কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০১৪

১০) দেবযানী বসু


নিবন্ধ


সকাল থেকে দুপুর অব্দি বৃষ্টি হয়ে এখন রোদশুধু প্রেমিক প্রেমিকার জন্য বিশেষ এক রোদ থাকে, যা দেখলেই বোঝা যায় গলি বেয়ে জল আসে বড় রাস্তায়। মধুপ আর মনীষার কথামালা। বিশ্বাস করার লৌকিক অলৌকিক পথ পেরিয়ে চলেছে যারা তাদেরকে ঘিরে গড়ে তুলেছে তারাই জনপ্রবাদ। মানুষ জানে, সাধারণ  মাপের কোনো গাড়িকে যে কোনো ডাক্তার আশ্বাস দিয়ে ভালো করে দিতে পারে। মনীষা ডানপিটে মেয়ে। কালো লম্বা চওড়া চেহারা। আর ক্যাত্যায়নী রোগা পাতলা ফর্সা, খুব নরম মনে্‌ একটু ভিতুও বটে। এই কাত্যায়নীর সঙ্গে তাকে ডুয়েল  লড়তে হবে। একই স্কুলে পড়ে দুজনে কিন্তু আলাদা পাড়ায় থাকমোবাইলে যৌনতা জলভাত... পি সি তে দুধভাত... আর মাংসভাতের স্থায়িত্বে কারো বিশ্বাস নেইযে যুগে মেয়েরা খুব বোকা ছিল, সে যুগের মেয়ে এরাআর জানি, প্রতিটি  মেয়েই তার মায়ের চাইতে বোকা আর দেখেনি। জীবনের ভাঁজে ভাঁজে তাই ভুল রোদের গল্প লুকিয়ে।

মধুপ গোয়েঙ্কা কলেজের ছাত্র। মনীষাকে পড়ায় মানে অঙ্ক করায়। মনীষা প্রচুর ঠাট্টা ইয়ার্কি করে মাস্টার বলে কোনো ভয়ভক্তি নেইমনীষার বাবা বলতেন,  আজকাল মানুষের দেবদ্বিজে ভয়ভক্তি নেই। খাতার ভেতর নানা জ্যামিতিক ছবি  সহ অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ছবি মধুপ দেখতে পেত আর ক্লিভেজের নৈসর্গিক দৃশ্য চোখ এড়াত না। মধুপ নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষশপড়ানোটৈ তার আসল উদ্দেশ্য। অতএব খুব সংযমী থাকতো      
                                                                                                                    
কাত্যায়নী রোজ ক্লাসে মনীষার মুখে মাষ্টারকে পীড়নের গল্প শোনে শুনে কৌতূহল জাগে মধুপকে দেখার। যদিও মনীষা কাত্যায়নীকে সোজাসুজি সেসব গল্প বলত না, বলত পাশের মেয়েটিকে, আর কাত্যায়নীর কানে ঢুকত কেবলমনীষা মাঝে মাঝে কাত্যায়নীকে বিরক্ত করত। ওর স্তন বড় নয় কেন! তাহলে ও হিজড়ে! কখনও  বা ওর রুটির লেচির মতো বুক টিপে দিত অট্টহাসি সহযোগেআর মাসিক হয় কিনা, তাও জিজ্ঞাসা করত। এ সবই মনীষার হীনমন্যতা থেকে, কারণ, কাত্যায়নী লেখাপড়ায় ভালো মনীষার থেকে। এবং নম্রএকদিন স্কুল ছুটির পর মধুপ  সামনের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল, সেই সময়ে মনীষার সামনে পড়ে যায় ‘মধুপদা মধুপদা’ ডাকতে ডাকতে মনীষা ওর সাইকেলের ক্যারিয়ার পিছন থেকে টেনে ধরে। আচমকা টাল সামলাতে না পেরে দুম করে পড়বি তো পড় ক্যাত্যায়নীর ঘাড়ে। ব্যস! বেশ হৈ চৈ হলোমধুপ কাত্যায়নীকে তুলে দাঁড় করালোসরি বললমনীষা ছুটে আসায় মধুপ তাকেই বলল, ‘দেখ তো কোথায় লেগেছে’, বলেই মেয়েদের ভিড় থেকে পালিয়ে গেল সাইকেল চালিয়ে।  

এই মধুপকে এরপর কাত্যায়নী আবিষ্কার করে পাড়ার অন্য এক বন্ধুর দাদার বাড়িতে। সেই বন্ধুটির দাদা পশুচিকিৎসা নিয়ে পড়ছে। এবং ওরা বন্ধুমৃদু লজ্জামিশ্রিত আলাপ দিয়ে সম্পর্কের শুরু হলো কাত্যায়নী মধুপের সাইকেলে চড়ে  দূরের রেল স্টেশনে চলে যেতখুব নিঃশব্দে আর চুপিসারে ওদের মেলামেশা শুরু হলোকিন্তু চাপা থাকল না বেশিদিন। মনীষা জানতে পারলওর খুড়তুতো দাদারা মস্তান গোছেরমনীষা ক্লাসে বেঞ্চ বদল করল, শুঁটকি মাছের সঙ্গে ও   বসবে না! মস্তান দাদাদের ষড়যন্ত্রে মনীষা মধুপ আর কাত্যায়নীর ওপর প্রতিশোধ  নেবার ব্যবস্থা করল। একদিন মধুপকে রাতে একা পেয়ে বেধড়ক পেটাল কারা যেন! তাতে হুমকি ছিল, কাত্যায়নীর সঙ্গে প্রেম করা চলবে নামধুপের মা কাত্যায়নীর সঙ্গে দেখা করে ছেলের থেকে দূরে সরে যেতে বলল খুব অনুনয়ের সঙ্গেমনীষার দাদারা কাত্যায়নীর বাড়ি বয়ে এসে তার মা বাবাকে গালাগালি দিয়ে গেল। সামান্য কেরানি বাবা আর স্বল্প শিক্ষিত মা অথৈ জলে পড়লেন 
   
মধুপ কী ভাবছে, কাত্যায়নীর জানা হয়নি। নিত্যদিন নানা রকম অপমান আর  বাবা মার গালাগালিতে স্কুল যাওয়া বাইরে বেরোনো বন্ধ করল কাত্যায়নী পড়ায় মন বসে নাআস্তে আস্তে ও schizophreniaর রুগি হলোডাক্তার দেখাতে দেরি করায় রোগ আরও জটিল হলো ক্রমে মনীষা মধুপ কাত্যায়নীর কথা লোকে ভুলে গেল। তাহলে?

এর দশ বছর পর...

মধুপ সলিসিটর ফার্মে নিযুক্ত ওর ম্যাদামারা ভাব আর নেই। একটি মারাঠি মেয়ের সঙ্গে বছর দুই ঘর করেছে আবার বিয়ে করতে চায়। এবার বাঙালি মেয়ে বিয়ে করার ইচ্ছে খবরকাগজে বিজ্ঞাপন দিল কিছু না লুকিয়ে বেঙ্গালুরুতে থাকে। অবশ্যই একটা কোজি ফ্ল্যাট আছে। যে সম্বন্ধটা এসেছে, সেটা বাড়ির কাছে  খুব চেনা ঠিকানা। মেয়েটা নাকি একটা দুর্ঘটনায় বাঁ পা সামান্য টেনে চলে। মা  কথা প্রায় পাকা করেছে। অফিসের কাজের শেষে এক চিলতে ব্যালকনিতে বসে  মায়ের চিঠি খুলতেই প্রথম বর্ষার মতো লাফিয়ে এলো মনীষা মজুমদারের ছবি আর নাম। মনীষাদের সেই পুরনো গ্রিলের দরজা, বারোমেসে শিউলিগাছ... আর বেবিকাট চুলের খুব সাধারণ মুখশ্রীর মনীষা কত অন্যরকম দেখতে...

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন