আগেই আমাদের সব কিছু সেরে ফেলতে হবে
প্রতিধ্বনিত হয়েছিল একই উচ্চারণ পিতামহের কন্ঠেও, যা তিনি
শুনেছেন পুরনো বৃক্ষের শেকড়ের মতো সুদৃঢ় আমার প্রপিতামহের দরাজ উচ্চারণে।
একই বীজমন্ত্র বেজে উঠেছে বারবার প্রতিটি সম্ভাবনার সকালে
এভাবেই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে
ধর্মশ্লোকের মতো প্রবাহিত হচ্ছে এই মন্ত্র
অন্ধকার হওয়ার আগেই আমাদের সবকিছু সেরে ফেলতে হবে 
কিন্তু প্রতিটি পুরনো অধ্যায়ের মতো
আজো আমাদের কিছুই হয়নি সারাদেখুন পিতা, ভালো করে তাকিয়ে দেখুন,
কী ভয়ানক অন্ধকার নেমে আসছে আমাদের অসমাপ্ত স্বাধীনতায়,
সুস্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আমাদের সব কিছু
ক্রমশ ডুবে যাচ্ছে অন্ধকারের অতল গহনে

পিতা, আমি আমার সন্তানকে আর শোনাতে চাই না সেই পুরনো বাণী
বরং ওর কর্ণকুহরে চিৎকার করে বলতে চাই
‘বৎস্য, আগুন জ্বেলে দাও অন্ধকারের শরীরে। তুমি বরং
শিখে নাও অন্ধকারকে পরাজিত করার কৌশল,
কেননা এই অন্ধকারের ভেতরেই তোমাকে এবং তোমার উত্তর প্রজন্মকে
বসবাস করতে হবে আরও বহুকাল


দিন-রাত্রির গল্প

তখন পৃথিবীর কোনো রঙ ছিল না
না কালো, না শাদা, না আলো, না অন্ধকার
দিন এবং রাত্রি বিভাজিত হয়নি ভোর কিংবা সন্ধ্যারেখায়
শুধু দু’দল মানুষ ছিল পৃথিবীতে
একদল ছিল পরশ্রীকাতর, তাদের হৃদয়ে ছিল কয়লার অন্ধকার
তাদের অন্তঃকরণ এমনভাবে তৈরি করেছিলেন ঈশ্বর  
যেন তারা ভালো কোনো চিন্তা করতে না পারে
হৃদপিণ্ডের কয়লা তারা ছড়িয়ে দিত পৃথিবীতে
এভাবেই পৃথিবীর অন্ধকার দিকটি তৈরি হলো

আর অন্যদল ছিল কল্যাণকামী, ঈশ্বরের ইচ্ছায়,
তারা অনবরত মানুষের কল্যাণে পাড়ি দিত ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস,
এক ভূ-খন্ড থেকে ছুটে যেত অন্য ভূ-খন্ডে,  
তারাই আলো জ্বালিয়েছে পৃথিবীতে, তৈরি করেছে দিন।

এভাবেই পৃথিবীতে দিন ও রাত্রির সৃষ্টি হলো

এখনও পৃথিবীতে দু’দল মানুষ আছে।
একদল হিংসার অন্ধকারে ঢেকে দিতে চায় দিনের সূর্য
আর অন্যদল জ্বেলে দেয় ভালোবাসার আলো রাতের অন্ধকারে।


দেয়ালের দিকে যাত্রা

ক’জন অগ্রজ তখনো হাঁটছিলেন খুব ধীরে
যতগোচ্ছিলেন তারা ততই হাঁটার গতি শ্লথ হয়ে আসছিল
দেখেছি তাদের পায়ে দ্বিধার কম্পন
এক সময় তারা এতটাই ধীরে এগোচ্ছিলেন যে অল্প একটু পথ পাড়ি দিতেই কেটে গেল কয়েক বছর
এবং এর পরেই এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটল
তাদের পথটি আটকে গেল একটি কাচের দেয়ালে
এবং তারা ভিন্ন ভিন্ন সময়ের ব্যবধানে সেঁটে রইলেন কাচের দেয়ালটিতে
একেকটি ট্রান্সপারেন্ট ছবি হয়ে।  

আমিও হাঁটছি,
আমার পেছনে অনুজে রা আসছে, প্রতিটি যাত্রারই নিয়তি সেই কাচের দেয়ালে ছবি হওয়া
অনুজ বন্ধুদের গতি বেশ দ্রুত
বিভিন্ন দূরত্বে ওরা ছুটছে, এগোচ্ছে   
এবং আমি ধারণা করছি স্বচ্ছ বলে ওরা এখনো দেখতে পায়নি দেয়ালখানি

দেয়ালের অনেকটাই নিকটবর্তী এখন আমি,   
এবং খুব স্পষ্টতই দেখতে পাচ্ছি অগ্রজদের কেউ কেউ
কোনো এক অদ্ভুত উপায়ে দেয়ালের ওপাশেও হেঁটে বেড়াচ্ছেন, অথচ দেয়ালটি তো নিশ্ছিদ্রই!








0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন