অপেক্ষা
সে আঁকছিল নদী। আমি পাহাড়। ওর নদী ছিল কী করে জানি লাল। আমার পাহাড় – যেমন ধূসর হয় বরাবরের মতোই। নদীতে এখন অস্তগামী সূর্যের মাতাল করা লাল, আমি ওকে ডাকলাম হাতছানি দিয়ে। তাকালোই না। সে একমনে ছবি আঁকছে। পাহাড় আসলে আঁকা হতেই থাকলো। তার উচ্চতাকে সীমায়িত করব কীভাবে!
ওর
আঁকাও কি
শেষ হবার পথে? সে নদীতট আঁকলো স্থির
প্রশান্তিতে,
তখন আকাশে
মিলনোন্মুখ পক্ষীকূল
উড়ে চলেছে
হয়তো কোনো
বনস্পতির সন্ধানে।
পাখিজন্মের
ভূত বা ভবিষ্যত না জেনেও বলতে পারা যায়, ছায়া প্রকৃত এক খোঁজ, যা প্রাণী তার অন্তরস্থিত
অভিযোজন জ্ঞান থেকেই খুঁজে চলে সারাটা
জীবন। সে তাদের আঁকলো
একটিই রঙে, এক
অবয়ব ও
দুটি মুখমণ্ডলীতে।
তরঙ্গ যে আঁকতে হয়
না, সে জানতো।
অনুভব আদতে এক পেন্টিং ব্রাশ,
সে নিজেই এঁকে নেয় জোয়ার বা ভাঁটা।
সে এবার গভীর এক সংকটে, আপাত স্থির। গভীরতা
আঁকতে গিয়ে ভ্রু-যুগল কুঞ্চিত তার।
পারছে না। কিছুতেই পারছে না। কেন?
তখন চরাচর জুড়ে সন্ধ্যে নামছে। আমি নেমে এসেছি নদীর মাঝখানে। আবার ডাকলাম ওকে। এবারও তাকালো, কিন্তু আনমনা। মুখে সন্ধ্যে এবং বিষাদের ছায়া। সে কত কত কাল আমি তো ওরই অপেক্ষায়, যেমন অপেক্ষায় এ সমাপ্তি সঙ্গীতের, যার আশরীর অবগাহনে আসবে সম্পূর্ণ শান্তি। ঘরফেরতা পাখির কল-কাকলী এ টাইম ট্রাঞ্জিশনের নেপথ্যসঙ্গীত। ও অস্থির খু-উ-ব। আমি উঠে এলাম তটে ধীর পায়ে, যদিচ সে পদযুগল কম্পমান। হাত ধরতে গেলে মৃদু প্রতিবাদের ধূলো উড়লো। তারপর সে নেমে এলো নদীতেই। চোখের জল তখন মিশছে এ মন্দাকিনীতে। নদীর রূপ এখন নীল বর্ণের শান্ত সমাহিত। আমি আমার ধূসর পাহাড়কে বহন করে আনলাম, তাই তো আনতে হয়! দাঁড় করালাম নদীর মাঝখানে। ও এখন দাঁড়িয়ে। আমি ডুব দিলাম নদীর গভীরে। একদম নিচে, যেখানে কত শত প্রজন্মের দুঃখ পলি হয়ে জমে। আমি ব্যথা স্পর্শ করলে ওর চোখে মুখে প্রশান্তি খেলা করছে।
ও আঁকছিল নদী, আমি পাহাড়।
এখন নদী আর পাহাড় মিলেমিশে গেছে কীভাবে যেন রাতের অন্ধকারে।
শুধু তীরে যে জল বা প্রবাহমানতা এসে ধাক্কা মারছে, সে আদতে কী বলছে জানতে সকাল আসছে ভোর নিয়ে।
আপাতত অপেক্ষা।
ভাল লাগল
উত্তরমুছুনমুক্ত গদ্য ... ভালো লাগল।
উত্তরমুছুনশ্রাবণী দাশগুপ্ত।
উদ্ধার হইলো না
উত্তরমুছুন