ক্যাথরিন তোমাকে
লিখছি আবার
বহুদিন পর তোমাকে আজ লিখছি ক্যাথরিন। বিষণ্ণ জানালার পাশে তোমার রক্তমুখ শীতরাতের কুয়াশা উন্মুখ। স্ট্রীট ল্যাম্প যে দূরে জ্বলে আছে সেখানে তুমি নেই। তোমার গ্লাস, শেষ স্নানের পর যতটা বসন ব্যস্ত আরও দ্রুত আরম্ভ তৎপর। জানি এই তৃতীয় শুরুর আগে ব্যস্ত চোখ কোন শ্বাপদ খুঁজছে নির্বিবাদ ছিঁড়ে দেবে লোভে। কারণ, সংশয় সম্প্রতি তোমাকে বিপন্ন করছে। তুমি কখনও চাওনি বিগবেন পুরোটা গোছানোর আগেই, পৃথিবীটা যুদ্ধে যুদ্ধে খুলে যাক নিজস্ব গ্রন্থি থেকে। শেষ বাঁশী বেজে যাক জল পাহাড় ডাঙা ও বাজারে। বহুবার আমাদের প্রীত সব কথার গভীরে তিত্তির বয়ে যেত পুলক নিঃশ্বাস। প্রেম ও পাপের থেকে দূরে, গাঢ় কোন আত্মমন্থন আমরা রপ্ত করেছি দীর্ঘ কত বয়স পুড়িয়ে। ক্যাথরিন আজকের শীতবাতাস ছুঁয়ে দেখো হাজার হাজার মৃত্যু বয়ে বয়ে ক্লান্ত অযথা। কোথাও আলো জ্বলবে না, কোথাও প্রার্থনায় আপন নির্জন নিয়ে কেউ এসে দাঁড়াবে না নতজানু করুণা ভিক্ষায়। সবাই তো জেনে গেছে বেজে উঠবে সতর্ক সাইরেন প্রস্তাবিত মৃত্যু চিৎকারে। কোথাও লুকোনোর কিছু আড়াল নেই তো, সবখানে ভ্রাম্যমান অদৃশ্য চোখ। সবখানে লাল হয়ে জ্বলে আছে আসন্ন নৈঃশব্দ। গলিত মৃত্যুর থেকে উথাল অরাজকতা তোমাকে আহ্লাদিত করে আমি জানি। আমাকে চাবুক হাতে কতবার খুলে দিয়েছো সফেন নগ্নতা। আমি যেন লুপ্ত হ্রদের থেকে উঠে আসা সেই জল্লাদ, যে ডাকে মৃত্যু নেবে বলে তারই কাছে আজানু নম্র, কুৎসিত রক্তবিকার। চাবুকের প্রতিটি আঘাত জানে মসৃণতা শিল্পীত হাতে, কিভাবে তীব্রতম আঘাতে আঘাতে স্পষ্ট কোরে গেঁথে দিতে হয় প্রতিটি দাগ। ক্যাথরিন, তোমার ব্যাথাক্লান্ত মুখ তুলে, কতবার আকাশের নিচে এসে দাঁড়িয়েছি আমরা পরিত্রানহীন ধ্বংসময় যৌথ রসাতলে। ভেবে দেখো, আজ এই শীতরাতের জানালার ওপিঠে যে পথ কোনো পথহীনতায় ফুরিয়ে গিয়েছে, ওখানেই কোনও একদিন অরণ্য ছিল। প্রাচীন প্রজাতির কোনও নিয়ানডার্থাল স্বাধীন খেয়ালে হেঁটে যাচ্ছে বিস্ময়ের দুচোখ উড়িয়ে। একা ও অমোঘ। ভেবে দেখো, কোনও এক মধ্যরাত্রে ঝরে পড়া বরফের নীচে দাঁড়িয়ে সঙ্গকাঙ্খী কোনো সঙ্গিনী তার, তীব্র চিৎকার কোরে ভাঙছে বৃক্ষশাখা উন্মাদ ক্রীড়া উৎসুক। পাথরে পাথরে কী কোন চিহ্ণ ছিলো না কখনও। ক্যাথরিন তুমি এক অরাজকতার তুফান স্তম্ভের মতো দাঁড়িয়ে দেখছো আমাদের ক্ষয় আর বিলুপ্তির উজ্জ্বল সাক্ষর সমূহ। থাকা ও না-থাকার মধ্যে যে দূরত্ব নির্ণীত আছে যাবতীয় মেধা ও মননে, সবখানে লিখিত হচ্ছে এক সম্ভ্রান্ত বিলাপ। বস্তুত বেঁচে থাকাটাই চূড়ান্ত মিথ্যে, সত্য শুধু অন্ধকার জীবনের বিপরীত আলোহীন ধু ধু অন্ধকার।
তুমি, আমি, নগ্নতাকে কখনোই আলাদা করিনি, কার্ণ, ক্যাথরিন এক স্বপ্নঘোর দুঃস্বপ্নের নাম। ক্যাথরিন এক জীবন্ত মৃত্যু, মৃত্যুর বুকে দাঁড়িয়ে জীবনের রোদ্রু ঘোষণা। জানালায় বিষণ্ণ তুমি আজ গ্লাস থেকে ছিটকে উঠুক সুতীব্র দহনবিকার। এই দেখো বিরাট চাবুক হাতে আমি এসে দাঁড়িয়েছি সৌর ঘূর্ণনের অক্ষে, তীব্র সপাং শুধু তোমাকে ছেঁড়েনা, ছিঁড়ছে ছদ্মবেশ সভ্যতার ষড়যন্ত্রনগ্ন বর্নময় মুখোশ ও পরাক্রম। কিভাবে তলিয়ে যাচ্ছে দেখো একে একে লজ্জাহীন, ঢুলুঢুলু, সভ্যতম অসভ্য নগরকীর্ত্তন।… ক্যাথরিন আলো হয়ে থাকো, আমি যেন ক্রমশই কালো এক ভুবনের গায়ে কিম্ভুত রেখার মতো সাঁতরে চলেছি, ক্যাথরিন তোমাকে খুব প্রয়োজন ছিলো এই ধ্বংসের কালে...
অসম্ভব সুন্দর ভাষা বিন্যাস।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ। প্রাণীত হলাম।
মুছুন'...বেঁচে থাকাটাই চূড়ান্ত মিথ্যে...', '...ক্যাথরিন এক স্বপ্নঘোর দুঃস্বপ্নের নাম...', '...ক্যাথরিন এক জীবন্ত মৃত্যু... ', তবু এই ক্লিন্ন জীবনে অমোঘ তার উপস্থিতি, তার প্রয়োজন। নতুবা আবার মিথ্যের দিকেই যে আমাদের হেঁটে যেতে হবে!
উত্তরমুছুনচমৎকার শব্দ নির্বাচনে, এক অনিবার্য উদ্দেশ্যে লেখা এ-ই ছোট্ট গদ্য আমাদের নিশ্চিত ভাবে নির্দিষ্ট করে দেয় আমাদের সমূহ বিপন্নতা।
অভিনন্দন এই কুশলী কলমকে, ভালবাসা এই দ্রষ্টাকে।
এই প্রশ্রয়টুকু লেখক জীবনের গুপ্ত সম্পদ
মুছুন