দেয়াল
(১)
চলো পালাই। কুমার পাড়া ছাড়িয়ে প্রাচীন জলাভূমি -- ও পথে কেউ নামে না।
কুমিরের ভয়—সাপ—জোঁক—দস্যুদল। এই অন্ধকারে বিশ্বাস অবিশ্বাস করার কিছু নেই -- শরীর মানে তো মৃৎপাত্র -- চোখ নয় ইন্দ্রিয়বোধ -- হাতের নরমটুকু প্রমাণ করে দুপুর এসে ছুঁয়েছিল যাকে তার নাম দেয়াল নয়। বিধবা রোদ্দুরে বসে আমরা তাকিয়ে থাকি নিরামিষভোজী রাতের দিকে। প্রবণতা জাগার মত নর্তকী বাতাস -- তবুও প্রতিক্ষার গায়ে নুন মাখার মত জ্বলে উঠি না কোনোদিন -- চলো পালাই। এই বিকলাঙ্গ দুপুর থেকে আঙুর খেত পর্যন্ত।
(২)
অনেক সংসার হলো। এবার থেকে তুমি ডাকলে বলব, খিদে নেই।
কিন্তু জানি এসব দৃঢ়তা কেবল মধ্যাহ্নের গীত। আমার ভেতর বাস করে কীটপতঙ্গ। কুকুরছানা। আমি অগ্রাহ্য করি মশলার ঘ্রাণ। বাস্তবতার বাতাসে হেলে পড়ে চিত্রকলা। আমার ভেতর কে, কবে প্রতিস্থাপন করেছিল দেয়াল? কেন আমি চরিত্র বলতে নীরবতাকেই বুঝি?
কবে থেকে মাংসপোড়া গন্ধ বাদ দিয়ে সমাহিত হয়েছি শুকনো পাতায়? সেদিনকার ইতিহাস মনে নেই। আমার মতো দুর্বল, ভীতু ইঁদুরের নাম কে রেখেছিল মানুষ? আজকাল মনে থাকে না কোনো ভোরবেলায় জাহাজ থেমেছিল কিনা। কেউ কি ডেকেছিল অলক্ষ্যে! আমি এড়িয়ে গেছি সকল সৌন্দর্য। নৃত্যরত ময়ূর। এসব নিশ্চিত হাহাকার রেখেও আমার নিদ্রার ভেতর তুমুল বৃষ্টি নামে।
(৩)
কতদূর যাবে? বন পার হলে ঘুমিয়ে পড়া
এক রাস্তা -- সেখানে একমাত্র কাঠের সেতু -- আমাদের নড়বড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা। -- দ্যাখো, আমরা অনায়াসে বন্ধু হতে পারি --
আকাশটাকে মুঠোয় পুরে দাবার মত বুদ্ধির খেলা শুধু আমাদেরকেই মানায় --
ওইখানে, পাহাড়ি বুকে বোবা বিস্ময় -- মেঘের আলজিভ ছুঁয়ে দেখে না কেউ -- শুধু পাখিরা,
বনের পশুরা। -- কতদিন! পাহাড় ডাকে -- তোমার মত আমিও বলি, কাল ভোরবেলা -- ওদিকে দুধ চুলায় --ধনে, জিরার সুঘ্রাণ
এসে আঘাত করে মস্তিষ্কে -- একদিন কারখানায় পড়ে থাকবে এ গৃহস্থালি
জীবন -- আর রোগাটে সম্প্রদায়ের মত হেসে প্রশ্ন করব, কতদূর যাবে?
(৪)
আমরা একে অপরকে প্রশ্ন করি, পাহাড়ে যাবে? -- এখানে পাহাড় মানে চাষাবাদ
-- সমাজকর্মীরা বরাবর
আমাদের বিষয়ের বাইরে -- আসলে সোনার শেকল পায়ে বেঁধে আমরা নূপুরধ্বনি
শুনতে ভালোবাসি -- আর গল্প করি, বনের মোষের
-- গরুটানা গাড়ি -- জীবনটানা রথ। -- পোস্টমর্টেম বলছে, পাহাড় নয় -- শেষমেশ সমুদ্রই বুঝে নেবে আমাদের হৃদয় --
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন