কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ২৭ মার্চ, ২০১৫

অভীক দত্ত

শেষের সে দিন



পৃথিবীটা কোথায়?
ওই যে, ছোট হয়ে আসছে ক্রমশ... কেন বুঝতে পারছ না?
না, আমার সব কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে। ওখানেই আমরা এককালে থাকতাম না? মানুষ থাকে এখনও ওখানে?
না। আমরা মহাশূন্যে আসার তিনশো বছরের মধ্যেই যুদ্ধ, মহামারীতে পৃথিবী শেষ হয়ে গেছে। ওখানে এখন একজন মানুষও বেঁচে নেই কম্পিউটার সিডিসির তথ্য অনুযায়ী
তাহলে আমাদের ঘরে ফেরা হবে না ক্যাপ্টেন?
আমাদের এখন এই স্পেসশিপই ঘর। এটাই আমাদের সব কিছু, এটা মেনে নিতে হবে
কিন্তু আমার শৈশব, কৈশোর সবই যেখানে, সেখানে একবার যাওয়া যায় না?  অন্তত একবার চোখের দেখা দেখে আসি?
যাবে? হতাশ হবে। বরং শক লাগবে অনেক বেশি। তোমার অতীতটা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে দেখতে পারবে তো স্বচক্ষে?
চলুন তবু যাই
বলছ? যদি দেখ কবর থেকে মৃতদেহরা জেগে উঠছে? তখন ঠিক থাকতে পারবে তো? কিংবা যদি দেখ পোকামাকড়ে ছিড়ে খাচ্ছে মানবদেহ
কী সাংঘাতিক! সে সম্ভাবনা আছে নাকি?
কোনো সম্ভাবনাই নস্যাৎ করে দেওয়া যাবে না। কম্পিউটার সিডিসির কথা  অনুযায়ী এর থেকেও অনেক ভয়ংকর কিছু দেখার সম্ভাবনা আছে পৃথিবীতে। মানুষ একসময় যথেচ্ছাচার করেছে। মনের সুখে কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণকারী গাড়ি, ওজোন স্তর ফুটো করার মতো ফ্রিজ, এসি ব্যবহার করেছে, জল নষ্ট করেছে, বে  আইনিভাবে জলাজমিতে হাইরাইজ হাকিয়েছে, সবুজ ধ্বংস করেছে... পরমাণু অস্ত্র  নিক্ষেপ করেছে নিজেদেরই বিরুদ্ধে। এর ফলে যা হবার তাই হয়েছে। একটা সময় ক্যান্সার মহামারীর আকার ধারণ করেছে, রিসোর্স সীমিত হয়ে পড়ায় যাদের কাছে পরমাণু অস্ত্র ছিল, তারা অন্য দেশ দখল করতে গিয়েছে। শেষ মেষ পৃথিবী বিদ্রোহ  করেছে। ভয়াবহ সব ভূমিকম্প আর মহামারীতে একটা মানুষও বেঁচে নেই আজকে। 
হা ঈশ্বর! মানুষ নেই?
না। 
-তবে আমরা তো বেঁচে আছি? আমরা আর আমাদের চারপাশের স্পেসশিপে সব মিলিয়ে একশো জন লোক তো হবেই? আমরাই তো নতুন ভাবে শুরু করতে পারি সব?
জানি না, আমি বাকি স্পেসশিপগুলোর সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না। সিডিসি মনে করছে, চারজন মানুষ এক হলেই তারা গ্রুপে ভাগ হয়ে যাচ্ছে। লড়াই করছে। এটা মহাশূন্যের পক্ষে বিপদজনক। তাই আমাদের এক হতে দিচ্ছে না। পৃথিবী যখন ছিল, তখন আমেরিকা থেকে যে স্পেসশিপ এসেছিল, চিন-জাপান থেকে এসেছিল, ইন্ডিয়া থেকে এসেছিল, ইসরায়েল থেকে এসেছিল। এবার এরা নিজেদের মধ্যে দেখা করলেই সিডিসি মনে করবে বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা শুরু করবে। এর ফলে নতুন পৃথিবী গড়া তো দূরে থাক, ভয়াবহ সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
আমাদের মৃত্যুই তবে একমাত্র নিয়তি!
হ্যাঁ, ধ্বংস ছাড়া আমাদের মুক্তি নেই। আসুন... ঈশ্বরকে ডাকুন... আমাদের বেঁচে থাকা এখন মূল্যহীন... 
ঈশ্বর? তিনি কি সত্যিই আছেন?
জানি না, সিডিসি এই ব্যাপারে নীরব থাকে...


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন