কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৪

০৭) অপরাহ্ণ সুসমিতো


এ কী মায়া লুকাও কায়া

কাল রাতে ঘুম আসছিল নাএকবার ভাবছিলাম ভবতারিণীকে ফোন করি ভবতারিণী আমার স্কুল জীবনের বন্ধু। এখন জোহানেসবার্গে থাকে। হীরার ব্যবসা আছেও প্রায়ই ফেসবুকে ওর কভার ছবিতে ওর হাতের ছবি পোস্ট করে। পাঁচ আঙ্গুলে ৬টা আংটিঅনামিকায় ২টিওর সব বন্ধু ফলোয়াররা কতো কী মন্তব্য করেওর সাথে আমার আলাপ এভাবে শুরু হয়। আমি টেক্সট করি;
: কু ঝিক ঝিক ঝিক কু কুকোথাও কোনো খনিশ্রমিক জেগে থাকলে সাড়া দাও
ও মুহূর্তে সাড়া দেয়
:
হ্যালো ইগলুতুমি ডাক দিয়েছো কোন্‌ সকালে কেউ তা জানে না।
ভবতারিণী আমাকে ইগলু ডাকে। বরফের দেশে থাকি বলে
ভবতারিণী খুব মেধাবীস্কুলে সব সময় প্রথম হতো। আমরা সবাই ওর গুণমুগ্ধ
: ফিরি আমি উদাস প্রাণে... তোমার মতো এমন টানে ডাকে কেউ তা জানে না
: বেজে ওঠে পঞ্চমী স্বর কেঁপে ওঠে বন্ধ এই ঘর
: মন্ট্রিয়লে আকাশে তোর ব্যাকুলতা... কেউ তো আনে না
: বাতাস বহে কার বারতা...

আমরা পরস্পর রবীন্দ্রনাথকে ঈর্ষা করতে শুরু করি একসময়আমাদের মাঝে এই বুড়ো টুপ করে আশ্রয় নেয় বিনা কোলাহলে
ক্লাস নাইনে পড়ার সময় আমি ভবতারিণীকে প্রেমপত্র লিখেছিলামচিঠিটা পেয়ে সোজা আমার মায়ের কাছে নালিশ করে ও। ওরা আমাদের পাশের বিল্ডিংএর তিন তলায় থাকতো। মা আমাকে সেদিন আরাম করে পিটলো। পেটানোর অস্ত্র ছিল ডাল ঘুটনিমারের চোটে আমার সে কী জ্বর এলো! প্রায় দশদিন স্কুলে যেতে পারিনি

তো কাল রাতে আচমকা আমাকে লিখল;
: এই তুই যে আমাকে একবার প্রেমপত্র লিখেছিলি মনে আছে?
: (আমি চুপ) (মুখ বাঁকা করার ইমো...)
: আমাকে ওরকম একটা চিঠি আবার লিখবি?
: জ্বি না, ফোটেন। চিঠি লেখার টাইম নেই।
: আরে লেখ না একটা! একদম কাগজ কলমে আমার ঠিকানায় ডাকে পাঠাবি
: আচ্ছা লিখবতোর ভান্ডার থেকে একটা দামী হীরের টুকরো পাঠাবি?
: প্রমিজ, পাঠাবো
আমার ছোট মেয়েটাকে তোকে দিয়ে দেব। তুই ওকে নিবি? ও হীরের চেয়েও...
আমার টাইপ মুহূর্তে থেমে যায়। দুষ্টুমি করতে করতে পরিবেশ সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছে 

আমার বন্ধুটির জটিল অসুখ
ডাক্তার সময় বেঁধে দিয়েছেনহাতের আঙ্গুল গলে টুপটুপ করে ঝরে পড়ছে একেকটি সময় পালকদিনগুলো যাচ্ছে সাঁওতাল মেয়েদের মতো হুমহুম করে। রাত কাটছে প্রজাপতি আলোয়জোহানেসবার্গে যখন সকাল নামছে বৃষ্টির সুপ্রীতিতে, আমার শহরে রাতের অনুপম কালো ওড়না
আমি কত বছর পরে কাগজ কলম নিয়ে বসি
মাথা নিচু করে চিঠি লিখতে বসি কান্নার পেখমে

: এই তুই কি জানিস যে আমি সিজোফ্রেনিক? প্রতি বছরে প্রায় দু’তিনবার আমাকে  হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। তবু তোর ছোট মেয়েটাকে আমি নেবওকে দেখে আমিও বাঁচার সূর্য খুঁজবডিসেম্বরে যখন সমস্ত শহর তুষারে ভরে যাবে, আমার হাত ধরে হীরের টুকরা মেয়েটা ভারি পোশাকে হাঁটবে 
: বোঁজু অপরাহ্ণ
: বোঁজু হীরার টুক্কা
: দ্যাটস নট মাই নেম
আমি হো হো করে হাসব। মেয়েটার নাকের ডগায় পাতলা করে তিরতির তুষারের  কণা পড়বে। চিবুকটা ঠান্ডা হিম হয়ে আসবে
আমি দ্রুত গ্লাভস খুলে ওর চিবুক ঘষে দেব। হীরের টুকরা মেয়েটা চোখ বড় করে আমাকে দেখবে। হেসে দেবে নিষ্পাপ সরণীর আভায়
: ইউ আর এ নাইস পোয়েটকবি, চলো চকলেট মিল্ক খাব
কোনো ছুটিতে আমরা দুজন জোহানেসবার্গ যাবতোমার গ্রেভইয়ার্ডে তোমার স্টোনের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে থাকব দুজনেরোদ নামবে সয় না সয় না গাইতে গাইতে...

এ কী মায়া লুকাও তুমি আড়ালে!  
তোমার হীরের টুক্কা মেয়েটা আমার হাত ধরে কাঁদতে থাকবে সংগোপনে...

একা






0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন