কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / অষ্টম সংখ্যা / ১৩৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / অষ্টম সংখ্যা / ১৩৫

মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫

গোলাম কিবরিয়া পিনু

 

কবিতার কালিমাটি ১৫০


বটেশ্বর

 

নথিতে পাবে না নটেশ্বর

আমার ঠিকানা বটেশ্বর!

আমি তো রয়েছি--

            জনপদে হ্রদ-প্রস্রবণে

চারক্রোশ পার হয়ে দূরে

            মাটির ভিটায়!

নতুন পাতার বনভূমিতে!

আমি তো নিবন্ধিত মানুষ নই--

খুঁজে পাবে হিসেব-খাতায়!

ঘরের ঠিকানা--

          উঠানের দাগ,

প্লাবনেও মুছে যায়!

বিরহকাতর হয়ে থাকি

জলচর হাঁসের জন্যও!

আমিও তো ভাসমান-

ভাসতে ভাসতে কোনখানে?

আমার ঠিকানা

          একখানে নয়!

          ওগো নটেশ্বর!

 

উদাসীনতা

 

আপনার ঘরের ট্যাপ থেকে

                 --পানি পড়ছে

আপনি তা দেখেও--তা বন্ধ করছেন না!

আপনি তা জেনেও--তা বন্ধ করছেন না!

ট্যাপ খুলে রাখছেন--

         বালতি ভরে যাওয়ার পরও

                        বন্ধ করছেন না!

ভাবছেন--আমার তো নির্দিষ্ট পয়সার বেশি

আর পয়সা দিতে হবে না--

পানির যে অপচয় হচ্ছে

                   তা জেনেও--তা মেনেও

নড়নচড়ন নেই--আপনি নির্বিকার!

                    আপনার কী আকার?

আর এভাবে উদাসীনতার নাইলনের সুতো দিয়ে

নিজের স্যুয়েটার তৈরি করে ভাবছেন-

          শীতে তো আপনার শীত লাগবে না!

পরস্পরের প্রতি পরস্পরের দায়বোধ

                      এভাবে চলতে পারে?

আর পারে না বলেই পানি ছাড়া-

একটা ঝুমকোজবার গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে কাছেই!

 

ধাতুনির্মিত চোখ

 

রাস্তা পার হওনি এখনো!

             নদী পার হবে কবে?

নৌকো নেই! সাঁতরিয়ে পার হবে নদী?

তুমিও কি এ-সময়ে হয়েছো বিদ্যাসাগর?        

মায়ের নিকটে যাবে! মায়েরই ডাকে!

দমোদর পার হবে সাঁতরিয়ে--

           তা এখন প্রকাশ্যে সম্ভব নয়

এখন তো কত জলযান!

           --তোমাকে তো তুলে নিবে

না হলে আকাশযানও সংকেত পাঠাবে

কে যায় স্পর্ধায়--

            নদীতে সাঁতার!

নিঃশব্দে ও নীরবে পারবে না যেতে

                কোথাও এখন!

চারদিকে ধাতুনির্মিত চোখ

                     তাকিয়ে রয়েছে!

 

সৌন্দর্য

 

সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলতে হয়-

তাকে টেনে হেঁচড়ে কোথাও স্থাপিত করা যায় না

     সৌন্দর্য পকেটভারী হয়ে কারও পকেটে থাকে না!

 

সৌন্দর্য হৃদয়ের তলদেশ থেকে জেগে ওঠে

শূন্যগর্ভ থেকে--

       কচ্ছপের খোল থেকে খোল নলচে বদলিয়ে

একা একা দীপ্তিমান হয়ে ওঠে।

 

সৌন্দর্য কখনো খ্যাংরামুখীর মুখোমুখি থাকে না

স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে

               আপনাআপনি অবারিত হয়

                      --প্রস্ফুটিত হয়।

 

সৌন্দর্য চোখধাঁধানো ময়ূখ নয়

বোচকাবুচকি ও লটবহর নিয়ে দাঁড়ায় না--

সে নিরাভরণ ও অলঙ্কারহীনও হতে পারে

তবে--লেজুড়ে হয় না!

 

তবুও আমার বিশ্ব

 

এক-আধটু স্পর্শ নিয়ে

এক-আধটু বুকের মাঝে থাকা!

এক-আধটু মাতম নিয়ে

            কারো জন্য ঝাঁপিয়ে পড়া

কারো জন্য নড়া--

এক-আধটু একতারাতে সুরও তুলে

                          দুঃখ ভুলে--

পূর্ণিমা রূপে-অন্ধকূপে

               আলো ছড়িয়ে থাকা।

এক-আধটু পুষ্পরেণু মাখা!

                 এক-আধটু স্বপ্ন নিয়ে

কালের স্রােতে বাঁচা!

                  ফড়িং হয়ে নাচা!

এক-আধটু বিন্দু জলে

তৃষ্ণা জাগে-

         নদীও ডাকে

            পাতালপুরী খোঁজা!

এক-আধটু আনন্দে কি

                  যাবে না চোখ বোজা?

এক-আধটু পান্তাভাত

এক-আধটু পান্থশালা

                  বনাঞ্চলে প্রভাত!

এক-আধটু ঋদ্ধ হওয়া

             এক-আধটু ঋষি

এক-আধটু উল্কি দিয়ে

                   উদ্দীপনায় জাগা,

            অভিভূত অভিলাষে

কীর্তি যখন আসে

এক-আধটু নিজে নিজে

              ঢাকনা তখন খুলি

এক-আধটু ধুলি

            গায়ে এসে লাগে!

এক-আধটু বোধও জাগে!

এক-আধটু ঘরে থাকি

             এক-আধটু বাইরে!

সমুদ্রেও যাইরে।

          এক-আধটু শরম লাগে

এক-আধটু রাগ!

নিজেকে তবু বলতে পারি না

            লোকালয় থেকে ভাগ!

মিথ্যেকে আলকাতরায় ঢাক!

এক-আধটু প্রণয়-প্রীতি

এক-আধটু গীতি

             এক-আধটু রীতি।

এক-আধটু বাঁশের তৈরী

সেতুতে পা রাখা।

               এক-আধটু ঝড়ের বৈরী।

এক-আধটু নিঃস্বার্থ

              এক-আধটু নিঃস্ব

তবুও আমার বিশ্ব!

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন