কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শুক্রবার, ১ জুন, ২০১৮

ঝুমা চট্টোপাধ্যায়





ধারাবাহিক উপন্যাস




প্রিয়দর্শিনী 

(প্রথম অধ্যায়)  


(২)


তার জন্ম বর্ধমানে, রত্না নদীর কূলে। তবু গৌড় তার অন্য এক জন্মভূমি। গঙ্গা নদী তার একমাত্র সমব্যথী। বাংলাদেশই তার মা। এখানেই তার বড় হয়ে ওঠা। দামুন্যা গ্রামের স্মৃতি, স্মৃতি নয়।  টাটকা জীবনের একটা ঝলক মাত্রবিবাকের পিতা ছিলেন দামুন্যার নামকরা তাঁত ব্যবসায়ীঅসাধারণ দক্ষতায় তিনি অতি ক্ষিপ্র হাতে মাকু চালাতে পারতেনমাত্র আধসের তুলো থেকে ১২৫ ক্রোশ লম্বা সুতো তৈরী করতে তাঁর জুড়ি কেউ ছিল নাযেমন মিহি তেমনই সূক্ষ্ম হত সেই সুতোমধুকর ডিঙ্গায় চড়ে সেই সুতো কত যে নানান দেশে চালান যেত তার ইয়ত্তা নেইমুগা আর রেশম মিলিয়েও আর এক রকম বস্ত্র তৈরী হত। সে জিনিষও দেখার মতসুতো ধোওয়ার জন্য বিবাকের পিতা পিতামহ কোনওদিন সাবান ব্যবহার করেন নিসাবান জিনিষটা তো এদেশে মুসলমানেরা নিয়ে এসেছিলনয়ত যুগ যুগ ধরে তাদের মত তন্তুবায়কূল ক্ষার জলে কাপড় ডুবিয়ে ভাটিতে দিতসেই ক্ষার তৈরী হত কলার বাস্না থেকে। বাংলায় তখন কার্পাস শিল্পের কী রমরমা! সূক্ষ্ম মসলিন আর ফুলদার কাপড় বিক্রি করেই তারা যথেষ্ঠ  অর্থবানএই সেদিন পর্যন্ত বিবাকের মা সুবর্ণ পাত্রে দুপুরের আহার সারতেন।   যেদিন থেকে মুসলমানরা এল সব শেষদেশ গাঁ জমি মানুষ রাজার নীতি রাতারাতি বদলে গেল

বুকের অন্তঃস্থল থেকে দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস বেরিয়ে এল বিবাকেরকিন্তু কোনও বাদ প্রতিবাদ করতে ইচ্ছে জাগল না। যা নেই তা নেইই
মোল্লা মহম্মদ বললেন, কী রে! কী এত ভাবছিস? একটা কথা সব সময় মাথায় রাখবি! আমাদের বাদশাহর কাছে প্রচুর ধনরত্ন আছে। তুই চল আমার সঙ্গে দিল্লিগেলেই দেখতে পাবি বাদশাহর বিলাসের বহরটা কেমন! বাদশাকে যদি ঠিকঠাক খুশি করতে পারিস তো একদিন ঐ রকম ধন সম্পদের মালিক আমরাও হব!

জুলাই মাস। দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে সমগ্র বাংলাদেশে ভরা বর্ষা চলছেনদী নালা খাল বিল পুকুর জলে টইটম্বুর। কৈবর্ত্তের দল সারারাত নৌকো চড়ে গাঙ্গ চষে বেড়াচ্ছেচাঁদা ইচা কই গাগরা রুই শফরী মাছ ভর্তি গুয়ারেখীডিঙা। বাঙালি কবি বর্ণনা দিচ্ছের, জিরা লঙ্গ বাটি দিল মরিচের রসে / ভূবন  মোহিত কৈ্ল ব্যঞ্জনের বাসে, আদা জামরের রসে কই মৎস ভাল / পোনা মৎস দিয়া রান্ধে করঞ্জ অম্বল... কুলস্থানের মধ্যেই গুপ্ত সেন দাস দত্ত কর আদি বৈদ্যগণ প্রভাতে উজ্জ্বল ধুতি বস্ত্র পরিধান পূর্বক, মাথায় চাদর মুড়ে, কপালে উর্দ্ধ ফোঁটা পুঁথি বগলে গ্রামান্তরে যান। সমস্ত চলন বলন ব্রাক্ষ্মণ সমাজের নির্দেশে‘কোনও দ্বিজ অধিষ্ঠাতা, কোনও দ্বিজ কহে কথ, কেহ পড়ে ভারত পুরাণ...’  সম্পন্ন গৃহস্থ দুর্গোৎসবাদিতে প্রভূত অর্থব্যয় করে রাজসিক ভাবে সাধারণ লোকের মনোরঞ্জনের সঙ্গে সঙ্গে পারত্রিক মঙ্গলের উপায়ও চিন্তা করছেন। প্রৌঢ়া সপত্নী পাটশাড়ি এবং দু’হাতের চুড়ির জন্য পাঁচপল সোনা পাওয়া যাবে এই  ভেবে স্বামীর তৃতীয় বিবাহে মত দিয়েছিল। সেই নববধূ এখন যৌবনবতী। নিত্য ছলাকলা পটিয়সী। স্বামী তার কথায় ওঠে আর বসেসম্প্রতি প্রবাস থেকে পত্রে পতি লিখে পাঠিয়েছেন যাবতীয় স্বর্ণালঙ্কারে কনিষ্ঠ বধূর অধিকার, তাছাড়া বিদেশ থেকেও যে সমস্ত মণিমুক্তা গন্ধ পুষ্পাদি যৌতুক সামগ্রী আসছে , তাতেও সপত্নীর দুই ভাগ। বাণিজ্য এবার খুব ফলপ্রসূ হয়েছে। নৌকো বড় গাঙ্গে পড়ল বলে। বাটীর সকল কুশল মঙ্গল তো? বিশেষত গত একমাস ধরে যা বর্ষা চলছে! প্লাবন শুরু হল বলেআকাশে সর্বদাই ঘন মেঘ। বৃষ্টির বিরাম নেইঠিক এমনি সময়ে ফরিদ্ উদ্দিন আবুল মুজঃফ্ফর শের শাহ গৌড় নগরী অধিকার করে সমুদয় বাংলাদেশের রাজা হয়ে সিংহাসন দখল করে বসলেনজাহাঙ্গীর বেগ ছিলেন তখন বাংলার সুবেদারহুমায়ুনের বকলমায় গৌড় নগরী তাঁরই শাসনে ওঠাবসা করতে বাধ্য হত। শের খাঁ, জাহাঙ্গীর বেগকে প্রতারণা পূর্ব্বক নিজের শিবিরে নিয়ে গিয়ে সদলবলে তাঁর প্রাণবধ করলেনপূর্ণ তিন ঘন্টা জাহাঙ্গীর বেগের মৃতদেহ গৌড়ের উন্মুক্ত বাজার এলাকায় ফেলে রাখা হলসহস্রাধিক মোগল সৈন্য তখনো হাতে অস্ত্র নিয়ে সুসজ্জিত দাঁড়িয়েকিন্তু প্রতি আক্রমণ করতে কেউ তাদের নির্দেশ দিল নাএরপর শুরু হল নির্বিচার হত্যা ও লুন্ঠনমাসাধিককাল ধরে চলল গৌড়ের গৃহে গৃহে তাণ্ডব ও হাহাকারতবে জনসমক্ষে নতুন সরকার যতই অত্যাচার নিপীড়ন চালাক, একবার কুর্সি লাভ হয়ে গেলে জনসাধারণের প্রতি কিছু কিছু দায়বদ্ধতাও জন্মারশের শাহ বাংলার বন্দোবস্ত করে খিজির খাঁকে গৌড়ের শাসনকর্ত্তা নিয়োগ করে এবার সোজা রওনা দিলেন  দিল্লির উদ্দেশ্যেসম্রাট হুমায়ুনের সঙ্গে সম্মুখ সমরে

বিবাক বসেছিল গঙ্গার ঘাটেএত জলদি যে গৌড় ছেড়ে তাকে চলে যেতে হবে একথা সে স্বপ্নেও ভাবেনি। এই মুহূর্ত্তে সে সব রকম পিছুটানহীন। গত তিনদিন গোপীর সঙ্গেও আর সাক্ষাৎ হয়নি হতে পারে এই বিপর্যয়ের ভেতরে গোপী চিরতরে হারিয়ে গেছে নিরুদ্দেশ গোপী তার একমাত্র সুহৃদগৌড়ের জন জীবনে বলতে গেলে প্রায় প্রথমদিন থেকে এই গোপীই তাকে প্রীতির বাঁধনে বেঁধে রেখেছিলবেশ কয়েকটা বড় বড় কোশা নৌকো গঙ্গায় দাঁড়িয়ে আছে। প্রচণ্ড গতিতে এইসব নৌকো সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে পারেনদীমাতৃক বাংলাদেশে এই নৌকোগুলোই চলাচলের একমাত্র ভরসাঘাটে বসেই বিবাক দেখতে পেল গৌড়ের যত পরিচিতজন সবাই প্রায় গাদাগাদি করে ঐ কোশা বজরাগুলোয় উঠে বসেছেচারিদিকে অসম্ভব ভিড় আর চিৎকার চেঁচামেচি সবাই গৌড় নগরী ছেড়ে এখন নতুন সরকারের সঙ্গে দিল্লি যেতে চায় সেখানে নাকি সব সস্তা জিনিষপত্রতাছাড়া শের শাহ বলে রেখেছেন যুদ্ধ বিগ্রহ চলাকালে যারা তাঁর সাহায্যে আসবে ভবিষ্যতে তাদের জন্য তিনি উদার হতে কৃপণ হবেন নাঘাটে তাই তিল ধারণের স্থান নে বিবাক দেখতে পেল ঐ ভিড়ে মোল্লা মহম্মদ সাহেবও রয়েছেন। একলা বিবাকই ঘাটে বসেএবং কেন যে বসে তা সে নিজেও জানে নাদামুন্যা গ্রাম ছেড়ে পথে যেদিন পা রাখতে হয়েছিল সেদিনও তো চারদিকটা এই রকম হয়েছিলচারিদিকে স্বজন হারানো দগ্ধ অর্ধদগ্ধ মানুষের চিৎকার হাহাকার সেদিন পথে বেরিয়ে পড়ার আগে খুব বেশি কিছু ভাববার সময় পায়নি তারাআজও সেই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি হয়েছেআজ তবে অন্যদের মত ঠেলাঠেলি করে নৌকোয় উঠছে না এই যা। কেন? সে কি মাধ্বীর জন্য?  গঙ্গার বুকে, নৌকোর ওপরে গাদা মানুষ। ঘাটের সিঁড়িতেও তাইকিন্তু কী আশ্চর্য অত মানুষের ভিড়ে গোপী নেইবিবাকের ক্লান্ত মুখখানিতে বিষাদের ঘন ছায়াখালি গায়ে শুধু একটি মাত্র মুগার চাদরঅন্তরের অসহ্য জ্বালার জন্য তার কোনও রকম চিত্ত চাঞ্চল্য বোধ হচ্ছে নাএমন সময় হঠাৎ সে অনুভব করল কে তার ডান কাঁধে হাত স্পর্শ করর মুখ তুলে দেখল একজন ষন্ডামার্কা দুর্বৃত্ততাকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে লক্ষ্য করছে। মুহূর্ত্তের মধ্যে বিবাক  বুঝতে পারল এভাবে একলা বসে থেকে নিজের বিপদ সে নিজেই ডেকে এনেছেএদিকে দুর্বৃত্তটি হাতের বর্শা তাক করে হুঙ্কার দিয়েছে তাকে, ওঠ্ পাঠ্ঠে! কিছু লোকও দাঁড়িয়ে পড়েছে ইতিমধ্যে তাদের দুজনকে ঘিরেরাগে হতাশায় বিবাক অত্যন্ত অবসন্ন বোধ করলসঙ্গে সঙ্গে এও বুঝতে পারল কিছুতেই তাকে ভেঙে পড়লে চলবে না আপন মনেই বলে উঠল সে, আমি মানি না

অত্যন্ত কর্কশ কন্ঠে দুর্বৃত্তটি বলল, এঃ যাঃ! এবং বলা মাত্রই বিবাকের ঘাড়ে প্রচন্ড জোরে প্রহার করলপ্রায় সঙ্গে সঙ্গে পিঠেও খুব জোরে মুগুরের প্রহার পড়ল
বিবাকের কোটরাগত চক্ষু দুইটি যেন জ্বলছেএত সহজে কিছুতেই সে হার মানবে না । ইতিমধ্যে কয়েকজন গুন্ডা গঙ্গাবক্ষে ভাসমান নৌকোগুলোতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে চলছে অবাধ লুটপাটঅসহায় নারী ও শিশুর ক্রন্দন চতুর্দিকেবর্শাধারী বিবাককে টানতে টানতে অন্যদিকে নিয়ে চললপাথরের সিঁড়িতে ধাক্কা লেগে বিবাকের মাথা গেল কেটেগলগল করে খানিকটা তাজা রক্ত বেরিয়ে এল সেখান দিয়েতারপর সেই রক্ত সিঁড়ি বেয়ে গড়িয়ে নীচে নেমে সোজা মিশে যেতে লাগল গঙ্গার স্রোতের সঙ্গে
কয়েকদিন জ্বরে অচৈতন্য থাকার পর বিবাকের যখন জ্ঞান এল প্রথম শুনতে পেল কে যেন তাকে খুব ধীরে ধীরে প্রশ্ন করছে, এখন কেমন বোধ করছ?
বিবাকের চোখের পাতা দুটি ভারী হয়ে আছে। সর্বাঙ্গে বিষব্যথা। সে কোথায় শুয়ে আছে, শ্রুশুষা করে কে তাকে বাঁচিয়ে তুলল জানা নেই অতি কষ্টে চোখ মেলে  দেখতে পেল তার মাথার কাছে একটি মাত্র প্রদীপ জ্বলছে, খুবই স্তিমিত তার আলো। মোল্লা মহম্মদ সাহেব জ্বলজ্বলে দৃষ্টি নিয়ে তার মুখের ওপর ঝুঁকে। বলছেন, তকলিফ হচ্ছে? ঠিক জানতাম মওত্ যে একদিন তোর কাছে আসবে... শুধু অপেক্ষায় ছিলাম যুদ্ধ কবে বাঁধবে!

মোল্লা সাহেবের কথার কোনও মানে বুঝতে পারল না বিবাকঘরে তারা দুজন  ছাড়া আর কোনো তৃতীয় প্রাণী নেই
আমি কোথায়? জিজ্ঞেস করল বিবাক
তোর ওপর দিয়ে অনেক ঝড় গেছে! আমি এখন যা যা বলি চুপ করে শোন! তুই সন্ত্রাসের শিকার। আমিওজেহাদীরা সব লুটপাট করে আমাদের মাতৃভূমি থেকে উচ্ছেদ করে দিয়েছে
পাঠানরা হল ইবলিশের দোসর জানবি দোখজে ওদের ব্যবস্থা হচ্ছেকিন্তু সে হল ইন্তেকালের পরের কথা। জলপথে আমরা এখন দিল্লি চলেছি, সম্রাটের সঙ্গে দেখা করতে
সম্রাট? মানে হুমায়ুন বাদশা?
হুম্! আমার কাছে খবর আছে শের শার সঙ্গে লড়াই দিতে হুমায়ুন বাদশা দিল্লি থেকে সসৈন্যে দক্ষিণে রওনা দিয়েছেনএদিক থেকে শের শাহও এগিয়ে চলেছেনএখন দেখা যাক যুদ্ধটা কোথায় বাধে!

কিছুই মাথায় ঢুকল না বিবাকেরহাঁ করে মোল্লা সাহেবের দিকে চেয়ে রইল যদিও খুব বেশি সময় চোখ খুলে রাখতে তার বেশ কষ্ট হচ্ছে
মোল্লা মহম্মদ বললেন, শোন যুদ্ধে যে পক্ষ জিতবে আমরা সেই পক্ষেএছাড়া আর অন্য উপায় নেইবেঁচে থাকতে গেলে এমন অনেক পন্থা অবলম্বন করতে হয়, বুঝলি?
আর কিছু না বুঝলেও বিবাক এটা বুঝল মোল্লা সাহেবের পরামর্শের মুল্য আছেতার বুকের ও পিঠের ক্ষতস্থানে এখনো দারুন যন্ত্রণা হচ্ছেশুয়ে শুয়ে উদাসীন ভাবে সে মোল্লা মহম্মদের কথা শুনে যেতে লাগল
মোল্লা সাহেব বললেন, আমরা প্রায় কনৌজের কাছাকাছি এসে গেছি। আর একটু এগোলেই কাটিপাড়া গ্রামভাবছি কাল সকালে দোওয়াক্ত নমাজের সময় একবার শের শাহর সঙ্গে আলাদা দেখা করব
প্রত্যুত্তরে বিবাক কোনও কথা বলল নাতার মনে হল এ সময় মাধ্বী তার নিকটে থাকলে খুব ভাল হতসে যে একটি বৃহৎ পিনিস নৌকোর ভিতরে শুয়ে আছে এতক্ষণে বুঝেছে বাইরে অন্ধকার রাত টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে এ সময় তার মাধ্বীর সুললিত মুখখানি মনে পড়ে যাচ্ছে মনে পড়া মাত্রই মাথা ঝিমঝিম করে উঠল তার
মোল্লা বললেন, আজ রাতটা তুই বিশ্রাম নে। বাকি কথা কাল হবে


বিবাক এখন চিৎ হয়ে শয়ান পিনিসের জানালা দিয়ে মেঘ ঢাকা আকাশ দেখা যাচ্ছে হালকা চাঁদের আলো ফুটেছে একটি কাচপাত্রে মোল্লা সাহেব তার জন্য কিছু জীরক ও গুড় রেখে গেছেন কিন্তু বিবাকের এখন খেতে ইচ্ছে নেইগুড় দিয়ে মাধ্বী খুব সুন্দর এক প্রকার চিপীট তৈরী করতে পারতযেমনি তার অপূর্ব স্বাদ তেমনি সুমিষ্ট হত সেই পিঠেঅত্যন্ত তৃপ্তি সহকারে বিবাক সেই সব খাদ্য দ্রব্য ভক্ষণ করতসে সময় মাধ্বীর নীলবর্ণ মণি দুটি থেকে আলো ঠিকরে পড়ত। বিবাক অপ্রস্তুতের হাসি হাসতবোধকরি বাতাসে তখন কদম্ব গন্ধ বয়ে যেতমাধ্বীর মেঘডম্বর শাড়ীর প্রান্ত ধরে বিবাক তার কর্ণমূলে নিজের ওষ্ঠ ছুঁয়ে ফিসফিস করে উচ্চারণ করত, তন্বী শ্যামা শিখরিদশনা পক্ববিম্বাধরগোষ্ঠী মধ্যে ক্ষামা চকিতহরিণী প্রেক্ষণা নিম্ন নাভিঃ! শ্রোণী ভারাদলস গমনা...
সে  তন্বী, সে শ্যামাসুন্দর শিখর যুক্ত তার দাঁত, পাকা বিম্ব ফলের মত তার ওষ্ঠ ও অধর, তার কোমর সরু, গভীর তার নাভি...

গাঢ় এক চুম্বনে দুজনেই ঘনসন্নিবদ্ধ, নির্জন দ্বিপ্রহর। কাছাকাছি কেউ কোথ্থাও নেইকক্ষের একদিকে চিত্রিত বারাণসী তেপায়াক্রমে সেই তেপায়াটির ওপরে তাদের দুজনের পরনের পোষাক অসংলগ্ন ভাবে স্তূপীকৃত হতে লাগল। সোনার মাদুলী, কাঞ্চী দেশের বেলী, মৃগনাভি ইত্যাদি মাধ্বীর অঙ্গে যা যা সজ্জিত ছিল সবই বিবাক মুহূর্ত্ত মধ্যে সরিয়ে ফেলল। রমণকার্যে এই সব দ্রব্য অহেতুক উপদ্রব সৃষ্টি করে। মাধ্বীর আসঙ্গলিপ্সা চূড়ান্ত। তার সতীত্বের ভয় নেইক্রমে তার গোলাপ বর্ণ অঙ্গে বিবাকের শক্ত মুষ্ঠির দাগগুলি সুস্পষ্ট হতে লাগল

(ক্রমশ)

1 কমেন্টস্: