কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শুক্রবার, ২৭ মার্চ, ২০১৫

কাজী জহিরুল ইসলাম

রস


রসের কলস উপুড় হলো, শূন্য বোতল হাওয়ায় খাড়া

কুঁকড়ে গেছে...
ভাঁজ পড়েছে বলিরেখার চাষ করেছে মাতাল কৃষক মাটির খেতে
বুড়ো দেখ কুঁকড়ে গেছে
বুড়ি দেখ কুঁকড়ে গেছে
শীতের বিকেল সেগুন পাতা কুঁকড়ে গেছে
লেপের নিচে শিবঠাকুরও

রাতের কলস উপুড় হলো
জল গেল কই
ডাবের ভেতর
ডাব গেল কই
গাছের মাথায়
গাছ গেল কই
হাওয়ার দেশে, চাঁদের দেশে

চাঁদের দেশে রসের বুড়ি
হাত-পা ছেড়ে কাঁদছ কেন, রস গেল কই
হাওয়ার গাছে রস ঢেলেছি, জল ঢেলেছি।


রোদ্রের ঠোঙায় শিঙ্গাড়া কিনে আনে মেঘের ছেলেরা
বিকেলটাকে ল্যাঙ মেরে সন্ধ্যাবাবু ধুতি গুটিয়ে বসেন চিন্তার ছাদে।
উরু ফাঁক করে শুয়ে পড়ে রাত্রি ।

আবারো ডিজিটাল নারদ
বাতাশের ডিম, কষ্টের টুথব্রাশ
আর স্বপ্নের জামা থেকে বোতামগুলো ছিঁড়ে ছিঁড়ে পড়ে পাথ্রের ফ্লোরে।


রবীন্দ্রনাথ


প্যালেট হাতে কতবার জলরঙ তেলরঙ ছড়িয়েছি ক্যানভাসে
আঁকতে চেয়েছি মানুষ, জীবন, ঘামের গন্ধ
কিছুই হয়নিএকটি ইদুর, তিনটি তেলাপোকা আর হাতি ছাড়া
মানুষের মুখ আঁকতে গেলেই ভেসে ওঠে অদ্ভুত সব কী কী...
দিনের পর দিন মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকেছি
বাঁকানো জুলফি, কপালের আলিফ, ঠোঁটের ঢেউ, চোখের আবেগ
গালের টোল, নাকের ঘাম, সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছি
হয়নি, কিচ্ছু হয়নি।
মেয়েটি, আমার অঙ্কন শিক্ষয়িত্রী, একদিন
সব বাঁক উন্মুক্ত করে বললেন, দেখ আমাকে।
পাহাড়-নদী-অরণ্যে হাঁটলাম, জলোচ্ছ্বাসে ভাসলাম
ক্যানভাসে কখনোই মানুষের মুখ ভাসেনি।

মাঝরাতে বারান্দায়, ইজিচেয়ার দুলছে
এ-কী! আপনি?
তিনি ঠোঁটে আঙুলচাপা দিয়ে বললেন, ইসসসস্‌ চুপ, দেখ আমাকে

পরদিন ক্যানভাসে ভেসে উঠল সেই মুখ
সারা জীবনে ওই একটি মুখই আঁকতে পেরেছি, রবীন্দ্রনাথ



বনমালী অবনী ঠাকুরের চিন্তাভাবনা


ওপরতলাটা খালি। সিগারেট টানতে টানতে হেঁটে যায় বেহেড মাতাল
খালি না, খালি না, দুই শয়তান বাতাশে পা দোলায় কার্নিশে বসে
তখন বৃষ্টি হয়। শয়তানের মাথা ভেজে না, পায়ের পাতা চুইয়ে বৃষ্টি পড়ে
বাগানে তখন শিশুদের মাথা কাকভেজা হয়, ওরা স্কুলের দিকে
হাঁটতে হাঁটতে কদমফুল হয়ে যায়
ওপরতলায় কিছু ছিলকিছুদের ছায়া রোদে শুকোতে দেন
বৃদ্ধ বনমালী অবনী ঠাকুর। আসছে গ্রীষ্মকালে বাগানের ওপর
ছায়াদের মশারি খাটাবে, রোদ্দুর ঠেকাতে।

ওপরতলাটা একদম খালি, বলতে বলতে রোদ্দুরে হাঁটেন একজন পথচারী
একখা ছায়া পিছু নেয় একজন ল্যাংটা বাবা দয়াল গণি শা’র
বটগাছের পাতা বাড়ে, শেকড় বাড়ে, ঝুড়ি নামে বেহেশতের বাগান থেকে
কল্কির ধোঁয়ার ভেতর খোদার আরশ দেখেন একজন ধোঁয়া বিশারদ, সত্তরখান হুরপরী নৃত্যমুদ্রারত
জেকেরের ধ্বনিতে বিস্ফোরিত হয় ধর্মনিরপেক্ষতা, ওয়ান ডে সিরিজে কেঁপে ওঠে বাংলাদেশ
মাজার ফেটে তখন বের হয়ে আসেন বাবা শাহজালাল, শাহপরাণ
আশীর্বাদের তুলাদন্ড চব্বিশহাত গরদের ভেতর লুকিয়ে ফেলে কিছু অভিজ্ঞ বদমাশ

ওপরতলাটা একদম খালি, বলতে বলতে হাডসন রিভারে হাঁটেন একজন পাদ্রীবাবা
খালি না, খালি না, দুটি শাদা দাঁড়কাক সন্ধ্যার ডানা ঝাড়ে ওইখানে বসে
ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে চিয়ার্স করতঃ ডানার গন্ধক ঝেড়ে ফেলার কসরত, ফ্রাইডে নাইট
গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল স্টেশনে দাঁড়িয়ে শান্তি শান্তি ইয়ার্কি মারে নীল পতাকার সারি
হাতে গন্ধকপোড়া ছাইমেখে দাঁড়িঅলা সৌদিটাকে ধরতে পাঠানের দেশে হাঁটু যায়,
ডানা যায়, পেঙ্গুইন যায়। গহীন মরুতে মুখ গুঁজে পেঙ্গুইন, হায়!
গুহাবিদ্যাবিশারদ গুহার ভেতরে কর্তাল বাজিয়ে গান, ‘হাওয়া হাওয়া’
হাওয়ায় উড়তে থাকে বারো হাত পাগড়ির শুভ্র লেজ, মরুপর্বতগুহাগোল্লাছুট খেলা

ওপরতলায় কেউ আছে, নাকি নেই? দ্বন্দ্বের আবর্তে ঘোরে অবনী ঠাকুর।



1 কমেন্টস্:

  1. রোদ্রের ঠোঙায় শিঙ্গাড়া কিনে আনে মেঘের ছেলেরা
    বিকেলটাকে ল্যাঙ মেরে সন্ধ্যাবাবু ধুতি গুটিয়ে বসেন চিন্তার ছাদে।
    উরু ফাঁক করে শুয়ে পড়ে রাত্রি ।

    আবারো ডিজিটাল নারদ
    বাতাশের ডিম, কষ্টের টুথব্রাশ
    আর স্বপ্নের জামা থেকে বোতামগুলো ছিঁড়ে ছিঁড়ে পড়ে পাথ্রের ফ্লোরে।
    ei ongshota onya kabitar, kibhabe dhuke gelo?

    উত্তরমুছুন