কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১ নভেম্বর, ২০১৭

নভেরা হোসেন

রোহিঙ্গ্যা  ট্রাজেডি ২০১৭


প্রথমে তোমরা এলে একজন
তারপর আরো একজন
তারপর আরো একজন
তারপর দলে দলে
শত শত, হাজারে হাজার
প্রথমে এলো একজন কিশোর
তারপর যুবক, বৃদ্ধ
মা-শিশু, ভাই-বোন
কারো পায়ে গুলি, কারো তলপেটে
অনেকে এলো কাঁধে চড়ে
একজন বাবা এলো ছেলের কাঁধে
একজন মা এলো মেয়ের কাঁধে
তোমরা আজ দেশছাড়া
পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ঘর-বাড়ি, গবাদি পশু  
জমির ধান, উপাসনালয়-
এমনকি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে  
তোমার প্রিয় ছেলেটিকে
তোমরা প্রাণভয়ে ছুটছো
তোমরা আশ্রয়ের জন্য ছুটছো
তোমরা বাঁচার জন্য ছুটছো
গুলিতে ঝাঁজরা হয়েছে বোনের মাথার খুলি
তোমরা শুধুমাত্র বাঁচতে চেয়েছিলে
তোমাদের নিজেদের ঘর-বাড়ি, হাঁস-মুরগি
জমির ফসল, দোকান, হালের বলদ
এই নিয়ে তোমরা চেয়েছিলে দিনমান পরিশ্রম করতে
কিন্তু তোমার প্রতিবেশী, তোমাকে বাঁচতে দিলো না
তোমার দেশের নিরাপত্তাবাহিনী কেড়ে নিলো তোমার প্রাণ-
তোমার দেশের শাসকরা তোমার মাথা মুড়িয়ে
ঘোল ঢেলে তোমাকে দেশছাড়া করলো
গুলি করলো পিছন থেকে, গুলি করলো সামনে থেকে
চোখের সামনে জ্বালিয়ে দিলো প্রিয় মাতৃভূমি
তুমি তবু বাঁচতে চেষ্টা করেছিলে  
হাতে তুলে নিয়েছিলে অস্ত্র
পিঠ দেওয়ালে ঠেকিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলে সামনের দিকে  
তখন তোমার দিকে ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছে হাতবোমা
তুমি জ্বলন্ত পা নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সামনে এগোলে
তোমার উপর শুরু হলো ব্রাশফায়ার
তোমার মা-বোন ছোটভাই, বোনের শিশু
সবাই বাঁচার জন্য ছুটতে  শুরু করলে
পিছন থেকে গুলি
নদী, সাগর পার হয়ে ছুটতে শুরু করলে  
পিছন থেকে গুলি
পাহাড় ডিঙিয়ে ছুটতে  শুরু করলে
এভাবে তোমরা একদিন নিজের দেশ ছেড়ে অন্য দেশে চলে এলে
বারবার এলে
হয়ে গেলে শরণার্থী
এলো গাড়ি, রিলিফের পলিথিন, বিস্কুট
এক বোতল পানির জন্য হাহাকার
কেউ কেউ তোমাদের কথা শুনছে
কেউ কেউ তোমাদের জন্য খাবার পাঠাচ্ছে
কেউ তোমাদের নিয়ে নানা মতলব করছে
কেউ করছে টক শো, লাইভ টেলিকাস্ট
তোমরা তবু ছাদহীন বনভূমিতে বসে আছো
কবে বাড়ি ফিরবে সেই আশায়


একটু  একটু  করে  বোবা হয়ে যাচ্ছ তুমি


একটু একটু করে বোবা হয়ে যাচ্ছ তুমি
তোমার কান আজ কিছু শুনতে পায় না
পাহাড়ে, নদীতে, সমতলে
শত শত দলিত মানুষ
তাদের কান্না, স্বজন হারানোর বেদনা
কোনো আর্তনাদ, নারকীয় চিৎকার
কোনো কিছুই তোমাকে স্পর্শ করছে না
দেখতে পাচ্ছ না চোখের সামনে ঘটে যাওয়া 
বিয়োগান্তক ঘটনা 
তনু বা রাধা কারো নিষ্পলক চোখই
তুমি দেখতে পাচ্ছ না
বস্তাবন্দি লাশ, কাটা হাত, নরমুণ্ডু
কোনো কিছুই আজ দৃশ্যমান নয়
কথা বলতে গেলে কণ্ঠ আড়ষ্ঠ হয়ে উঠছে
জিভে তারকাঁটা গাঁথা
কোন ভবিকাল-
সময়ের কোন দশ ফোঁড়?
তোমার চোখ, কান, ওষ্ঠ সব সেলাই করে দেওয়া হয়েছে  
একজন অশরীরী আত্মা হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছো  
পথ থেকে প্রান্তরে
ইলিসিয়াম থেকে নূহের পর্বত
তোমার দু’হাতে হাতকড়া  
পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি  
একটু একটু করে বোবা হয়ে যাচ্ছ তুমি
চারিদিকে রোজ কেয়ামত
একটু একটু করে বোবা হয়ে যাচ্ছ তুমি
চারিদিকে বলির কড়িকাঠ   


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন