কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৪

০৩) অর্ক চট্টোপাধ্যায়


লেট দ্য টয়...

কিংশুক সেদিনই লাইব্রেরিতে প্রথমবার। নতুন দেশ, নতুন ইউনিভার্সিটি। নতুন ইউনিভার্সে নিজেকে ইটি ইটি মনে হচ্ছিলো। বাবরী চুলের ছোকরা ছাত্র হিসেবে বরাবরই ভালো। সেই ভালো ভালো ভান বজায় রেখে দোতলায় বুক-শেল্ফে অনেকক্ষণ মাথা গুঁজে কাটালোএই বই, সেই বই, এই ইচ্ছে, ওই ইচ্ছে মাথার ভেতর গোত্তা খেয়ে টলমল করলো বেশ। কিংশুক এখন হবু ডক্টরেটের দলে। নামের আগে '' তারপর বিসর্গ জুড়বে বছর তিনেকের মধ্যে। ততদিনে তার তিন দশক পার হবে এই পৃথিবীতে। মানুষের চাপ কি আর বিসর্গ নিয়ে? চাপ তো চন্দ্রবিন্দুর দিকে। 

অনেকদিন আগে কলেজে পড়াকালীনই ভেবেছিল পি এইচ ডি (পিত্জা হাট ডেলিভারি) বস্তুটা তিরিশ বছরের মাথায় ঘাড় থেকে নেমে যাওয়া দরকার। থিসিস : চিন্তার নামে ভালোবাসার কাগুজে দাম। তখন মনে হতো, কোনো ইউনি-   মাল্টি কেউ না নিলেও নো চাপ; কিলোদরে কাগজ কিনে লিখে ফেলবে চ্যাপ্টার বাই চ্যাপ্টার। তারপর মাস্টার্স, এম ফিল (মাইজারলি ফিলিংস) করতে করতে দেখল কাগজ জানালা দিয়ে উড়ে গেছে আর ঘরের ভেতর ম্যাক-মোহন, যে  মোহনস-এর লুপ্তপ্রায় কর্নফ্লেক্স খেলেও এ জন্মে হিন্দী ছবির নায়ক হয়ে উঠতে পারবে না। আর এখন দেশের উল্টোপিঠে বানানো অলীক এই ‘বি-দেশ’ নামের জায়গাটায় বছর তিনেকের জন্য থাকা খাওয়ার বন্দোবস্ত।  

যাক, মাথার ভেতর ঘুরঘুর করা বন্ধ করে কিংশুক মাথার বাইরে বেরিয়ে এলো। হাতে পাঁচ-ছয়্খান বই নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে ডেস্কে সেগুলোকে ইস্যু করতে না করতেই বেদম হিসু পেল। ডেস্কের একপাশে বইগুলো রেখে লাইব্রেরিয়ানকে বলে  সাইন দেখতে দেখতে টয়লেটের দিকে রওনা দিল। এদেশে টয়লেটের দুটো দরজা। একটা বাইরের, সেটা খুললে ভেতরে আরেকটা দেখা যায়, সেটা খুললে তবেই কেল্লা এবং ফতের সম্ভাবনা। দুটো দরজা পেরিয়ে কিংশুক জায়গা মতো  সটান দাঁড়িয়ে নিজেকে উন্মুক্ত করতে, চোখের সামনে বিজ্ঞাপন দেখতে পেলো। দেশে হলে এ বিজ্ঞাপন নির্ঘাৎ ‘ডি কে লোদ’ হতো, বি-দেশে এটা : ‘Are you feeling alone or depressed? If so, please contact our 24 hour helpline now!’ 

এখানে ‘মেন্টাল’ ভাবটা বেশি, দেশে শুধুই ‘সেন্টি-মেন্টাল’ধাতুতরল আর  শীঘ্রপতন থেকে মন নামক ততোধিক নুনুময় এই বস্তুটার দিকে উড়ান মাপতে মাপতে খিক করে হেসে কিংশুক জিপটা বন্ধ করলোকিন্তু খিল্লি অভি বাকি হ্যায়, মেরে দোস্ত! উল্টোদিকে দেওয়ালে আটকানো একটা ভেন্ডিং মেশিন। তাতে  লেখা : ‘Get two condoms for two dollars. Press the coin into the right slot to get the condoms from the left.’

কিংশুক মনে মনে বলল : এটা তো হেব্বি! ক্যাম্পাসের হস্টেলে সপ্তাখানেক হয়ে গেল, গোটা ক্যাম্পাস বা কমনরুমেও এধরনের কন্ডোম মেশিন চোখে পড়েনি!  তবে কি লাইব্রেরীতে স্ট্রেসবাস্টার? কিংশুক বুঝতে পারলো, টয়লেট এবং পুংলিঙ্গের  দোস্তি ফুরোবার নয়যৌনরোগের বিজ্ঞাপন নেই তো কোই বাত নেহি, স্বয়ং  কন্ডোম হাজির হ্যায়। টয়লেট থেকে বেরোবার সময় কিংশুকের মাথার ভেতর ইংরেজি টেক্সট দুটো গিজগিজিয়ে জুড়ে গিয়ে যে লেখা তৈরি হলো, তা দিয়ে ওর  থিসিস শুরু করে দেওয়া যায় কিম্বা কে জানে হয়তো শেষও করে ফেলা যায়! 

আমরাও নিমেষের ঐ লেখাটাতেই থামি : ‘Are you feeling alone or depressed? Get two condoms for two dollars.’ 

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন