![]() |
কবিতার কালিমাটি ১৫০ |
বটেশ্বর
নথিতে পাবে না নটেশ্বর
আমার ঠিকানা বটেশ্বর!
আমি তো রয়েছি--
জনপদে হ্রদ-প্রস্রবণে
চারক্রোশ পার হয়ে দূরে
মাটির ভিটায়!
নতুন পাতার বনভূমিতে!
আমি তো নিবন্ধিত মানুষ নই--
খুঁজে পাবে হিসেব-খাতায়!
ঘরের ঠিকানা--
উঠানের দাগ,
প্লাবনেও মুছে যায়!
বিরহকাতর হয়ে থাকি
জলচর হাঁসের জন্যও!
আমিও তো ভাসমান-
ভাসতে ভাসতে কোনখানে?
আমার ঠিকানা
একখানে নয়!
ওগো নটেশ্বর!
উদাসীনতা
আপনার ঘরের ট্যাপ থেকে
--পানি পড়ছে
আপনি তা দেখেও--তা বন্ধ করছেন না!
আপনি তা জেনেও--তা বন্ধ করছেন না!
ট্যাপ খুলে রাখছেন--
বালতি ভরে যাওয়ার পরও
বন্ধ করছেন না!
ভাবছেন--আমার তো নির্দিষ্ট পয়সার বেশি
আর পয়সা দিতে হবে না--
পানির যে অপচয় হচ্ছে
তা জেনেও--তা মেনেও
নড়নচড়ন নেই--আপনি নির্বিকার!
আপনার কী আকার?
আর এভাবে উদাসীনতার নাইলনের সুতো দিয়ে
নিজের স্যুয়েটার তৈরি করে ভাবছেন-
শীতে তো আপনার শীত লাগবে না!
পরস্পরের প্রতি পরস্পরের দায়বোধ
এভাবে চলতে পারে?
আর পারে না বলেই পানি ছাড়া-
একটা ঝুমকোজবার গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে কাছেই!
ধাতুনির্মিত চোখ
রাস্তা পার হওনি এখনো!
নদী পার হবে কবে?
নৌকো নেই! সাঁতরিয়ে পার হবে নদী?
তুমিও কি এ-সময়ে হয়েছো বিদ্যাসাগর?
মায়ের নিকটে যাবে! মায়েরই ডাকে!
দমোদর পার হবে সাঁতরিয়ে--
তা এখন প্রকাশ্যে সম্ভব নয়
এখন তো কত জলযান!
--তোমাকে তো তুলে নিবে
না হলে আকাশযানও সংকেত পাঠাবে
কে যায় স্পর্ধায়--
নদীতে সাঁতার!
নিঃশব্দে ও নীরবে পারবে না যেতে
কোথাও এখন!
চারদিকে ধাতুনির্মিত চোখ
তাকিয়ে রয়েছে!
সৌন্দর্য
সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলতে হয়-
তাকে টেনে হেঁচড়ে কোথাও স্থাপিত করা যায় না
সৌন্দর্য
পকেটভারী হয়ে কারও পকেটে থাকে না!
সৌন্দর্য হৃদয়ের তলদেশ থেকে জেগে ওঠে
শূন্যগর্ভ থেকে--
কচ্ছপের খোল থেকে খোল নলচে বদলিয়ে
একা একা দীপ্তিমান হয়ে ওঠে।
সৌন্দর্য কখনো খ্যাংরামুখীর মুখোমুখি থাকে না
স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে
আপনাআপনি অবারিত হয়
--প্রস্ফুটিত হয়।
সৌন্দর্য চোখধাঁধানো ময়ূখ নয়
বোচকাবুচকি ও লটবহর নিয়ে দাঁড়ায় না--
সে নিরাভরণ ও অলঙ্কারহীনও হতে পারে
তবে--লেজুড়ে হয় না!
তবুও আমার বিশ্ব
এক-আধটু স্পর্শ নিয়ে
এক-আধটু বুকের মাঝে থাকা!
এক-আধটু মাতম নিয়ে
কারো জন্য ঝাঁপিয়ে পড়া
কারো জন্য নড়া--
এক-আধটু একতারাতে সুরও তুলে
দুঃখ ভুলে--
পূর্ণিমা রূপে-অন্ধকূপে
আলো ছড়িয়ে থাকা।
এক-আধটু পুষ্পরেণু মাখা!
এক-আধটু স্বপ্ন নিয়ে
কালের স্রােতে বাঁচা!
ফড়িং হয়ে নাচা!
এক-আধটু বিন্দু জলে
তৃষ্ণা জাগে-
নদীও ডাকে
পাতালপুরী খোঁজা!
এক-আধটু আনন্দে কি
যাবে না চোখ বোজা?
এক-আধটু পান্তাভাত
এক-আধটু পান্থশালা
বনাঞ্চলে প্রভাত!
এক-আধটু ঋদ্ধ হওয়া
এক-আধটু ঋষি
এক-আধটু উল্কি দিয়ে
উদ্দীপনায় জাগা,
অভিভূত অভিলাষে
কীর্তি যখন আসে
এক-আধটু নিজে নিজে
ঢাকনা তখন খুলি
এক-আধটু ধুলি
গায়ে এসে লাগে!
এক-আধটু বোধও জাগে!
এক-আধটু ঘরে থাকি
এক-আধটু বাইরে!
সমুদ্রেও যাইরে।
এক-আধটু শরম লাগে
এক-আধটু রাগ!
নিজেকে তবু বলতে পারি না
লোকালয় থেকে ভাগ!
মিথ্যেকে আলকাতরায় ঢাক!
এক-আধটু প্রণয়-প্রীতি
এক-আধটু গীতি
এক-আধটু রীতি।
এক-আধটু বাঁশের তৈরী
সেতুতে পা রাখা।
এক-আধটু ঝড়ের বৈরী।
এক-আধটু নিঃস্বার্থ
এক-আধটু নিঃস্ব
তবুও আমার বিশ্ব!
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন