কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৪

১১) অনুরাধা কুন্ডা



একটি রিক্সাস্ট্যান্ডের তরল সন্ধ্যা...

স্ট্যান্ডে দাঁড়ানো রিক্সাওয়ালাদের প্রায় সবাই আজ অদৃশ্য। গতকালের বিশ্বকর্মা পুজোর তরল প্রসাদ বেশ বেশি মাত্রায় সেবন হয়েছে। আজ বিশ্রাম। শুধু রতন রিক্সা নিয়ে  বেড়িয়েছে। উপায় নেই। এক কামরার ঘরে শাশুড়ি এসেছে... বাড়াবাড়ি চলবে না আজরতন চাকা মুছছিল
এমন সময় ল্টো দিক থেকে বেপাড়ার একটা রিক্সা সবেগে ধেয়ে আসে, হর্ণ মারে। হবু সওয়ারি বেগবান রিক্সার দিকে এগোয় রতনকে উপেক্ষা করে... তার এক'পা তখন রিক্সায়। হঠাৎ পিছন থেকে রতন বলে, ও বেপাড়ার লোক দাদা! সবদিন ওকে পাবেন না। বরং আমাকে আপনি পাবেন, আমি সবদিন এখানেই থাকবকথাটা শুনে হবু আরোহী সন্মোহিতের মতো ফিরে আসে রতনের রিক্সায়
সবদিন থাকব...! এই বাক্যবন্ধ গুঞ্জরিত হতে থাকে আরোহীর কানেএমন  আশ্বাসবাক্য তো কেউ বলেনি তাকে! কোনোদিন!  
বাবা বলত, "নিজের পায়ে দাঁড়া, আমি আর ক’দিন...!" মা নিঃশ্বাস ফেলে বলত, "আমি না থাকলে তোর বউকে অন্তত কোজাগরিটা করতে বলিস, বাবা!" বউটি  সাদাসিধেজীবনবীমার দালালকে ঈশ্বর মানে। ইদানীং কড়ওয়া চওথ শুরু করেছে টিভি দেখে। ছেলে বলত, "বাবা, তুমি যখন থাকবে না, কে আমাকে স্কুলে দিতে যাবে?" সে ছেলের মাথায় হাত রেখে বলত, "তুমি তখন বড় হয়ে যাবে, বাবা!"
এইভাবে শ্বাস পড়ে। দিন যায়। কেউ থাকে না। বাবা-মা ছবি হয়ে যায় ছেলে হস্টেলে যায়। পুরনো বন্ধু বল্টু বদলি হয়। বউ এখন অ্যামওয়ে করতে যায়। পাড়ার মুদীখানাটিও ভোল পাল্টে স্টোর বনে যায়সব বাগান বহুতল হয়। মধ্যবিত্ত অনিত্যতায় সব কিছুই সহনীয় বলে মনে হয়
এমতঅবস্থায় এই অমোঘ বাক্য তাকে মথিত করে। সমুদ্রের মতো ভিড়, দোকান, আলোকমালা পার হয়ে রিক্সা ধাববান তার মনে হয়, সে যেন এক দেবযানে আরোহী। এই আরোহ আপাত সময়ের জন্য চিরন্তন হয়। এই মুহূর্তে সে পরিপূর্ণ  বোধ করে। সন্ধ্যা গাতর উষ্ণতাসহ তাকে ঢেকে দেয়। উল্লাস রিক্সার গতিবেগে  ছুটেছে।
                                             

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন