পুজোর বুলেটিন
আজ দশমী। এবার আমাদের পাড়ার পুজোর থিম ছিল লাইভ ঠাকুর। মোড়ের
মিষ্টির দোকানের ময়রা হয়েছিল গণেশ,
বলিউডের স্বপ্নে বিভোর ঋত্বিক হয়েছিল কার্তিক, পাড়ার হার্টথ্রব চিনির বোন মিনি সরস্বতী এবং সত্যেনদার মেয়ে পম্পি লক্ষ্মী। স্বভাবে যতই নরম হোক দশাসই চেহারার নিতাই নাপিতকে মহিষাসুর মানিয়েছিল বেশ, সেলাই-দিদিমণি সুমনাদির পেল্লায় কলেবরের ভার বইতে হতো কিনা! ‘মাটির পোতিমা দেকে-ফেকে লোকে বোর মারছে। মাস-কানেক্ট চাই মামা!’ তা সত্যেনদার আইডিয়াটা ভালোই ছিল, অন্তত ষষ্ঠী থেকে অষ্টমী। ব্যাগড়াটা বাধে নবমীর শেষ বাজারে।
বলিউডের স্বপ্নে বিভোর ঋত্বিক হয়েছিল কার্তিক, পাড়ার হার্টথ্রব চিনির বোন মিনি সরস্বতী এবং সত্যেনদার মেয়ে পম্পি লক্ষ্মী। স্বভাবে যতই নরম হোক দশাসই চেহারার নিতাই নাপিতকে মহিষাসুর মানিয়েছিল বেশ, সেলাই-দিদিমণি সুমনাদির পেল্লায় কলেবরের ভার বইতে হতো কিনা! ‘মাটির পোতিমা দেকে-ফেকে লোকে বোর মারছে। মাস-কানেক্ট চাই মামা!’ তা সত্যেনদার আইডিয়াটা ভালোই ছিল, অন্তত ষষ্ঠী থেকে অষ্টমী। ব্যাগড়াটা বাধে নবমীর শেষ বাজারে।
বিকট আওয়াজে সবাই মন্ডপে তাকিয়ে দেখে, গণেশের শুঁড় ধরে একটা বছর পাঁচেকের বাচ্চা টোটাল ঝুলন্ত। মিত্তিরদের ছোটছেলে
জ্যোতিষ্ক, ওরফে বুলেট। নলেন ময়রার আর্ত চিৎকারের কড়াপাক শুঁড়ের সুড়ঙ্গপথে যত বিকৃত
হচ্ছে, বুলেট ততই মজায় দুলছে আর হুকুম দিচ্ছে – ‘আরেকবার হাতির ডাক, আরেকবার! নইলে বলে দেব তুই লাড্ডুচোর।’ পম্পি সদ্য ব্রেকআপে বিরহিণী। মোবাইলে তাই ঘনঘন মেলোড্রামায় জবজবে সান্ত্বনা সংকীর্তন। গণেশের চিৎকার, বুলেটের খিলখিল, পম্পির বিরহী গোত্রের রিংটোন, সব কুণ্ডলী পাকিয়ে একেবারে
শব্দকল্পদ্রুম। সত্যেনদা মাইকে একটা মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছিল – ‘বুলেট নেমে এসো, গণেশের
শুঁড় ছেড়ে দাও! এই লক্ষ্মী মোবাইল অফ...
বুলেটবাবা চকলেট খাবে?’ প্লাস্টিকের সাপটা বারবার নিতাইয়ের ঘাড় থেকে হড়কাচ্ছিল।
ঝুলন্ত বুলেটের সেদিকে চোখ পড়তেই হাত বাড়িয়ে লাফ। বুলেটকান্তি মংলি হতে পারেনি, অতএব ল্যান্ডিং
আফ্রিকার রাজার ওপর। সুমনাদির ভারসাম্যের বারোটা
বাজিয়ে মরচেধরা ত্রিশূল যেই নিতাইয়ের নুনছালে জিভ ঠেকিয়েছে, ‘রক্ত! ব্-ব্লাড! সেপটিক... আআঁরক্ৎ!’ মহিষাসুরের মূর্ছায়
জনতার হাততালি - বুলেট ভ্যাবাচ্যাকা। এসব জাগতিক জগঝম্পে অমনোযোগী ঋত্বিক চিনির
হাত দেখছিল। মেয়েদের মনভোলানো ঢপ মারতে ওস্তাদ। ওদিকে বুলেট যে কখন গতি নিয়েছে ঠিক
বুঝে উঠতে পারেনি। টনক নড়ে যখন লক্ষ্যভেদী বুলেটের পায়ে জড়িয়ে তার নীলাম্বরী ধুতি
হাওয়া-হাওয়াই। পাজি ছোকরাদের মোবাইলে অমনি সটাসট কার্তিকের লাল বারমুডার অ্যালবাম
তৈরি। উদ্বাহু সত্যেনদা তখন মন্ডপময় দৌড়চ্ছেন, যেন সত্যেন বোল্ট!
নবমীর কেলেঙ্কারি লগ্নেই যে জয়বাংলা চ্যানেল
আমাদের পাড়ায় আসবে, কে জানত! কাল থেকে গোটা
বাংলা হামলে দেখছে বুলেটের বুলেটিন, আট থেকে আশির লাইকে ইন্টারনেট সরগরম। ‘পুজোর
পাঁচালি’ জিতেছে আমাদের পাড়াই। তাই আজ ফিস্টি - পোলাও, মটন, চাটনি। সত্যেনদার হাতে ট্রফি, বুলেটের মুখে ললিপপ...
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন