ও মাধব
ট্রেন থামতেই লোকটার ঝিমুনি কেটে গেল।
জার্ণিতে সে ঘুমোয় না। ট্রেনের জানালার কাচ গলে বোঝার চেষ্টা করল, কোথায় এসেছে। বাইরে সকালের আলো আধো ফুটতে শুরু করেছে, ডিম থেকে মুরগীর ছানার মতো কাজল চোখে। সিট ছেড়ে উঠে জানালাটা তুলল, তাকাল।
কাউনিয়া।
কোলের ব্যাগটা নিয়ে লোকটা ট্রেন থেকে নামল। সামনের সিটের লোকটা মহা আগ্রহে জিজ্ঞেস করেছিল
একবার, কোথায় যাবে সে। সে
জবাব দেয়নি। আগ্রহী লোক তো থ। বোবা নাকি?
ব্যাগটা কাঁধে ঝুলল, সে ধীরে সুস্থে নামল। ভোরবেলার পুরো আলো এখনো চেক-ইন করেনি। অনায়াস মৃদুল অন্ধকা। স্টেশনে এত ভোরেও মোটামুটি লোকজন। অল্পবয়সী একটা ছেলে ঝাঁকায় করে ‘কমলা... এই লাগবে... কমলা’ করে যাচ্ছিল। দরদাম না করে সে চারটে কমলা কিনল। চুপচাপ টাকা বের করে দিতে ছেলেটা সুইট করে বলতে চাইল : স্যার, ভুটানের কমলা, নায়িকা শাবনুরের মতো মিষ্টি। লোকটার ঠান্ডা চেহারা দেখে ছেলেটা কথাটা আবার কোঁৎ করে গিলেও ফেলল।
ব্যাগটা কাঁধে ঝুলল, সে ধীরে সুস্থে নামল। ভোরবেলার পুরো আলো এখনো চেক-ইন করেনি। অনায়াস মৃদুল অন্ধকা। স্টেশনে এত ভোরেও মোটামুটি লোকজন। অল্পবয়সী একটা ছেলে ঝাঁকায় করে ‘কমলা... এই লাগবে... কমলা’ করে যাচ্ছিল। দরদাম না করে সে চারটে কমলা কিনল। চুপচাপ টাকা বের করে দিতে ছেলেটা সুইট করে বলতে চাইল : স্যার, ভুটানের কমলা, নায়িকা শাবনুরের মতো মিষ্টি। লোকটার ঠান্ডা চেহারা দেখে ছেলেটা কথাটা আবার কোঁৎ করে গিলেও ফেলল।
কমলা কেনার পর মনে হলো, খালি পেটে কমলা
ঠিক হবে না। সে হেঁটে সামনের
চায়ের স্টলে গেল। নানখাতাই বিস্কুট আর ময়লা কাপভর্তি গরম টনটন চা। বিস্কুটে কামড় দিতেই লোকটার মনে হলো, ঠাকুরগাঁও সুগার মিল, ব্যাপক মিষ্টি। মুখটা কুঁচকে চায়ে চুমুক দিল সারারাতের ঝিমুনি কাটাতে। সামনের বেঞ্চে
লুঙ্গি পরা দু’জন। গলায় ডোরাকাটা মাফলার। শব্দ করে চায়ে চুমুক দিচ্ছিল সে। লোকটার দিকে তাকাল, সে বিব্রত হচ্ছে। আনমনে সার্টের পকেট থেকে সানগ্লাসটা বের করে
চোখে দেবে, তখনি নিজেকে
প্রচন্ড সামলে নিল।
স্টপ, মাধব স্টপ!
স্টপ, মাধব স্টপ!
সে ভাবছে :
১. তার প্যান্ট কালো, ঠিক আছে। গ্রামীণ চেকের এত সুন্দর সার্ট পরা তার ঠিক হয়নি। অপারেশন মানেই সিম্পল। এক কালারের সার্ট
পরা উচিত ছিল।
২. এত দামী ব্যাগ এরকম কোলের ওপর রেখে বসা
ঠিক হলো না। এরকম দামী ব্যাগ সুন্দর মেয়েছেলের মতো।
৩. এত ভোরে কেউ
সানগ্লাস পরে!!!
মাধব, আর ভুল করা যাবে না। নানখাতাই আর
খেল না। আস্তে আস্তে চা চলছে। সামনের কৌতূহলী লোকদুটোর একজন চলে গেল পাছা চুলকাতে
চুলকাতে। লোকটা কোলের ওপর ব্যাগে না তাকিয়ে মৃদু চাপ দিল। অনুভব করল ছোট্ট আগুন। ব্যাগে অল্প কাপড়চোপড়ে উম্ দিতে থাকা ছোট্ট পিস্তলটা।
বাবু সোনাটা।
আর মিনিট দশেক পর টকটকে লাল জামা পরা এক
লোক আসবে। মাধবের কোলে রাখা ব্যাগের দিকে তাকিয়ে উদাস ঢঙে বলবে : সামনের ইলেকশনে ক্যা জিতপে
বুলে মনে করেন? বিএনপি, নাকি আওয়ামী লিগ?
বলে লোকটা হাঁটতে শুরু করবে, মাধব লোকটাকে
অনুসরণ করবে। স্টেশনের বাইরে
লোকটার মোটর সাইকেলে উঠবে নিঃশব্দে। দশ মিনিটের পথ।
বজলার রহমান সকালবেলা ফজরের নামাজের পর হাঁটতে বের হন। ডায়াবেটিস আছে। লালজামা মাধবকে বজলার রহমানকে দেখিয়ে দেবে। মাধব আরাম করে একদম ক্লোজ রেন্জ থেকে পরপর দুটি গুলি করবে রহমান সাহেবকে। লালজামা মোটর সাইকেলে করেই তাকে কুড়িগ্রামে এক বাসায় পৌঁছে দেবে। ওখানে আরেক সবুজ জামা দুপুরের মধ্যে এসে পেমেন্ট করবে বাকী অর্ধেক। ঢাকা থেকে পার্টি লিডারের জন্য অত:পর অপেক্ষা। ওনার সিগন্যাল এলেই সবুজ জামা তাকে বর্ডার পার করে দেবে পরের দিন।
খুব কিউট সহজ মিশন। বজলার রহমানের আগামী নির্বাচন স্বপ্ন এখানেই ফিনিশ।
ব্যাগে হাত দিয়ে আবার ফিল করে নিল ভেতরের ধাতব অস্তিত্ব। কেমন যেন অদ্ভুত একটা পেট খালি খালি যৌন কামনার মতো, গরম কয়লা টাইপ।
বজলার রহমান সকালবেলা ফজরের নামাজের পর হাঁটতে বের হন। ডায়াবেটিস আছে। লালজামা মাধবকে বজলার রহমানকে দেখিয়ে দেবে। মাধব আরাম করে একদম ক্লোজ রেন্জ থেকে পরপর দুটি গুলি করবে রহমান সাহেবকে। লালজামা মোটর সাইকেলে করেই তাকে কুড়িগ্রামে এক বাসায় পৌঁছে দেবে। ওখানে আরেক সবুজ জামা দুপুরের মধ্যে এসে পেমেন্ট করবে বাকী অর্ধেক। ঢাকা থেকে পার্টি লিডারের জন্য অত:পর অপেক্ষা। ওনার সিগন্যাল এলেই সবুজ জামা তাকে বর্ডার পার করে দেবে পরের দিন।
খুব কিউট সহজ মিশন। বজলার রহমানের আগামী নির্বাচন স্বপ্ন এখানেই ফিনিশ।
ব্যাগে হাত দিয়ে আবার ফিল করে নিল ভেতরের ধাতব অস্তিত্ব। কেমন যেন অদ্ভুত একটা পেট খালি খালি যৌন কামনার মতো, গরম কয়লা টাইপ।
প্রথম খুনটা চায়ের কাপে চুমুকে ছোবল দিয়ে
ওঠে মাধবের। অভাবী মা পালিয়েছিল পাশের বাসার প্রৌঢ় লোকটার সাথে। মাধব খুঁজে বের করেছে ওদের মাধবপুর থেকে। এক সন্ধ্যায় ওদের চমকে দিতে হাজির হয় সেই প্রৌঢ় লোক আর মায়ের সুখী ঘরে। মা আবার
গর্ভবতী। কী সুন্দর কাজল চোখ মা! মাধবকে দেখে চমকে যায়, সেই ছোটবেলার ডাক দেয় –
বাজান বাজান।
মাধব মায়ের সুখী মুখের দিকে তাকায়। শান্ত সেই ছোট্ট মাধব। মা ভড়কে যায়। মাধবকে ছোটবেলায় শেখানো ছড়াটা বিড়বিড় করতে থাকে :
বাজান বাজান।
মাধব মায়ের সুখী মুখের দিকে তাকায়। শান্ত সেই ছোট্ট মাধব। মা ভড়কে যায়। মাধবকে ছোটবেলায় শেখানো ছড়াটা বিড়বিড় করতে থাকে :
ডিম ডিমা ডিম ডিম
ডিমাই ডিমাই ডিম
ডিমবা বাবু ডিম
মাধব খুব আরামসে তখনি সেই প্রৌঢ় লোকটাকে
গুলি করে।
চায়ের দাম মিটিয়ে ফেলে। অপেক্ষা লাল জামার। হিসু পেয়েছে মাধবের। উঠে দাঁড়ায়। তাকাতে দেখে, সামনে এক গর্ভবতী মহিলা, ভিক্ষুক। হাত পেতে আছে মাধবের দিকে। বিরক্ত হয় না মাধব। কোনো কিছুতেই তার বিরক্তি নেই। প্রথমে একবার এড়িয়ে যাবে ভাবতেই মহিলাটা সেকেন্ড টাইম ভিক্ষা চাইল। মহিলাটার দিকে ঠান্ডা চোখে তাকাতেই মাধব বিড়িবিড় করে উঠল :
চায়ের দাম মিটিয়ে ফেলে। অপেক্ষা লাল জামার। হিসু পেয়েছে মাধবের। উঠে দাঁড়ায়। তাকাতে দেখে, সামনে এক গর্ভবতী মহিলা, ভিক্ষুক। হাত পেতে আছে মাধবের দিকে। বিরক্ত হয় না মাধব। কোনো কিছুতেই তার বিরক্তি নেই। প্রথমে একবার এড়িয়ে যাবে ভাবতেই মহিলাটা সেকেন্ড টাইম ভিক্ষা চাইল। মহিলাটার দিকে ঠান্ডা চোখে তাকাতেই মাধব বিড়িবিড় করে উঠল :
ডিম ডিমা ডিম ডিম
ডিমাই ডিমাই ডিম
ডিমবা বাবু ডিম
কাউনিয়ায় ভোর উঁকি দিচ্ছে দিচ্ছে পাড়ানির
কড়ি হাতে নিয়ে। কোথাও মোটর সাইকেল ভটভট করে এসে থামল, মনে হলো। একটা লোক এদিকেই
এগিয়ে আসছে।
প্রভাতের অমল আলোতে বোঝা যাচ্ছে না দূর
থেকে, ঐ লোকটার গায়ে লাল
জামা কি না!
খুব আলাদা খুব অন্য খুব ভাবার খুব ক্ষুরধার ...।
উত্তরমুছুনশ্রাবণী।