কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ২৭ মার্চ, ২০১৫

অপরাহ্ণ সুসমিতো

ও মাধব



ট্রেন থামতেই লোকটার ঝিমুনি কেটে গেল। জার্ণিতে সে ঘুমোয় নাট্রেনের জানালার কাচ গলে বোঝার চেষ্টা করল, কোথায় এসেছেবাইরে সকালের আলো আধো ফুটতে শুরু করেছে, ডিম থেকে মুরগীর ছানার মতো কাজল চোখেসিট ছেড়ে উঠে জানালাটা তুলল, তাকাল।  

কাউনিয়া

কোলের ব্যাগটা নিয়ে লোকটা ট্রেন থেকে নামলসামনের সিটের লোকটা মহা আগ্রহে জিজ্ঞেস করেছিল একবার, কোথায় যাবে সে। সে জবাব দেয়নি। আগ্রহী লোক তো থ। বোবা নাকি?

ব্যাগটা কাঁধে ঝুলল, সে ধীরে সুস্থে নামল। ভোরবেলার পুরো আলো এখনো চেক-ইন করেনি। অনায়াস মৃদুল অন্ধকা
স্টেশনে এত ভোরেও মোটামুটি লোকজনঅল্পবয়সী একটা ছেলে ঝাঁকায় করে ‘কমলা... এই লাগবে... কমলা’ করে যাচ্ছিল। দরদাম না করে সে চারটে কমলা কিনলচুপচাপ টাকা বের করে দিতে ছেলেটা সুইট করে  বলতে চাইল : স্যার, ভুটানের কমলা, নায়িকা শাবনুরের মতো মিষ্টিলোকটার ঠান্ডা চেহারা দেখে ছেলেটা কথাটা আবার কোঁৎ করে গিলেও ফেলল

কমলা কেনার পর মনে হলো, খালি পেটে কমলা ঠিক হবে নাসে হেঁটে সামনের চায়ের স্টলে গেল। নানখাতাই বিস্কুট আর ময়লা কাপভর্তি গরম টনটন চাবিস্কুটে কামড় দিতেই লোকটার মনে হলো, ঠাকুরগাঁও সুগার মিল, ব্যাপক মিষ্টি মুখটা কুঁচকে চায়ে চুমুক দিল সারারাতের ঝিমুনি কাটাতে। সামনের বেঞ্চে লুঙ্গি পরা দু’জনগলায় ডোরাকাটা মাফলার। শব্দ করে চায়ে চুমুক দিচ্ছিল সেলোকটার দিকে তাকাল, সে বিব্রত হচ্ছেআনমনে সার্টের পকেট থেকে সানগ্লাসটা বের করে চোখে দেবে, তখনি নিজেকে প্রচন্ড সামলে নিল

স্টপ, মাধব স্টপ!

সে ভাবছে :
১. তার প্যান্ট কালো, ঠিক আছেগ্রামীণ চেকের এত সুন্দর সার্ট পরা তার ঠিক  হয়নি। অপারেশন মানেই সিম্পল। এক কালারের সার্ট পরা উচিত ছিল
২. এত দামী ব্যাগ এরকম কোলের ওপর রেখে বসা ঠিক হলো নাএরকম দামী ব্যাগ সুন্দর মেয়েছেলের মতো
৩. এত ভোরে কেউ সানগ্লাস পরে!!!

মাধব, আর ভুল করা যাবে না। নানখাতাই আর খেল না। আস্তে আস্তে চা চলছে। সামনের কৌতূহলী লোকদুটোর একজন চলে গেল পাছা চুলকাতে চুলকাতে। লোকটা কোলের ওপর ব্যাগে না তাকিয়ে মৃদু চাপ দিল। অনুভব করল ছোট্ট আগুনব্যাগে অল্প কাপড়চোপড়ে উম্‌ দিতে থাকা ছোট্ট পিস্তলটা। বাবু সোনাটা

আর মিনিট দশেক পর টকটকে লাল জামা পরা এক লোক আসবেমাধবের কোলে রাখা ব্যাগের দিকে তাকিয়ে উদাস ঢঙে বলবে : সামনের ইলেকশনে ক্যা জিতপে বুলে  মনে করেন? বিএনপি, নাকি আওয়ামী লিগ?
বলে লোকটা হাঁটতে শুরু করবে, মাধব লোকটাকে অনুসরণ করবেস্টেশনের বাইরে লোকটার মোটর সাইকেলে উঠবে নিঃশব্দে। দশ মিনিটের পথ 

বজলার রহমান সকালবেলা ফজরের নামাজের পর হাঁটতে বের হন। ডায়াবেটিস আছে
লালজামা মাধবকে বজলার রহমানকে দেখিয়ে দেবেমাধব আরাম করে একদম ক্লোজ রেন্জ থেকে পরপর দুটি গুলি করবে রহমান সাহেবকেলালজামা মোটর সাইকেলে করেই তাকে কুড়িগ্রামে এক বাসায় পৌঁছে দেবেওখানে আরেক সবুজ  জামা দুপুরের মধ্যে এসে পেমেন্ট করবে বাকী অর্ধেকঢাকা থেকে পার্টি লিডারের জন্য অত:পর অপেক্ষাওনার সিগন্যাল এলেই সবুজ জামা তাকে বর্ডার পার করে দেবে পরের দিন।

খুব কিউট সহজ মিশন
বজলার রহমানের আগামী নির্বাচন স্বপ্ন এখানেই ফিনিশ

ব্যাগে হাত দিয়ে আবার ফিল করে নিল ভেতরের ধাতব অস্তিত্বকেমন যেন অদ্ভুত একটা পেট খালি খালি যৌন কামনার মতো, গরম কয়লা টাইপ। 

প্রথম খুনটা চায়ের কাপে চুমুকে ছোবল দিয়ে ওঠে মাধবেরঅভাবী মা পালিয়েছিল পাশের বাসার প্রৌঢ় লোকটার সাথেমাধব খুঁজে বের করেছে ওদের মাধবপুর থেকেএক সন্ধ্যায় ওদের চমকে দিতে হাজির হয় সেই প্রৌঢ় লোক আর মায়ের সুখী ঘরে। মা আবার গর্ভবতী। কী সুন্দর কাজল চোখ মা! মাধবকে দেখে চমকে যায়, সেই ছোটবেলার ডাক দেয় –

বাজান বাজান


মাধব মায়ের সুখী মুখের দিকে তাকায়। শান্ত সেই ছোট্ট মাধব। মা ভড়কে যায়
মাধবকে ছোটবেলায় শেখানো ছড়াটা বিড়বিড় করতে থাকে :

ডিম ডিমা ডিম ডিম
ডিমাই ডিমাই ডিম
ডিমবা বাবু ডিম

মাধব খুব আরামসে তখনি সেই প্রৌঢ় লোকটাকে গুলি করে

চায়ের দাম মিটিয়ে ফেলে। অপেক্ষা লাল জামার। হিসু পেয়েছে মাধবের। উঠে দাঁড়ায়তাকাতে দেখে, সামনে এক গর্ভবতী মহিলা, ভিক্ষুক। হাত পেতে আছে মাধবের দিকেবিরক্ত হয় না মাধবকোনো কিছুতেই তার বিরক্তি নেইপ্রথমে  একবার এড়িয়ে যাবে ভাবতেই মহিলাটা সেকেন্ড টাইম ভিক্ষা চাইলমহিলাটার দিকে ঠান্ডা চোখে তাকাতেই মাধব বিড়িবিড় করে উঠল :

ডিম ডিমা ডিম ডিম
ডিমাই ডিমাই ডিম
ডিমবা বাবু ডিম

কাউনিয়ায় ভোর উঁকি দিচ্ছে দিচ্ছে পাড়ানির কড়ি হাতে নিয়েকোথাও মোটর সাইকেল ভটভট করে এসে থামল, মনে হলো। একটা লোক এদিকেই এগিয়ে আসছে

প্রভাতের অমল আলোতে বোঝা যাচ্ছে না দূর থেকে, ঐ লোকটার গায়ে লাল জামা কি না!




1 কমেন্টস্:

  1. খুব আলাদা খুব অন্য খুব ভাবার খুব ক্ষুরধার ...।
    শ্রাবণী।

    উত্তরমুছুন