সমকালীন ছোটগল্প |
আতস কাচের নিচে
অন্তত তিন ঘন্টার একটি গভীর ধ্যান দরকার। সমস্ত অপরাধবোধ থেকে
নিজেকে মুক্ত করতে হবে। আর যাই হোক অপরাধবোধ নিয়ে জীবনে এগনো যায় না। কিছু কিছু এলেবেলে
বিষয় চলার পথে আসেই। সেগুলোকে একটু পা দিয়ে ঠেলে দিতে হয়। যারা একটু উপরে উঠতে চায়, এতো ভাবলে চলে না। সুনয়না খুব ভালো মানুষ।
তার দোষ ত্রুটি সাধারণত চোখে পড়ে না। সুন্দর করে কথা বলতে পারাটা আর্ট। সুনয়নার এই আর্টটি জন্মগত। সে যখন যেখানেই
যায়, তার চারপাশে একটি বলয় তৈরি করে নিতে সক্ষম হয়। পড়াশোনায় সাধারণ মানের ছাত্রী,
এই বাজারে বিশেষ কিছু তার আর জোটার সম্ভাবনা নেই, কথা বলে লোকজনকে মুগ্ধ করার মৃদু ক্ষমতা ভগবান তাকে দিয়েছেন। মধ্যবিত্ত পরিবারের
মেয়ে সুনয়না। দুই দাদা রয়েছে, বিয়ে থা করেছে, বাবা পেনশনে গেছেন, মা তো চলে গেলেন কলেজে
থাকতেই। সবাই মিলে এখন তার বিয়ের চেষ্টা করছে, বিশেষ ভালো ছেলে পাওয়া যাচ্ছে না। পণ
চাইছে। ভাইরা এবং বাবা পণ দেওয়ার বিপক্ষে। আর পণ ছাড়া যারা বিয়ে করতে চাইছে, তাদের
কয়েকজনকে দেখে সুনয়নার কান্না পাচ্ছে। তীব্র সুন্দরী না হলেও, এক ঝলকে দেখলে তাকে খারাপ
লাগার কোনো কারণ নেই। তার
বান্ধবীদেরও চটপট বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, একটি প্রাইভেট এজেন্সিতে সামান্য বেতনের কাজ করে
সুনয়না, কথা বলে বলে ক্লায়েন্টকে ইনফ্লুয়েন্স করাই তার কাজ, সৌন্দর্যের প্রশংসা পেতে
পেতে অভ্যস্ত সে, কিন্তু বিয়ের প্রপোজেল কেউ দেয় না, বরং রেস্টুরেন্টে গিয়ে কফি বা
ডিনার খেতে তারা বেশি আগ্রহী।
গত সপ্তাহে কলেজবেলার বান্ধবী রিংকি হঠাৎ ফোন করে সুনয়নাকে আসতে বলেছিল। রিংকি খুব ভালো আর সরল প্রকৃতির মেয়ে, দেখতে তেমন ভালো নয় তবে পড়াশোনায় ছোটবেলা থেকেই মেধাবী। মা বাবা দুজনেই সরকারি চাকরি করছেন এখনো, রিংকিও মাস্টার্স কম্পপ্লিট করেছে। ঘটনা হলো, রিংকির বিয়ে ঠিক হয়েছে, ও একটু কেনাকাটা করবে, সুনয়নাকে সঙ্গে নিতে চায়, সুনয়নার ড্রেস সেন্স খুব ভালো, সুন্দর করে সাজতে জানে, রিংকির ভারী পছন্দ সুনয়নাকে। সুনয়না সানন্দে রাজি। শপিং জিনিসটা খুব আনন্দের, যদি হাতে প্রচুর টাকা পয়সা থাকে। তবে অন্যের শপিং করা দেখেও এক প্রকার আনন্দ। আর রিংকির স্বভাব হলো উপহার দেওয়া, এই যে ও যাবে সঙ্গে, সুনয়না নিশ্চিত ওর জন্য থাকবে রিংকির তরফ থেকে একটি গিফট। তবে কথা এখানেই শেষ নয়, কারণ তারপর রিংকি একটু লজ্জা লজ্জা মুখ করে জানালো, এটা শুধু শপিং নয়, ওর হবু বরও আসবে, রিংকির খুব সংকোচ হচ্ছিল, তাই পাশে বান্ধবী হিসেবে সুনয়নাকে চাই। সুনয়না এবার একটু সচেতন হলো। রিংকির হবু বরকে দেখার জন্য ভেতরে ভেতরে খুব কৌতুহল থাকলেও, এই দুজনের মধ্যে সুনয়নার ঢুকে পড়াটা ঠিক কীরকম হবে, এতো সহজে রাজি হয়ে গেলে রিংকি যদি বেহায়া ভাবে, তাই গলায় একটু অনিচ্ছার সুর বাজালো সুনয়না। কাবাব মে হাড্ডি হওয়াটা কি ঠিক হবে, বল? তোরা দুজনে মিলে বরং আড্ডা দে, প্রেম ট্রেম কর, আমাকে টানছিস কেন! একটু এলেবেলে কথা বলল সুনয়না, অবশ্য রিংকি আরো দু তিনবার বলার পর সুনয়না আর অভিনয়টা জারি রাখতে পারল না। বেরুনোর টাইম, রেস্টুরেন্ট সব ঠিক হয়ে গেলো। সুনয়না পার্লারে গিয়ে নিজের এই মাসের বেতনের অর্ধেকেরও বেশি টাকা, ফেসিয়াল, চুলের স্পা ইত্যাদিতে খরচ করে ফেলল। রিংকিকে যেন তার পাশে খুবই ফিকে লাগে এটাই উদ্দেশ্য।
দুপুরের রোদ তখন গড়িয়ে যাচ্ছে বাড়িগুলোর মাথা থেকে। ফুরফুরে বিকেলে রিংকি আর সুনয়না চলছে শহরের নতুন শপিংমলে। রিংকি একটি খাদি শাড়ি পরেছে। খুবই সাদামাটা সাজগোজ, হাতে ঘড়ি শুধু। সুনয়না অবশ্য আকাশনীল জর্জেট শাড়ি বেছে নিয়েছে, গলায় হায়দ্রাবাদি পার্লের মালা, নীল রঙের সঙ্গে মুক্তোই সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ গয়না, চোখে ঘন কাজল। একঢাল কালো চুল খোলা রেখেছে। রিংকি যেন সুনয়নার দিক থেকে চোখই ফেরাতে পারছে না, তোকে দারুণ লাগছে রে।
হুম। সুনয়না হালকা হাসল। মনে মনে বলল, বহুৎ পরিশ্রম গেছে সোনা,
তুমি বুঝবে না।
দুজনে মিলে শপিং মলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে, রিংকি মোবাইলে একটু কথাও বলে নিল,
দশ মিনিটের মাথায় একটি বাইক এসে থামল, ওদের থেকে সামান্য দূরে। দীর্ঘকায়, সুঠাম একজন যুবক রিংকির
দিকে এগিয়ে এসে বলল, হ্যালো! হেলমেট খোলার পর সুনয়না দেখল, ধারালো চোখ মুখের একটি ব্রাইট
ছেলে। আহা এমন একটি যুবক যদি আজ ওর পাশে থাকত! সুনয়নাকে রিংকির থেকে অনেক বেশি সুন্দর লাগলেও, ও কিন্তু রিংকির দিকে তাকিয়েই
কথা বলছিল। রিংকি পরিচয় করিয়ে দিলো, আমার প্রিয় বন্ধুদের একজন সুনয়না।
তাই বুঝি! বাহ্!
তারপর বলল, আমার হাতে সময় একটু কম, আজ যদি শপিং না করো, হবে? বা
শপিংটা না হয় পরে করো, আমি চলে যাবার পর। আগে কোথাও বসে একটু আড্ডা দেওয়া যাক।
সুনয়না জানল যুবকের নাম সুজাত। সুনয়নার সঙ্গে সুজাত নামটি মানায়,
রিংকির সঙ্গে নয়। সুনয়না মনে মনে ভাবল। সেই সঙ্গে ছকও কষে নিল, তাকে প্রগলভ হলে মানাবে
না এক্ষেত্রে। মাঝে মাঝে মৃদু হাসিই যথেষ্ট। আজ দিনটি রিংকির। রিংকিকে ছেড়ে দেওয়া ভালো।
পরে তারও দিন আসবে, আসতেই হবে। যেদিন সুজাতের
মতো ওয়েল এস্টাব্লিশড, হ্যান্ডসাম কোনো যুবক তার পাশে থাকবে। সুনয়না মনে মনে প্ল্যান
করছে জীবনে এখন জয়ী হবার একমাত্র রাস্তা একজন সুপ্রতিষ্ঠিত ছেলেকে বিয়ে করা। এই যে
ভাইদের সংসারে, কৃপণ বাবার কাছে সে ক্রমাগত বোঝা হয়ে উঠছে এ থেকে ওকে বেরোতে হবে। আর সহজ পথ
এটাই। আচ্ছা, সুজাত কি ওর হতে পারে না কোনোভাবে? রিংকির তো কিছুর অভাব নেই। এতো মেধাবী
মেয়ে, মাস্টার্স কম্পপ্লিট, পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পেয়ে যাবে নিশ্চিত। সুনয়নার সেসব হবার
সম্ভাবনা নেই।
কত মানুষ তো অসৎপথে রোজগার করে পৃথিবীতে ধনী হয়। মানুষ মানুষকে
ব্ল্যাক মেইল করে, ঠকায়, তারপরও কিছু হয় না। সুনয়নাও একটু খেলবে এবার বিপজ্জনক খেলা।
হারলে হারবে। দিন দিন তো কতরকম ভাবেই অপমানিত হচ্ছে। সে তো মানুষটা খারাপ নয়, তবুও
ভগবান তার জন্য এতো কম বরাদ্দ করেছেন কেন! পৃথিবীতে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার অধিকার
সবার আছে। বাটার নান, কফি, চিকেন পকোড়া সব
কিছু খাওয়া হলো। রিংকি গায়ে পড়ে সুনয়নার অনেক গুণ সুজাতকে শোনাতে চাইলেও, সুজাত ওর
সম্পর্কে একটু নিস্পৃহই রইল। আসলে ওদের ব্যাপারটা অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ। তাই হয়তো সুজাত একটু রিজার্ভ থেকেছে। কিন্তু
সেদিন আর শপিং হলো না।
প্রায় আটটা বেজে যাওয়ায়, সুজাত চলে যাওয়ার পর, সুনয়না আর রিংকি
দুজনেই বাড়ি ফিরে গেলো।
সুনয়না শুধু ভাবছে সুজাতর সঙ্গে কানেক্ট করা যায় কী ভাবে। হ্যাঁ ফেসবুক, এখানে থাকবেই। দেখা যাক রিংকির প্রোফাইলে। রিংকি একটি ফুলের ছবি পোস্ট করেছে। বেশ কয়েকজন নাইস, বিউটিফুল ইত্যাদি কমেন্ট করেছে, সুজাত কি কমেন্ট বা লাইক করেছে রিংকিকে? না করেনি। এবার রিংকির ফ্রেন্ডলিস্টে গেলো, ঐ তো সুজাত। স্পষ্ট ছবি দেওয়া আছে। ওখান থেকেই সুজাতর প্রোফাইল একবার ঘুরে এলো সুনয়না। বিশেষ কিছু নেই, নিউজ টিউজ শেয়ার করা আছে, কিছু ছবি। বোধহয় ফেসবুকের তেমন নেশা নেই। কিন্তু এই মুহূর্তে রিকোয়েস্ট পাঠানো ঠিক নয়। শেষপর্যন্ত রিংকির পোস্ট করা ফুলের ছবিতে, একটি কমেন্ট করে সুনয়না ফিরে এলো।
ভীষণ অবসাদের মধ্যে কাজকর্ম করে দিন কাটাচ্ছে সুনয়না। বড়দা ওর
বিয়ের জন্য প্রপোজেল এনেছে, ছেলে ব্যবসা করে।
আপাতত কোনো দাবি দাওয়া রাখেনি। বড়দা তাতেই খুব খুশি। কম খরচে বিয়েটা হয়ে যাবে। ছেলেটাকে
চেনে সুনয়না। শেষপর্যন্ত এইভাবেই তার জীবন নির্ধারিত হলো। আর কিছুই কি করার নেই? দুদিন পর হঠাৎ সুনয়নার কাছে সুজাতর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট
এলো, ভীষণ আশ্চর্য হলো সুনয়না। সঙ্গে সঙ্গে রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করে সুনয়না হাসির ইমোজি
পাঠালো। সুজাত কিন্তু ইমোজি না পাঠিয়ে লিখল, হবু বউয়ের বান্ধবীকে বন্ধু বানালাম। আপনাকে আমার ভালোই লেগেছে।
সুনয়না কী বলবে বুঝতে পারছিল না, কতটুকু বলা উচিত, রিংকিকে বলে
দিতে পারে, কাউকে বিশ্বাস করে না সুনয়না। তাই একটু ভেবে বলল, এটা আমার মোবাইল নং, আপনার
মোবাইল নং ইচ্ছে হলে দিতে পারেন। আদান প্রদান হলো ফোন নং-এর।
এবার সুনয়না ফোন করল সুজাতকে। যদিও খুব অভদ্রের মতো কাজ, তবুও
সুনয়নার কাছে এটা একটি রাস্তা বটে।
কিছু মনে করবেন না। একটু বিপদে আছি, আমার সারাজীবনের প্রশ্ন। আপনি
আমার জন্য আপনার মতো কাউকে ঠিক করে দিতে পারবেন, বাড়ি থেকে যেখানে বিয়ে দিতে চাইছে,
আমার একদমই ভালো লাগছে না।
সুজাতর কাছে ব্যাপারটা অবিশ্বাস্য লাগল। সে তো হালকা মনে ফোন নং
দিয়েছিল, এতো দেখছি মারাত্মক ব্যাপার! আচ্ছা ঠিক আছে, আমি পরে কথা বলব, রাখি এখন।
সুনয়না, খুব তাড়াতাড়ি সমস্ত সাহস একত্র করে বলে উঠল, আপনাকে আমার
খুব ভালো লেগেছে। রিংকি খুব ভাগ্যবতী। ওর সঙ্গে আগে যার অ্যাফায়ার ছিল, সেও কিন্তু
ভালো ছিল, আপনারই মতো, কেন জানি রিংকি ওকে ছেড়ে দিলো বুঝতে পারি না। ওর সঙ্গে এখনো ঐ ছেলেটার নিয়মিত যোগাযোগ
রয়েছে, আমি জানি।
এতোটুকু বলেই দুম করে লাইন কেটে দিল সুনয়না। খুবই চেনা খেলা খেলেছে
ও, সন্দেহ আদানপ্রদানের খেলা। এ খেলায় সাধারণত অধিকাংশ বিয়ে ভেঙে যায়। অবশ্য বিয়ে ভেঙে
গেলেই রিংকিকে ফেলে সুজাত সুনয়নাকে বিয়ে করতে আসবে তেমন কোনো কথা নেই, কিন্তু তবুও,
হয়তো রিংকির কাছে চিরদোষী হয়ে রইল সে। রিংকি কী এমন শ্রেষ্ঠ তার থেকে!
তারপর এক সপ্তাহ কেটে গেছে, সুজাত বা রিংকি কারো ফোন বা মেসেজ কিছুই আসেনি সুনয়নার কাছে। সুনয়নার বিয়ের কথাবার্তা মাঝপথে থমকে গেছে, খুব সম্ভবত টাকার ব্যাপার আছে, তাই ভাইয়েরা উচ্চবাচ্য করছে না।
রিংকির বিয়েটাও কি ভেঙে গেলো? এখন অপরাধবোধ জিনিসটা আসলে কতটা
কুরে কুরে খায় একজন মানুষকে, সুনয়না সেটা বুঝতে পারছে, ওর মধ্যে প্রচন্ড একটি
হিংসার জন্ম হয়েছিল, তাই সে এভাবে বলেছে সুজাতকে। কিন্তু কাজটি ঠিক হয়নি। ধ্যাৎ! যা
হবার হোক গে। সুনয়নার সঙ্গেও প্রচুর অপমানজনক ব্যবহার করে লোকজন, তাকে মনে করে সহজলভ্য
একটি মেয়ে। সেদিনই তো কাউন্টারে একজন যুবক এসে কতক্ষণ ধরে ওর সঙ্গে কথা বলল, সুনয়না
যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে ক্লায়েন্ট বানাবার, তারপর একটু ছোট প্রশংসা ছুঁড়েছে অবশ্য, আপনি কিন্তু দারুণ কথা বলেন। শেষপর্যন্ত
শুধু কার্ডটি নিয়ে চলে গেলো। বসের কাছে এনিয়ে খোঁচাও খেয়েছে। এই জীবন আর ভালো লাগে
না। চোখমুখ বুজে ধ্যান করার অসম্ভব চেষ্টা করছে সুনয়না, যদি ভগবানের কাছে নিজেকে সমর্পণ
করে গ্লানিটুকু মুছে ফেলা যায়।
কিন্তু কেউ এসেছে, সুনয়নার নাম ধরেই ডাক দিচ্ছে, আরে রিংকির গলাই
তো! সুনয়না বাইরে বেরিয়ে এলো। হাতে বিয়ের কার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রিংকি।
খুব হাসিখুশি উজ্জল মুখ। যেন আলো জ্বলে আছে, তাতে কোথাও বিদ্বেষভাব
নেই এক ফোঁটাও। সুনয়নাকে জড়িয়ে ধরে বলল, মঙ্গলাচরণ কাল, তিনদিন পর বিয়ে। সুতরাং আগামীকাল থেকে তোর থাকা খাওয়া আমাকে সাজানো
সব আমার বাড়িতে। সকাল বেলাই চলে আসবি, মা বাবা দু্জনেই বলে দিয়েছে।
সুনয়নাদের বাড়ির সবাইকে নেমতন্ন করে, ওর গলা আরো একবার জড়িয়ে ধরে
আবার বলল, মনে থাকে যেন। তার মানে ওদের বিয়েটা হচ্ছে। সুজাত হয়তো কিছু মনে করেনি, রিংকিকেও
কিছু বলেনি, সত্যিই ভালো ছেলে তাহলে। খুব লজ্জা লাগলেও, সুনয়না রিংকির বিয়েতে যাবে
বলেই ঠিক করল।
সত্যিই সাত আটদিন খুব হুল্লোড় করে কাটল। আর সেদিনের সেই ক্লায়েন্ট
যে সুজাতর ভাই, একথা জেনে সুনয়নার একটু অস্বস্তিও হলো। বিয়েবাড়িতে অবিরাম চোখাচোখি
হচ্ছে দুজনের, সুনয়নার মনে হলো এই চোখাচোখিতে ইশারা রয়েছে অন্যকিছুর। অষ্টমঙ্গলায় যথারীতি
আমন্ত্রণ, সেদিন সুনয়নার বাবাও এলেন, রিংকির বাবার বিশেষ অনুরোধে।
অবশেষে একসময় ঘরে তিনজন শুধু, সুনয়না, রিংকি আর সুজাত।
একটা কথা বলার ছিল আপনাকে, সুজাত বলল। সুনয়নার বুক ঢিপ ঢিপ করছে।
কি জানি কী কথা!
রিংকিকে ভীষণ মিষ্টি লাগছে, সুজাতর পাশে ওকে দেখে মনে হচ্ছে ওরা
দুজন দুজনের জন্যই। রিংকি বলল, তোকেও আমার শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। প্রাথমিক
পর্বটা চলছে। দেখি কী করা যায়! আমার দেবরজী কিন্তু তোকে দেখে মুগ্ধ। সুনয়না অবাক হয়ে সুজাতর দিকে তাকাল,
কিছু একটা বলতে চাইল।
সুজাত রিংকির ঠিক পেছনে, চোখ দিয়ে ইশারা করলো কিছু না বলার।
দু তিনদিন যে কী অস্থিরতায় কাটল সুনয়নার। সুজাতকে কিছু জিজ্ঞেসও করতে পারছে না, এখন ও রিংকির বর।
এবারো সুজাতের ফোনই এলো প্রথমে।
একটু ভারী গলায় আস্তে করে বলল, আমি কাউকে বলিনি কিছু সুনয়না। কেন
যেন মনে হচ্ছিল তুমি সেদিন মিথ্যে বলেছিলে।
পরে তোমার সম্পর্কে একটু খোঁজ নিই। বুঝতে পারি। আমার ছোটভাইও প্রতিষ্ঠিত, সে একটু বিজনেসও
করতে চায়, তোমার মতো একজন মেয়েই ও খুঁজছিল। ওকে আমিই তোমার কাজের জায়গায় পাঠাই। এখন
বাকিটা ঈশ্বরের হাতে, ঠিক কিনা বলো?
সুনয়না কিছুই বলতে পারছে না, ওর দুচোখ ছাপিয়ে শুধু জল আসছে। সুজাত
যেন বুঝতে পারছিল সুনয়নার কান্নাটা। খুব স্নেহের গলায় বলল, আমাকে তোমার দাদা ভাববে, আর পৃথিবীতে অনেক সময় ভুলভাল
ঘটনা ঘটে, কারণ সব মানুষ একরকম নয়, কিছু অন্যরকম মানুষও আছে যারা আরো একটি মানুষকে
বুঝতে পারে…
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন