জীবনকে উপভোগ করার জন্য একটি স্বাধীন মন চাই - মল্লিকাদি হষ্টেলে
বলত। যদিও নিজের ব্যর্থ প্রেম নিয়ে খুব সেন্সেটিভ ছিল মল্লিকাদি। এক্স কী করে
মল্লিকাদিকে ধোকা দিয়ে পালিয়ে গিয়ে আমেরিকায় বিয়ে করেছিল, বর্ণনা করতে গিয়ে চোখের জলে বিছানা ভিজে যেত মল্লিকাদির। আসল
কথা মিথ্যাচার মানুষ প্রেমে নিতেই পারে না। এসম্পর্ক তার কাছে আয়নার মতো যেন
প্রতিবিম্বিত হতে থাকে সারাটি জীবন। হাসি-কান্নায়
সেখানেই একদন্ড স্বস্তি। মল্লিকাদির সামনে বসে তখন আমি বুঝতাম না যে বিচ্ছেদের
যন্ত্রণাবোধ মানুষকে কতটা অস্বাভাবিক করে তোলে। সেই সময় মনে হতো ভালোবাসার মতো অপ্রয়োজনীয়
বিষয় নিয়ে মল্লিকাদি এত গভীর যন্ত্রণায় ডুবে থাকে কেন! আমি ঠিক সমব্যথী হতে পারতাম
না। পরে সে ভাবনায় নানা ধরনের পরিমার্জন ও পরিবর্ধন হয়েছে। মল্লিকাদির সারা কান্না
আমার চোখে আশ্রয় পেয়েছে এক অসহায়ত্বের সাথে। ফিরে দেখার মুহূর্তে মনে হয়েছিল মল্লিকাদির ঠিকানা যদি কাছে থাকত! হষ্টেলে
সিনিয়রদের প্রেমে ঔদ্ধত্য দেখেছি, স্বপ্নভঙ্গে
মানসিক ভারসাম্য হারাতে দেখেছি। প্রেমের ব্যর্থতায় সারা রাত ভিজতে দেখেছি বালিশ, বিছানা। এক বিষণ্ন রাজপুরীতে যেন রাজকন্যারা সব হারিয়ে
নিঃস্ব হয়েছে প্রতিরাত। তবু সকাল, তবু ঝলমলে
আকাশের কিরণে কেটেছে দিন।
তখন নিজেকে স্বনির্ভর করে তোলার এক বিষম দায় আমাকে তাড়া করে
নিয়ে বেড়াত। কোনও কিছু চোখ তুলে দেখার অবকাশ হয়নি। এমন কি বিয়ে করে
ফেলেছি সেটাও তেমন সিরিয়াসলি নিইনি। জীবনের প্রকৃত দুর্দশা তখন শুরু হয় যখন দাম্পত্যজীবন শুরু হয়। স্বামীকে পড়ানো, তার হাজার
ফরমায়েস পূরণ করা তখন ধ্যান-জ্ঞান। যে মানুষটিকে একদা সন্তানের মতো দায়িত্ব নিয়ে
প্রতিপালন করেছিলাম, সে কখনো বদলে যাবে বা তার নিঃশ্বাস কখনো গায়ের কাছে এসে পড়লে তা বিষের মতো আক্রমণ করবে আমায়, তা বুঝিনি
সেদিন। একটু একটু করে বদলেছে সব বিশ্বাস, চেতনার সব রং। প্রেমিকের আবার গোপন অঙ্গে হাত দিয়ে পরীক্ষা
করা যে পুরনো স্বামীর সাথে সহবাস করেছি
কিনা, মদের নেশা ছেড়েছি বলে অভিনয়
করা, যাবতীয় তিক্ততা মাথা তুললে নিজেকেই খুব অশুদ্ধ মনে হয়। এ
জীবনের প্রতি বিদ্বেষ জাগে। পুরুষ নির্বাচনে আমরা মেয়েরা বুঝি খুব কম সফল হই! তবু
পরাস্ত হই না!
এখনো দেখি আমাদের প্রাক্তন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্লক করে
রাখে। কারণটা এত তুচ্ছ যে করুণা হয়। একদা তারা ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে সাড়া না
পেয়ে এদিকের নমনীয়তার আশা ছাড়ে। বর্তমান সঙ্গিনীকে নিয়ে যাবতীয় ছবি পোষ্ট করে
নিজেদের ধোয়া তুলসীপাতা প্রমাণের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে। সবচেয়ে মজার কথা একদা কলেজ
জীবনে যারা এই প্রেম খেলার বিরোধীতা করেছিল তারা গিয়ে টাইমলাইনে লেখে ‘নাইস জোড়ি’!
এই হিপোক্রেসি বন্ধুদের মানায়, জীবন থেকে তাই শিখেছি। কোনো অসৎ লোকের শাস্তি হতে দেখিনি, বরং ভালো মানুষকে পুড়তে দেখেছি চোখের সামনে। মিথ্যার আশ্রয়
নিয়ে যে ছেলে সম্পর্ক ভাঙ্গে, মানুষের সাথে
প্রতারণা করে, তার পাশে পরিচিতরা কেমন যেন লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। এদের
দ্বিচারিতায় ভাষা হারায়। আজ আর মানুষের সঙ্গ ভালো লাগে না আমার। এমন প্রতারক বুঝি
আর কোনও সামাজিক জীব হয় না! মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ, কিন্তু খারাপ মানুষকে
ভরসা করাও হয়তো পাপ। হয়তো আমার দুর্ভাগ্য
আমার ললাট লিখন ছিল এই অভিজ্ঞতা। এতটাই ‘আনায়াভোয়ডেবেল’ ছিল তা, যা আমি কিছুতেই
পেরোতে পারিনি। পচা শামুকেই পা কেটেছে বারবার।
মন খারাপের ছায়ায় দীর্ঘ জীবনের
লালন। কোথাও কোনো রোদের রেখাটুকু নেই। মরুভূমিতে একবিন্দু জলের পিপাসা জীবনভোর, তা
অধরাই থাকে। মেয়েরা পুরুষকে ভালোবেসে
পোশাক বদলায়, মার খায়, বোরখা পড়ে, সমঝোতা করে, কিন্তু মরে একবুক নিঃস্বতা নিয়ে। ঘন কালো অন্ধকারের মতো
কবরস্থানে প্রেম লুকিয়ে রাখে, দিনরাত মনের
গহিনে চলে দেবতার আরাধনা, মূর্তির
নিত্য অধিষ্ঠান। কিন্তু আখেরে কিছুই হাতে আসে না তার। এক অলৌকিক সতীত্বের সন্ধানে
ও তা প্রাপ্তির এক অমোঘ মহানুভবতার ডুবসাগরে সে একদিন হারিয়ে যায়। সেই ট্র্যাডিশন
সমানে চলছে!
চমৎকার! মেয়েরা বদলে যাবে খেলতে শিখবে....
উত্তরমুছুন