দিকচক্রবালে
উড়িয়ে দিলাম
(পত্র-কবিতার যৌথ যাপন)
স্বপ্নের সাথে দেখা
হয় বলে নিয়তি ও পাশার এই জীবন এত মধুর। হারাব জেনেই আমরা হারানোর আগে পর্যন্ত আঁকড়ে ধরি নশ্বর। কত বিলাপের পর বিলাপে বেড়ে গেছে নদীর জল, কত জলে ভেসে গেছে চাঁদ সওদাগরের
ডিঙ্গা। ফিরবে কি ফিরবে না জেনে অন্ধকারে দাওয়ায় কেঁদে গেছেন সন্তান
হারানো মা। আমি তো সব ভুলে দাঁড়াই রোদে যেখানে ছায়া পড়েছে তোমার, সেখানে। খুঁজতে থাকি, খুঁজতে থাকি। যেন কানামাছি খেলা! কানামাছি খেলা আমাকে শব্দে - খেলিয়ে
নেয়... আমি শব্দ আঁকি অরণ্য, শব্দ আঁকি হারানো দিনের শব্দ
আঁকি। যেখানে শব্দ আর শব্দে আর শব্দে আমার ত্রিভুবন।
চেনা হাফডজন পুরুষের
কোলাজে তুমি ঠিক পড় না।
চোদ্দআনা সিনেমাটিক
বাবু রঙিনজলের মেহেফিলে
ডিগবাজি খাওয়া চোখে
তুলে নিচ্ছে
আমার যন্ত্রমুগ্ধযৌন
১৪ মেগাপিক্সেল ‘অ্যাপেলে’।
নিম্নে ধাবমান
শুক্রকীটের আক্রোশ নিয়েই কি ভাববে
আমার অদ্বিতীয়
পুরুষবাজ? তবে কি
মরফিন-ঘুমে তলিয়ে
থাকা ভুঁইফোড় অতিরঞ্জিত সময়ে
বিষাক্ত জেলিফিশের
চেয়ে রমণীর শুঁড় আনন্দদায়ক?
আমিও জেলিফিশ খাওয়া
কুমিরদাঁত শান দিয়ে
ডাকব অরণ্য, এসো পেতে রেখেছি
পুরুষের অন্তিমশয্যা, যে জমিনে ফলিয়ে নাও সোনাদানা
আর নারীশরীরী
সমুদ্রসৌকর্য নিয়ে সৃষ্টি কর সাহিত্য।
পুরুষের জ্বলন্ত
সিগারের ওপর চিত হয়ে শুয়ে আছি
পটাশিয়াম সাইনায়েড
নেই নারী গুহা-গহ্বরে
স্তনে, যোনিতে বাজছে পিয়ানো রিডের
গিমিক
ত্রিশলক্ষ কীট
পাঠিয়ে দাও আমার সভ্যতা পালিত ক্ষেতে
আমিও ভ্যানিসিং
ম্যাথডের অঙ্ক জানি
কীটদের নিহত ভবিষ্যৎ
রেখেছি জন্মনিরোধক পিলে।
পৃথিবীর অদ্ভুত
একচক্ষু মাকড়শা জাল বুনে যাচ্ছে
নারীর মাথায় দিকে
আদিম মত্ত কামনায়
একটা গোটা ‘জনি
ওয়াকর’ মুখে ঢেলে এগিয়ে আসছে
যোনি-রক্তখোর
মহাজোঁক,
র্যাটেল স্নেকের
বিষাক্ত ধ্বনি নিয়ে
দুই ঠ্যাঙের ফাঁকের
মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে বিশ্বশান্তির পতাকা
প্যালেস্টাইনের
হাভাতে শিশুরা গর্ভ থেকে চিৎকার করছে-
মা, আমাকে পৃথিবীতে এনো না
আমাকে জরায়ুর মধ্যেই
হত্যা করতে পারতে মহাসৃষ্টি!
শুধু যুদ্ধ কর নারী
শরীরের অভয়ারণ্যে
নিহত বর্তমান নিয়েই
নারীর অন্তিম সুর-শয্যা।
আমার জীবন্ত শরীরে
শবপোকায় অবৈধ রেণুসম্ভোগে
স্যাঙাত থেমো না, মিনিটে ১২০ হার্টবিট তোমার
বুকে
৩৬০ ডিগ্রি
নারী-গুহার দিকে একপাল ঘেও কুকুর লেলিয়ে
ধ্বজভঙ্গ জানে না
কোন হাতে মাই কোন হাতে থাকে নিমাই
আমিও আমার শরীর
একান্নপীঠ তীর্থ করার জন্য
ব্লাউজহীন
নীলসৌন্দর্যের দিকে রাখব না শেষশ্বাস!
আমাকে গ্রহণ করতে
কষ্ট হয় তোমার প্রেম?
গলার কাছে জমে আছে
অমিতব্যয়ী শ্বাসকষ্ট
ইনসুলিন নির্ভর
জলসোহাগের সঙ্গমে পাঁচটা ঠোঁট
পাঁচটা নামাজী বা
পাঁচটা পুরোহিত বা পাঁচটা বিশপ
যখন ধীরে ধীরে এঁকে
দিচ্ছিল লিঙ্গকলার মধ্যে মৃতলক্ষ্মীর মুখ
তখন বাতাসের বেগ
যথারীতি স্বাভাবিক...
বৈদিক যজ্ঞ থেকে উঠে
এসেছি আমি, নারী
চন্দ্রের ঘরে ষোলআনা
অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে শিল্পের সমাধান, নারী
অথচ তোমরা, তোমরা ধর্ষিতা শব্দ আনলে,
গণধর্ষণ আনলে
আর শিল্প সাহিত্যে
ফুটিয়ে তুললে ধর্ষণশিল্প!
সাইজ ৩৪ ক্যাপের
খোলে গণনাতীত মনু-পুরুষের লালা
লালা শেষে
হস্তমৈথুনঅঙ্গে ক্যাথিডার মালা পরে
হাসপাতালের
চির-নীরোগ নবোদয়!
২০১৫ সালকে স্মরণীয়
প্রেমের মাইলফলক বানাতে চাও?
চাও কি আত্মহত্যা
করি?
মা পঞ্চাশ অধিবর্ষ
ঘুমিয়ে রয়েছে পঞ্চাশ অধিবর্ষ পাটক্ষেতে শুয়ে
ঘুমন্ত শিরদাঁড়ার
উপর দিয়ে খেলে গেছে ফসল
হাজার-লক্ষ
যুগসন্ধিক্ষণের শিশুরা কলরোলে হারিয়ে গেছে
এক্স-ওয়াই ফ্যাক্টরে
তোমার আগের
প্রেমিকারা কোথায় আছে জেনেছ কি?
হাজার-হাজার বেদ-উপনিষদ
শ্লোক জুড়ে সুস্থতা
হাজার-হাজার
তীর্থংকর বর্ণমালা
যা শুনিয়ে গেছে
জীবতত্ত্বে
সেসব অস্বীকার করে ‘এ’-ছাপ ময়দামাখা নরমের দিকে,
স্থবিরতা, শারীরিক নয় বলি যদি মানসিক?
মা বলেছিলেন
তুলসীগাছ পুঁতে দিও উঠোনের কোণে
তুলসী নারী পবিত্রতা
তুলসীতলায় প্রদীপ
জ্বালাতে জ্বালাতে
অসতী তুলসী হয়ে
গেলাম মা, যেদিন হাজার জোড়া
গণবুট পিষে দিল দুশো
ছয়টা হাড়ের কঙ্কাল
সেদিন তুমি কোথায়
ছিলে পুরুষ? কোথায়
ছিলে অরণ্য
কোন বিশল্যকরণী নিয়ে
দাঁড়িয়েছিল প্রেম? কোন
শিল্প
আমার ভাঙা বুকের
কাছে হয়েছিল অর্জুন সারথি?
প্রেম ক্রমশ বাজার
দরের চেয়েও ভয়ানক সস্তা হয়ে যাচ্ছে
রজঃস্বলা পৃথিবীর
স্তন, যোনি, নাভি, ঊরু, জঙ্ঘা
শিল্প সাহিত্য
ললিতকলায় ধর্ষণ শিল্পে হয়ে এলে
সোনালী মিত্র, হ্যাঁ সোনালী মিত্র হাজার
ধর্ষিতা নারীর প্রতিনিধি
হয়ে তার অশ্লীল ও
এডাল্ট কবিতায় বারবার বলবে
ধর্ষণের চেয়ে কোনো
এডাল্ট শব্দ নেই
ধর্ষণের চেয়ে অশ্লীল
কোনো শব্দ নেই অভিধানে।
সানগ্লাস চোখে যারা
পৃথিবীর শিল্পের কারবারি, যারা
নারীর ঊরুজঙ্ঘা ঠোঁটের
উপপাদ্যে নিজের অব্যক্ত কাম
ফুটিয়ে তোলেন
তথাকথিত নারীর শারীরিক কষ্ট বর্ণনায়
তাদের সুখের জন্য
সোনালী মিত্র দায়ী নয়।
নারীর পায়ের ওপর
কোমর কোমরের ওপর স্তন আর
সবার ওপর একটা মাথা
আছে এই সত্যর সামনে
দ্বিধাহীন বলি-
সোনালী মিত্র অশ্লীল
দিল্লী, জুলাই ১১ জুলাই ২০১৫
প্রিয় অরণ্য
জীবনে প্রথমবার
তোমায় চিঠি লিখতে বসেছি। কালি-কলমের সঙ্গে সখ্যতা থাকলেও কোনোদিন তেমন কোনো চরিত্র
আসে নি যে, নৈসর্গিক
চিত্রমালা অক্ষরের মালায় সাজিয়ে হৃদয় উজাগর করে পাঠিয়ে দেব চক্রবালের ঠিকানায়। একটা বছর বড় কম সময় নয়... (যদিও স্থান কাল পাত্র ভেদে একটা বছর হয়তো
কিছুই নয়) তাপে- উত্তাপে কিছু অনুতাপে ভালোবাসা
যতটা পথ পেরিয়েছিল চাকার ঘূর্ণনে, সেই পথ হারিয়ে ফেলব, আমরা ভাবিনি বল! সূর্য
নিদিষ্ট গড়িয়ে যাওয়া মুহূর্তের বুকে মাথা রেখে ফিরে দেখার ইচ্ছেরা তালের শাঁসের মতো
এত মিষ্টি কেউ কি জানত? এই মুহূর্তে ঘড়ির কাঁটা রাত তিনটে চোদ্দ ছুঁয়ে আছে,
আমিও কি ওই কাঁটার মতোই ছুঁয়ে আছি বিশেষ কো্নো পুরুষের শ্বাসঘাত!
অথচ দেখ, সময়কে ভেঙে সময় গড়ে ওঠে, অথচ দেখ, নদীকে ভেঙে
গড়ে ওঠে নদী, আর ঋতুশেষে পাতার সংসারে আসে নতুন পাতা। যেন সময়ের কিছুই হারাইনি, যা হারানো দেখছি সেটা চোখের ভ্রম।
আঁকাবাঁকা সরণি ধরে
ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে বাষ্পচোখে জীবনের সেই পথ খুঁজতে চাইলাম, যেখানে একটা পথ আরেকটা পথের
বুকে উঠে আসে। পৌঁছে যাওয়ার পথ থাকেই, ফেরার পথটাই অদৃশ্য
মহাকালের ফন্দিতে কোনো সে বাঁকে হারিয়ে যায়... কেউ জানে না। অবশ্য তুমি পথ-এ
বিশ্বাসী নও, তুমি যখন মাথায় হাত রেখে বল -- পাগলী পথ কেন বলিস! বল সেতু, সেতু, আমার তোর
মন বাঁধনের সেতু। মনে হয় ঘুমের দেশে আছি, মনে হয় ইয়াভা
জিভের ডগায় একতাল নেশার রাহু আমাকে গিলে নিচ্ছে। দিনদিন কেমন ব্যাধিগ্রস্ত আচরণ সংগ্রহ
করছি, এই নারী, যে কোনো কিছুর বিনিময়ে তোমায়
হারাতে চায় না ভেবে ঈশ্বরের পায়ে রাখি ফুলের সোহাগ। তোমারও কি এমনটা মনের মধ্যে হয়?
ঈশ্বর তো একটা ধারণার স্বপক্ষে তোমার নৈতিক জয়, অনুভবে ধরে নিতে হয় ঈশ্বরের জীবনচর্চা। আমার বুকের যে স্থানটায় ঢিপ ঢিপ শব্দে ঐকান্তিক
টানাপড়েন চলে সেখানেই কি শুধু
তোমার অবস্থান। তবে কি তোমাকেও ঈশ্বর বলা
চলে? বলতেই পারি। ছুঁয়ে না
দেখার অস্তিত্ব তো আমার কাছে একটা স্পিরিট... একটা ইথারিজম আমার কাছে।
ছোটবেলায় বাড়ির
কাজের বিনুপিসিকে দেখতাম সারা গায়ে কেটে যাওয়া ফুলে যাওয়া স্বামী সোহাগের চিহ্ন
নিয়ে একমনে বাপির শার্টের তেল মবিলের কালি ব্রাশ দিয়ে ঘষে যাচ্ছে। ওই নির্লিপ্ত
মুখটা আজও ভাসে। গতরাত্রে নেশার ঘোরে ওর বর-এর বেদম প্রহারের আর্তনাদ উদ্ভাসিত
সূর্যের সাথে হারিয়ে যেত আমাদের বাড়ির রাস্তা ধরলে। এবং আমাদের বাড়ির লোহার বন্ধ দরজা ডিঙিয়ে
আসার সাহস না থাকায়, যিনি
গতরাত্রে সিংহ হয়ে উঠেছিলেন তিনিই পাঁচিল ধরে স্নেহ গলায় ডেকে চলেছেন, বিনু,
ও বিনু একবার শুনে যা! আমরা ওই ডাকে বুঝতুম, আবার পয়সা খসাবার ধান্দা। মাকে দেখতাম
ভাগিয়ে দিতে বিনুপিসির বরকে।
বিনুপিসি, মা, বড়
কাকিমা, ছোট কাকিমাদের একটি জিনিস খুব টানত। কপাল জুড়ে
গোলটিপ, লাল সিঁদুরের টিপ। ঠিক যেন মা দুর্গা প্রতিমা! সেই সময় বন্ধুরা যখন হিসাব কষত কেউ দিদিমণি হবে, কেউ ডাক্তার হবে, কেন জানি না এসব কিছুই হতে চাইতাম না আমি। আমি ঠিক মায়ের মতো মা হতে
চাইতাম। ঠিক আমার মায়ের মতো মা। মায়ের শাড়ি পরে ন্যাকরার পোঁটলাকে পাকিয়ে পুতুল
বানিয়ে, আঁচলের আড়ালে বুকের মধ্যে পুতুলের মুখ রেখে পৃথিবীর
অমৃত ঢালতে চাইতাম ওর মুখে, যেমন করে মা ভাই কে কোলে রেখে
অমৃত খাওয়াত লোকজনের আড়ালে। তখন বড্ড ইচ্ছে হতো, ভাইকে সরিয়ে মায়ের বুকে থাকুক
আমার ঠোঁট। ছোট থেকেই বাড়ির বড় মেয়েদের শিখে যেতে হয়,
বড় হয়ে জন্মেছ তুমি, তুমি
সকলের বড়। বড়দের আবদার থাকতে নেই, আবেশ রাখতে নেই এমন কি
কষ্টের সময় কাঁদতে হয় সকল চোখগুলোকে লুকিয়ে। দেখলাম এই সব শিখতে শিখতে মানতে মানতেই
একদিন বড় হয়ে গেলাম। এসব ছোট্টবেলার কথা
হোলির রঙের মতো ভেসে ওঠে চোখে। এখন যেমন তুমি আমার অন্যরকম নেশা, আর তখন তো নেশা বিভাজনের বোধবুদ্ধি হয়নি। যখন স্কুলে একটু
উপরের ক্লাসে উঠেছি, এক
নেশা জন্মাল, চরম নেশা জন্মাল, গল্প পড়ার নেশা। পড়ার বই-এর ভাঁজে গল্পবই লুকিয়ে পড়তাম চুপিচুপি... মা ধরতে পারলেই
বেদম প্রহার। লেখার তীব্র নেশায় মাঝেমাঝে মারটাও বেশ হজম হয়ে যেত। এখন যেমন লোক লৌকিকতা, সমাজ সংস্কৃতির পরাকাষ্ঠা
ছাড়িয়েও সাহসী হয়ে উঠতে পেরেছি বুঝতে পারি তার ভিত অনেক আগেই তৈরি হয়ে গিয়েছিল।
একবার অংকখাতায় জীবনের
প্রথম কবিতাটা লিখে ফেলেছিলাম। আজ ডাইরি ঘাঁটতে খুঁজে পেলাম।
প্রেম কথাটা ছোট
ভালোবেসে তোমার নদী
যদি প্রেমের মতোই হতো?
প্রেমের নাম দিলাম
জীবন
জলের সাথে অশ্রু
হয়েই
ভালোবাসার সাধ।
খুব আনন্দ হয়েছিল
লাইন ক’টি লিখে। তাহলে আমিও লিখতে
পারি! কিন্তু কপালে কি আর সুখ সয়! যখন অংকখাতার শেষের দিকের পাতাগুলি দিব্যি আমার
সাহিত্য চর্চার আস্তানা হয়ে উঠছে, স্যার দায়িত্ব নিয়ে মাকে বলে মার খাওয়াবার
বন্দোবস্ত করলেন। কারণ সেবার হাফইয়ার্লি পরীক্ষায় অংকে ২১ পেয়ে বাড়ির সবাইকে চমকে
দিয়েছিলাম। বিশেষ কিছু ঘটেনি এরপর। মা দরজার খিলপেটা করেছিল। এবং ‘ওয়ারনিং’
দিয়েছিল, যদি কবিত্বের ভূত মাথা থেকে না নামে খিল পিঠে ভাঙাই নয়, বিয়ে
দিয়ে দেবে আমার। (বলে রাখি, তখন আমি ক্লাস ফাইভ। আর বিয়ে
মানেই আমার কাছে বাসন মাজা, কাপড়
কাচা - মানে ওই বিনুপিসির মতো। আর ধুপধাপ বরের মার খাওয়া)। তাই যমের মতো বিয়ের নামে ভয় পেতুম। কবিতাতে ইতি টানতে বাধ্য হলুম। এখন ভাবি যদি কবিতার প্রতি প্রেম না করতুম
তবে মনে হয় সব দোষ আমার কবিতার ঘাড়ে বর্তাতো না! যাইহোক, মা মোটেই খুশি ছিল না আমার
কাব্যিপ্রেমে। মা মাথায় হাত রেখে বলত, অনেক পড়বি, নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে তোকে। আমার মতো জীবন যেন না হয়! অথচ মা দেখ, আমিও এখন ঠিক যেন তোমার ডুপ্লিকেট! পড়লাম তোমার ইচ্ছে মতোই। কিন্তু পথের রাজা তোমার পথ আর আমার পথ এক করে দিল।
বাপি, ভাইকে মাঝেমধ্যে বলতে শুনেছি,
আমার বিয়ে হয়ে গেছে, অতএব সংসারের কোনো
কিছুতেই যেন আমাকে না জড়ানো হয়। হায় রে মেয়েজীবন! শ্বশুরবাড়িতেও সেই পরের মেয়ে আর বাপের বাড়িতেও পরের ঘরের বউ।
খুব হাসি পায়। নিজেকে সেই মুসলিমদের মতো মনে হয়, যারা এ
দেশবাসী তারা পাকিস্তানে কাফের। আবার এ
দেশেও তারা অনেকে নিজেকে পরবাসী ভাবেন। কী অদ্ভুত লাগে! মনে ভাবি আগের দিনের মেয়েরা অনেক অনেক বেশি
স্বাধীনচেতা ছিলেন, তাঁরা
অনেক ক্ষমতা সম্পন্ন ছিলেন। ঠাকুরবাড়ির মেয়েদের কথাই ভাব। জ্ঞানদানন্দিনী দেবী তখনকার যুগে ডক্টরেট
করেন, কম কথা! তিনিই তো
প্রথম মেয়েদের কুচি দিয়ে শাড়ি পরা শেখান। ব্লাউজ পরাও। তখনও পর্যন্ত চল ছিল আটপৌরে
কাপড় পরার। আমরা কাদম্বরী দেবীকে নিয়ে এত কথা বলি, কিন্তু জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর মনস্বত্ব কি কোনোদিনও বিচারের চেষ্টা করেছি! শুধু দেখে গেছি তাঁর স্বার্থান্বেষী মানসিকতা।
একজন নারী কতটুকু পেলে আর কতখানি না পেলে যে তীব্র বিষ হয়ে ওঠে, সেটা আধুনিকতার পরিপ্রেক্ষিতে বিচারের দায়ভার কি
বর্তায় না বর্তমান সৃষ্টিশীল ব্যক্তিত্বদের উপর?
ভাবি আর অবাক হই।
আমাদের পশ্চিমবঙ্গ এখন অনেক আধুনিক। খোদ কলকাতায় নারী মুক্তির আন্দোলন এগিয়ে
চলেছে বিশ্বজয়ে, নারী
হয়ে উঠছে সত্যিকারের নারী। পুরুষের প্রাধান্য ছেড়ে সে এখন উন্মুক্ত পরিযায়ী। উড়ে উড়ে সুদূর। পোশাককে কোনোভাবেই যেমন দায়ী করা যায় না উত্তেজকের ভূমিকা গ্রহণের জন্য। কিন্তু একে অস্বীকারও তো করা যায় না!
ঈশ্বর আমায় সুন্দর একজোড়া বুক দিয়েছেন। মোমের গড়নের নিটোল নিখাদ মাছি পিছলানো শরীর দিয়েছেন।
শরীর শুধুই আমার। একে আমি যেমন খুশি ব্যবহার করতে পারি। ঢাকতে পারি, রাখতে
পারি, হাওয়ার সাথে পাল্লা দিয়েই আমি একে সাজাতে পারি। আর
এর ফল? মনে পড়ে দিল্লির বাসে গণধর্ষণ হওয়া দামিনী নামক
মেয়েটির মুখ? নারী স্বাধীনতা পেলেই স্বেচ্ছাচারী? বেশ মানলাম। খোট যদি দৃষ্টিতে থাকে পাপকার্য রুধিবে কে? ছোট্ট সাত
বছরের মেয়েটাকে চকলেটের লোভ দেখিয়ে যোনিতে
শুধু লিঙ্গ পুরেই ক্ষান্ত নয়, বিয়ারের বোতল জলের
প্লাস্টিক বোতলও অবলীলায় ঢুকিয়ে দিয়েছে সেখানে। হাতের কাছে যা যা মেলে সব মেয়েটির ছোট নিষ্পাপ যোনি অন্দরে। এই
মেয়েটির কী দোষ ছিল, ভাবি।
আমরা অনেক স্বাধীন। আমার দিল্লিতে ১০০টা প্রাইভেট কারের মধ্যে ৪০টা কার ড্রাইভ করে
মেয়েরা। দেখলেও ভালো লাগে। এগোচ্ছে সমাজ, এগোচ্ছি আমরা!
তোমায় লিখতে লিখতেই
বাইরে ঝমঝম বৃষ্টি নামল। খুব মেঘ ডাকছে, আজ আকাশ ভাঙার পালা। সারাদিন খুব বৃষ্টি হলো। দিল্লীতে শীতকালে টানা তিন-চারদিন বৃষ্টি
হয়। বর্ষাকালে
তেমন খুব বৃষ্টি হয় না। কিন্তু এবার যেন ব্যতিক্রম। সকালে আমার ব্যালকনির থেকে দেখছিলাম, কিছু পায়রা সামনের বাড়ির এসির উপর
গুটিসুটি মেরে বসে আছে। একে অপরের গায়ে ঠোঁট ডুবিয়ে বুঝে নিতে চাইছে সময় নামক
গদ্য। বৃষ্টিতে কবিতা এলেও চোখ অতিক্রান্ত
দূরে কোথাও, হয়তো বস্তির ন্যালাক্ষ্যাপা ছেলেটি হাত পা ছুঁড়ে ভিজে নিচ্ছে সোহাগী বৃষ্টি মুখরতায়। আবার বর্ষাতি গায়ে ছাতা মাথায় স্কুল ফেরতা
ছেলেটি মায়ের হাত ধরে জমা জল দেখেই ছুপ করে লাফ মেরে কৈশোর ভিজিয়ে
নিচ্ছে মায়ের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে।
এবার খুব ঘুম পাচ্ছে। সকাল থেকে রাত আর রাতের পরে সকাল সমস্তই তোমার ধ্যানে কেটে
যায়। ভালোবাসলে মানুষ পাগল হয়। আমি
বোধহয় সবার ঊর্ধ্বে। মেয়েদের তো প্রেমের কথা মুখে অনতে নেই। যেমন সামনে আনতে নেই শরীরের কথা। হা হা তুমি তো গত এক বছরে বুঝেছ আমার লজ্জাশরম কম। প্রেমকে
আমি প্রেমই বলি। তোমার মতো করেই। আর লিখব না, ভালো থেকো প্রিয়, অনেক অনেক লিখবে। তোমার কবিতা আমার বীজমন্ত্র, যাপন মন্ত্রও বটে। ভালোবাসা
দিলুম। রেখো প্রাণের
কাছাকাছিই...
ইতি তোমার -- যে নামে ডাকবে তুমি আমি সেভাবেই ধরা
দিই।
পুনশ্চঃ- নিচের কবিতাটা লিখেছিলাম। কেউ বলল মেঘসাথী না বুঝেই লিখেছে। কেউ না বুঝুক তুমি বুঝবে।
তোমাকেই দিলাম।
তখন রাতগুলো পরী ভালোবাসায়
ভরপুর
হরিদার চায়ের দোকানে
সন্ধ্যায় ফেলে আশা
মিঠু বউদি আর ঝিলিক
সেনের ঝিকির মিকির দুই চাঁদ
রাতে নাড়িয়ে দিলে
গো। ঘুম, ঘুম আসে না
অস্থির, বুকের ভিতরের হ্যাংলা কুকুরটা
বনেদী নয়
ঠিক, ঠিক যেন ভাদ্রের মতো অবস্থানে
আর কুকুর ঝাঁপিয়ে
পড়ল মিঠু না ঝিলিক সেনের বুকে
বুঝলাম না...
আর নাভি খাচ্ছে, আর কোমর ভেঙে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে
দাঁতে
দরদর ঘামে ভিজে উঠছে
গা
থামবে না, এ-খাওয়া থামবে না
সমস্ত বেডকভার
ড্রেনডাইট চটচটে, আহা
মায়াবী আঠা
ক্রমশ কুকুরের গা
মোচড়ানো শিথিল হয়ে ওঠে
ঘুম, ঘুম, ঘুম
সকালে ভুলে যায় আস্ত
একটা কুকুর নিয়ে আমার রাতের সংসার
কেননা তখন আমাদের
রাত্রির বুক অবিবাহিতকলা
কেননা তখন পায়জামার
অন্ধকারে হাজার ওয়াট
তখন আমাদের নিজস্ব
রাতের নাম ছিল
- ‘নাইটফল মেমরি’।
কলকাতা, ১৮ জুলাই ২০১৫
প্রিয় মেঘসাথী
কথা লিখতে গেলে
কথারা স্কুলের লাস্ট বেঞ্চে বসা মুখচোরা সেই ছেলেটি হয়ে যায়। সবই বোঝে, কিন্তু গুছিয়ে বলতে পারে না
স্যারের সামনে, আমারও তেমনই অবস্থা। এক-একবার ভাবি একটা
আকাশে যত অনুভব থাকে সাজান, সব তোমাকে লিখে দেব। লিখে দেব বললেই কি আর লিখে ফেলা যায়? গাছ-গাছালি পাখি নদী-নালা
প্রতিনিয়ত কত কিছু বলে চলে, আমি তো তাদের কথা লিখে পাঠাতে
পারি না তোমার কাছে! চেষ্টা করে দেখেছি, কথারা হৃদয়ধ্বনিতক সঙ্গ দেয় না, কথারা চোখ পর্যন্ত সঙ্গ দেয়।
তবুও চেষ্টা করি উত্তরে
উড়ে যাওয়া হাওয়ায় পাঠিয়ে দিতে আমার অনুভূতির বকলম লেখাকে। আমার পাঁজরের
ঘামে লেগে থাকা জীবন শোকের মাহেন্দ্রক্ষণকে বন্ধু করে পাঠিয়ে দিই তোমার দু’কামরার ফ্ল্যাটে। ওখানও কি এই বঙ্গের মতো সন্ধ্যা নামে? গ্রামের তুলসী বেদীতে মা কাঁসার প্রদীপ জ্বালিয়ে
গলায় বস্ত্র পেঁচিয়ে ঠিক সন্ধ্যার মুহূর্তে উলুধ্বনি সহ যখন তুলসীমঞ্চে প্রণাম
করেন, আর আমাদের বুকের সব পাথরচাপা নেমে যাক এই প্রার্থনা করেন, তখন কি দিল্লীতে সন্ধ্যা নামে? এক জায়গার দুঃখ
কি আর এক জায়গায় উড়ে যেতে পারে? খুব জানতে ইচ্ছা করে।
অথচ দেখ, আমার ভাবনায় কীই বা এসে যায়!
গত দু’দিন নিম্নচাপে কুবেরের মতো বৃষ্টি নেমে রয়েছে। আমার বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে চলছে
শহরের জল নেমে যাওয়া খাল। সারা বছর যক্ষ্মা রুগীর মতো ভুগতে থাকে
জলহীনতায়, আজকে দেখছি সেই খাল
হরিণ খাওয়া অজগর, ফুঁসছে, আর কি
আশ্চর্য জান তো? যে খালে সারা বছর একটাও ব্যাঙের ডাক
শোনা যায় না, সেই
খালে যেন লেগেছে ব্যাঙের মিলনমেলা। গ্যাওর গ্যাং - ডাকছে আর ডেকেই চলেছে সমান।
রাতে বাড়ি ফেরার পথে খানিক দাঁড়িয়ে গেলাম, কী অপূর্ব ডাকে
প্রেয়সীকে ডাকছে মিলনের কামনায়! এমন কি দিল্লীতে হয়? যদি
আমাদের বর্ষার ব্যাঙ দিল্লীতে কুরিয়ার করে পাঠিয়ে দিই, গাড়ি
ধোঁয়া ভিড়ে পিচ রাস্তায় কি খালের মতো ডেকে উঠবে? সব
প্রাণীই ভালোবাসার মানুষকে এমন প্রেমের
আবেদনে ডাকে।
ডাক বুঝে নিতে হয়। ডাক শোনবার জন্য বুক এগিয়ে দিতে হয় শূন্যর দিকে। এই শূন্যে আর কিছুই রাখা যায় না। হৃদয় বিছিয়ে দিতে হয় ডাক শোনবার জন্য। তবেই তো ডাক পৌঁছে যায় যাকে ডাকছ তার
কাছে।
মনে পড়ে? গত এমনই এক বর্ষণে তোমার সাথে
আমার পরিচয়। তখন আমরা দুজন দুজনের থেকে কত দূরে! তোমায় ঠিকমতো চিনতাম না যতটা
চিনলে অন্য কারোর জন্য কান্না সংঘটিত হতে
পারে জগতে। তুমি তখন
স্বপ্নের রাজকন্যা, আর
আমি তখন বনরাজ। তুমি দূরে থেকে কতই না কল্পনার চোখে এঁকেছিলে আমায়! আর আমি তত বেশি
ফাঁকি দিয়েছি তোমায় এটা বুঝে যেদিন কেঁদেছিলে, প্রেম আর
যুদ্ধে সবই চলে এটা ভেবেই মিথ্যার প্রশ্রয়ে এগিয়ে গিয়েছিলাম তোমার প্রেমের বন্দরে। হা হা হা, হাসছ তুমি, বলবে এ কেমন ভালোবাসা? যার মধ্যে শুধুই মিথ্যা!
আমি সঠিক কোনো উত্তর দিতে পারব না, জান তো! মিথ্যার আশ্রয় কে নেয়নি? স্বয়ং ভগবানও ধর্ম প্রতিষ্ঠায় জন্য মিথ্যার অভিনয়ে। এখন আর কিছু প্রমাণ
করতে ইচ্ছা করে না আমার। প্রমাণ একটা বিশুদ্ধ বিজ্ঞান। যুক্তি আর বাস্তবের মিশ্রণ ছাড়া সে আর কিছুই
বোঝে না। বিজ্ঞান দিয়ে কতটুকু আর হৃদয়কে ধরা যায়? হৃদয় সেই পান্থশালার বাঁশি,
ভ্রাম্যমাণ পথিক যখন গভীর রাতে বাঁশিতে সুর বাঁধে, হাজার মাইল দূরে কোনো রাধা স্বামী ঘরে সেই অমোঘ সুরের টানে
ছটফট করে বিছানায়, তুমি বল, এই অনুভূতি ধরবে এমন কি আছে
তোমাদের বিজ্ঞানে?
নারী জন্ম বেঁচে
থাকে পুরুষের ভালোবাসায়। আমাদের গ্রামের কাঁচা রাস্তা থেকে শহর ঠিক ২০ কিলোমিটার দূরে। কোনো দরকারি কাজে শহরে যেতেই হতো বাবাকে। আর যেদিন শহর যেতেন, বুকের মধ্যে একটা প্রাপ্তিযোগের আনন্দ লাফিয়ে
বেড়াত বাচ্চা ছাগলের মতো। বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা গড়িয়ে অন্ধকার নেমে আসত। আমরা ক’টা ভাইবোন ঘরের বারান্দায় ঠাই
তাকিয়ে থাকতাম, আর
বাড়ির সামনের রাস্তায় কোনো পায়ের শব্দ হলেই মনে মনে ভাবতাম, বাবা এলো বুঝি! মা
হ্যারিকেনের সামনে চুপটি করে বসে থাকতেন। চোখে মুখে উৎকণ্ঠা। আর মাঝে মাঝে বলতেন, - এখনও এলো না লোকটি! কোনো আক্কেল আছে বল দিকি! মায়ের এই উৎকণ্ঠার কী নাম
দেব বল তুমি? ভালোবাসা? না সংসার?
এখন আমাদের সামনে
হারিয়ে যাওয়ার কত মাধ্যম। রোজ একটা করে আধুনিকতা ঢুকে যাচ্ছে সভ্যতার শরীরে। আমরা গ্রহণ করতে করতে ক্লান্ত হচ্ছি না
তবুও। চারিদিকে এই
পোশাকি কৃত্রিমতার সম্মুখে আমরা যত গ্রহণ করছি তার চেয়ে বেশি ছেড়ে দিচ্ছি। গ্রহণেরও তো
একটা ক্ষমতা থাকা দরকার!
বকে যাওয়া আধুনিকতায়
ফেলে আশা গ্রামের ছোট্ট নদীটার মতো বহমনতা এখনও তোমার মধ্যে আছে ভেবে, সময়ে-অসময়ে আমি ঝাঁপ দিয়ে নেমে পড়ি তোমার জলে। সারা দিনরাত সাঁতার কাটি, খেলা করি, আবার ডুবতে ডুবতে ভাসতে শিখে নিলে
বুঝি, তুমি আছ বলেই তো এত আবদার আমার! তোমার উপস্থিতি আছে বলেই তো নিধিরাম সর্দার নিজেকে প্রস্তুত করতে
পারে সময়ের বিরুদ্ধে!
আর দীর্ঘ করব না। এই সময়ের যা কিছু শ্রেষ্ঠ সম্পদ, যা জোগাড় করি শোকে দুঃখে কান্নায় তাকে পাঠিয়ে দিতে চাই তোমার পায়ের কাছে। জানি, একটা জীবন হয়তো তুচ্ছ তোমাকে ভালোবাসার
জন্য। জানি না,
দ্বিতীয় জন্ম আছে কিনা, কিন্তু
খুব ভাবতে ইচ্ছা করছে, আরও একটা জীবন আছে কোথায়! সেই
জীবনে আমরা শুরু করব খেলা, এই জীবনে যেখানে শেষ করব আমরা।
ভালো থাকা - খারাপ থাকা নয়, বঞ্চিতের মধ্যেই থাকে জীবনের রসদ,
তোমাকেই দিলুম সব...
ইতি
তোমার অরণ্য
প্রত্যেকটা পুরুষ
চোখ আসলে এক একটা
আটলান্টিক মহাসাগরীয়
মরণফগ
*
পুরুষের বুকের মধ্যে
নারী ‘মায়া সভ্যতা’র মিথ
তার তুরুপের অঙ্গ
আসলে কাদাজলের জোঁক
যখন নরম বল উঁচিয়ে
থাকে উপোষী ‘কালুরায়’ দেবতার দিকে
তখন নরম বল আসলে
থলথলে মাটির জেলি কুমোরের হাতে
আসলে, পুরুষের কাঁধে নয়, ঊরুতে জন্ম নেয় নারী
পুরুষের চওড়া
উন্মুক্ত বুক হাসিমারা অভয়ারণ্য
নাভিকুণ্ড প্রেমের
উষ্ণপ্রস্রবণ
নারীকে ওম দাও, চোখে সে অন্নপূর্ণা চোখে সে
লক্ষ্মী
নারী তখন চীনের প্রাচীর, তখন
প্রত্যেকটা পুং
আসলেই গ্রীক সূর্যদেবতা
একালের পুংলিঙ্গকে ‘হোক
কলরবের’ মতো লাগে
প্রতিটি শিডিউল আসলে
গঞ্জিকা অন্ধকার
‘জাগতে রহ’ নেপালি
চৌকিদারের মতো সময়টুকু জেগে থাকে
মানুষের জন্মের জন্য
যতটুকু পুরুষের জাগা দরকার...
রবিনহুড বুক বিছিয়ে
দাও পুরুষ, নইলে
ওয়াই কীট নিয়ে
বেদে তাঁবুতে খেলে
যেতে যাবে যে কোনো মদনকুমার
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন