কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ৭ মে, ২০১৮

সৈয়দ মাজহারুল পারভেজ




পদক

অনেকদিন ধরেই অসুস্থ কবি আদিত্য মারুফ। দেশের অন্যতম সেরা কবি। চারদিকে কত নাম-ডাক। কবি জীবনে পেয়েছেন অনেক সাহিত্য-পুরস্কার, সম্মাননা ও সংবর্ধনা। বাড়ির একটা রুমে সেলফ ভর্তি বই, পদক, সম্মাননা ক্রেস্ট আর মানপত্রগুলো থরে থরে সাজানো। নিজের হাতে সাজিয়েছেন। তাঁর সন্তানের মতোই প্রিয় এই বই আর পদকগুলো।

যখন মন ভালো থাকে না তখন এ রুমটায় আসেন। বই আর পদকগুলোর দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে থাকেন। এগুলো তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ অজর্ন।  অনেক কষ্ট করে এগুলো অজর্ন করতে হয়েছে। মানুষ টাকা-পয়সা কামাই করে, বাড়ি-গাড়ি করে আর তিনি লিখেছেন বই। আর তার স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন পদক। সোনার পদক, রূপোর পদক, আরো কত রকমের পদক।
সারাজীবন কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। অবশ্য টাকা-পয়সা তেমন একটা সঞ্চয় করতে পারেননি। সঞ্চয় বলতে অগণিত ছাত্র-ছাত্রী আর এই বই ও পদকগুলো। এ নিয়েই তাঁর যত অহংকার।

আদিত্য মারুফের এ সব নিয়ে অহংকার থাকলেও তাঁর স্ত্রী সাবরিনা সুলতানার কোনো আগ্রহই নেই। অভাবের সংসারে ও সব পদক দিয়ে কী  হবে? এখন বেঁচে থাকাটাই মূখ্য। ও সব পদক-টদক সব গৌণ। এ নিয়ে  স্বামীর সাথে মাঝে-মধ্যেই বচসা হয়। পদক বেচার কথা উঠলেই আদিত্য  বলেন- দেখ সাবরিনা, এ সব পদকের কী মূল্য, তুমি তা জানো না! কটা  টাকা দিয়ে এর দাম পরিমাপ করতে পারবে না। পদক না বেচে বরং তুমি আমাকেই বেচে দাও। ঝামেলা বিদেয় হোক।

আদিত্যর কথায় সাবরিনা তাঁর মুখে আঙুল চেপে ধরেন। বলেন- ছিঃ ছিঃ  এমন কথা তুমি বলতে পারলে? আমি তো অভাবের কারণে কথাগুলো বললাম। আগে বাঁচতে তো হবে! 
তুমি তো জানো রিনা, আমার বই, আমার পদকগুলো আমার কাছে সন্তানের মতো। কেউ কী তার সন্তানকে বেচতে পারে? পারে না। আমিও পারবো না।  আমাকে তুমি ক্ষমা করো। আমি মরে গেলে তোমার যা খুশি তাই করো।

এ রকম কথোপকথন রোজই হয়। বই আর পদক বিক্রির কথা শুনতেই পারেন না আদিত্য। এগুলো তো তাঁর প্রাণপাখি! প্রাণপাখি ছাড়া তিনি বাঁচবে কী করে!

দিন দিন আদিত্যর শরীরের অবস্থা খারাপের দিকে যেতে থাকলো। সুগার লেবেলটা কিছুতেই কমছে না। প্রতিদিন ডায়ালোসিস করতে হচ্ছে। তাঁকে  হসপিটালাইজ করা হলো। বলতে গেলে প্রায় কোমায় চলে গেছেন। ডাক্তাররাও হতাশ। কখন কী হয় বলা যায় না।

এতবড় একজন কবি, চারদিকে এত নাম-ডাক, কিন্তু হাসপাতালের দিনগুলোতে কেউ তাঁর একটা খবরও নিলো না। প্রতিদিন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা  খরচ হচ্ছে। সে টাকার জোগাড় করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে সাবরিনাকে। হাত পাততে পাতকে এখন আর হাত পাতারও লোক নেই।
এখন স্বামীর সোনার পদকগুলো বেচা ছাড়া আর গত্যন্তর নেই। বিক্রির জন্য জুয়েলারিতে নিয়ে গেলেন সাবরিনা।
পদকগুলো কষ্টিপাথরে ঘষে দেখলেন স্বর্ণকার দিলীপ বমর্ন।
- ম্যাডাম, এগুলোতে কোনো সোনাই তো নেই! বললেন দিলীপ বর্মন।
- বলেন কী দাদা! সব তো সোনার পদক। আবার একটু ভালো করে যদি যাচাই করে দ্যাখেন।
- এখন আর কষ্টিপাথর লাগে না। চোখটাই কষ্টিপাথর হয়ে গেছে। তারপরও তো একবার তো দেখলাম ম্যাডাম!
 - তাহলে এগুলো গোল্ড মেডেল না?
- না ম্যাডাম, এ সোনার পদক নয়; এগুলোকে বলে গোল্ডেন মেডেল বা সোনালি পদক। সোনার পানিতে ধোয়া।
আর কোনো কথা বলতে পারলেন না সাবরিনা সুলতানা। তাঁর চোখের সামনে পুরো পৃথিবীটা দুলতে থাকলো। 



0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন