জড়োয়ার
ঝুমকো
মাঝে
খালি দুটো স্টেশন। তার জন্যও এত
দৌড় ঝাপ! মাঝে মাঝে মনে হয়,ওই দৌড়টাই যদি
আরেকটু বেশি করে একেবারে পৌছে যাওয়া যেত! ভাগ্যিস ট্রেনটা ফাঁকা থাকে। না হলে তো আর দেখতে হতো না!
-দিদি!
=আরে,
সৌম্য!
-এই
আজ ঘুঘনিওয়ালাটা ওঠেনি রে?
=এই
তো জাস্ট নেমে গেল গো।
-এ বাবা!
ধরে
রাখতে পারলি না একটু!
=এ আবার
কী কথা! আর এত খেও না বুঝলে, মোটা হয়ে যাচ্ছ
দিন দিন।
-এই
তুই থাম তো! আর শোন, ঘুঘনি খেলে কেউ মোটা হয় না।
=আচ্ছা
হয়েছে, হয়েছে। এবার বলো কী নেবে আজ?
-অ্যাই,
তুই
প্রত্যেক দিন কিছু না কিছু ঠিক গছিয়ে দিস।
=আমি,
কী করলাম?
-কী
করলি মানে? প্রত্যেকদিন এত সুন্দর সুন্দর দুল নিয়ে
উঠিস! এই, তুই কিন্তু আমাকে ইনডেরক্টলি প্রোভোক
করছিস, বলে দিলাম!
=কী?
-কিছু
না। এই,
তুই
আমায় বাদাম খাওয়া ঘুঘনওয়ালাকে ধরে রাখতে পারিসনি, এটা তোর শাস্তি। ততক্ষণ আমি দেখি কী নেওয়া যায়?
সাইড
ক্লিপ-গুলো আনিস নি আজ?
=হ্যাঁ
তো, ওই দেখ না, আছে ওই দিকে। এই নাও বাদাম।
-ওহ
থ্যাঙ্ক ইউ! নে তুইও খা।
=আরে,
তুমি
খাও না!
-খা
বলছি! আর এই নে তোর টাকাটা।
=দিদি
আজ ওটা লাগবে না। রাখো।
-ওমা
কেন? এটা তোর প্রাপ্য। খেটে রোজগার করছিস বলে কথা। রাখ রাখ।
=আরে
দিদি শোনো না!
-কোনো
কথা নয়। চুপ। নে এবার উঠতে হবে, নৈহাটি ঢুকছে তো।
ব্যাস,
তারপর দুজনে-দু’দিকে দিব্যি ভাগ হয়ে যেতাম। ও কৃষ্ণনগর-রাণাঘাট
ওইদিকে চলে যেত। ওর ওদিকে বিক্রিটা
বেশি হতো কিনা! আর আমিও আমার দিকে।
মাস
আটেক হলো ত্রিবেণীর কাছে একটি স্কুলে চাকরি পেয়েছি। তো সৌম্যর সঙ্গে, মানে ওই যে ছেলেটি,
এতক্ষণ
দুল বিক্রি করছিল, ওর সঙ্গে এই ফেরার সময়টুকু, মানে ব্যান্ডেল থেকে নৈহাটি, এইসময় মাঝে
মাঝে দেখা-সাক্ষাৎ হয়।
দুলগুলো
কিন্তু ফাটিয়ে রাখে। যদিও হাতিবাগান-গড়িয়াহাট
বা এসপ্ল্যানেডের ওপর আমার একরকম অলিখিত অধিকারবোধ জন্মে গেছে,
কিন্তু
তাও খুড়োর কলের মতো ওরকম যদি সামনে কেউ ধরে রাখে, আমারই বা কী করার থাকতে পারে!
তাই
সৌম্য ছেলেটার সঙ্গে বেশ ক’দিনেই জমে উঠেছে। ছেলেটা
ভালো। বিভিন্ন রকমের
দুল-টুল পড়ে সেলফি তুলতে দেয়। নিজের পড়াশোনার খরচ নিজেই চালাচ্ছে। ও কেমন বিক্রেতা, আমি জানি না। কিন্তু মানুষ হিসেবে মনে হয় ঠিকঠাক-ই। যেদিনই দেখা হয়, ছোঁড়াটার কাছ থেকে কিছু না কিছু নিই। আমাদের স্কুলের ওদিকেই বোধহয় কোথাও থাকে। একবার কথায় কথায় যেতেও বলেছিল।
না, না, পাগল নাকি!
আমি যাই-টাই নি। তবে ঐ আর কী!
ছেলেটার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হলে,
জিনিসপত্র কিনলে ভালোই লাগত। আর যাইহোক ক্রেতা-বিক্রেতার সম্পর্ক কোনওদিনই ছিল না। এই তো কিছুদিন আগে ও মোবাইল কিনল। ঝাক্কাস সেলফি ওঠে! আরও কত জ্ঞানও দিলাম।
কী নিয়ে যেন একটা,
খেয়াল নেই।
এখন
আমিও প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছি, এদিককার কোনো
স্কুলে যদি চলে আসা যায়। বাপিও কিছু সোর্স লাগিয়েছে। অ্যাটলিস্ট বারাসাতের দিকেও হলে...
ওহহ,
জাস্ট আ সেকেন্ড...
=ইয়েস!
-হ্যালো দিদি, সৌম্য বলছি।
=কে সৌম্য?
-আরে দিদি, সৌম্য গো!
বুঝলে দিদি, চাকরি পেয়েছি, কিন্তু করব না। এই ব্যবসাই ভালো। তারপর তোমার সঙ্গেও...
=সরি!
আমি ঠিক চিনতে পারলাম না। আই থিঙ্ক,
রং নাম্বার...
-না না,
দিদি! হ্যালো! হ্যালো!
যাহ্ ফোনটা তো কেটে গেল! দেখি আরেকবার...
-হ্যাঁ দিদি,
আমি সৌম্য, ওই যার কাছ থেকে তুমি...
=আরে ভাই,
বললাম তো ভুল নাম্বার ডায়াল করেছেন,
আশ্চর্য তো!
-কিন্তু... হ্যালো? হ্যালো? ভুল নাম্বার?
নাকি... নাকি আমারই শুধু হকার হওয়া উচিত ছিল!
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন