কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০২৩

চিত্রা মুদগল

 

প্রতিবেশী সাহিত্য

 

চিত্রা মুদগল-এর দুটি গল্প                  

                        

(অনুবাদ : মিতা দাশ)

 

 

লেখক পরিচিতিঃ জন্ম ১৯৪৪ সালের ১০ডিসেম্বর। প্রাথমিক শিক্ষা হয়েছিল তাঁর নিজের গ্রাম নিহালি খেদা (জেলা উন্নাও, ইউপি) সংলগ্ন ভারতীপুর গ্রামের বালিকা বিদ্যালয়ে। পুনা বোর্ড থেকে উচ্চমাধ্যমিক এবং মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরবর্তী পড়শোনা। ছবি আঁকার প্রতি গভীর আগ্রহ ছিল, তিনি জে জে স্কুল অফ আর্টস থেকে চারুকলাও অধ্যয়ন করেছেন। সোমাইয়া কলেজে পড়ার সময় তিনি শ্রমিক নেতা দত্ত সামন্তের সংস্পর্শে আসেন এবং শ্রমিক আন্দোলনে যোগ দেন এবং সংগঠনের মুখপত্র 'জাগরণ'-এর সম্পাদক হন। তিনি তাঁর লেখা বিখ্যাত উপন্যাস 'আভান'-এর জন্য লন্ডনে (ইংল্যান্ড) সহস্রাব্দের প্রথম  আন্তর্জাতিক 'ইন্দু শর্মা কথা সম্মান' পাওয়ার গৌরব অর্জন করেন। এছাড়া বিড়লা ফাউন্ডেশনের 'ব্যাস সম্মান', দিল্লির হিন্দি একাডেমির 'সাহিত্যিক সম্মান', 'বিকাশ' কেয়া ফাউন্ডেশনের সামাজিক কাজের জন্য 'বিদুলা সম্মান'  এবং উত্তরপ্রদেশ হিন্দি ইনস্টিটিউটের 'সাহিত্য ভূষণ সম্মান' অর্জন করেছেন ।

 

ডোমিন কাকী

নাতনি গরমের ছুটিতে গাঁয়ে এসেছে। সে ক্লাস ওয়ান-এ পড়ে, বয়স হয়েছে ছয়। গাঁয়ের জীবন এখন ওর জন্য বেশ মজার। ঠাকুমা একটা খাটে বসে বড় বাসনে রাখা লাল লঙ্কার বোঁটা ভাঙছিলো, আর ও সরু কাঠি দিয়ে সেই মোটা মোটা লাল লঙ্কাগুলোর ভেতরে মশলা ভরছিলো। ঠাকুরমা একটু সাবধান করার তাগিদে বলল, লঙ্কায় একটুও হাত দিস না বিট্টু! সেই হাত যদি নাকেচোখে ছোঁয়া লাগে তাহলে আর নিস্তার নেই, আগুনের মত জ্বালা করবে। আর তুই বোলতার মতো গোটা বাড়িতে নেচে বেড়াবি।

তখনি ও দরজার চৌকাটের বাইরে থেকে উঠোনে ডোম কাকীকে ঢুকতে দেখলো। ডোমকাকী ঘরের উঠোনের পায়খানা ও নর্দমা পরিষ্কার করতে এসেছিলো।

সে চেঁচিয়ে উঠলো, বললো - ঠাকুমা দেখো ডোমিন এসেছে।

হাতে লঙ্কার মশলা ফেলে ঠাকুমা ওর গালে একটা চড় কষিয়ে দিলো আর রেগে  বলল, তুই কখন শিখবি বড়দের মান-সন্মান দিয়ে কথা বলা? এইভাবে কেউ  বড়দের অসম্মান করে? এইভাবে কেউ ডাকে? রতনি তোর কাকী হয়, শুনছিস? তোর কাকী! মনে রাখিস তুই আর কক্ষনো ওকে ডোমিন বলবি না, বলবি  ডোমিন কাকী, বুঝলি?

ওর চোখ দিয়ে হড়হড় করে জল পড়ছিলো। না মেরেও তো ভুল শোধরানো যেত! সে কী করে জানবে যে সবার সঙ্গে কীরকম তার সম্বন্ধ, কাকে কী সম্বোধন করবে সে!

একসপ্তাহ গড়িয়ে গেল। আবার ডোমিন কাকীর সঙ্গে তার দেখা। রতনি যখন বাড়ি এলো সে নিজের সমবয়সীদের সঙ্গে উঠোনে কিত-কিত খেলছিল। যেই সে  রতনিকে দেখলো, দেখামাত্র হাসি মুখে দুই হাত জোড় করে নমস্কার বললো। প্রত্যুত্তরে ডোমিন কাকও আশীষ দেওয়ার জন্য দুটো হাত তুলে দিলো।

কাজ শেষ করে ডোমিন কাকী কিছু পাওয়ার আশায় স্নান সেরে বসেছিল। আর ঠাকুমা ওর খেলায় বাধা দিয়ে বলল, বিট্টু একটু এদিকে আয়!

বিট্টু কাছে আসতেই ঠাকুমা ওর হাতে একটা খাদ্যশস্যর ঝুড়ি ও খাওয়ার জন্য কিছু বাসি রুটি রেখে বলল, যা সব রতনির পুঁটলিতে দিয়ে দে। ভালোভাবে নিয়ে যাবি, কিছু পড়ে যায় না যেন!

ওকে কাছে আসতে দেখে ডোমিন কাকী খুব খুশি, সে নিজের পুঁটলিটা খুলে ধরল। তাও দু-চার মুঠো খাদ্যশস্য পুঁটলির বাইরে ছড়িয়ে পড়ল। ঝুড়িটা মাটিতে রেখে সে রতনির সঙ্গে শস্য তুলতে সাহায্য করতে লাগলো।

হঠাৎ এক দৌড়ে ঠাকুমা ওর কাছে এসে কষে একটা থাপ্পড় মেরে চিৎকার করে বলল, মূর্খ, বেয়াদ্দপ কোথাকার! ছুঁয়ে ফেললি তুই রতনিকে?

ও ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কাঁদছিলো। ঠাকুমা ওর কান্নাকে উপেক্ষা করে ওকে স্নানঘরে টেনে নিয়ে গেলো আর জোর গলায় বড় কাকীকে ডেকে বললো, আমাদের  দুজনের গায়ে একটু গঙ্গাজল ঢেলে দু বালতি স্নানের জল দিয়ে যা।

নিজে স্নান করার পর ও বিট্টুকে স্নান করানোর পরেও ঠাকুমার রাগ পড়লো না। ওকে সাবধান করে বলল, খেয়াল থাকে যেন, আর কক্ষনো রতনিকে কিছু দেবার সময় যেন স্পর্শ না হয়, যা দেবার ওকে দূর থেকে দিবি!

ভয়ে বিট্টু এক দৌড়ে বড় কাকীর কোলে লুকিয়ে পড়ল। অবোধ মনে প্রশ্ন  জাগলো, ঠাকুমা কেন ওকে থাপ্পড় মারলো?


দুধ

বাড়ির সব পুরুষেরা দুধ খায়।

কারণ ওরা পুরুষ।

ওর কাজ শুধু কুসুম কুসুম গরম দুধের গেলাস খুব যত্ন করে ওদের দিয়ে আসা। দুধ দিতে যাওয়ার পথে সে গেলাসের দুধের ঘ্রাণ নেয় । গরম দুধের ঘ্রাণ ওকে পাগল করে দেয়।

একদিন ওর মা, ঠাকুমা বাড়িতে ছিল না। তখন সে ঝটপট রান্নাঘরের দরজা খুলে দুধের হাঁড়ি থেকে নিজের জন্য এক গেলাস দুধ নিয়ে যেই খাবার জন্য ঠোঁটের কাছে নিয়ে এলো, হঠাৎ করে রান্নাঘরের দরজা ফট করে খুলে গেলো। আর ওর ঠোঁট অব্দি নিয়ে আসা হাত থেকে গেলাস ফসকে গিয়ে দুধের হাঁড়িতে গিয়ে পড়ল। দুধের হাঁড়ি ছিল মাটির, গেলাস ওর উপর পড়তেই হাঁড়ি দু টুকরো হয়ে গেলো আর সব দুধ মাটিতে গড়িয়ে গেল। রান্নাঘর গোবর দিয়ে লেপা ছিল,  গরম গোলাপি দুধ চারিদিকে ছড়িয়ে গেল। মা’কে নিজের কাছে আসতে দেখে সে থরথর করে কেঁপে উঠল আর অনুতাপে বলে উঠল-

আমি... আমি...

দুধ খাচ্ছিলি বেহায়া?

হ্যাঁ

চাইতে পারতিস না?

চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি দাওনি

দিইনি তো কী হয়েছে, তুই কি লাঠিয়াল হবি, তোকে তেল খাওয়াবো?

একটা কথা জিজ্ঞাসা করি মা?

জিজ্ঞাসা কর!

আমি যখন জন্ম নিয়েছিলাম তখন তোমার বুকে দুধ নেমেছিল কি?

হ্যাঁ, বেশ অনেকটা... কিন্তু তুই কী বলতে চাইছিস?

তাহলে আমার ভাগের দুধও কি তুমি বাড়ির সব মরদদের খাইয়ে দিয়েছিলে?

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন