কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ২২ জুলাই, ২০১৭

অলোকপর্ণা

ধারাবাহিক উপন্যাস





তাহার নামটি


(দশ)  

হাঁপাতে হাঁপাতে রাজীবের চোখ পড়ল ঘড়ির উপর, ছোট কাঁটাটা দুটোর ঘরে ঢুকছে। দুটোর ঘরে চোখ রেখেই রাজীব বেগ বাড়িয়ে দিল, আর ঠিক তখনই ব্যালকনিতে ভারী কিছু পড়ার আওয়াজ। ভিতর থেকে হাত বের করে আনতে আনতেই দরজা খুলে গেল।
রাজীবকে টেবিল থেকে নড়তে না দিয়েই, ঘরে ঢুকে এলো রঞ্জনা, এগিয়ে গেল বইয়ের তাকের দিকে, যেন সে রাজীবকে দেখেইনি। বইয়ের তাকে অনেকক্ষণ  ধরে বিভিন্ন বই ঘেঁটেও সে সন্তুষ্ট হলো না। এদিক ওদিক তাকিয়ে আবার বইয়ের  তাকে কিছু একটা খুঁজতে শুরু করল।
“এই যে, এখানে...”, চেয়ারে বসে বসেই টেবিল থেকে টি. পি. মাইতি তুলে ধরল রাজীব।
 বিনা বাক্যে রাজীবের হাত থেকে বইটা নিয়ে রঞ্জনা আবার এগিয়ে গেল ব্যালকনির দরজার দিকে।
“তুই আমার সাথে কথা বলিস না কেন জিজি?” রাজীব তাকিয়ে থাকল রঞ্জনার দিকে, উত্তরের অপেক্ষায়।
রঞ্জনা একটু থমকে দাঁড়াল, তারপর দরজা খুলে ব্যালকনিতে গিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিল।
চেয়ারে বসে থাকা রাজীব টের পেল রঞ্জনা চলে যাচ্ছে। আগে কখনও তার নিজেকে এত পরাজিত মনে হয়নি।


“ঘুম হয়েছে ঠিক মতো?”, ঋতমের মায়ের গলা শুনে পাশ ফিরল রঞ্জনা।  
মহিলা হাসিমুখে চায়ের কাপ হাতে তার ঠিক সামনেই দাঁড়িয়ে আছেন। অনিচ্ছাসত্ত্বেও আস্তে আস্তে উঠে বসল রঞ্জনা, “সুপ্রভাত,” অল্প হেসে বলল।
“প্রভাত শেষ, সাড়ে বারোটা বাজে”, হেসে উঠলেন ঋতমের মা।
“এতক্ষণ ঘুমোলাম!”
“হ্যাঁ, আমি বাড়ি এসে দেখি, তুমি, যাকে বলে, ঘুমিয়ে কাদা একেবারে, হা হা!”
এত বেশি হাসিখুশি মানুষ রঞ্জনা পছন্দ করে না, তবু ভদ্রতাবশত সেও হাসল।
“ঋতম বেরিয়ে গিয়েছে নিশ্চয়ই?”
“হ্যাঁ, ওর তো এগারোটা থেকে চেম্বার খোলে।”
“ও,” চায়ে চুমুক দেয় রঞ্জনা। অনীতা ততক্ষণে বিছানার একপাশে বসে  পড়েছেন।
“কাকিমা, এরকম দুম করে এসে পড়েছি, আমার যাওয়ার মতো আর কোনো জায়গা মাথায় আসছিল না।”
“পাগল মেয়ে”, রঞ্জনার মাথায় হাত বুলিয়ে হাসলেন অনীতা।

অনেকদিন বাদে, অনেক অনেক দিন বাদে, রঞ্জনার কান্না পেল। কোনো রাগ  থেকে নয়, নিখাদ দুঃখ থেকে কান্না পেল। চায়ের সাথে সে গিলে ফেলল কান্নাটাকে।
“মা জানেন?”
“না।”
“চিন্তা করছেন তো, এরকম করতে নেই। তুমি যদি বলো আমি ওনাকে ফোন  করে বলে দিচ্ছি যে এখানে আছো।”
“না কাকিমা, দরকার নেই। আমি আজই চলে যাবো।”
“বাড়ি?”
“না, অন্য কোথাও...”, মাথা নিচু করে সাদা নীল চায়ের কাপ দেখতে থাকে রঞ্জনা।
“কোথাও যেতে হবে না। তোমার যতদিন খুশি, থাকো, আমরা কেউ অখুশি হবো না, তবে শর্ত আছে একটা”, হেসে বললেন অনীতা, “মাঝে মাঝে তোমার কবিতা শোনবার জন্য বিরক্ত করা হলে মেনে নিতে হবে।”
“কাকিমা, ...ঋতম আর আমি কিন্তু বিয়ে করছি না।”
অনীতা কিছুক্ষণ রঞ্জনার দিকে তাকিয়ে থাকলেন, দীর্ঘশ্বাস গোপন করে হেসে বললেন, “আমি জানি রঞ্জনা। না, ঋতম কিছু বলেনি আমায়। তোমাদের একসাথে দেখতে পারলে ভালো লাগত। এখন, মায়া লাগবে। নাও, বকবক  করতে করতে চা ঠাণ্ডা হয়ে গেল, উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও, স্নানটাও সেরে ফেল, বুঝলে, আমি যাই, তোমার স্নানের বন্দোবস্ত করি”। অনীতা উঠে যান।
বালিশের তলায় টি. পি. মাইতির উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে রঞ্জনা দেওয়ালের দিকে তাকায়। একটা টিকটিকি ঠিক তারই দিকে, অনুভূতিহীন চেয়ে  আছে, তার সাথে চোখাচোখি হয়ে যায়।

পিমের দিকে একফালি বাঁধাকপি এগিয়ে দিলেন কাবেরী। কচকচ চিবোতে  থাকল পিম। কাল বিকেল থেকে মেয়ে বাইরে, কোনো বন্ধুর বাড়ি ফোন করতে সাহস করছেন না কাবেরী, যদি কোথাও খোঁজ না মেলে! পিমকে আরও এক ফালি বাঁধাকপি এগিয়ে দেন কাবেরী। প্রাণীটা কোনো কথা বলে না। চুপচাপ খেয়ে চলে। ঘরে তার মোবাইল বেজে উঠলে, কাবেরী বলে ওঠেন, “যাই!”
“কাকিমা আমি ঋতম বলছি।”
“ও, ঋতম, বাবা রঞ্জনা তো বাড়ি নেই!”
“হ্যাঁ কাকিমা আমি জানি, ও কাল সন্ধ্যে থেকে আমাদের বাড়িতে আছে, আপনি চিন্তা করবেন না।”
“দ্যাকো কী কান্ড, বলা নেই কওয়া নেই, দুমদাম বাড়ি ছেড়ে কেউ যায় এমন! ছি  ছি, তোমার মা কি ভাবচেন বলো তো!”
“না না, কাকিমা, কোনো অসুবিধা নেই, মা বরং খুশিই হয়েছে ও এসেছে শুনে,  একাই থাকে তো সারাদিন।”
“ও কিচু বলেচে, কেন বাড়ি ছাড়ল?”
“না কাকিমা, আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, বলেনি।”
“আচ্চা...”, কাবেরী আশ্বস্ত হন।
“আপনি ভাববেন না, এখন মেজাজ খারাপ আছে, কদিন বাদে নিজেই ফিরে আসবে।”
“হ্যাঁ, যাবেটা কোতায়, ফিরবে তো বটেই!”
ঋতম কিছু বলে না।
“মাজখান থেকে তোমাদের হ্যাপা পোয়াতে হচ্চে!”
“ওভাবে ভাবি না কাকিমা।”
“ঋতম, একটা কতা জিজ্ঞেস করব?”
“হ্যাঁ কাকিমা বলুন!”
“বিয়ের ব্যাপারে ও কিচু বলেচে তোমায়?”
“কাকিমা... আমরা বিয়ে করছি না। না ওর দোষ নয়, মানে কারোরই দোষ নয়, আমরা ভালো বন্ধু, এইই!”
“ও, ভালো থেকো বাবা, আমি রাকি, সব কাজ পড়ে আচে”, তাড়াতাড়ি ফোন কেটে দেন কাবেরী। হঠাৎ কী কারণে যেন তাঁর ভীষণ কান্না পেতে থাকে। জিজি-  টোটোর বাবা লোকটার উপর অভিমানে কি? বুঝতে পারেন না কাবেরী, দেখেন পিম তাঁর পায়ের কাছে এসে বসে আছে।




টপটা খুলে ফেলে গরিমা অঞ্জনের কোমরে হাত রেখে অঞ্জনের খুব কাছে চলে আসে। গরিমার নিঃশ্বাসে অঞ্জনের গরম লাগতে থাকে। গরিমা অঞ্জনের গেঞ্জিটা খুলে ফেলে দেয়। অঞ্জন ঘামতে লাগে। গরিমা অল্প হেসে ওঠে।
“হাসছিস কেন?”
“দেখ, তোর সারা গায়ে কাঁটা লেগে আছে।”
খেয়াল হতে ভীষণ লজ্জা করে অঞ্জনের। “হ্যাঁ, তাতে কী?”
“কিছু না” বলে গরিমা অঞ্জনকে জড়িয়ে ধরে তার গলায় চুমু খেতে থাকে।
শক্ত হতে হতেও অঞ্জন সরিয়ে দেয় গরিমাকে।
“কী হলো?”
“ইয়ে, মানে, আজকে একটু অন্যরকম করবি?”
ভ্রূ কুঁচকে গরিমা তাকায় অঞ্জনের দিকে, “অন্যরকম? আমি কিন্তু ওরাল করব না।”
“না না, ওরাল নয়, তুই ইয়ে, মাস্টারবেট করিস?”
“মাস্টারবেট! হঠাৎ?”
“মানে, ফিঙ্গারিং?”
“হ্যাঁ, মাঝে মাঝে, কেন?”
“করবি?”
“তোর সামনে!”
“অসুবিধা হলে থাক...”
“তুই সত্যি খুব আজব আছিস কিন্তু অঞ্জন!” গরিমা প্যান্ট খুলে বিছানায় গিয়ে  বসে।
অঞ্জন ঘরের আলো নিভিয়ে দিয়ে অন্ধকার করে ফেলে ঘরটাকে। দেওয়ালের  দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “নাইট ল্যাম্পটা জ্বলে?”
“হ্যাঁ।”  
“স্যুইচ কোনটা?”
“উপরে ডানদিক থেকে তিন নম্বর।”
সারা ঘর লাল আলোয় ভরে যায়। অঞ্জন গরিমার দিকে ফিরে বলে, “শুরু কর!”
“পারভা-র্ট” বলে হেসে ওঠে গরিমা। হাত চলতে শুরু করায় তার গলা কেঁপে  ওঠে অল্প।
লাল আলোয় অঞ্জন টের পায়, সাপটা নড়ছে, অল্প অল্প করে। অঞ্জনের সারা শরীর আবার অবশ হয়ে আসে। আরামে চোখ বুজে ফেলে সে। নিজের অজান্তেই অস্ফূটে বলে ওঠে, “রঞ্জনা!”  
চমকে ওঠে অঞ্জন। রঞ্জনা! রাজীবের দিদি! সে... এখানে... কেন! সব কিছু গুলিয়ে যায় অঞ্জনের।
“অঞ্জন...” বিছানায় ছটফট করতে থাকা সাপটা ডেকে ওঠে অঞ্জনকে।
চটপট গেঞ্জিটা গায়ে গলিয়ে অঞ্জন বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। পিছনে সাপটার আর্তনাদ শোনা যেতে থাকে।

(ক্রমশ)


2 কমেন্টস্: