কালিমাটি অনলাইন / ৫৫
সময় ক্রমশ বিষাক্ত, আরও বিষাক্ত হয়ে উঠছে। প্রচলিত সমাজ
ব্যবস্থার ক্রমাবনতি হয়েই চলেছে। মানুষ প্রতিদিন হারিয়ে ফেলছে তার মূল্যবোধ। একটা
চরম অসহিষ্ণুতা প্রতি নিয়ত গ্রাস করে চলেছে জীবনের মনন ও যাপন। চারিদিকে
নিরন্তর ঘটে চলেছে অসামাজিক কর্মকান্ডের উল্লাস। মনে হচ্ছে যেন অসামাজিকতার মহোৎসব
চলছে। আর সেই মহোৎসবে প্রত্যক্ষ ভাবে না হলেও পরোক্ষ ভাবে জড়িয়ে পড়ছে অধিকাংশ
সাধারণ মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষও। তাঁরা নিজের অজান্তেই অনেক ক্ষেত্রে সমর্থন জানাতে
ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন সেইসব অসামাজিক কর্মকান্ড ও অসামাজিক তত্ত্বদের। এটা সত্যি খুব
দুঃখের ও পরিতাপের বিষয়। সেদিন ফেসবুকে একটি পোস্ট দেখলাম ও পড়লাম। এক সুশ্রী
মহিলা বলছেন, সম্প্রতি আসিফা ধর্ষণকান্ড নিয়ে অনেক হইচই হচ্ছে, মোমবাতি মিছিল
হচ্ছে। এবং তিনি সেই ধর্ষণকান্ডের নিন্দা করে বলছেন, যখন কাশ্মীর থেকে ব্রাক্ষ্মণ
পন্ডিতদের বিতাড়িত করা হয়েছিল এবং তাঁদের মেয়েদের ধর্ষণ করা হয়েছিল, তখন কি
মোমবাতির খুব আকাল পড়েছিল? এই ধরনের মন্তব্য সাধারণ মানুষের মনে খুবই প্রভাব
বিস্তার করে ও জনপ্রিয়তা লাভ করে, কেননা এই বক্তব্যের মধ্যে সূক্ষ্মভাবে রোপিত
হয়েছে সাম্প্রদায়িকতার বিষ। ধর্ষিতার সামাজিক পরিচয় শুধুমাত্র কন্যা বা মহিলা রূপে
তুলে না ধরে তাকে চিহ্নিত করা হচ্ছে কোন ধর্মীয় সম্প্রদায়ে তার অবস্থান, সেই
পরিচয়ে। অর্থাৎ
সহজ সমীকরণ হচ্ছে, ধর্ষণ যদিও একটি
নিন্দনীয় কাজ, কিন্তু যেহেতু একদা ব্রাক্ষ্মণ পন্ডিতদের কন্যা ও মহিলারা একটি
ধর্মীয় সম্প্রদায়ের পরিচয় বহনকারী কিছু অসামাজিক তত্ত্ব এই নিন্দনীয় কাজ করেছিল,
আজ তাই আসিফারাও আর একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের পরিচয় বহনকারী কিছু অসামাজিক তত্ত্বের
ধর্ষণের শিকার হতেই পারে! বলা বাহুল্য, এই মোক্ষম যুক্তিতে সাধারণ মানুষের মনে
হতেই পারে, তাই তো, এর মধ্যে কিছুটা অন্যায় থাকলেও সম্ভবত ততটা অন্যায় নেই! বরং
এটা যেন অনেকটা শোধবোধের ব্যাপার! অথচ মজার ব্যাপার হচ্ছে, যারা ধর্ষণ করে, তারা
কিন্তু কখনই ধর্মসম্প্রদায় বিচার করে ধর্ষণ করে না, তারা ধর্ষণ করে একটি নারী
শরীরকে, যে শরীরের বয়স আটমাস থেকে আশি বছর যা খুশি হতে পারে। আর দুঃখের ব্যাপার
হচ্ছে, যে নারী শরীর ধর্ষণের শিকার হয়, তাকে যে ধর্মীয় সম্প্রদায়ই ধর্ষণ করে থাকুক
না কেন, সেই মুহূর্তে তার শারীরিক ও মানসিক মৃত্যু ঘটে, যার জন্য সে আদৌ দায়ী নয়। অবাক
লাগে, অধিকাংশ মানুষ এই ব্যাপারটাকে ততটা গুরুত্ব না দিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন ধর্ষক ও
ধর্ষিতার সম্প্রদায়গত ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে আলাপ আলোচনায়। বলা বাহুল্য, ধর্ষণ এক
জঘন্যতম অপরাধ। এবং প্রতিটি ধর্ষণই সমান নিন্দনীয়। আর সব ধর্ষকদেরই জাতি-ধর্ম-বর্ণ
নির্বিচারে আমরা মৃত্যুদণ্ড দাবী করি।
‘কালিমাটি অনলাইন’ ব্লগজিনের ‘ধারাবাহিক উপন্যাস’ বিভাগে
ইতিপূর্বে দুটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম উপন্যাস ছিল শুদ্ধসত্ত্ব ঘোষের এবং
দ্বিতীয় উপন্যাস অলোকপর্ণার ‘তাহার নামটি’। এই সংখ্যা থেকে শুরু হলো তৃতীয় উপন্যাস
ঝুমা চট্টোপাধ্যায়ের ‘প্রিয়দর্শিনী’। আশাকরি এই উপন্যাসটিও আগের মতোই সবার মনযোগ
আকর্ষণ করবে।
এখন ভরা গ্রীষ্মকাল। সূর্যের প্রচন্ড তাপে কমবেশি সবাই
নাকাল। কামনা করি সবাই সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন, শীতল থাকুন।
আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা :
kajalsen1952@gmail.com /
kalimationline100@gmail.com
দূরভাষ যোগাযোগ :
08789040217 / 09835544675
অথবা সরাসরি ডাকযোগে যোগাযোগ :
Kajal
Sen, Flat 301,
Phase 2,
Parvati Condominium, 50 Pramathanagar Main Road, Pramathanagar, Jamshedpur
831002,
Jharkhand, India
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন