কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ১ জুন, ২০১৮

রঞ্জনা ব্যানার্জী




বিশ্বাস


কোত্থাও নেই ছানাটা। দাওয়া থেকে শাশুড়ি মা ক্রমাগত শাপান্ত করছে, ‘সোনাডা মনাডা কইরা ভাত মাইখা খাওয়ন দ্যাও আরো! মাইনসেরে বিশ্বাস যাওন যায় না আর বেডিয়ে বিলাইরে মুর্গির ছা চউকিদারী দিসলো?’  
ডিমের কুসুমের মত হলদে ছানাগুলো সকালেও বিড়ালটার আশেপাশে মাটি থেকে খাবার খুঁটে খাচ্ছিলো রোদে পিঠ ছড়িয়ে চোখ বুজে ছিল বিড়ালটাওর ঝুলে থাকা দুধের বাঁট দেখে বুকের ভেতরটা হুহু করে উঠেছিল আসমার,  ‘আহারে! বাচ্চাগুলানরে কেডায় যে সরাইলো!’     

ক’দিন আগেও বিড়ালটা কেঁদেকেঁদে খুঁজেছে বাচ্চাদেরওর বিলাপ শুনে বুক কাঁপতো আসমার। মনে হতো যেন স্বপ্না কাঁদছে। রান্নাঘরের পেছনে মাটির ভাঙা সানকিতে ভাত মেখে রেখে আসতো আসমা কাকের পেটেই গেছে সে ভাতঅবশেষে একদিন এলো বিড়ালটা ওর বিলাপও বন্ধ হলো। এরপর এ বাড়ির উঠানে কিংবা টিনের চালে বিড়ালটা প্রায়ই বসে থাকেআজ ওর ছেলে সুলায়মান স্কুল থেকে ফিরে দেখে একটা ছানা কম তারপর থেকে ওরা  আঁতিপাঁতি খুঁজছে সারা বাড়ি

বিড়ালটা হঠাৎই উদয় হয়েছিলউঠানে তোলা চুলায় সেদিন মুড়ি ভাজছিল ওরা; পাশের বাড়ির ছোট বউ রওশন আর আসমা। দুই চুলার গনগনে তাপে চোখের সামনে হাওয়া কাঁপছিল তিরতির এ বাড়িতে নোনতা মুড়ির চল। নুনপানি ছিটানো চালটা শলার নাড়ানিতে একচুলায় ঝরঝরে করছিল রওশন তারপর বালির খোলে  দ্রুত ঘুরিয়ে মুড়ি ফোটাচ্ছিল আসমা। এই সেদিনও শাশুড়ি আম্মাই মুড়ি ভেজেছেচোখের ছানি কাটতে গিয়ে বুড়ির চোখটাই গেল!
স্বপ্নার মেয়েটাকে পাওয়া গিয়েছিল সেই দুপুরেই। দুদিন ধরে সারা গ্রাম তোলপাড় করে খুঁজেছিল সবাই। আহারে এত্তটুকুন ফুটফুটে মেয়েটা!  গ্রামের সীমান্তে ধানখেতের ভেতরে লাশটা পড়ে ছিল চেনার উপায় নাই। মুখের একপাশ শেয়াল খেয়ে গেছে। যৌনাঙ্গ ছিঁড়ে খুঁড়ে ত্যানা হাতে তখনো শক্ত করে ধরা কাঠি লজেন্সটায় পিঁপড়ে আঁটকে আছে।  চুপচাপ নিজের মনেই প্রশ্নগুলো নাড়ছিল ওরা। লজেন্সটা কে দিয়েছিল ওকে?  
একই সাথে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়েছিল দু’জনের বুক ভেঙে।  
রওশনের শলার বাঁধন খুলে গেল হঠাৎনতুন শলার গাছি রান্নাঘরের মাচায় তোলা মাচায় হাত দিতেই ‘আল্লারে!’ আঁতকে উঠেছিল আসমা। ছুটে এসে কুপি তুলে ধরেছিল রওশনমা বিড়ালটা পিঠ বেঁকিয়ে ফোঁসফোঁস করছে। পাঁচটা বাচ্চা! চোখ ফোটেনি। এক আঙুলের সমান লম্বা। ‘আহা সোনা কিস্‌সু করুম না’, বিড়বিড় করে আশ্বস্ত করেছিল আসমা। আশ্চর্য পরদিন বাচ্চাসমেত উধাও হয়ে গেল বিড়ালটা!  

শাশুড়ি শুনে বলেছিলেন, ‘বিলাইয়ের স্বভাবই এমুন; ল্যাদা বাচ্চা দ্যাইখা ফালাইলেই জাগা লড়ায়’এরপরেই সাবধান বাণী, ‘ছাগুলানরে ঢাইকা রাইখো, কুনখান দিয়া হাতাই নিব কইতেও পারবা  না’
  
চুলাতে দুধ বসিয়ে এসেছিল আসমা, মুরগির ছানা খুঁজতে গিয়ে বেমালুম ভুলে গেছে পোড়া গন্ধ রান্নাঘর পেরিয়ে নাকে ঝাপটা দিতেই শাশুড়ির চিৎকার, ‘ও বউ দুধ উথলায়!  চোখের জ্যোতি কমার সঙ্গে সঙ্গে বুড়ির নাক-কানের তীক্ষ্ণতা বেড়েছে
রান্নাঘরে পা দিতেই দেখে ডেকচি উপচে দুধ গড়াচ্ছেহুড়মুড়িয়ে ডেকচিটা নামাতে গিয়েই চোখ আঁটকালো আসমার; লাকড়ির ফাঁকে হলুদ ছানাটা পিটপিট করে দেখছে ওকে!

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন