কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৪

০৪) অপরাহ্ণ সুসমিতো


 
প্রতিদিন একদিন

: সদাগত আলী
: জ্বি আব্বা
: যা তো আলমিরার উফর তোন জালি বেত খান লই আয়
: কিল্লাই
: তোরে মাইরতাম

মা পাশের ঘরে ছিল, হুজুর স্বামীর ঠান্ডা খনখন গলা শুনে পর্দা সরিয়ে বৈঠকখানায় উঁকি দিয়ে দেখল সদাগত ফাঁসির আসামীর মতো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। স্বামী বালিশে হেলান দিয়ে আরাম করে চোখ বন্ধ করে পান খাচ্ছে
মা মিনুমিনু গলায় বলল;
: ইয়ান কি? আন্নে আঁর ফোলারে মাইরবেন কিল্লাই? দ্যাশে তো আইন হইছে, ছাত্র তো মারন যাইত ন।
: তুমি নাক গলাও কিল্লাই? আঁর ফোলা ,আই ধরি মাইজ্জুম। চুপ করো

:
আঁরও ফোলা। আন্নে তারে মাইরতে হাইরতেন নমারলে আই নালিশ জানাইয়ুম..

হুজুর তাজ্জব হয়ে যান তার এই বোকাসোকা শান্ত ছোটখাট বউটির কথা শুনেপান চিবানো বন্ধ করে দেন, চোখ খুলে দেখেন সামনে আর সদাগত দাঁড়িয়ে নেইগলা ফাটিয়ে একটা চিৎকার করার তফসিল ঘোষণা করবেন বলে পরিকল্পনা করলেনতখনই মনে হলো, তফসিল ঘোষণা করলে যদি বউ ছেলে মিলে যদি কর্মসূচি দেয়?

হুজুর ফুঁস করে জমানো দম ছাড়লেন
বিড়বিড় করলেন : নাজুক সময় নাজুক সময় আইছে। গজব নাইমব...

সদাগত মায়ের কাছ থেকে আচানক রাষ্ট্রপতি-ক্ষমা পেয়ে মু
হূর্তে মায়ের পা ধরে সালাম করলোমা বললেন;
: থাউক,
মন্ত্রীগো লাহান তোমার আর পা ধরি সালাম কইরতে হইতো ন
সদাগত ঘর থেকে সাঁ করে দৌঁড়ে বেরিয়ে গেল আনন্দে। মুক্তির স্বাদঅবশ্য সে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, বাবা তাকে জালি বেত দিয়ে মারলে সে ৫৫ হাজার  বর্গমাইল জ্বালিয়ে দিত
সদাগতের চিন্তায় হঠাৎ খটকা লাগলো। আচ্ছা বাংলাদেশের আয়তন কত? ৫৫ নাকি ৫৬? কূল কিনারা না করতে পেরে শেষমেষ একটা আইডিয়া করে নিল মনে মনেআর আইডিয়ার বিশেষত্বে সে নিজেকেই নিজে বাহবা দিলহাজার বর্গমাইল তার নিজের জন্য রাখতে হবে তো! সব পুড়িয়ে দিলে নিজে কই থাকবে?

বাইরে রোদ ধরে এসেছে
নভেম্বরের বিকেল রোদের উত্তাপ নেই বললে চলেওয়েস্ট ইন্ডিজ টিমের মতো, এক কালীন কাগুজে বাঘরোদ না থাকলেও সদাগত সানগ্লাস পরে নেয় চোখে। সদাগতের বাম চোখটা খানিক ছোট। সে নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগে 

চশমা চোখে পরতেই সে মুহূর্তে অনন্ত জলিল হয়ে যায় 

সে যদি বাপের হৃদপিন্ডটা একবার বের করে এনে ভয় দেখাতে পারতো বাপকে
! না না, আবার ভয় দেখানো শেষে সে জায়গা মতো রেখে দেবে

অনন্ত জলিলের চেহারাটা ভাসতে সে আচানক কেমন যেন ভাসতে লাগলো, মনে হলো বিদেশের কোনো ছবির মতো শহর...

সে নাচছে
... গান করছে... কী সুন্দর বর্ষা মেয়েটা তার সাথে হাসছে... গাইছে। মেয়েরা এত সুন্দর হয় বুঝি!

আগামীকাল হরতাল হরতাল বলতে বলতে কতগুলো লোক ডিংকা চিকা ডিংকা চিকা করে মিছিল করতে করতে সদাগতের পাশ গলে কোথায় যেন মিলিয়ে গেল
কোথায় যেন প্রচন্ড শব্দ করে বোমা ফাটলোপাশ দিয়ে একটি লোক যাচ্ছিল হনহন করেসদাগত জিজ্ঞেস করলো;
: চাচা কিয়ের শব্দ? বোমা ?
লোকটা হেসে বলল;
: না না! বোমা না, বোমা না। ল্যাপটপ ফুইটছে...

সদাগত বুঝতে পারে না
হা করে থাকে অল্পক্ষণসন্ধ্যার প্রপেলার নি:শব্দে এসে জানান দেয় চারপাশ যে তবুও সন্ধ্যা। রাতের সাথে সে সেতু হতে এসেছেশেখ রেহানার গাড়িটা চলে গেল ভারতীয় হাইকমিশনারের বাসভবনের দিকে

অন্ধকার নামছে বলে সদাগত সানগ্লাস খুলে নিল চোখ থেকে। মুহূর্তে সে আর সুদর্শন  অনন্ত জলিল রইলো নাবর্ষা সুন্দর মেয়েটা কোথায় যে পালালো!

সে অবিকল সদাগত হয়ে সন্ধ্যার রেণু অন্ধকার গায়ে মাখতে লাগলো...

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন