কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৬

ঈপ্সিতা চক্রবর্তী

দেবরাত্রির গল্প  


()

রোজ এই সময়ে পার্কস্ট্রিটের এই বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকে ছেলেটা| রাখি রোজ দেখে ছেলেটিকে, দেখে তো মনে হয় বড়লোকের ছেলে! কিন্তু চোখ দুটোতে দ্ভুত সরলতা মাখানো| দুজনই দু’জনকে দেখে লুকিয়ে লুকিয়ে, কিন্তু কেউই কথা বলে না কোনও|  তারপর নির্দিষ্ট বাস এলে রাখি উঠে পড়ে, ছেলেটা দাঁড়িয়ে থাকে বাসের দিকে তাকিয়ে| সেই সরলতা মাখা মুগ্ধ চোখে দুটো লেগে থাকে রাখির শরীরে| বাড়ি গিয়ে স্নান করতেই সব ছোঁয়া মুছে যায় শরীর থেকে, কিন্তু ওই চোখের দুটো তারা তাড়া করতে থাকে| যেন বলতে চায়, তুমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরী! মনে মনে হাসে রাখি আর ভাবে, আহা যদি জানতো, রাখি রোজ রাতে বহু পুরুষের সঙ্গ করে, তাহলে কি  এই মুগ্ধতা থাকত!

()

রোজ রাতে একই সময়ে বাসস্ট্যান্ডে এসে দাঁড়ায় মেয়েটা| কালো রঙের এত স্নিগ্ধ রূপ যে চোখ ফেরানো যায় না| লুকিয়ে লুকিয়ে সেও দেখে আমাকে| বাস এলে যাওয়ার আগে একবার ঠিক পেছন ফিরে দেখে| ঠোঁটে লেগে থাকে এক অদ্ভুত মিষ্টি হাসি কিন্তু চোখ দুটিতে কেমন যেন বিষণ্নতা মাখা| আহারে মেয়েটা! শহর কলকাতা ওকে গিলে খেয়েছে, জানি| যেমন গিলে খেয়েছে আমাকে| যে প্রেমকে  এতগুলো বছর দূরে সরিয়ে রেখেছি, আজ সেই প্রেম যেন দরজার কড়া নাড়ছে| বড্ড নিষ্পাপ একটা মেয়ে সমস্ত চিন্তা ভাবনা গুলিয়ে দিচ্ছে| কিন্তু ও যদি জানতে পারে, দেবরাজ কলকাতার পশ এরিয়ার বড়লোক মহিলাদের নিত্য শয্যাসঙ্গী, তাহলে কি ওই মিষ্টি হাসিটা থাকত!

()

আজ ভেবে এসেছে দেবরাজ, একবার অন্তত মেয়েটার নাম জিজ্ঞেস করবে আসলে  ওর গলার আওয়াজ শুনবে| কিন্তু পাশে এসে দাঁড়াতেই কেমন অবশ হয়ে গেল| কী! ওর পিঠে, কাঁধে, গলায়, ঘাড়ে এত দাগ! আঁচড়ে, কামড়ে পবিত্র রূপকে নষ্ট  করছে কারা! তারা কেমন মানুষ! গলা আটকে এলো দেবরাজের। তাহলে কি মেয়েটাও তারই মতো পেশা বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে? আজ কেমন যেন ছলছলে দৃষ্টি সেই হাসি নেই কান্নামাখা দুটো ঠোঁট থেকে থেকে কেঁপে উঠছে| নাহ্ বলা হলো না কিছুই| একটু সময় চাই ভাবার জন্য|

()

আজকের কাস্টমারটা মানুষ ছিল না| ধর্ষণ তো রোজই হয়, কিন্তু এমন অত্যাচার  কখনো হয় নি আগে| জেনে শুনেই গেছিলাম একটু বেশি টাকার লোভে| বোনটার বিয়ে ঠিক হয়েছে, অনেক টাকা দরকার এখন| কোনো মানুষ এত অত্যাচারী হতে  পারে সেটা জানা ছিল না| সারা শরীর যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে, চলতেই চাইছে না যেন|  কিন্তু ওকে দেখে মনের কষ্টটা বেড়ে উঠল আরো| এমন একজন যদি সত্যিই ভালোবাসতো! সারাটা রাত আবেগে আশ্লেষে আদর করত প্রাণভরে! ধর্ষণ নয়, প্রেম চাই একটু| কিন্তু বেশ্যাদের ভালোবাসবে কে? বেশ্যাদের শরীর থাকে, কিন্তু মন  থাকতে নেই| আজ ওর দৃষ্টিটা কেমন যেন অন্যরকম মনে হলো। তাহলে কি বুঝতে পেরেছে যে, আমি আসলে কী!

()

কাল অনেক ভেবেছি সারারাত| এখন আমি জানি, আমার কী করা উচিত| জীবনে  সুযোগ বারবার আসে না আর এই সুযোগ হাতছাড়া করলে সারা জীবন আপশোস  করতে হবে| এখন শুধু রাতের অপেক্ষা আজই শেষ দেখা ওর সাথে| এসবকে প্রশ্রয় দিতে নেই| অনেক হয়েছে, এবার বন্ধ করতে হবে সব| আজই ওর নামটা জানতে  হবে এই নামটুকুই থেকে যাবে সারাজীবন| তার আগে একটা দরকারি কাজ সেরে  ফেলতে হবে|

()


দীর্ঘ ছবছর কেটে গেছে ওই রাতের পর| আজ দেবরাজের পঞ্চম বিবাহ বার্ষিকী|  আগেই প্ল্যান করে রেখেছে, বউকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যাবে কটা দিনের জন্য| সেই মতো গ্যাংটকে বুকিং করা আছে| গাড়ি আসার সময় হয়ে গেছে| এই মেয়েটা কী যে করছে তখন থেকে ভেতরে! রাত্রি রাত্রি! আর কতক্ষণ রে বাবা? গাড়ি চলে আসবে  এক্ষুনি| রাত্রিইইই...!’ কোনো জবাব নেই| নাহ্ ধুর এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারা গেল না| নির্ঘাত ঘরের কোনো কাজ করছে| সারাটা দিন এই করে যাচ্ছে, কখনো  এটা পরিষ্কার করছে তো কখনো ওটা| রাত্রি আমি কিন্তু তোকে ফেলেই চলে যাব এবারে!’ নাহ্ জবাব নেই| গাড়িটাও চলে এসেছে| রান্নাঘরে নেই, ছাদে নেই,  বেডরুমে নেই, গেল কোথায় মেয়েটা? আতঙ্কে বিহ্বল দেবরাজের হঠাৎই চোখ যায়  বাথরুমে দেখে রাত্রি বসে আছে এককোণে| রাত্রির পাশে গিয়ে বসতেই প্রেগনেন্সি  কিটটা এগিয়ে দিল দেবরাজের দিকে| পজেটিভ’ - চীৎকার করে উঠল দেবরাজ| তারপর আনন্দে প্রায় কোলে তুলে নিল রাত্রিকে| এটা বেস্ট গিফ্ট রে! থ্যাংকস রাত্রি’। হ্যাপি অ্যানিভারসারি দেব’ - শুধু এইটুকুই বলতে পারল রাত্রি| রাত্রির মনে পড়ছিল সেই রাতের কথা, যখন বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে দেব বলেছিল, অনেক হয়েছে  অন্যের বাসর সাজানো এবার চল নিজেদের বাসর সাজাই!’  

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন