কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৩

কবি জঁ-মিশেল মোলপোয়ার কবিতা

 

প্রতিবেশী সাহিত্য

 

সমকালীন ফরাসি কবি জঁ-মিশেল মোলপোয়ার কবিতা

(ভাষান্তর ও ভূমিকা: গৌরাঙ্গ মোহান্ত)




 

কবি পরিচিতি : জঁ-মিশেল মোলপোয়া ফ্রান্সের মবেলিয়ারে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ১১ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কাব্য রচনায় ফরাসি গদ্যকবিতার ঐতিহ্যকে যেমন সমুন্নত রাখেন তেমনি কাব্যালোচনার ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা পালন করেন। ফরাসি কবি অঁরি মিশো, জাক রেদা ও রনে শারের কাব্য নিয়ে তাঁর বিশ্লেষণ অনবদ্য। এছাড়া, কবিতার বৈভব-বিভূতি নিয়েও তিনি অসামান্য প্রবন্ধ রচনা করেছেন; এ জাতীয় কাজের ভেতর La Poésie malgré tout (1996), La Poésie comme l'amour (1998), Du Lyrisme (2000) উল্লেখযোগ্য। তিনি ২৫টির অধিক কাব্য রচনা করেছেন-- Une histoire de bleu (1992), L'Instinct de ciel (2000) 3 Pas sur la neige (2004) প্রভৃতি কাব্যের চিত্রকল্প বিস্ময়কর। Une histoire de bleu (নীলের উপাখ্যান) কাব্যে কবি নীলবর্ণের গভীরতর অর্থের অন্বেষণে ব্যাপৃত থেকেছেন। জঁ-মিশেল মোলপোয়া Le Nouvean Recueil নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেন এবং প্যারিস এক্স-ননতের বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক ও সমকালীন কবিতার পাঠদানে কর্মনিরত রয়েছেন। অনূদিত কবিতাগুলো Une histoire de bleu কাব্যের অন্তর্গত।

 

সমুদ্রের বাহুতে শুভ্র সাঁতারু

 

আপনার মাথা জলের চেয়ে অধিক জলীয় ও নীল, বিপুল আলোড়নের মধ্যে নিমজ্জিত, আপনি আপনার নিঃশব্দ মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন।

বাহু কোমল শৈবালে আচ্ছাদিত, আঘাতের পরে আঘাত, যে অন্ধকার আপনাকে সমর্থন ও পরিমাপ করে তার ওপর আপনার হৃদয়কে ধাক্কা দেন: সমস্ত অসন্তোষ, সতর্কবিচার, প্রায় নির্ভুল ধারণা, নিশ্চয়তা ও অগভীর সত্যসহ আপনার মন ধীরে দ্রবীভূত হয়।

আপনি সমুদ্রে যান, আপনার বিমর্ষতা পরিষ্কৃত হয়।

 

এ নীল কারো নয়

 

এটি মানুষের বিত্ত বা দেবতাদের রাজ্য নয়। এটি সংবাহিত ও স্ফীত হয়, সর্বত্র এর নিজস্ব স্বপ্নের সঞ্চরমাণ বিষয়কে প্রসারিত করে। এর ভেতর সম্পূর্ণ ও অসম্পূর্ণ তাদের গুণাবলি বিনিময় করে। যদি কোনো আত্মা বা নীতি না থাকে, অন্তত নীল বিদ্যমান থাকে, দিনের ধূসরতায় প্রকাশ করতে সর্বদা প্রস্তুত, কারো কাছে প্রদত্ত এবং মিছামিছি, রিক্ত হাতের তালুর মতো, এবং প্রতিশ্রুতির মতো যা রক্ষিত হবে না বলে সকলে অবহিত। এভাবে এটি সুন্দর: আমাদের দুর্গতির ওপর এ আলো, আমাদের মৃত্যুর কাছে এ সৌন্দর্য। বই লেখা চালিয়ে যাওয়া, ক্যানভাসে ছবি আঁকা, ভালোবাসা, এবং সঙ্গীত রচনার জন্য যথেষ্ট। দিনটিকে আপনার ওপর চেপে ধরবার চেষ্টা করা। এবং সেই থেকে অধিকতর দুর্গতির পর, অধিকতর সৌন্দর্যের সাথে একীভূত থাকা। আমরা যতক্ষণ পারি আমাদের নখদর্পণ সহযোগে কালের অতিক্রমণের সহযোগী হবো।

 

মাঝেমধ্যে আমাদের একজন সমুদ্রের কাছে দাঁড়িয়ে থাকে

 

তিনি সেখানে দীর্ঘ সময় ধরে থেকে যান, একদৃষ্টিতে নীলের দিকে তাকিয়ে থাকেন, নিশ্চল ও অনমনীয়, যেন একটি গির্জায়, তার কাঁধে কী চেপে রয়েছে এবং তাকে আটকে রেখেছে সে সম্পর্কে কিছুই জানেন না, এতো দুর্বল, সমুদ্র দ্বারা সম্মোহিত। তিনি স্মরণ করেন যা হয়তো কখনো ঘটে নি। তিনি তার নিজের জীবনের ভেতর দিয়ে সাঁতার কাটেন। তিনি এর রূপরেখা অনুভব করেন। তিনি এর দূরবর্তী প্রান্তগুলো অনুসন্ধান করেন। তিনি সমুদ্রকে তার ভেতরে উন্মোচিত হতে দেন: এটি তার আকাঙ্ক্ষার সাথে মিলে যায়, তার দুঃখে উন্মাতাল হয়ে ওঠে, অন্ধের যষ্টির মতো সশব্দে আঘাত করে, এবং তাড়াহুড়ো না করে কেবল আকাশের শেষ শব্দের কাছে তাকে নিয়ে যায়, যেখানে কেউ কিছু বলতে পারে না, যেখানে নেই কোনো তৃণগুচ্ছ, জন্মায় না কোনো ধারণা, যেখানে মাথা তার আত্মাকে থু করে ফেলবার পর ফাঁকা আওয়াজ করে।

 

আমাদের অভ্যন্তরীণ সমুদ্র বাক্যাবলি যাচাই করে

 

ভোর থেকে একই কণ্ঠস্বর একই শিশুর মস্তিষ্কে একই বর্ণমালা উচ্চারণ করে। এটি বিড়বিড়িয়ে ওঠে, দ্রুত উড়ে যায়, সৈকতের ঘাসে, সাঁতারুর পিঙ্গল ত্বকে, নৌকার গলুইয়ের ওপর, মাস্তুলের ওপর আটকে থাকে। সাধারণ শব্দাবলি নিরর্থক, কারুর নয়। ভালোবাসা ছাড়া কোনো কিছুর জন্যে নয়। এ কারণে আমরা কেবল সামান্যই জানি কী বলতে হবে এবং আমরা কষ্টে থাকি যখন কারো দৃষ্টি আমাদের মুখের দিকে দীর্ঘক্ষণ নিবদ্ধ থাকে যা আমরা চাই আমাদের হৃদয়ে স্থির থাক। আমাদের ওষ্ঠ এতোটা শ্রীহীন, অস্বচ্ছ রাতে আমাদের শরীর অদৃশ্য, এবং অযোগ্য আমাদের হাত, তথাপি বজ্র বা পাখনা রয়েছে আমাদের অঙ্গুলাঙ্কে।

 

বৃষ্টিপাতের পরে নীলের নিরাময়...

 

আকাশ তার রং ফিরে পায়। বৃক্ষ ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরায় এবং পায়ে চলার পথ পান করে। নগরও বাক্যাবলি যাচাই করে। আর্দ্র হাসি এবং নগ্ন পা বৃষ্টি ঝরায়। মনে হয় ভূ-দৃশ্যের সমস্তই বিশ্বাসে সিঞ্চিত।

আপনি এ নীলের বাগান গড়ে তুলতে চান, তাহলে এটিকে তুলে নিয়ে ধীরে একটি ক্যানভাসের অ্যাপ্রন বা বেতের ঝুড়িতে রেখে দিন। ফুলের তোড়ায় আকাশকে সাজান, তার সৌরভ সঞ্চয় করুন, কয়েক ঘণ্টার জন্য আপনার কাছে সৌন্দর্য ধরে রাখুন এবং পুনর্মিলিত হন।

আপনি চান, আপনি দেখতে পান, আপনি জানেন যে আর বেশি কিছু করা যাচ্ছে না এবং সেখানে থেকে যেতে হচ্ছে, আলোতে দাঁড়িয়ে, অঙ্গভঙ্গি ও শব্দাবলির শূন্যতা নিয়ে, কিছুটা তুচ্ছ আকাঙ্ক্ষা রেখে, ভূ-দৃশ্যের প্রতি আগ্রহ ব্যতিরেকে, তবে আপনি নিশ্চিত যে নিরর্থকতার জন্য এটি উদ্দীপিত হয় নি, কেননা প্রেম আমাদের মিশন, আমাদের কর্তব্য, এমনকি যদি তা উঠোনের ঘাসে বৃষ্টির পরে ঝরে পড়া জলবিন্দুর মতো দুর্বলও হয়।


3 কমেন্টস্:

  1. সুন্দর। কেবলি অস্ট্রেলিয়ার ভারত মহাসাগরের পাড় হতে ছিপমাছ ধরা শেষ করে এলাম।
    এসেই সমুদ্র নিয়ে কবিতার
    সবকিছু মজা লাগলো।দুর্বোদ্ধ শব্দাবলী কম,
    ভালো ভালো ভালো দাদা

    উত্তরমুছুন