কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০১৪

০৮) দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য


হয়নি

সকাল সকাল বৌদির ফোন। --একটু আসবে? জরুরি 
--কী হলো?”  
--উনি হাসপাতালে 
--সে কী! হার্ট টার্ট  
--ধুস। তোমার দাদার ওসব অর্গান আবার কবে থেকে হলো? নাকটা গেছে। নাক। অত উঁচু জিনিসটা একেবারে

একটা ট্যাক্সি ধরে তাড়াতাড়ি কালীঘাটের বাড়িতে পৌঁছে দেখি বিপর্যস্ত অবস্থা। বৌদি  আমার জন্যেই অপেক্ষা করছিলেন। সেই ট্যাক্সিতেই ফের হাসপাতালের পথে।
--বিমলকে আমি দোষ দিই না রওনা হবার পর বৌদির প্রথম কমেন্ট।  
--বিমল আবার কী করল বৌদি? দাদার অতবড় ফ্যান! কাল ওর ছেলের  মুখেভাতেও তো গেছিলেন আপনারা!” 
--ওইখানেই তো গন্ডগোলটা হলোতোমার দাদার সেই পুরনোহয়নিরোগ--
--সে তো ওনার চিরকালই ছিল। খবর কাগজের পেশাদার ক্রিটিক। রিটায়ার  করেও অভ্যেস যায়নি। কিছু না পেলে বুড়ো বসে বসে মহাভারতেরও ভুল বের করে। সেদিন সেই ফ্রয়েড টয়েড কোট করে বলছিল না, কর্ণপর্বটা নাকি কিস্যু হয়নি!’ আমরা কেউ তো ওসবে পাত্তাই দিই না আজকাল
--সে তো বিমলও দেয় না। কিন্তু কাল যা করেছে, সেটা বাড়াবাড়ি। মুখেভাতের   ফাংশানে যেতে বিমল বাচ্চাটাকে কোলে করে তোমার দাদার সামনে আনতে তাকে কোলে তুলে মেপেজুপে নিয়ে বলে, ‘হয়নি 
--মানে?”
--বিমলও সেই প্রশ্নটাই করেছিল। জবাবে তোমার দাদা বলে, ‘একটা আইডিয়াল  মানুষের বাচ্চার নাক, মুখ, চোখের ওজনের একটা ব্যাকরণ আছে বিমল! সেসব  বিষয়ে কোনো ধারণা না করেই যা খুশি একটা বানিয়ে ফেললে, আর আমাকে তার   প্রশংসাও করতে হবে? কী হয়েছে এটা? মানুষ? লক্ষণ আর শারী সংস্থানের  ব্যাকরণ মানলে এর সংগে ডাইনোসরের মিল অনেক বেশি। কনগ্রাটস অন ব্রিংগিং ব্যাক আ মেম্বার অব দা এক্সটিংকট স্পিশিস। এর পরেরটা বানাবার আগে মানুষের বাচ্চা বানাবার গ্রামারটা আমার কাছে এসে জেনে নিও তুমিই বলো ঠাকুরপো, কোনো বাপ এর পর সহ্য করবে?”

দাদা এখন যতই সেনাইল হোক এককালে তো আমাদের বড় প্রিয় ছিল! হাসপাতালের  বিছানায় নাক মুখ দাড়িতে জড়িয়ে বিশাল ব্যান্ডেজটা দেখে দুঃখই হচ্ছিল একটু। তারই ভেতর দিয়ে কুতুকুতে চোখদুটো জুলজুল করে দেখছে।
কাছে গিয়ে বললাম, কেমন আছেন?”
দাদার গলা দিয়ে একটা ঘ শব্দ বের হলোআমি তার কিছু বুঝলাম না। কিন্তু  বৌদি দেখি হঠা কান খাড়া করেছেসামনে গিয়ে মাথা ঝুঁকিয়ে বললকিছু  বললে?”
দাদা ব্যান্ডেজটাতে ড্রিপের ছুচ ফোটানো হাতটা মহাকষ্টে একবার বুলিয়ে নিয়ে ফের  বললেন, ড়”
বৌদির মুখটা হঠা টকটকে লাল হয়ে গেল। ডান হাতটা মুঠো করে একবার উঠিয়েও নিজেকে সামলে নিলেন তারপর পিছিয়ে এসে বললেন, কী বলছে জানো ঠাকুরপো? বলছে, ব্যান্ডেজটা ভুলভাল। কিস্যু হয়নি!”


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন