কুশারিবাগান ৩
রাস্তাটি গিয়ে থামছে 'চৈতি' নামের মন্ডপটিতে। ছোট্ট কাচঢাকা বাংলা ধাঁচের একটি প্রদর্শশালা। নন্দলাল ভেবেছিলেন ছাত্রছাত্রীদের উত্তম শিল্পকাজগুলিকে এখানে দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে।
ডানদিকে ফিরলেই পাঠভবনের প্রশস্ত অঙ্গন। 'শান্তিনিকেতন' নামক প্রায়োগিক ধারণাটি শুরু হয়েছিলো এই নির্মাণটির মধ্যে দিয়েই।
দক্ষিণ ঘুরতেই ভেসে এলো কচিকাঁচাদের গলায় উদাত্ত স্বর সম্মোহন। “তোমার বাস কোথা হে পথিক?” এগিয়ে যাই স্রোতের অভিমুখে। পাঠভবনের পাশের বিস্তীর্ণ আমবাগানের খোলা মঞ্চটিতে আসর বসেছে বসন্ত-আবাহনের। গেরুয়া বসনের ছাত্র সম্পুট আর বাসন্তীবেশিনী ছোট মেয়েগুলি হলুদ পলাশবন হয়ে ঘিরে বসে আছে অনুষ্ঠানমঞ্চ আর তার সঙ্গে কিছু দর্শকশ্রোতা আর অভিভাবকেরা। তাঁদের সবার হাতেই ক্যামেরা, সচলছবির, নয় অচল প্রতিবিম্ব। আমিও তাঁদের সঙ্গে যোগ দিই। সঙ্গিনী এ ধরনের অনুষ্ঠানের কথা শুনেছেন অনেক, কিন্তু দেখেননি কখনও। আমাদের মফঃসল প্রয়াসে গড়ে তোলা অসংখ্য অনুষ্ঠানের প্রযোজনা তিনি ইতোপূর্বে দেখেছেন, কিন্তু নবীনদের এই স্ফূর্ত আত্মপ্রকাশের সাক্ষী কখনও থাকেননি। তিনি একজন প্রথম শ্রোতা, তথাপি তাঁর মুগ্ধতার ভাগী হলুম, আমিও।
ডানদিকে ফিরলেই পাঠভবনের প্রশস্ত অঙ্গন। 'শান্তিনিকেতন' নামক প্রায়োগিক ধারণাটি শুরু হয়েছিলো এই নির্মাণটির মধ্যে দিয়েই।
দক্ষিণ ঘুরতেই ভেসে এলো কচিকাঁচাদের গলায় উদাত্ত স্বর সম্মোহন। “তোমার বাস কোথা হে পথিক?” এগিয়ে যাই স্রোতের অভিমুখে। পাঠভবনের পাশের বিস্তীর্ণ আমবাগানের খোলা মঞ্চটিতে আসর বসেছে বসন্ত-আবাহনের। গেরুয়া বসনের ছাত্র সম্পুট আর বাসন্তীবেশিনী ছোট মেয়েগুলি হলুদ পলাশবন হয়ে ঘিরে বসে আছে অনুষ্ঠানমঞ্চ আর তার সঙ্গে কিছু দর্শকশ্রোতা আর অভিভাবকেরা। তাঁদের সবার হাতেই ক্যামেরা, সচলছবির, নয় অচল প্রতিবিম্ব। আমিও তাঁদের সঙ্গে যোগ দিই। সঙ্গিনী এ ধরনের অনুষ্ঠানের কথা শুনেছেন অনেক, কিন্তু দেখেননি কখনও। আমাদের মফঃসল প্রয়াসে গড়ে তোলা অসংখ্য অনুষ্ঠানের প্রযোজনা তিনি ইতোপূর্বে দেখেছেন, কিন্তু নবীনদের এই স্ফূর্ত আত্মপ্রকাশের সাক্ষী কখনও থাকেননি। তিনি একজন প্রথম শ্রোতা, তথাপি তাঁর মুগ্ধতার ভাগী হলুম, আমিও।
অনুষ্ঠানটি ভাঙার পর যে দৃশ্যটির জন্ম হলো তা দেখে এই বয়সে বুঝতে পারি, কবি কাকে খেলা ভাঙার খেলা বলেছিলেন। আমাদের লোহার শহরে গড়ন্ত বয়সকালে এমন ঋদ্ধ রসের আয়োজন আমাদের নসিব হয়নি।
পিছনের খোলা মাঠে দাঁড়িয়ে ছিলো একটি একা রাধাচূড়া। তার গায়ের পত্রসবুজ ঝরে গেছে, শুধু মুকুটের মতো ছেয়ে আছে হলুদবসন্তের লা মার্সাই। সঙ্গিনীকে বললুম, একবার ঐ গাছটির সামনে দাঁড়াও তো! এই অন্য আলোটি একবার ক্যামেরায় ধরতে চাই।
সিংহসদনের পুরনো ঘন্টা বেজে উঠলো, একেবারে ঠিকসময়।
সিংহসদনের পথের উল্টোদিকেই সাঁচীতোরণের আদলে তৈরি অন্য ঘন্টাতলা। তার দু'দিকে ছায়াসুনিবিড় ঝুরিবাঁধা বটগাছে সর্বতো শান্তিকল্যাণ ছেয়ে থাকে। সেই লাল বেদীটিতে নিশ্চুপ খানিক বসে সময়ের বয়ে যাওয়া দেখার ইচ্ছে আমার এখনও রয়ে গেছে। বাঁদিকে যেই তাকাই, টানা চলে গেছে শান্তিনিকেতনের হৃদয়, আম্রকুঞ্জ, বকুলবীথি, শালবীথি। বিস্তৃত প্রান্তরে নীচু নীচু আমগাছের সারি। শ্যামল ছায়ায় ভরে আছে ঝরাপাতার জাজিম পাতা পাঠশালা। ছোটবেলা থেকে বইয়ে পড়া গাছের নীচে পাঠশালার মুক্তাঙ্গন। এখনও বরকরার, স্ফূর্ত, আশ্বাসী। আমরা দু'জন কখনও গিয়ে বসি গুরুর বেদীতে, কখনও চেলাদের ভূমিলগ্ন আসনে। এজন্মে তো আর এই ইশকুলে বসে অক্ষরপরিচয়ের সাধ মিটলো না...
ভালো করে পড়গা ইশকুলে, নয়তো কষ্ট পাবি শেষকালে,
...আমরা অধমছাত্র জগাই-মাধাই,
গুরু, মোদেরকে ফেল করালে...
গুরু, মোদেরকে ফেল করালে...
আর বছরে এমনি দিনেই ফাগুনমাসে
এবার বসন্তে ভুবনডাঙ্গায় পলাশ নেই। আগুন রঙ বা পীতবাস, কিছুই খুঁজে পাওয়া যায় না। কৃষ্ণচূড়ার সময় আসেনি, কিন্তু রাধাচূড়া সেও এতো অমিল হয়ে আছে। বসন্তে শুধু শুকনো পাতা, ঝরা ফুলের মেলা। আম্রকুঞ্জ ঝরাপাতার নরম কার্পেটে এপার ওপার। সন্ধের পর মালতী আর হাস্নুহানা এদিকওদিক থেকে উঁকি দিয়ে গন্ধ ছড়িয়ে যায় আমার পূর্বাশ্রমের আশ্রমবালিকাদের মতো। হাপিত্যেশ করে পলাশ পাওয়া গেলো সুরুলকুঠির কাছে শ্যামবাটিতে। তাও কটা মাত্র গাছ। আর রাধাচূড়া শুধু একজায়গায়। হ্যাঁ, একা দাঁড়িয়ে ছিলো পাঠভবনের মাঠে তার চোখজুড়োনো কাঁচাহলুদ মুকুট পরে। ক্যামেরার সাবজেক্ট হিসেবে রুক্মিণীর সঙ্গে রাধা বেশ লাগসই। কিন্তু আমার রুক্মিণীদেবীটি একাই রাধা, বৃন্দা, ললিতা, বিশাখা, স-অ-ব ভূমিকা একাই কুক্ষিগত করে রাখতে চা'ন। সেই ঘন্টা দেড়েক অং বং পড়ে বাড়িতে জেনেশুনে একজন বাঙালিনীকে ঢোকানোর পাপ, সে কি আর এক জন্মে মিটবে? এমত পুং বাঙালির শেষ অ্যাম্বিশন, কেষ্টার বাপ হয়ে নিত্য মুষলপর্বের শেষে জরাব্যাধের জন্য অপেক্ষা করা। “এ জনমে মিটিল না সাধ”, হায় অতুলপ্রসাদ সেন...
শিল্পের ইতিবাচক মূল্য নিয়ে আবহমানকাল ধরে সারা পৃথিবীতে কোটি কোটি কথা লেখা, বলা হয়েছে। কিন্তু বাঙালির ‘সিলপোসাধনা’ এক অন্যমেরুর উপলব্ধি।
অন্যান্য অনেক দেশবাসির মতো বাঙালি, শুধু ধর্ম অথবা শুধু জিরাফ নিয়ে তৃপ্ত থাকতে পারে না। এমনকি পেশাদার রাজনীতিকদেরও ‘সৈল্পিক ইসে’ থাকতে হবে। ভোটে জিতে মন্ত্রী হতে গেলেও তাকে রেনোয়ার মতো ছবি আঁকতে হবে, 'ক্যাসিও' বাজিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুর তুলতে হবে, ডজন ডজন 'পদ্যে'র বই ছাপতে হবে, গাড়ির ড্যাশবোর্ডের উপর হলুদ মলাট দেওয়া 'গীতবিতান' বই রাখতে হবে (যার প্রথম কবিতাটি হলো 'ধনধান্যপুষ্পে ভরা')। শরীরে একফোঁটা শিল্পীসুলভ মেধা, রুচি বা সম্ভ্রমবোধ না থাকলেও চলবে, মাথায় শুধু কার্বন ডাই অক্সাইড ভরা থাকলেও চলবে, কিন্তু বাঙালির প্রবাদপ্রতিম ‘সিলপো’রুচিবোধের তকমাটি চাইই চাই। বাবা ড়বিন্দোনাতের উত্তরসূরি না...! তাতে কী আসে যায়, যদি বোম বোম তাড়কবোমই শেষ পর্যন্ত সব ‘সিল্পের’ উৎস হয়ে দাঁড়ায়...
বাঙালির বার্মুডা ত্রিভুজটি তৈরি হয়েছে তিনটি বিন্দু ঘিরে। তাদের নাম বকু, তারু আর সন্তু। আপামর বাঙালির ঐহিক পারত্রিক সর্বরোগহর বটিকার জোগান দেয় এই ত্রিভুজ। বাংলার প্রত্যন্ত গ্রাম, গঞ্জ, মফঃসল থেকে যে কোনো ফাটামস্তান, কাটাগুন্ডা একটা 'কোচ'বাস ভাড়া করে পুণ্যার্থীদের পাল্কিশুদ্ধু গঙ্গাস্নানের স্টাইলে এই ত্রিভুজদর্শনের ব্যবস্থা করে দেন। একটু ব্যাখ্যা প্রয়োজন বোধহয়! বকু মানে বক্কেশ্বর, তারু মানে তারাপীঠ এবং সন্তু হলো শান্তিনিকেতন। প্রথম দুটি উদ্দিষ্টের সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার মতো পুণ্যস্থানের অভাব নেই ধারে কাছে, কিন্তু বেচারা শান্তিনিকেতনের কপালে এই ত্রিভুজের তৃতীয় বাহু হবার গৌরব লাভ বেশ বিড়ম্বনাজনক। প্রায় প্রতিদিন বকু-তারুতে পুণ্য করে ফেরার পথে সিঁদুরতিলক সহিত বা রহিত অসংখ্য মানুষজন বাসের গর্ভ থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়ে দৌড়োতে দৌড়োতে রবিকবির আঁতুড়ঘর, বাসরঘর খুঁজে বেড়ায়, রতনকুঠি থেকে নকল নোবেলের কাচবাক্স পর্যন্ত। বাঙালি হতে গেলে জিরাফ যে কত প্রয়োজনীয়, কত অমোঘ ব্যাগেজ, তাঁরা প্রমাণ করে যান পদে পদে।
শান্তিনিকেতন গৃহ থেকে ধীরে ধীরে কলাভবনের দিকে হাঁটছিলুম। হঠাৎ দেখি অন্যদিক থেকে ষাট-সত্তর জনের একটি দঙ্গল প্রায় ছুটতে ছুটতে এদিক লক্ষ্য করে ধেয়ে আসছে। তাদের হাবভাব ভঙ্গির মধ্যে বেশ একটু জঙ্গি মার্কন্ডেয়পুরাণের ঢং রয়েছে। এই সব জনতাকেই আমরা ব্রিগেডে দেখি নানা রঙের ঝান্ডা হাতে বিপ্লবের স্বপ্নে মশগুল। হঠাৎ থেমে তাদের নেতা একটু দূরে কিছু একটা দেখিয়ে ভাষণ দিচ্ছেন। কাছে গিয়ে শুনি জনতাকে রামকিংকরের 'কলের ডাকে'র মাহাত্ম্য শোনাচ্ছেন তিনি। বাঁকুড়া জেলায় যে গামছার থেকেও মহীয়ান কিছু, মানে রামকিংকরের মতো 'কিছু', উল্লেখ করার মতো রয়েছে, সে কথাই তিনি ব্যাখ্যান করছিলেন। এক মহিলাকে তাঁর সঙ্গীর প্রতি বলতে শুনলুম, অ্যাত-অ রদ কইর্ছ্যেঁ, চাঁদি ফাটাই দিবেক ইবার, কিন্তুক ইয়ার বকর বকর থাইমতে লারছে। সঙ্গী বিজ্ঞের মতো বললেন, ইটা রবিঠাকুরের ঘর বঠে, তুই বুইঝত্যে লারছিস, কঠিন কান্ড-অ সব...
সেইখানে মোর পরাণখানি, যখন পারি বহে আনি
যখন জোয়ান বয়স ছিলো, তখন শান্তিনিকেতনে গতায়াত ছিলো মূলত: দুটি কারণে। এক, যদিও পারিবারিক ভাবে আমরা রবিরসে সতত নিমজ্জিত, কিন্তু জামশেদপুরের মতো একটি ছোট বহুজাতিক শহরে বাড়ির বাইরের আবহে রবির উদয় বিশেষ থাকতো না। পঁচিশে বৈশাখে ঘামতে ঘামতে রবীন্দ্র-উপাসনার বাইরে নিমগ্ন রবীন্দ্রচর্চার পরিসরটুকু ছিলো খুব ছোট, কয়েকটি পরিবারকেন্দ্রিক মাত্র। শান্তিনিকেতনে গেলে, লোহার গুঁড়ো, স্মেল্টারের আগুন আর ম্যাক্সিপ্রেসের ভয়ানক শব্দদূষণ মাখা রবীন্দ্রবিভবের বাইরে একজন অন্য রবীন্দ্রনাথ প্রাণের আরাম, মনের আনন্দ হয়ে ঘিরে থাকতেন। পঁয়তাল্লিশ ডিগ্রির রোদে আনখ পুড়ে যাবার পর বাইশ ডিগ্রির বাতানুকূল ঘরে শান্তিকল্যাণের মতো স্বস্তিময়, স্বাচ্ছন্দ্যসরস। অপর কারণটিও কিছু কম আকর্ষণীয় ছিলো না। সেই পাড়ায় তখন অবিরল দেখা হয়ে যেত ময়নাপাড়ার মেয়েদের সঙ্গে। সহজ, অকৃত্রিম, একটু বর্তুল উচ্চারণ, ন্যূনতম প্রসাধিত, ধুলোট পায়ের কন্যাসব। হয়তো ঈষৎ প্রগলভ, কিন্তু ঠিক ন্যাকা নয়, মহানগরের সবজান্তা মেয়েদের মতো নয় একেবারেই। কিন্তু তাদের সঙ্গে বিশ্রম্ভালাপের জন্য মাঠেঘাটে ঘাসবিহারী হওয়া ছাড়া গত্যন্তর ছিলো
না। সারা তল্লাটে একটু বসে গপ্পো করার মতো কোনও সরাইখানা ছিলো নিতান্ত অমিল।
সে বালাই এখন একেবারেই নেই। প্রচুর খাবারদাবার ঠেক হয়েছে চারদিকে। তাদের মধ্যে কিছু, বোলপুরের মাপে বেশ বিলাসবহুলও বলা যায়।
তবে তো খেপ মারতেই হয়।
কোথায় যাওয়া যায় ভাবতে ভাবতে অভ্র চলে সোনাঝুরিতে একটা ধাবায়। প্রকৃতির কাছাকাছি বোঝাবার জন্য খড়, বাঁশ, কাঠের গড়ন দেওয়া একটি খোলা সরাই। কিন্তু সে বড্ডো ভিড়। নাহ, বিশ্বায়ন গিলে ফেলেছে ভুবনডাঙাকেও। এবার এগো-ই অন্য ঠিকানায়। শ্রীনিকেতন-ইলমবাজার রাস্তার মোড়ে একটি সাজানো বাগান ঘেরা রেস্তোঁরা, খড়িমাটি। পরিবেশ ভালো, খাবারও ঠিক আছে। কিন্তু আদত শান্তিনিকেতনীরা অভিযোগ করেন সেখানে সম্প্রতি একটি সুরাপান কেন্দ্র খোলা হয়েছে। উঁকি দিয়ে দেখি নিতান্ত পরিমিত আয়োজন। আমাদের অনেকের বাড়ির সেলারও তার থেকে অনেক বেশি প্রাচুর্যময়। আর ঐ জায়গায় গেলে আমি কখনও সুরাপান করিনি, এবারও করলুম না (না, কিছু প্রমাণ করার নেই)। মনে পড়ে যায়, কলকাতায় গ্র্যান্ডের বলরুমে মেহদি হাসান সাহেবকে একবার গজলের পর সুফি গাইতে অনুরোধ করা হয়েছিলো। তখন তিনি সবিনয়ে জানান, গাইতে বসার আগে তিনি কিছু মদ্যপান করেছিলেন। তাই সুরাগ্রস্ত হয়ে সুফি গাইবার পাপ তিনি করবেন না। তাঁকে যেন মার্জনা করা হয়।
আসবপান মানুষের লঘুতম ব্যসন। গভীরতর নেশার আয়োজন যেখানে থাকে, সেখানে সুরা তার আকর্ষণ হারিয়ে ফেলে।
পরের দিন একটি পারিবারিক উদযাপনে অভ্র নিয়ে যায় একটি অন্য সরাইখানায়। মার্কস এবং মিডোজ নামে ভোজনের ব্যবস্থাসহ একটি থাকার জায়গা। তুলনামূলক স্থান বিচারে বিলাসিত আয়োজনই বলা যায়। মহানাগরিক স্বচ্ছলতার স্বাচ্ছন্দ্যে অভ্যস্ত অতিথিরা, যাঁরা হয়তো লালসবুজের ধুলোজলে এখনও সহজ শান্তিনিকেতনকে নিছক আরেকটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেই গণ্য করেন, তাঁদের স্বস্তি দেবে। সাজানো ভোজনদালানটির সংলগ্ন একটি স্নুকার পুলঘর। সামগ্রিক আবহটি সমুদ্রধারের রিসর্টের ধাঁচে। নিজের মধ্যে স্ববিরোধ অনুভব করি। স্থানমাহাত্ম্যের বিচারে এ জাতীয় নির্মাণটির প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে মনে প্রশ্ন আসে, আবার ইঞ্জিনের পিছনে কামরার মতো উত্তরটিও মসৃণ এসে যায়। এক সময় যে তুমুল তর্ক করতুম, শান্তিনিকেতন কোনও বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়। সন্নিহিত পৃথিবীর শাদাকালো, ধুলোধোঁয়া, সব কিছুর দায়ই তাকে বহন করতে হবে। তাই তো হয়েছে, এভাবেই। স্বাগত, হে সোনার পিত্তল মূর্তি।
একবার নক্ষত্রের পানে চেয়ে-একবার বেদনার পানে
অনেক কবিতা লিখে চলে গেল যুবকের দল;
পৃথিবীর পথে পথে সুন্দরীরা মূর্খ সসম্মানে
শুনিল আধেক কথা- এই সব বধির নিশ্চল
সোনার পিত্তল মূর্তি; তবু, আহা, ইহাদেরও কানে
অনেক ঐশ্বর্য ঢেলে চলে গেল যুবকের দল:
একবার নক্ষত্রের পানে চেয়ে- একবার বেদনার পানে।
(মহাপৃথিবী: জীবনানন্দ)
বড়ো বেদনার মতো বেজেছে আপনার লেখাটি--না শুধু মাত্র এখুনি শান্তিনিকেতনে হাজির হতে পারছি না তাই--অপূর্ব লেখা
উত্তরমুছুন