কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শুক্রবার, ২২ জুলাই, ২০১৬

অলোকপর্ণা

ইস্টেশান


“পাপ্পু দেখো মাছরাঙা!”

সুমন বাইরে আঙুল তুলে দেখাতেই পাপ্পু ঝুঁকে পড়ে জানালার ওপর। সাথে সাথে অলি বলে ওঠে, “কী করবে ও মাছরাঙা দেখে? কী লাভ!”
পাপ্পু উত্তরের অপেক্ষায় সুমনের দিকে ফেরে, পাপ্পুর মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের ভিতরে ভিতরে তৈরি করা উত্তরটা গিলে ফেলে সুমন। অত সুন্দর মাছরাঙা, তার পক্ষে জবাবটা খুবই বেশি রকমের পার্থিব। সুমন অপ্রস্তুত হাসে পাপ্পুর দিকে তাকিয়ে। ট্রেন ছেড়ে দেয়।
ট্রেন চললে অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটে বাইরে। যেসব গাছ, রাস্তা, মানুষ, জঙ্গল, ক্ষেত কখনও আগে দেখা যায়নি, সব দেখা যায়, তাও বিনামূল্যে। অবাক হয়ে জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে পাপ্পু। নিজে নিজে চলে যাচ্ছে সব গাছপালা, কারেন্টের তার, বন্ধু রেললাইন। সুমন সস্নেহে পাপ্পুকে দেখে। আড়চোখে সুমন আর পাপ্পুকে দেখতে দেখতে ম্যাগাজিনের পাতা ওলটায় অলি। কিছুক্ষণ পর বলে, “সুগতকে বাড়ির চাবিটা দিয়ে এসেছিলে তো? নয়তো কমলামাসি কাজ করতে আসতে পারবে না
সুমনের মনে পড়ে না, সুগতকে ঘরের চাবি দেওয়া হয়েছিল কি না। অলিকে লুকিয়ে প্যান্টের পকেটে হাত রাখতেই সুমন টের পায় চাবিটা সাথেই থেকে গেছে।
“বাবা, পাহাড়! বাবা, পাহাড়!” অনেক দূরে একটা টিলা দেখে আনন্দে জ্বলজ্বল করে ওঠে পাপ্পু।
অলি বলে, “এবার ফিরে গিয়ে এল আই সি-র টাকাটা দিতে হবে। মনে থাকে যেন!
পাপ্পু আবার জবাবের আশায় সুমনের দিকে তাকায়। সুমন ভাবে পাপ্পুকে শুধরে দিতে জানাবে যে ওটা পাহাড় নয়, কিন্তু তারপরেই ভাবে, কী আসে যায়, যদি ওই টিলাটাকে পাপ্পুর পাহাড় বলেই মনে হয়!
জবাবের অপেক্ষা না করে অলি ম্যাগাজিনের পাতা ওলটায়।
ট্রেনের মধ্যে হঠাৎ বাউল গান শোনা যায়। পাপ্পু জানালা ছেড়ে কামরার মধ্যে উঁকি দিয়ে দেখে, “বাবা বাউল!”
সাথে সাথে এক ভিখারি এসে দাঁড়ায় তাদের সিটের সামনে, মাটির সরা হাতে।
সুমন পার্স বের করার আগেই অলি বলে দেয়, “মাফ করো বাবা!” ভিখারিটা অন্য সিটের দিকে চলে যায়। পাপ্পু উঁকি দিয়ে তার চলে যাওয়া দেখে আবার জানালায় এসে বসে। ম্যাগাজিনটা সিটের উপর রেখে অলি উঠে দাঁড়ায়, আড় ভেঙে বলে, “আমি আসছি ওয়াশরুম থেকে।”
অলি চলে যেতে সুমন জানালায় চোখ রাখে। আকাশে এখন নানা আকারের মেঘ। “পাপ্পু দেখ, জিরাফ!”
“কই, কই!” সুমনের আঙুল অনুসরণ করে পাপ্পু সহজেই মেঘের জিরাফটা খুঁজে পায়। পাপ্পু হাসিমুখে সুমনের দিকে তাকায়।
“বাবা, তুমি যে এগুলো দেখতে পাও, মা তো পায় না! তুমি কি ম্যাজিশিয়ান?”
সুমন হাসে পাপ্পুর দিকে তাকিয়ে। ট্রেনটা থেমে যায়। জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে সুমন  দেখে একটা অজানা একা স্টেশান এসে দাঁড়িয়েছে তাদের পাশে। হঠাৎ কি মনে হতেই সুমন বলে, “পাপ্পু আয়!”
সুমনের হাত ধরে স্টেশানে নেমে আসে পাপ্পু। প্ল্যাটফর্মে তাদের সামনে তখন হেঁটে যাচ্ছে লম্বা গলার জিরাফ। পাপ্পুর হাতে কোথা থেকে যেন উড়ে এসে বসল সেই মাছরাঙাটা। সুমন হাত তুলে পাপ্পুকে দেখালো, স্টেশানের পাশে যে বটগাছটা ছিল  তার পাতাগুলো বদলে গিয়ে বেলুন হয়ে যাচ্ছে। সিগনাল বদলে যেতে ট্রেন চলতে শুরু করে। অলি ফিরে আসে সিটে। জানালার ঠিক বাইরেই দাঁড়িয়ে আছে সুমন আর পাপ্পু, ট্রেনের দিকে তারা দুজনেই হাত নাড়ায়, হাসিমুখে।

তাদের দিকে তাকিয়ে, জানালার ভিতরে অলির পাশে বসা সুমন, সুমনের পাশে বসা পাপ্পু প্রাণপণে হাত নাড়াতে থাকে। 

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন