হেডলাইনস্
কাশ্মীরের সোপিয়ানে ভারতীয় সেনা
অফিসারের গলাকাটা দেহ উদ্ধার।
সারাদিন খাটাখাটনি করেও রাতে
ঘুম আসছে না? দেখুন সুস্বাস্থ্যের খোঁজ।
সন্ধ্যে সাতটা।
নতুন জেলা। প্রথম ভোটেই চূড়ান্ত গাফিলতি।
অভিযুক্তদের ধরতে গেলে পুলিশের
ওপর চড়াও গ্রামবাসীরা।
দুর্ঘটনার আগের রাতে ঠিক কী ঘটেছিল?
শহরে ফের অটোওয়ালার দৌরাত্ম।
এল নিনোর প্রভাবে এবারেও মৌসুমী
বায়ুর দেরীতে আগমন।
বিশ্বজুড়ে এডস্ দিবস পালন।
রাষ্ট্রসংঘের উদাসীনতা।
পুরনো জং ধরা মোবাইলটা হাতে
নিয়ে চুপ করে বসে আছে মনা পাগলা। আজ তার একদম উদাস লাগছে। তাকে কেউ ফোন
করে না। মোবাইলটায় তার ফেসবুক আছে। হোয়াটস অ্যাপ আছে। সীমও একটা ভরে রেখেছে কবেই, তবু প্রায়ই তার
মোবাইলটা নিশ্চুপ হয়ে পড়ে থাকে। দু’দিন ফাঁক গেল তো তিন দিনের দিন
কোম্পানির একটা কল এলে মনে হয়, এর কাছে
অমৃত কোথায় লাগে!
এক জায়গায় বসে থাকলে মনার কাজ
চলে না। মুঠোর মধ্যে ফোনটা ধরে ঝাঁকানি মেরে উঠে পড়ে
এবং পথে নামতেই সেই কালো এবং গম্ভীর প্রকৃতির কালু রাউতের সঙ্গে সামনা সামনি দেখা। সেবারে অযথা কুবাক্যি বলে ফেলে কম মারটা খায়নি মনা কালুর
হাতে। এ লোকটাকে বেশ ভয় খায় মনে মনে
মনা। তবু কালু যদি কোনওদিন কোনও প্রয়োজনে মনাকে ফোন করে,
ঠিক করে রেখেছে মনা, ফোন সে ওঠাবেই। মিসড্ কল
কিছুতেই হতে দেবে না। তাই আজকাল সে ঘুরেফিরে কালুর
সামনে দিয়েই অযথা ঘুরঘুর করে।
কালুকে দেখে ফুড়ুক ফুড়ুক হাসে মনা। একটু আগের ম্যাড়মেড়ে চেহারাটায় এখন যেন জলুস
খুলেছে । গম্ভীর কালু ততোধিক গম্ভীর স্বরে বলল, হাসছিস যে?
না – মানে তোমার তো কাজের গাদা!
হাতে সময় পাওনা বুঝি! তোমার হোয়াটস অ্যাপ
নাম্বারটা দেবে? নতুন ফোন নিয়েছি!
জং ধরা কালচে মোবাইলটা কালুর
চোখের সামনে তুলে ধরে মনা।
কোথা থেকে হাপিস করে আনলি এটা?
মাইরি! হাপিস করব কেন? কিনেছি!
কিনেছিস?
কালুর এ হেন প্রশ্নে ভারী আত্মসম্মানে ঘা লাগে মনার। দু’পা পিছিয়ে বলে, কিনেছি তো! নয়তো কি চুরি করেছি?
দু ‘মিনিট চুপ করে কি ভাবল কালু, তারপর দম মেরে বলল, সামনে থেকে কেটে পড়!
উদাস গলায় মনা বলল, তোমার
নাম্বারটা দিয়ে দাও... দিলেই চলে যাব! আমার মেহনতের তো একটা দাম আছে!
তুই আবার কী মেহনত করলি?
না , মানে করিনি। ... তবে করব তো! তোমারটা পেলে একটা গ্রুপ করব। করে বাকি অন্যদের অ্যাডমিন করব। তারপর...
কালুর মুখচোখ আকাট গুন্ডা
বদমায়েশদের মতো। জিজ্ঞেস করল, তোর শরীর গতিক ভালো আছে?
নেচে উঠে জবাব দেয় মনা, আছে
মানে? শাস্তর মন্তর জানতে হয় এজন্য। জয়ত্তারা! হোয়াটস
অ্যাপ দিয়ে
যজমানদের সিদ্ধাই দিই এখন, তা জানো? তাছাড়া সেক্স চ্যাটও
করতে শিখেছি। তবে কিনা মেয়েছেলে ছাড়া সেগুলো জমে না ঠিক! করলে মনের ময়লা
কেটে যায়, আর শরীরটাও বেশ চনমনে হয়ে ওঠে! ...তুমি শালা শুয়োরের বাচ্চা বোঝ না এগুলো?
ব্যাপারটার মধ্যে কোনও পূর্ব পরিকল্পনা ছিল না। সজোরে মনার তলপেটের নিচে সবেগে একটা ঠুঁসো দিল কালু।
কঁকিয়ে উঠল মনা। ...আই বাপ্! শুদু মুদু মারছ কেন?
তোর বাপের হোয়াটস অ্যাপ নেই? সেখানে নম্বর চা গা!
বিড়বিড় করে মনা বলল, মরবি তুই! ঝাড়ে বংশে নির্বংশ হবি! আর মোটে তিন দিন! এইসব বাজারী মারের ঠিক বদলা তুলে নেবে ভগবান!
চড়াক করে একটা চড় পরল মনার বাঁ গালে। মাথাটা ঘুরে গেল একটু।
সেদিন সন্ধ্যায় টিভিতে কোনও এক খবরের চ্যানেলে অন্যান্য আরও অনেক হেডলাইনসের সঙ্গে আর একটা হেডলাইন, ‘যত্রতত্র মোবাইল চুরির ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক অশান্তি। নাগরিকদের বিক্ষোভের মুখে পুলিশ। এ মুহূর্তে চলছে বাইক বাহিনীর দাপট।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন