কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০১৪

০১) অমিতাভ প্রামাণিক

অমিতাভ প্রামাণিক

চারানা আটানা

১৩)  সম্বর্ধনা
খেয়ালই করিনি, কোন্‌ ফাঁকে কালিমাটি অনলাইনে আমার এই জালিস্য জালি  নিয়মিত ফিচারটির বর্ষপূর্তি ঘটে গেছে। এটা তেরো নম্বর, মানে দ্বিতীয় বছরের সূচনা হচ্ছে এই কিস্তিটা দিয়ে। তেরো সংখ্যারা বিদেশী মতে অশুভ, বাংলাতেও ত্র্যহস্পর্শ কথাটা অনেকে তেরোস্পর্শই উরুশ্চারণ করে থাকেন। সে যাইহোক, আগে শুনতাম টেলিভিশনের সিরিয়ালে নাকি আবেদন করে অনেক কাঠখড় পোড়ালে  তেরোটা এপিসোডের ছাড়পত্র পাওয়া যেত। এখন তো সিরিয়াল শুরু হয়ে শেষই হতে চায় না! চরিত্রগুলোর বয়স বাড়ে না, একই রকম থাকে, শুধু স্বামী বা স্ত্রী আর  অবৈধ প্রেমিক-প্রেমিকার সংখ্যা বাড়তে থাকে। আমি ওসব লিখতে শিখিনি এখনও, তাই কাজলদা হয়তো এটার পরেই পিঙ্ক স্লিপ ধরিয়ে দেবেন। কিন্তু, বাপু হে,  তেরোখানা টেনে দিয়েছি, এই খুশিতে একটু নাচা গানা হবে না? একটু সম্বর্ধনা-টনা?

কাজলদা না দিন, আমি নিজেকেই নিজে দিয়ে দিচ্ছি। দু-রকমের দুটো সম্বর্ধনার স্টোরি দিয়ে। পড়ে মজা লাগলে আমার ঠিকানায় মেডেল বা অন্য যা কিছু পাঠিয়ে দেবেন। আমি কিছু মনে করব না।

সম্বর্ধনা : এক
বাংলার ইতিহাসে আজ এক পরম গ্রীন লেটার ডে।

লোকে লোকারণ্য যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন, কিন্তু কেউ বুঝতেই পারছে না, ব্যাপারটা কী! মোচ্ছবের ডাকে এসেছে সবাই। আজ বাসে-ট্রেনে ভাড়া লাগছে না। হাওড়া-শিয়ালদায় একটাও টিটি নেই, থাকবে কী, তারাও তো এই কাঙালিভোজনে এসেছে! বর্ধমানের  চাষী, বাঁকুড়ার ফেরিওলা, মালদার দিনমজুর, পশ্চিম মেদিনীপুরের কাবাড়িওলা, দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার প্রাইমারি স্কুলশিক্ষক, পুরুলিয়ার তীরন্দাজ – সবাই আছে এই দলে। এ ওর মুখ চাওয়াচাওয়ি করে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করছে। হঠাৎ বিজ্ঞের মতো  একজন বলে উঠলো, জানিস না,  দক্ষিণ কোরিয়ার এক বুড়ো আর্মিম্যানকে সম্বর্ধনা দেওয়া হবে!
-      দক্ষিণ কোরিয়ার?
-      হ্যাঁ, তাই তো শুনলাম!
-      ধ্যুৎ, দক্ষিণ কোরিয়ার লোককে কলকাতায় সম্বর্ধনা দেওয়া হবে কেন?
-      কারণ আছে। লোকটা বোন-এক্সপার্ট।
-      বোন, মানে সিস্টার? বোনের যে এক্সপার্ট হয়, জানতাম না তো! আর আজ তো ইন্টারন্যাশনাল সিস্টার্স ডে, বা রাখীবন্ধন, নিদেন পক্ষে ভাইফোঁটা-টোটাও না। তাহলে?
-      আরে ধুস, সিস্টার না।
-      তাহলে? ইউ মীন বন, মানে ফরেস্ট? সুন্দরবন? লোকটা ধূ ধূ মরুভূমিকে বন বানিয়ে ফেলতে পারে? সেই জন্যেই এই বনভোজনের ব্যবস্থা?
-      আরে বাবা, না! বোন মানে বি ও এন ই, মানে হাড়, হাড্ডি, বুয়েচো?
-      আচ্ছা, এইবার বুঝলাম। অর্থোপেডিক! ডাক্তার তার মানে। তাহলে যে বললি আর্মিম্যান? আর্মির ডাক্তার?
-      ওরে না, ডাক্তার ফাক্তার না। লোকটা সৈনিক ছিল। কর্ণেল ইন ফ্যাক্ট। কর্ণেল কিম অ্যান টাং ওর নাম।  সেনাবাহিনীতে ছিল অবশ্য অনেক বছর আগে।
-      তাহলে?
-      আসলে ও পড়ে গিয়েছিল জলের তোড়ে। আরও জনা চারেক লোক পড়ে গিয়েছিল, সবারই হাড্ডি টুটেছে, শুধু এর কিচ্ছু হয়নি।
-      তো?
-      তার মানে কী? এর হাড় শক্ত। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে এ একটা বিশেষ ব্র্যান্ডের সিরিয়াল খায়। তারা জোরদার প্রচার করছে সারা বিশ্বব্যাপী। টিভিতে দেখাচ্ছে। সেই অ্যাড নাকি ইউটিউবে ভাইরাল।
-      তো আমাদের কী? মালটাকে আনলো কে এখানে?
-      বদনদা।
-      বদনদা, মানে আমাদের পরিবহনমন্ত্রী? ও এসব জানলো কী করে? ও তো  ট্যাক্সির ব্যাপারী, অর্থোপেডিকের খোঁজ পেলো কোথায়? তাও দক্ষিণ কোরিয়ার না কোথায় বললি!
-      হ্যাঁ, দক্ষিণ কোরিয়ারই। আসলে বদনদাকে বড়দি দক্ষিণ কোরিয়া পাঠিয়েছিল, ওখানে নাকি ট্যাক্সি খুব সহজে মেলে। রিজনেব্‌ল্‌ ভাড়া। ট্যাক্সিওয়ালারা ভালো,  যে কোনো জায়গার নাম বললেই নিয়ে যায়। এখানকার মতো যে কোনো  জায়গার নাম বললেই ‘না’ বলে না। বেশি ভাড়া চায় না, এমনকি বৃষ্টি হলেও। বড়দি বদনদাকে বলেছিল, যাও দেখে এসো, ওরা পারলে আমরা পারবো না কেন? কলকাতা লন্ডন না হোক, অন্তত সোল তো করে ফেলি আগে!
-      তারপর?
-      বদনদা গেছিল। কী দেখেছে ওই জানে। তারপর তো দেখছি এই লোকটাকে ধরে এনেছে।
-      এ কি ট্যাক্সি-এক্সপার্ট? তুই যে বললি হাড়!
-      হ্যাঁ। না, এর সাথে ট্যাক্সির সম্পর্ক নেই।
-      তবে?
-      আরে বদনদা সোলে ইন্ডিয়ান হাই কমিশনে গেছিল। তার বাইরে একদল লোকাল লোক বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল। আমাদের মতো চল্লিশ পঞ্চাশ হাজার লোক  নয়পয়সা ভাড়া দিয়ে নিয়ে আসেনি, ওরা এমনিই এসেছিল। সেই জন্যেই তো  কোরিয়ান পুলিশ ওদের ওপর ওয়াটার ক্যানন চালালো। সেই জলকামানেই তো চারটে লোকের হাড় ভাঙলো, শুধু এর ভাঙলো না।
-      ! ইন্ডিয়ার এগেন্সটে সেই বিক্ষোভ কেন, কিছু জানা গেছে?
-      হ্যাঁ। ওরা বলতে চাইছিল, ইন্ডিয়াতে ওদের দেশের বিরুদ্ধে বদনাম করা হচ্ছে।
-      ইন্ডিয়াতে কোরিয়ার বিরুদ্ধে? কই আমরা জানি না তো!
-      সে রকমই ওরা বলেছে ওদের পিটিশনে। বলেছে যে, এখানে আমাদের নাকি  কিছু কিছু জায়গার নাম ওদের জায়গার নামে রাখা, কিন্তু আসলে সেগুলো নোংরা, পূতিগন্ধময়। ওদের দেশের মতো পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন নয়। তার মানে  পরোক্ষে ওদের অবমাননা করা। ধর বিদেশে কোথাও যদি চুল্লুর ঠেকের নাম রাখে তাজমহল, তোর রাগ হবে না?


-      কিন্তু সে রকম নামের জায়গা কোন্‌টা? আমাদের এখানে তো সোল নামের  কোনো জায়গা নেই! ডু ইউ মীন সোলাপুর? কোথায় সোলাপুর, কোথায়  সোল!
-      আরে না রে! আমাদের গড়িয়া। গড়িয়া-কোরিয়া সেম নয়? কোরিয়ান ভাষায়  বোধ হয় ‘গ’ নেই। গড়িয়া ওদের কাছে কোরিয়াই। ওদের কে একজন  কলকাতা এসে গড়িয়া ঘুরে গেছে, ওখানে গিয়ে রিপোর্ট করেছে যে, একটা  নোংরা, দুর্গন্ধময় জায়গাকে ইন্ডিয়ানরা কোরিয়া নাম দিয়েছে। তাই ইন্ডিয়ান হাই কমিশনের বাইরে বিক্ষোভ। বুঝলি?
-      তা তো বুঝলাম। তো এই আর্মিম্যান কি সেই বিক্ষোভের দলে ছিল?
-      না। এ বুড়ো মানুষ, ওসব বিক্ষোভ টিক্ষোভে থাকবে কেন?
-      তাহলে? বদনদা একে কেন ধরে নিয়ে এলো তাহলে?
-      বদনদা টিভিতে সেই খবর দেখেছিল সেদিন সন্ধ্যেবেলা। তাই দেখেই ধরে নিয়ে এলোআসলে কলকাতা কানেকশনের জন্যেই। মানে লোকটার যে এতবড় একটা  প্রচার হচ্ছে, আর তার সঙ্গে কলকাতা কানেকশন, বুঝলি?
-      না। কলকাতা কানেকশনটা কী?
-      আরে ওর নাম রে! কর্ণেল কিম অ্যান টাং।
-      এর সাথে কলকাতার কী?
-      টিভিতে দিয়েছিল এই নামটা ইংরাজীতে। লেখা ছিল Col. K.A.Tang. এবার বুঝলি?
-      ইউ মীন বদনদা এটাকে পড়েছে কলকাতাং!
-      এই তো বুঝেছিস! কলকাতার এত বড় একটা সম্মান, মোচ্ছব করতে হবে  না? সেই জন্যেই তো ক’ মিলিয়ন কিউসেক তিস্তার জল ঘুষ দিয়ে হাসিনার মুখে হাসি ফুটিয়ে বাংলাদেশ থেকে কত টন ইলিশ আনানো হয়েছে। ঐ দ্যাখ রান্না হচ্ছে ওখানে।

এসব কথাবার্তার মধ্যে একটা সুড্ডা মতো বিদেশী লোককে ধরে বেঁধে স্টেজে তোলা  হলোমাইকে বেজে উঠলো – হাড়-মানা হার পরাবো তোমার গলে...

সম্বর্ধনা : দুই
উফ, জ্বালিয়ে খেলে! রাত্রে ঘুমানোর জো আছে! এখনও সকাল হয়নি, আলো ফুটব  ফুটব করছে, এখনই কে আবার পিঠে চিমটি মতোন কাটছে আর কানের কাছে গজর  গজর করছে উঠুন উঠুন করে। ভেতরে ঢুকলো কী করে, বাইরের ঘরের দরজায় ছিটকিনি দিই নি নাকি? বিরক্ত হয়ে চোখ না খুলেই বললাম, কে তুমি? কী চাই?
ইংরাজীতে উত্তর এলো, আজ্ঞে স্যার, প্লীজ জলদি উঠুন, আপনাকে প্লেন ধরতে হবে।
-      প্লেন? ফর হোয়াট?
-      স্যার, আপনাকে স্টকহোম যেতে হবে। প্লীজ উঠে পড়ুন!
-      স্টকহোম? আমি তো স্টক মার্কেটের দালালি করি না ভাই।
-      না, না, সেজন্যে না। আপনাকে নোবেল দেওয়া হচ্ছে। আজ ডিসেম্বরের ন’তারিখ। কাল সন্ধ্যেয় সম্বর্ধনা, তার মধ্যেই আপনাকে স্টেজে হাজির করতে হবে। প্লীজ আর দেরি করবেন না!
-      নোবেল? কীসের জন্যে?
-      শান্তির জন্যে স্যার! আপনি যে এতবড় একটা দুর্ঘটনা ঘটার থেকে  মানবজাতিকে সেভ করলেন, তার স্বীকৃতিস্বরূপ আপনাকে নোবেল দেওয়া হবে। দুহাজার ছাব্বিশের তো শান্তির জন্যে ক্যান্ডিডেটই পাওয়া যাচ্ছিল না।  আমেরিকার প্রেসিডেন্ট, ইওরোপীয়ান ইউনিয়ানের হেড, বিশ্বব্যাঙ্কের সি ই ও – এরা সবাই পেয়ে গেছে। লাস্ট মোমেন্টে আপনি যে কীর্তিটি করে দেখালেন, তার জন্যেই ক্যান্ডিডেট পাওয়া গেল। কাল রাত্রের জরুরী বৈঠকে আপনার নাম প্রস্তাব হতেই উইদাউট কনটেস্টে সিলেক্টেড।
-      ধুর, আর প্রাইজ টাইজ নিতে ভাল্লাগে না। রোজ রোজ প্রাইজ নিতে নিতে বোর হয়ে গেছি। প্রতি সপ্তাহে নবান্নে ডাক পড়ে – এই প্রাইজ নিয়ে যাও, ওই প্রাইজ নিয়ে যাও। বঙ্গশ্রী, বঙ্গভূষণ, বঙ্গবিভূষণ, বঙ্গরত্ন, বঙ্গবীরচক্র, বঙ্গতিলক, বঙ্গতরণী, বঙ্গসেয়ানা, সব পেয়ে গেছি। স্রেফ বঙ্গলিপি খাতা, বঙ্গবাসী কলেজ, বঙ্গলক্ষ্মী রাজ্য লটারী, বঙ্গোপসাগর – এইসব নামে আগে থেকে কয়েকটা জিনিস ছিল বলে ঐ নামে আমাকে কোনো প্রাইজ দেয় নি।
-      তা হোক স্যার। এ হচ্ছে নোবেল। দ্য বস অফ অল প্রাইজেস।
-      আরে ছাড়ো! দেবে তো ঐ কটা ক্রোনার না ইউরোএখানে গড়িফাতে আমার নামে স্ট্যাচু বসাবে বলে তেত্রিশ হাজার কোটি টাকা স্যাংশন হয়েছে পার্লামেন্টেবুর্জ খলিফার বিশগুণ সাইজ হবে ওটা। দুবাই থেকে দেখা যাবে।
-      তা হোক স্যার। নোবেল ইজ নোবেল।
-      বার বার নোবেল নোবেল করো না তো! বেল না বাজিয়ে তো ঘরে ঢুকে পড়েছ! দরজা খুললে কী করে? তোমাকে পাঠালো কে?
-      আজ্ঞে স্যার অ্যামাজন ডট কমআমি ড্রোন এয়ারক্রাফটে এসেছি স্যার, সোজা আপনার ব্যালকনিতে ল্যান্ড করেছি। দরজা খোলার দরকারই হয়নি। প্লীজ উঠুন!
-      কী এমন অপরাধ করেছি বাপু যে এই ভোরের কাঁচা ঘুমটা আমার ভাঙালে?
-      দারুণ অপরাধ স্যার। আপনি সাড়ে সাত লক্ষ মানুষের প্রাণ বাঁচালেন না?

এরা যে কী! সংখ্যা এদের মাথায় ঢুকবে না। সাত লক্ষ তিপ্পান্ন হাজার দুশো ঊননব্বইকে অবলীলায় এরা সাড়ে সাত লক্ষ বলে চালিয়ে দিল এই দু হাজার ছাব্বিশ সালে। ফুটবল বিশ্বকাপের দায়িত্ব পেল ভারত, গত পরশু তার ফাইনাল খেলা ছিল কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। মুখোমুখি ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা। ফাইনালের আগের দিনই বের হলো আমার পেপার, যাতে আমি হিসেব করে দেখিয়েছিলাম,  বৃহত্তর  কলকাতায় এখন আটষট্টি লক্ষ বাহাত্তর হাজার ছশো পনের জন ব্রাজিলের সাপোর্টার, আর আর্জেন্টিনার সাপোর্টার তার থেকে তিনশো তেষট্টি জন বেশি।  সেটা পড়ে একজন প্রশ্ন পাঠিয়েছিল, আর বাকি ছশো সাতান্ন জন? আমি উত্তর দিলাম, ওরা এখনও মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল।

ফাইনালে স্টেডিয়ামে যথারীতি হলুদ আর নীল-সাদা প্রায় সমানে সমানে। দুপক্ষই  ঊর্ধশ্বাসে চ্যাঁচাচ্ছে। বল একবার এদিকে যায় তো পরক্ষণেই এদিকে। নির্দিষ্ট সময়ে ফলাফল ৩-৩। এক্সট্রা টাইমে ১-১। টাইব্রেকার। পাঁচটা করে মোট দশটা শট, নটা হয়ে গেছে। দুই গোলকীপারই একটা করে সেভ করায় ফল এখন ব্রাজিলের অনুকূলে ৪-৩। লাস্ট শট মারবে আর্জেন্টিনা। সেভ হলেই ব্রাজিলের জিত। টান টান টেনশন। আমার কাছে খবর এসেছে, যে পক্ষ হারবে, তারা ব্যাপক ঝুটঝামেলা বাধানোর জন্যে  রেডি হয়েই আছে। এসে গেছে সেই মুহূর্ত। এক পক্ষ তো হারবেই। শুরু হয়ে যাবে দক্ষযজ্ঞরেফারি লাস্ট শটের বাঁশি বাজানোর জন্যে প্রস্তুত হচ্ছে।

কিছু করার ছিল না। এয়ারব্যাগ টেকনোলজিতে বানানো আমার নাইট্রোজেন বেলুন ফুলতে সময় লাগলো কয়েক মাইক্রোসেকেন্ড। একটা সুইমিং পুলের সাইজের বেলুন। চোখের নিমেষে উড়ে গেল মাঠের ওপরের আকাশে। তার সঙ্গে লাগিয়ে দিয়েছিলাম একটা পুরনো সন্তোষ টেপরেকর্ডার। তা থেকে বজ্রনির্ঘোষে বাজতে লাগলো রেকর্ড করা সেই বাণী – আমার ছেলেদের গায়ে হাত দিলে ছেড়ে দেব না, পকেট থেকে  রিভলবার বের করে শ্যুট করে দেব। আমি কলকাতার মাল না, চন্দননগরের মালআমার ছেলেদের লেলিয়ে দেব, রেপ করে চলে যাবে...

রবি ঠাকুরের জনগণমন যেমন ন্যাশনাল অ্যান্থেম, বঙ্কিমের বন্দেমাতরম্‌ যেমন ন্যাশনাল সং, তেমনি এই অডিওটা ইন্ডিয়ায় এখন ন্যাশনাল অ্যালার্টের স্বীকৃতি পেয়েছে। জনগণমন শুনলে যেমন উঠে দাঁড়াতে হয়, এই বাণী কানে গেলেই নিয়ম হচ্ছে, উঠে দাঁড়িয়ে চুপচাপ নিরাপদ স্থানে চলে যেতে হয়। রেফারি এই নিয়ম না  মেনে চোঁ চাঁ দৌড় লাগালো দমকল অফিসের দিকে। পরে জানা গেল, উনি ক্রোয়েশিয়ার নাগরিক হলেও যৌবনে কৃষ্ণনগরের নাকাশিপাড়ায় কিছুদিন ছিলেনযারা বাড়িতে টিভিতে খেলা দেখছিল, তারা উঠে দাঁড়িয়ে বাথরুমে বা বেডরুমে চলে গেল। যারা গাড়ির মধ্যে এফ এমে খেলার ধারাবিবরণী শুনছিল, তারা চটজলদি রাস্তার পাশে গাড়ি পার্ক করে হাতে হাত ধরে দুশো কিলোমিটার লম্বা মানবশৃংখল বানিয়ে ফেলল। মাঠ তিন মিনিটে খালি হয়ে গেল। সল্টলেক-গড়িয়া মিনিবাস রাস্তা খালি পেয়ে ছুটতে লাগলো ফোর্থ গিয়ারে

খেলোয়াড়েরা খানিকক্ষণ হতভম্ব হয়ে গেছিল। মিনিট তিনেক পরে ফিফার নির্দেশ মাইকে শোনা গেল – যুগ্মবিজয়ী।

দশই ডিসেম্বরের সন্ধ্যের নোবেল সম্বর্ধনা সভায় আমাকে জানানো হলো, আমি তৃতীয়  বিশ্বযুদ্ধের হাত থেকে পৃথিবীকে বাঁচিয়ে দিয়েছি। মেডেলটা নিয়ে ফিরছি, দিল্লী থেকে ফোন – আপনার জন্যে মশাই স্ট্যাচুর বাজেট বেড়েই চলেছে। স্ট্যাচুতে এই নোবেল মেডেলের প্রতিলিপি ঝোলাতে ওরা এখন আরো দুশো কোটি বেশি চাইছে।

ও হ্যাঁ, সুইশ ব্যাঙ্ক থেকেও ফোন পেলাম – আপনার ওখানে তো নোবেল মেডেল বেশিদিন রাখতে পারবেন না মশাই, চোরে ঝেড়ে দেবে। আমাদের লকারে যদি রাখতে চান...


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন