স্বর্নেন্দু মুখোপাধ্যায়

শীতের সন্ধ্যে ও তুমি

সোডিয়াম ল্যাম্পের আলোয় ভাসমান রাস্তারা; ক্লান্ত মানুষের দল।
শীতল হাওয়ার পরশে, উত্তাপ খুঁজে...

রাস্তার বাঁকে এক অনাহূত সাক্ষাৎ। অজানা আকর্ষণ আর
বদলে যাওয়া মুহূর্তদের সাথে কফির আমেজে মেতে ওঠা।

তোমার চশমার কাচে আটকে থাকা চাহনির অনুবাদ আর আমার শরীরময়
অব্যক্ত কথাদের প্রতিফলনে, মনের ভাঙ্গা আয়নায় আবার নিজের মুখ দেখা।

যুক্তির তোয়াক্কা না করে, জীবনের আঙ্গিনায় না মেলা অঙ্কেরা অপেক্ষায়।
একবার তুমি ছুঁয়ে দিলে, কবিতার ছন্দে আমি মিলিয়ে দেব তাদের এক লহমায়।

তোমার চোখে ফিরিয়ে দিতে চাই

তোমার চোখের কোলে আজ নিরালোক বিনিদ্রার স্পষ্ট ছাপ, নিবর্ত নক্ষত্রের শ্বাস,

আয়ুরেখা ধরে বয়ে চলা সঙ্গমের ক্রশে লক্ষ্যভ্রষ্ট নৌকার প্রতিচ্ছবি।

সূক্ষ্ম স্নায়ুজালে জড়ানো শোক, ঘটে যাওয়া ইতিহাসবৃত্ত, অভিমান।

রক্তের মধ্যে জ্বলতে থাকা বাদামী কয়লার আভা।

এই চোখ একদিন ছিল আয়না, তার আকাশ জুড়ে স্বপ্ন নক্ষত্রেরা,

রূপান্তরে পথে চলতে থাকা পথিকের ভোরের প্রথম আলোকে আলিঙ্গন করে,

মুঠো ভর্তি কল্পনায় অজানার সন্ধানে ছুটে চলার অঙ্গীকার।

অসীমতায় উন্মুক্ত পথ রুদ্ধ হয় ভাগ্যহীনতায়,

অনাহূত ঢেউ ভাসিয়ে নিয়ে যায় ভবিষ্যৎ- ফিরিয়ে দেয় যন্ত্রণা, 

চোখের পর্দায় জমাট বাঁধে চোরাস্রোতে হারিয়ে যাওয়া কাহিনীর লিপি।

শ্বেতপাথর পড়ে থাকে অন্তহীন অপেক্ষায়...

আজ সেই প্রতীক্ষা নিবৃত্ত করে, তোমার চোখে ফিরিয়ে দিতে চাই-

ধানচারার জলে লুকিয়ে থাকা শান্তি, জ্যোৎস্নার আলোয় লেগে থাকা স্নিগ্ধতা,

ঘাসের বুকে জমে থাকা শিশিরের স্বচ্ছতা, পাখির পালকে মিশে থাকা অধরা রং,

শরৎমেঘের সাদা পালকে সকল বিষণ্ণতা ঢেকে চোখের তারায় ফুটে ওঠা মুখ,

একবার দেখতে চাই-- তোমার চোখের কাজলরাঙা দৃষ্টি মহাজগতের মতো  হাসছে...

কোহলে বিসর্জন

ঘড়ির কাঁটায় মাপা সময়

অপেক্ষার জাল ছিঁড়ে বেড়িয়ে আসা সান্ধ্যভাষা

তেল ফুরানো রাত্রি প্রদীপের শিখায়।

চারিদিকে শব্দের স্তুপ; বেনসনের ধোঁয়ায় উড়ে যায় স্বপ্ন

রেশমি চাদরে পড়ে থাকা শরীরজুড়ে পীতাভ-তরলের প্রেম।

কোহলের গন্ধে বালিস আঁকড়ে থাকা রাত

ভরা-কোটালের নদীকে শুকিয়ে দিয়েছে...

নিউরনে ছেয়ে আছে অবহেলার চিত্র; স্নায়ু গ্রন্থিতে বিষণ্ণতার ছাপ

দমবন্ধ যন্ত্রণার লিপিরা ডায়েরির পাতায়

ঘাত-প্রতিঘাতে গড়ে ওঠা কাহিনীর মতো।

চন্দনের সাজে তোমায় উপহার দেবার জন্য...